বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে আবদ্ধ নয়। যিনি বোরকা পরছেন তিনি ভিন্ন জগতের কোন প্রাণী নন। বোরকা বা পর্দা প্রথা একেক দেশে একেক রকম, একেক অঞ্চলে একেক রকম।
ইহুদীদের পবিত্র গন্থ ‘তাওরাত’ এ এমন কিছু আয়াত আছে, যেসব আয়াত সরাসরি পর্দা প্রথার কথা বলে না, কিন্তু কিছু ইহুদী পন্ডিতের মতে কিছু আয়াত নির্দিষ্ট অবস্থানের প্রেক্ষিতে পর্দা প্রথার কথা বলা হয়েছে বিবেচনায় নেওয়া হয়ে থাকে। এরমধ্যে আছে, ‘Leviticus 18:6-8’ ও ‘Numbers 15:31-34’।
উল্লেখ্য, ‘তাওরাত’ মুসলিমদের জন্যও পবিত্র গ্রন্থ। কিন্তু বর্তমানে এই আসমানী বা ঐশী গ্রন্থ (মুসলিম বা আমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী) ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। একাধিকবার সংযোজন, সংশোধন, পরিমার্জন বা পরিবর্ধন করা হতে পারে। আর একারণেই মুসলিমরা শুধুমাত্র পবিত্র আল-কোরআন ছাড়া অন্য কোন আসমানী কিতাব কে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না, বিশ্বাসও করে না।
মুসলিমদের (আমাদের) মতে, ইসলামে যে চারটি আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিলো সেসবের মধ্যে শুধুমাত্র পবিত্র আল-কোরআন সম্পূর্ণ ক্রটিমুক্ত হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেই হিসেবে ইহুদীদের সাথে আমাদের মানে মুসলিমদের পুরনো সম্পর্কও আছে। কিন্তু পরবর্তীতে যখন নতুন নবী বা মহানবী (সাঃ) এসেছেন সেটা তারা স্বীকার করেন নাই। যাকগে, ৪টি আসমানী গ্রন্থের তালিকা,
১. তওরাহ্: (Tawrah) - ইহুদিদের কাছে পবিত্র গ্রন্থ
২. যাবুর: (Zabur) - দাউদ নবীর কাছে নাযিল আসমানী গ্রন্থ (প্রাচীন ইজরায়েলদের)
৩. ইঞ্জিল: (Injil) - ঈসা নবীর কাছে নাযিল আসমানী গ্রন্থ (খ্রিস্টান)
৪. আল-কোরআন: (Al Quran) - মুহাম্মদ নবীর (সাঃ) কাছে নাযিল আসমানী গ্রন্থ (মুসলিম)
ভ্যাটিকান সিটির সবচেয়ে বড় চার্চের নাম হলো, ‘সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা’। এটি ক্যাথলিক বিশ্বের প্রধান গির্জা এবং খ্রিস্টান ইতিহাসের সবচেয়ে পবিত্র স্থানগুলির মধ্যে একটি। ভ্যাটিকান সিটির ক্রিস্টানদের এই চার্চে যারা নান হিসেবে নিযুক্ত আছেন তারা এক ধরণের বোরকা মত পোশাক পরেন এবং মাথায় সাদা হিজাবও দেখতে পাবেন।
শুধুমাত্র ভ্যাটিকান সিটিতে থাকা চার্চ নয়; প্রায় কমবেশি সব চার্চের নান’রা একই ধরণের পোশাক যা বোরকার মত সেটা দিয়ে তারা তাদের পুরো শরীরকে আবৃত করে রাখেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হলিউড ও বলিউডে নির্মিত সিনেমায় পর্যন্ত নানদের এভাবেই দেখানো হয়।
সুতরাং এমন সংস্কৃতি যদি খ্রিষ্টানদের মধ্যে না থাকতো তাহলে এই বোরকা মত পোশাক-আশাক আমরা দেখতে পেতাম না। উল্লেখ্য, খ্রিস্টানদের এই ‘নান’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘নান্নোস (Nannos)’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘বামন’ বা ‘ছোট্ট’। কিন্তু আরেক সূত্র মতে, এই ‘নান’ শব্দটি আরবি শব্দ ‘নুন (Nun)’ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘দাদী’। আর উনারা বোরকা মত যেটা পরেন সেটার নাম হচ্ছে ‘হ্যাবিট (Habit)’। এছাড়া উনারা হিজাব জাতীয় যে পোশাক পরেন সেটা হলো, ‘হেডড্রেস’।
শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক কারণেই তারা এই ‘হ্যাবিট’ বা ‘হেডড্রেস’ পরেন তাও নয়। এই সমস্ত পোশাক পরার জন্য ওদের কাছে কিছু ধর্মীয় কারণও আছে। বাইবেল থেকে সরাসরি ‘হ্যাবিট’ নিয়ে বলা না হলেও এই আয়াতগুলো অনেকাংশে ‘হ্যাবিট’ ধরণের পোশাক কে সমর্থন করে। যথাক্রমে ‘1 Timothy 2:9’ ও ‘1 Peter 3:3-4’ আয়াতগুলোতে নারীদের স্বর্ণ বা জুয়েলারি পরা পর্যন্ত নিষেধ করা হয়েছে এবং নারীদের ভেতরের মহত্ত্ব কে আরো বেশি আলোকিত করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
নান’রা বা দাদীরা মূলত সাংস্কৃতিক এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ পোশাক পরে থাকেন এবং তাদেরকে দেখে কেউ আকৃষ্ট হোক এটা তারা চান না। ফলে এই হ্যাবিট পরা তাদের শুধুমাত্র সংস্কৃতির অংশ নয়, হতে পারে না। কারণ নান হতে গেলেও বেশ কিছু শর্ত থাকে। মোট ৯টি মৌলিক শর্ত নানদের জন্য প্রযোজ্য। এই সমস্ত শর্ত যদি একবার পড়েন তাহলে এখানেও পর্দা প্রথার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে শুধু নান’রা পরলেই তো চলছে! তাই না? না। বাইবেলের ঐ আয়াতগুলো সবার জন্য প্রযোজ্য। মানে সকল খ্রিস্টান নারীদের জন্য প্রযোজ্য। এখন কেউ কেউ কেন পালন করছে? বা কেন করছেনা? সেটা তর্কের বিষয় হতে পারে, আলাদা টপিকও হতে পারে। আবার খ্রিস্টান ধর্মের মধ্যে ভাগও আছে। ইসলামে মোটাদাগে যেমন শিয়া–সুন্নি ভাগ বিদ্যমান। খ্রিস্টানদের মধ্যে মোটাদাগে ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট, অ্যাংগলিকান ও অর্থোডক্স বিদ্যমান রয়েছে। এরাও মুসলমিদের সাথে গুরুতর লেগেছি বহন করে। যীশু খ্রিষ্ট বা ঈসা (আঃ) এর ঘটনা দুই পবিত্র গ্রন্থ যথাক্রমে ইঞ্জিল ও আল-কোরআনে পাওয়া যায়। হ্যাঁ, পুরোপুরি মিল তো নাই।
আব্রাহামিক ধর্মে নারীদের পর্দা প্রথার বিষয়টি যতটা না ধর্মীয় তারচেয়েও বেশি ইতিহাস থেকে ঐতিহ্যগত এবং সাংস্কৃতিক। এই একই বিষয় আপনি হিন্দুধর্মেও দেখতে পাবেন। বিশেষ করে রাজস্থান ও পাঞ্জাব রাজ্যে। এছাড়াও হিন্দু ধর্মে তেমন কোন পর্দা প্রথার নিয়ম নাই কিন্তু সাংস্কৃতিকভাবে তারাও শালীন পোশাক পড়ে থাকেন। পুরো শরীর আবৃত করে রাখেন। নতুন বউ হলে তাকেও একটু রাখঢাক করে চলতে হয়। এখানেও কেউ কেউ মানেন তো কেউ কেউ মানেন না।
যদি এরকম ভয়ানক পর্দা প্রথা না থাকতো তাহলে ‘Laapataa Ladies’ সিনেমা পেতেন না। মানে বোরকার রঙ কালো হলেই সে শুধু মুসলিম নয়, সে আউট-কাস্টেড। মানে পাপী তো আমরা সবাই, তুমি (ইসলাম) একটু বেশি পাপী! ইসলামে কি হুবহু কালো বোরকা পরতে বলা হয়েছে? ইসলাম কি বোরকা পরাকেই পর্দা মনে করে? ইসলামে পর্দা প্রথা এসেছে ক্যামনে? চলুন এক নজরে বোরকার ইতিহাস আগে জেনে নিই!
প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সভ্যতায় নারীদের মুখ ঢেকে রাখার প্রচলন ছিলো। পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যে বোরকা পরার প্রথা শুরু হয়েছিলো ৭ম শতাব্দীতে। অন্যরা মনে করেন এটি প্রাচীন পারস্য বা মেসোপটেমিয়ায় উদ্ভূত হয়েছিল। ইসলাম ধর্ম বেড়ে উঠার সাথে সাথে বোরকা একটি ইসলামিক পোশাক হিসেবে ইসলামিক স্কলার’রা মনে করতেন, করেন। আমি আবারও বলছি, ইসলামিক স্কলার’রা/পন্ডিতেরা বোরকা পরাকে পর্দা প্রথার সঠিক ব্যবহার বলে ‘মনে করতেন’ বা ‘মনে করেন’।
যদিও কারো কিছু মনে করাতে ইসলাম চলে না, ইসলাম চলে পবিত্র আল-কোরআন ও হাদীসের আলোকে। কিন্তু এখানে আরো একটি আপদ আছে, যে হাদীস পবিত্র আল-কোরআন কে চ্যালেঞ্জ করবে উক্ত হাদীস কে বাতিল করে দিতে হবে। কারণ ইসলামে শুধুমাত্র পবিত্র আল-কোরআন কে ক্রুটিমুক্ত আসমানী গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন বোরকা পরার রীতি/সংস্কৃতি কে প্রতিষ্ঠার জন্য একাধিক হাদিসের সহায়তা নেয় কিন্তু সরাসরি পবিত্র আল-কোরআন থেকে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি (কালো বোরকা)।
কিছু সূত্র মতে, ইসলাম জন্মের হাজার বছর আগেও ‘হালাচা’ নামক একধরনের ইহুদী আইন ছিলো যে, বিবাহিত নারীরা পর্দা করে চলবেন। খ্রিস্টান নারীদের মাথায় স্কার্ফ বা হিজাব পরাও ছিলো প্রায় বাধ্যতামূলক (অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের জন্য)। এছাড়াও অনেক আগের ফটো পাবেন মেয়েরা বোরকা পরে আছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সে আবহাওয়া এবং বিদ্যমান সংস্কৃতি সেজন্য তারা বোরকা কে সমর্থন করবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ সেখানে ধূলোর ঝড় আসে। আর এই ধূলোর ঝড় থেকে বাঁচতে হলে পুরো শরীর আবৃত করা ছাড়া উপায় থাকে না, ওখানের পুরুষরাও জুব্বা পরিধান করেন। কেন? কারণ ধূলোর ঝড় বা সেখানের আবহাওয়া।
ইসলাম জন্ম নিয়েছে এক বর্বর সমাজে যেখানে নারীদের (সকল নারীদের) স্বাধীনতা অর্থে ব্যবসা-বাণিজ্য করবার বিষয়টিও ছিলো না। মা খাদিজা (রাঃ) কতবড় ব্যবসা করতেন কোন ধারণা আছে? শুধু ব্যাবসা-বাণিজ্য করতেন তাও নয়, তিনি প্রায় আক্ষরিক অর্থে একটি সম্রাজ্য পরিচালনা করতেন।
মা আয়েশা (রাঃ) সরাসরি কোনো যুদ্ধ পরিচালনা করেননি। তবে তিনি ইসলামের প্রথম গৃহযুদ্ধের একটি প্রধান ঘটনা, যা জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধ নামে পরিচিত, তাতে উপস্থিত ছিলেন। এই যুদ্ধটি ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়েছিল এবং এটি ছিল হযরত আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে তালহা, জুবায়ের (রাঃ) এবং আয়েশা (রাঃ) সম্মিলিত যুদ্ধ। এছাড়া, বনু মুস্তালিক যুদ্ধে তিনি রাসুল (স.)-এর সাথে ছিলেন, যদিও তিনি সেখানে যুদ্ধ পরিচালনা করেননি।
ইসলামের ইতিহাসে কিছু নারী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কিছু নাম হলো:
ইসলামের ইতিহাসে অনেক নারী যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। তবে, তাদের নাম এবং যুদ্ধের নাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য নারীর নাম এবং তাদের অংশগ্রহণকৃত যুদ্ধের নাম দেওয়া হলো:
১. খাওলা বিনতে আল-আজওয়ার (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: যর্মুক যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ)
২. উম্মে উমারা (নুসাইবা বিনতে কাব) (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: উহুদ যুদ্ধ (৬২৫ খ্রিস্টাব্দ)
৩. উম্মে হাকিম (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: মারজ আল-সাফফার যুদ্ধ (৬৩৪ খ্রিস্টাব্দ)
৪. সাফিয়্যা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: খন্দক যুদ্ধ (৬২৭ খ্রিস্টাব্দ)
৫. আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: ইয়ারমুক যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ)
৬. উম্মে সালেম (আল-রুমাইসা) (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: হুনাইন যুদ্ধ (৬৩০ খ্রিস্টাব্দ)
৭. ফাতিমা বিনতে খাত্তাব (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: বদর যুদ্ধ (৬২৪ খ্রিস্টাব্দ)
৮. উম্মে আমারা (গাজিয়া বিনতে আমর) (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: হুনাইন যুদ্ধ (৬৩০ খ্রিস্টাব্দ)
৯. উম্মে সুলাইম (আনসারিয়া) - যুদ্ধের নাম: খন্দক যুদ্ধ (৬২৭ খ্রিস্টাব্দ)
১০. হামনা বিনতে জাহশ (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: উহুদ যুদ্ধ (৬২৫ খ্রিস্টাব্দ)
১১. আতিকা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: বদর যুদ্ধ (৬২৪ খ্রিস্টাব্দ)
১২. উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ) - যুদ্ধের নাম: সাইপ্রাস অভিযান (৬৪৮ খ্রিস্টাব্দ)
রেফারেন্স সমূহ:
(১) ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা - Islamonweb Bangla
https://bangla.islamonweb.net/Womens-Rights-and-Dignity-in-Islam
(২) পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম কি নারীবাদ বিরোধী? - BBC News বাংলা
https://www.bbc.com/bengali/news-60658194
(৩) মসজিদে মহিলাদের অধিকার সংক্রান্ত ইসলামি বিল – উইকিপিডিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/মসà¦à¦¿à¦¦à§_মহিলাদà§à¦°_ঠধিà¦à¦¾à¦°_সà¦à¦à§à¦°à¦¾à¦¨à§à¦¤_à¦à¦¸à¦²à¦¾à¦®à¦¿_বিল
(৪) ইসলামে নারী – উইকিপিডিয়া
https://bn.wikipedia.org/wiki/à¦à¦¸à¦²à¦¾à¦®à§_নারà§
এই নারীরা ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে তাদের সাহসিকতা ও সামর্থ্যের জন্য সম্মানিত হয়েছেন। তারা যুদ্ধের ময়দানে সাহায্য করেছেন, আহতদের চিকিৎসা করেছেন, এবং কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। তবে এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়, আরও অনেক নারী ছিলেন যারা বিভিন্ন উপায়ে যুদ্ধে অবদান রেখেছেন। আর এই রেফারেন্স নারী স্বাধীনতা এবং ইসলাম কিছুটা হলেও নারীদের রাজনীতি করার অধিকার দেয়।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
“And strive for Allah with the striving due to Him. He has chosen you and has not placed upon you in the religion any hardship - the religion of your father Abraham. He named you ‘Muslims’ before [in former scriptures] and in this [revelation] that the Messenger may be a witness over you and you may be witnesses over the people. So establish prayer, give zakah, and hold fast to Allah. He is your Protector; and excellent is the Protector, and excellent is the Helper.”
- Al Quran 22:78
মহান আল্লাহ্ তায়ালা আরও বলেন,
“O children of Adam, We have bestowed upon you clothing to conceal your private parts and as adornment. But the clothing of righteousness - that is best. That is from the signs of Allah that perhaps they will remember." (Sahih International translation)
- Surah Al-A’raf, verse 26
আমাদের এই অধিকার কে দিয়েছে পবিত্র আল-কোরআনের আয়াতের অর্থ নিজেদের মত করে অনুবাদ করা? আর পোশাকের ব্যাপারে পবিত্র আল-কোরআনের মৌলিক অবস্থান হচ্ছে, ‘মার্জিত থাকা’। একজন সুস্থ মানুষ কীভাবে মার্জিত থাকতে হয় সেটা নিশ্চয় জানেন। খুব সম্ভবত এজন্যই পবিত্র আল-কোরআনের আয়াতের অতিরিক্ত ব্যখ্যা দেয়ার কোন প্রয়োজন মনে করছি না।
“And let them not display their adornment except what [ordinarily] appears thereof.”
- An-Nur 24:31
এখানে তর্ক-বিতর্কের জায়গা উঠে আসবে। সবাই আক্ষরিক ভাবে যাবেন তো না-ই। কিন্তু আমার মতে, ‘adornment (সজ্জা, অলঙ্করণ, সজ্জীকরণ, অলংকার, ভূষণ ইত্যাদি)’ শব্দ দিয়ে আল্লাহ্ শুধু নারীদের প্রাইভেট অংশ কাভার করতে বলেছেন এবং বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক সাজসজ্জা বা অলংকরণ পরা থেকে নিষেধ করেছেন। কারণ তর্কের বিষয় আমি রাখতে চাই না। আমি পবিত্র আল-কোরআন পড়েছি এবং আমার কাছে এটিই সঠিক বলে মনে হয়েছে।
অতএব, পবিত্র আল-কোরআনের মতে, আমরা পাচ্ছি মেয়েদের পর্দার কথা বলতে মাথায়, বুকে কাপড় দেয়া বোঝানো হয়েছে। দৃষ্টিকে নত করা। এমন ভাবে হাঁটা, চলাফেরা করা, যাতে তার দৌহিক সৌন্দর্য্য প্রকাশ না পায় অন্য পুরুষের (বেগানা পুরুষ) সামনে।
পবিত্র আল-কোরআনে কোথাও বোরকা পরার কথা বলা হয়নি। পর্দা যে কাপড় দিয়ে করা হবে তার রঙ বা দৈর্ঘ্য (কালো বোরকা বিবেচনায়) এর কথাও উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়নি পা পর্যন্ত লম্বা কাপড় পরতে হবে বা কালো কাপড়ের বোরকা পরতে হবে। বলা হয়নি হাতে মোজা-পায়ে মোজা পরতে হবে। চোখের সামনে দুই অংশের কাপড় ঝুলাতে হবে। মূল ব্যপার হচ্ছে, মার্জিত থাকা। যাতে করে সমাজে কোন রকম উচ্ছৃংখলতার সৃষ্টি না হয়।
এ বিষয়ে পবিত্র আল-কোরআনে মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
“O Prophet! Instruct your wives, daughters, and the believing women to draw their veils over themselves. This will make it easier to identify them, and they will not be harassed. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful.”
- Surah Al-Ahzab, Verse 59
এখানে যে শব্দ নিয়ে ঝামেলা হয়, সেটা হলো ‘আরবি: جِلَابِيب, (পোশাক)’। জালাবিব হলো এক ধরণের লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাক যা মহিলারা তাদের শরীর ঢেকে রাখার জন্য পরিধান করে। এটি হিজাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মহিলাদের জন্য পোশাকের নিয়মকানুন নির্ধারণ করে। কিন্তু এটি ফরজ নাও হতে পারে, এখানে কোন আদেশ না উপদেশ ব্যাখ্যায় দুই দল হতে পারে। আমি উপদেশ ব্যাখ্যায় নিচ্ছি। যদি কেউ মানেন তাহলে ভালো, যদি কেউ না মানেন তাহলে মহান আল্লাহ্ তায়ালা এই আয়াতে নিজেই বলেছেন, “...আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।”
“All the creatures on earth, and all the birds that fly with wings, are communities like you. We did not leave anything out of this book. To their Lord, all these creatures will be summoned.”
- Surah Al-An'am 6:38
এখানে ... “We did not leave anything out of this book” – আয়াতের এই অংশটুকু পবিত্র আল-কোরআনের আয়াতের প্রতি মুসলিম হিসেবে আরো বেশি বিশ্বাসী হবার কথা বলা হয়েছে। এবং অতিরঞ্জিত হবে না যদি আমি বলি যে, পবিত্র আল-কোরআন যা বলেছে সেটাই অপরিহার্য।
এজন্যই পর্দা নিয়ে আমার অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। কাউকে তো মাতাব্বরি করতে বলা হয় নাই ধর্মের ব্যপারে। একটা ওড়না দিয়ে মাথা, বুক ঢাকার কথা বলা হয়েছে যেখানে, সেখানে হাতে মোজা-পায়ে মোজা সহ চোখের উপর দুই অংশের বোরকার ফতোয়া দেয়া কি সীমালঙ্ঘন নয়? এ দায়িত্ব কে ঠিক করে দেবেন?
ইসলামে পবিত্র আল-কোরআন অনুযায়ী নিজের বিবেক ব্যহারের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং পর্দা কে কালো বোরকার মধ্যে ফেলা, হাত ও পায়ে মোজা পরলেই পর্দা এসব আমি বিশ্বাস করি না। এবং আমার মতে, আমার পবিত্র আল-কোরআন সেটা বিশ্বাস করতে বলেও না।
অবশ্য যারা পর্দা প্রথা মানছেন, তারা চালিয়ে যান। যারা মানছেন না, তারা একটু না-হয় শালীন পোশাক পরবেন। এখানে যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে এর মৌলিক কোন ভিত্তি নাই। আর যেকোনো হাদীস আমি খারিজ করবো যদি পবিত্র আল-কোরআনের কোন আয়াত কে কোনভাবে চ্যালেঞ্জ করে বা তার বিপক্ষে যায়।
ছবি: Bing Enterprise (Copilot Ai)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩