somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

Media Hegemony - মিডিয়ার আধিপত্য

০৪ ঠা মে, ২০২১ সকাল ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই শব্দটির বাংলা অনুবাদ অনেকেই আরো ভালো করতে পারবেন। আমি "Media Hegemony" কে "মিডিয়ার প্রভুত্ব" হিসেবে বিবেচনায় নিচ্ছি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মিডিয়ার প্রভুত্ব কী জিনিস? খায় না মাখে?

আমি প্রথমে এই অনুচ্ছেদ কে উলটোদিক থেকে আলোচনা করবো। হুবহু বা কথিত সংজ্ঞা আমাদের অনেকেরই জানা। নতুন কিছুর খোঁজে আমি নিজেও।

১। ধোঁয়াশা
আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে হাজারো তথ্য দিয়ে ভরপুর। অচেতন মন তো ঠিক কত বা লক্ষাধিক তথ্যে ভরপুর থাকে সেই তথ্যের সংখ্যাটা চেতন মন জানে না। ফলে, চেতন মনে আমরা যা কিছুই বিবেচনায় নিয়ে আসি না কেন সেখানে পূর্ব-ধারণা থাকে। পূর্ব-ধারণা মূলত সেট করে এই সব বিচিত্র তথ্য যা আমরা কনজিউম করছি বা খাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

এখন ক, খ ও গ এই তিনটি মিডিয়া যথাক্রমে একই সংবাদ উপস্থাপন করছে,

ক বলছেন: অধিক যাত্রী নেবার কারণে একটি স্পীডবোট ডুবে গেছে।

ধরা যাক, উক্ত স্পীডবোটে ২০ জন যাত্রী ছিলেন। এক্ষেত্রে ২০ জন যাত্রী উহ্য থাকছে এবং তাদেরকে সরাসরি ব্লেইম করা যাচ্ছে। অন্যদিকে, এসব নিয়ন্ত্রকদের প্রতি কোনো দোষ দেওয়া হলো না।

খ বলছেনঃ কর্তৃপক্ষের গাফলতি, ২০ জন যাত্রীর মৃত্য(এক্ষেত্রে যাত্রীর সচেতনতা কে উহ্য করা গেল শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান কে দোষারোপ করে)।

গ বলছেন: স্পীডবোটে মিললো নৌকার ইঞ্জিন, ২০ জন যাত্রীর মৃত্যু(খেয়াল করুন, এরা আবার আরো কৌশলী। মানে না যাত্রী, না কতৃপক্ষ। বরং ঐ পেশাগত জীবনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নির্দ্বিধায় দোষারোপ করা যাচ্ছে)।

উল্লেখ্য, এখানে যথাক্রমে 'ক, খ ও গ' এর দেওয়া সব তথ্যই সঠিক। মুশকিল হচ্ছে এক্ষেত্রে দর্শক/পাঠক কোনটা গ্রহণ করবেন? যদি ভোট গ্রহণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয় তাহলে সে সময় বিবেচনায় নির্দিষ্ট একজন জিতে যাবেন। এবং তুলনামূলক কম সচেতন মানুষটি দ্রুত একটি অপশন বা সবচেয়ে জনপ্রিয় অপশনটি বেছে নেবেন। মানে উনি চাইবেন সেইফ খেলতে। কিন্তু আপেক্ষিক ভাবে চতুর মানুষটি সত্য খুঁজতে গিয়ে পড়ে যাবেন বিপাকে। তিনি নিজ মনে তার পূর্ব-ধারণা অনুযায়ী একটি অপশন বেছে নিতে পারেন। ফলে এখানে যাত্রী, কতৃপক্ষ এবং স্পীডবোটের পরিচালক এই তিন দলের মধ্যে ন্যায় করতে কোনোভাবেই পারবেন না। কারণ মিডিয়া আপনাকে এক্স্যাক্ট নয়, ধোঁয়াশা নিউজ জানিয়েছে। ফলতঃ আপনার মাথা হবে ধোঁয়াটে।

২। প্রভুত্ব
এখন একটি রাষ্ট্রে মিডিয়া এমন আচরণ কেন করে থাকেন?

মালিকানা: খেয়াল করে দেখবেন অধিকাংশ মিডিয়ার মালিক কোনো একজন ব্যবসায়িকের বা সমাজের কোনো এক বিত্তশালীর। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে সরকার পক্ষ যদি বেশি পুঁজির মালিকদের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারেন এবং তাদের একটু সুবিধাজনক জায়গায় রাখতে পারেন তবে তাদের মিডিয়ার চোখ আপনার দিকে ঘুরতে বাধ্য।

অন্যদিকে, কিছু কিছু প্রাইভেট বা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তি এত বড় অঙ্কের হয়ে থাকে যা রাষ্ট্র কে ঠিক করে দেয় যে, "ঠিক কী করতে হবে নির্দিষ্ট কোন এক পরিস্থিতিতে"।

মার্ক জাকারবার্গ কিন্তু অনেকগুলো মেশিনারি যুক্ত করেছেন ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে। ফলে আপনার কোন লেখা প্রকাশ পাবে আর কোনটা বিলুপ্ত হবে এমনকি কোন বিজ্ঞাপন আপনারা দেখবেন তা ফেসবুকের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঠিক করে দেবেন। ফলতঃ যে ফেসবুক আপনার একান্ত নিজের সোশ্যাল মিডিয়া মনে করছেন তা মূলত একটি প্রকাশনী। সোশ্যাল মিডিয়ার সমস্ত পোস্ট রাষ্ট্রপ্রধান তো বিবেচনায় আনবেন-ই পাশাপাশি ফেসবুকও।

যেমন- কোভিড সংক্রান্ত যে কোনো পোস্টের নিচে একটি বিশেষ সতর্কতা ফেসবুক নিজ দায়িত্বে লিখে দিচ্ছেন।

"Yes! Social Media has a code to be maintained, & it's becoming a publication rather than a media."

গণতন্ত্রের মালিক গণ নন: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে দেখবেন বর্তমান রাষ্ট্রনায়ক বা নেতা তার পরের রাষ্ট্র নায়ক হবার জন্য নির্দেশ করছেন নিজের কাউকে। অনেক দেশে তো এর দীর্ঘ বংশানুক্রম চলে এসেছে। মানে তার ছেলে বা তার মেয়ে অতঃপর তার মেয়ে বা তার ছেলে। উন্নত বিশ্বের কিছু উদাহরণ টেনে আমার এই অনুচ্ছেদ কে নিঃসন্দেহে ভুল প্রমাণ করার তীব্র প্রয়াস দেখানো যেতে পারে। যাদের মৌলিক সমস্যা অন্তত গণদের ভোগ করতে হয় না। কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বে এটি নজিরবিহীন। অর্থাৎ হঠাৎ করে আপনি দল গঠন করে প্রধানমন্ত্রী পদে যেতে পারবেন না। যদিও গণতন্ত্রের দাবী এটা। আবার গণ দাসত্ব স্বীকার করে নিয়েছে কোথাও না কোথাও যার ফলে তার দ্বারা নতুন ব্যক্তিবর্গদের নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম, নাই। ফলে ডমিন্যান্ট গ্রুপ শুধু ডোমিনেট করছেন না, গণও ডমিন্যান্ট হওয়াকে বা দাস হওয়াকে মেনে নিচ্ছেন। তাই দীর্ঘ অর্থে গণতন্ত্রের মালিক গণ নন(পুরোপুরি নয়)।

একনায়কতন্ত্র/ফ্যাসিবাদ: এরা সাধারণত ক্ষমতাশালী হয়ে থাকেন। একই সাথে রাষ্ট্র ক্ষমতা এবং ব্যক্তি সম্পদ নিয়ে নেমে পড়েন নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে। ফলে এদের ইমেজ রেশিও ঠিক করতে করতে মিডিয়া ভুলে যান তার আরো একটা কাজ আছে আর সেটা হলো, "সো কল্ড ডেমোক্রেসির চতুর্থ স্তম্ভ"। সো কল্ড কেন? একটু মাথায় ঘিলু থাকলে এই প্রশ্ন আমার কাছে করবেন না। এড়িয়ে যাবেন। আমি আপনার চেয়ে বেশি অজ্ঞাত।

কী ইমেজ বা মূর্তি দেখাতে হবে?

ধরুন, সরকার একটি তথ্য গণদের মনে স্থাপন করতে চাইছেন। সেটা হতে পারে কোনো সংখ্যা বা একটি ছবি যার ইতিহাসে অস্তিত্ব নেই। তখন সরকারি দপ্তরগুলো নথিপত্র ঘেঁটে সমস্ত পিছনের ইতিহাসে জানিয়ে দেন উমুক বা তমুক সরকারের সময় দেশের অর্থব্যবস্থা খারাপ ছিলো এবং সেই সংখ্যাটা ১০(হ্রাস করে বলবে)। ফলে আপনি বর্তমান সরকারের অর্জিত ১১ সংখ্যা দেখে ভাববেন দেশে উন্নয়ন হয়েছে। মূলত, বর্তমান সংখ্যাটা ন্যায় হচ্ছে কারণ পূর্বের সংখ্যাটি কম দেখা যাচ্ছে। ঠিক তেমনি করে একজন ব্যক্তিকেও এসব রাষ্ট্রনায়ক নতুন করে ইতিহাসে স্থান দিয়ে তার নাম লেখার ক্ষমতাও রাখেন।

এক্ষেত্রে মিডিয়া একটি চাপা আচরণ দেখাতে বাধ্য হোন। অনেকক্ষেত্রে জিম্মি হয়ে যান। তাই সংবাদমাধ্যম কে দাম না দিয়ে, বা অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে কখনো কখনো নিজের মাথা খাটানো ভালো হবে বলে বিবেচনায় আনছি।
ধন্যবাদ

(ছবি ধার নেওয়া হয়েছে politico.eu থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২১ সকাল ৮:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×