তাড়াহুড়োয় পানিই খেতে ভুলে গেছে মিতু। কিন্তু এখন অনেক কাজ। পানি খাওয়ার মতোও সময় নেই। নিজের শাড়িটা ঠিক আছে কিনা দেখে নিল আয়নায় একবার। তনু ডাক দিচ্ছে ওকে। " দেখ না, আমার খোপাটা জানি কেমন হইছে। আমাকে পেত্নির মতো লাগতেছে।" বলেই কাঁদো কাঁদো মুখ করলো। " কই?? সব ঠিক আছে। তোকে অনেক সুন্দর লাগতেছে। একদম কাঁদবি না। মুখ ঠিক কর।" ঝাড়ির মত দিল মিতু। ও না থাকলে এই মেয়েটারে যে কে সামলাইতো। এত নার্ভাস হইতেছে মেয়েটা। ওকেই সব দেখতে হইতেছে। ওর শাড়ি ঠিক আছে কিনা, মেকাপ ভালো হইছে কিনা, মাথা ব্যথা করতেছে আরও কত কি!!!! ওকে দেখতে গিয়ে নিজের মেকাপটাই ভালো মত দেখতে পারেনাই ও। মাঝখানে ইফতির কল আসলো মোবাইলে। ধুররর। ঝামেলা। "হ্যালো। বলেন। তাড়াতাড়ি বলেন।" " কেনো? আস্তে আস্তে বললে কি হবে?" হাসলো ইফতি। জানে এখন মিতু ওকে সামনে পেলে ধরে মারতেও পারত। " ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি বলতেছি। আমি রওনা হয়ে গেছি। তোমার সাজুগুজু শেষ হয়েছে?" অনেক কষ্টে রাগ সামলালো মিতু,"হুমম। আমরাও রওনা হবো এখনই।" কোনো এক অজানা কারণে ইফতির সাথে কথা বললেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মনে হয়, ইফতিকে ওর একটু বেশিই ভালো লাগে, এই জন্যেই ওর বেশি মেজাজ খারাপ হয়।
রাহাতের অনেক নার্ভাস লাগছে। আশেপাশের ফ্রেন্ডদের ওটা বুঝতে না দিলেও ওরা ঠিকই টের পাচ্ছে। আসলে এমন সময়ে সবাই কম বেশি নার্ভাস থাকে। তনুকে আসতে দেখেই ওর নার্ভাসনেস কমে গেলো খানিকটা। খুব সুন্দর লাগছে ওকে লাল শাড়িতে। একদম পুতুলের মত। অনেক মেয়েকেই ভারী মেকাপে পেত্নির মত লাগে। কিন্তু তনুকে অপরূপা লাগছে। তনুকে বউয়ের জন্যে সাজানো রুমে নিয়ে গেলো। রাহাতের হার্টবিট বেড়ে গেছে। একটু পরই মিতু এসে হাজির ওর পাশে। "কি দুলাভাই?? কেমন লাগছে আমার বান্ধবীকে?? সুন্দর না?? আমি সবকিছু ম্যানেজ করেছি। " " অনেক সুন্দর লাগছে। থ্যাংক ইউ শ্যালিকা।" শুধু থ্যাংক ইউ তে চলবে না দুলাভাই। আপনার জুতাটা উদ্ধার করতে চাইলে আমাকে টাকা দেওয়া লাগবে।" "মানে?? জুতাতো.." বলেই নিচে তাকালো। পাকা চোর মিতু। জুতা গায়েব। হাসলো রাহাত।
ইফতি হাজির হয়ে গেছে অনুষ্ঠানে। মিতুকে খুঁজলো। সামনেই পেয়ে গেলো। ফড়িং এর মতো লাফিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়েটা। একটা লাল-কাঅ মিশানো রংয়ের শাড়ি পড়েছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। "ওহ, এসে গেছেন। রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় নাই তো।" "নাহ, কোনো সমস্যা হয় নাই। খালি আমার পাশের সিটে কেউ ছিলো না। কেউ ঠাকলে ভালো হত।" হাসলো ইফতি। চোখ পাকালো মিতু। "বউ দেখবেন?? একটু পরই বিয়ে পড়াবে।" "চল দেখে আসি।" তনুর কাছে গিয়ে দেখলো অনেক ভিড় ওখানে। তনু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ওকেই খুঁজছে নিশ্চয়ই। ও গিয়ে ইফতিকে পরিচয় করিয়ে দিল। তনু হাসিমুখে ইফতির সাথে কথা বলল। ইফতিকে রাহাতের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল মিতু। রাহাত এবার একটু মজা নিল যেন," হ্যা ভাই, আরও কয়েকদিন সুখে থাকেন। এর পর তো আপনার পালা। তাই না??" মিতুর মুখে লাল একটা আভা পড়লো। " বলছে আপনাকে?? না?? নিজের জুতার কথা চিন্তা করেন দুলাভাই!!" ইফতিকে নিয়ে আবার তনুর রুমে চলে আসলো মিতু। এখন বিয়ে পড়াবে। ও তনুর কাছে থাকাটা জরুরী। বিয়ে পড়ানোর পর সবাই মোনাজাত ধরলো। ইফতি মিতুর ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। ভালো লাগছিল ওর অনেক কেনো জানি!!!!
বউ বিদায়ের সময় যে কি কান্না পর্ব চলল। মিতুর শাড়ি, মেকাপ সব চোখের পানিতে ভেসে গেছে। ইফতি পকেট থেকে একগাদা টিস্যু বের করে মিতুর হাতে দিল। মিতু নিজের মেকাপ ঠিক করার বৃথা চেষ্টা করলো। হাসি পেল ইফতির। "হাসছেন কেনো? আশ্চর্য তো!!!" " তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে এখন। ঠিক পরীর মতো।" "মিথ্যাটাও একটু ভালো মতো বলতে পারেন না তাইনা?? আমাকে এখন পেত্নি লাগছে, পরী না।" মিতুকে টেনে গাড়িতে নয়ে বসালো ইফতি। মিররটা ওর দিকে দিয়ে বলল, " এখন দেখ কেমন লাগছে তোমাকে!! আমার চোখ দিয়ে দেখাটা তো তোমার ভালো লাগে না। নিজেই নিজেকে দেখো।" বলে হাসলো ইফতি। "হ্ইছে। এখন কি আমাকে বাসায় নিয়ে যাবেন নাকি এখানেই থাকবো??" "এক কাজ করি?? চল, তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাই একেবারে।" "তাই না?? খুব শখ?? কিপটা কোথাকার!! বিয়ের খরচ বাঁচানোর তাল?? খবরদার!! কিপটামীর কথা মাথাতেও আনবেন না। আর আমার বিয়ের মার্কেটিং এ যদি একটুও টাকা বাঁচানোর কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনার খবর আছে।" "খবর তো আমার এমনিতেই আছে। যেই দজ্জাল বউ খুঁজে বের করেছি। আমার জীবনে এখনই শেষ।" "তাহলে যান। অন্য কাউকে বিয়ে করেন।" "নাহ , অন্যকারো তো এত সুন্দর চোখ নেই যেখানে ডুব দিলেই হারানো যায়।" লজ্জা পায় মিতু, অন্যদিকে চোখ ঘুড়িয়ে নেয়। ইফতি হাসে, জানে ও, এখানেই শেষ নয়। আরও অনেক পথ বাকি। মিতুর হাত টা ধরে ও শক্ত করে।
(এটাই শেষ পর্ব। নতুন কিছু শুরু করবো। তাই একটু তাড়াতাড়িই শেষ করে দিলাম। )