somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

কলা, কোটা ও কল্যাণ: নিরপেক্ষতার সন্ধানে

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘নিরপেক্ষতা’ বলতে আমরা কি বুঝি? আমরা যে পৃথিবীতে বসবাস করছি এখানে নিরপেক্ষতা কীভাবে ফাংশন করছে? এই প্রশ্ন দুটোর সহজ একটি উদাহরণ এরকম হতে পারে: মনে করি, রহিম ও করিম দুই ভাই। তাদের বাবা জনাব গোলাম মওলা বাজার থেকে দুটো কলা এনে দুজনের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রহিম পেলেন ১টি কলা, করিমও পেলেন ১টি কলা।

উপরোক্ত উদাহরণ শুনতে যত সহজ ‘নিরপেক্ষতা’ শব্দটি ঠিক ততটাই কঠিন। সাধারণত একজন মানুষের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। গোলাম মওলা অনেক ভেবেচিন্তে কলা দুটো ক্রয় করলেও তিনি জানেন না, ভেতর থেকে কোন কলা বেশি পেকেছে বা পচে গেছে। তিনি জানেন না, কোন কলার দৈর্ঘ্য প্রস্থ সামান্য কম বা বেশি। তিনি জানেন না, কোন কলা খেতে বেশি সুস্বাদু লাগবে আর কোনটা একটু কম। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গোলাম মওলা জানেন না, রহিম ও করিমের মধ্যে কার জন্য ‘কলা’ খাওয়াটা তার শরীরের জন্য অনেক বেশি জরুরী।

ফলে এই উদাহরণে জনাব গোলাম মওলা একদিন ঠিকই বুঝতে পারবেন, যে, তিনি যা করেছেন তা ঠিক করেন নাই। তিনি নিজের অজান্তেই ভালো কিছু করতে গিয়েও বৈষম্য করেছেন বা পক্ষপাতিত্ব করেছেন।

একটি রাষ্ট্র পর্যন্ত বারবার বিপাকে পড়েছে এই বৈষম্য প্রতিরোধে। সাবেক অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহু দোষ আছে। কিন্তু তার ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হলো, ‘নিরপেক্ষ’ হতে না পারা বা ‘নিরপেক্ষ’ হবার চেষ্টাই না করা। ১৯৭১-২০০৮ সাল পর্যন্ত কোটা ব্যবস্থা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে সেটাই ২০০৮-পরবর্তী সময়ে বৈষম্যের কারণ হয়েছে। এই কথাগুলো আমার মনমর্জি মোতাবেক বলছি না। এই কথাগুলো প্রায় সরাসরি ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন (PSC)’ -এর পরিসংখ্যান। ২০০৮ সালে এসে দেখা যায়, জেলা কোটায় ভাটা পড়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাশ কম বা পদ খালি থেকে যাচ্ছে। অথচ, এই দেশে বেকারত্বের অভিশাপ দিন দিন বাড়ছে।

রাষ্ট্র বেশকিছু জায়গায় প্রায় সরাসরি পক্ষপাতিত্ব করে থাকে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠলে মেয়েদের উপবৃত্তি দেওয়া হয়। কেন? কারণ মেয়েদের স্কুল ড্রপ-আউট ছেলেদের চেয়ে বেশি। যথাক্রমে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি দেওয়া হয়। এমনকি এসএসসি পাশে উল্লেখ করে করে একাধিক ব্যাংক ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত শুধুমাত্র দারিদ্র্য কিন্তু মেধাবীদের জন্য বৃত্তি প্রদান করে থাকে। কেন? কারণ রাষ্ট্র বা সিস্টেম চায় মেধাবী দারিদ্র্য ছেলে/মেয়েটাও সিস্টেমে থাকুক। দাস হিসেবে হোক বা কর্তা হিসেবে। দুইভাবেই নির্দিষ্ট ব্যবস্থার ও রাষ্ট্রের লাভ রয়েছে।

রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী মহলকে যদি এই ‘পক্ষপাতিত্ব’ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন তাহলে তারা উত্তর দেবেন একটু ঘুরিয়ে। তারা হয়তো বলবেন, এসব হলো ‘ভালো পক্ষপাতিত্ব’। ইংরেজিতে ‘Good Discrimination’/‘Good Bias’। কিন্তু আমরা ছোটবেলা থেকে কি পড়লাম? কি জানলাম? আমরা শিখলাম বৈষম্য/পক্ষপাতিত্ব যে কোনো নামেই আমাদের সামনে আসুক না কেন আমরা কোনোভাবেই পক্ষপাত করবো না।

এখন ফিরছি, ঠিক কোন বিন্দু থেকে এই পক্ষপাতিত্ব আমাদের গায়ে লাগতে শুরু করে। অথবা, আমাদের মনে হয়, আর চুপ থাকা যায় না!

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এখানে একটি ক্লাসিক উদাহরণ আছে। প্রথম প্রজন্ম (স্বাধীনতা প্রজন্ম: ১৯৪৬-১৯৭১ পর্যন্ত) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় বিশেষ সুবিধা পেল এবং ভাতাও পেল। দ্বিতীয় প্রজন্ম (পুনর্গঠন প্রজন্ম: ১৯৭২-১৯৯৭) পর্যন্ত) সরকারি চাকুরী পেলো এবং তারাও ভাতা পেলো। সর্বশেষ তৃতীয় প্রজন্ম (ডিজিটাল প্রজন্ম: ১৯৯৮-২০২৩) পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলো। এমনকি সুযোগ-সুবিধা বর্ধিত হতে থাকলো। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুন মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান করা হয়।

ইতিমধ্যেই একটি পরিবারের একাধারে অন্তত দুই থেকে তিনটি প্রজন্ম যথেষ্ট স্বাবলম্বী। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এক মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহসী পদক্ষেপ রাখার জন্য রাষ্ট্র আপনার টানা দুইটি প্রজন্মকে টেনে নিম্নবিত্ত হলে মধ্যবিত্ত পর্যায়ে এনেছে এবং মধ্যবিত্ত হলে উচ্চ-মধ্যবিত্ত পর্যায়ে অন্তত এনেছে।

এছাড়াও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল রাষ্ট্র সর্বোচ্চ সুবিধা আপনাদের সকল ক্ষেত্রে প্রদান করেছে। আর এখানেই ‘ভালো পক্ষপাতিত্ব’ -এর নাম করে মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় প্রজন্ম বা নাতি-নাতনীদের পর্যন্ত গড়াতে পারে না। আর যদি গড়ায় সেটা কখনোই ‘ভালো পক্ষপাতিত্ব’ বলে চালিয়ে দেবার আর সুযোগ থাকলো না।

এই একই ধরণের কথা খেটে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে, চাকুরী পেতে অথবা, বাংলাদেশ রেলওয়ের মত একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে স্বাধীন রাষ্ট্রে এসব প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কিছু পরিবারের জমিদারি রয়েছে। পক্ষপাতিত্ব ঐ পর্যন্ত মানায় যখন বর্তমান জরিপ বলছে, একটি নির্দিষ্ট ধর্ম/গ্রুপ/কমিউনিটি/জেলা/উপজেলা/জাতি/উপজাতি পিছিয়ে রয়েছে, বা, ৫০% এর কম অংশীদারিত্বের বিষয়টি ফুটে উঠেছে ঠিক তখন। কিন্তু ২০০৮ সালের পূর্বে বা পরে নাই কোনো জরিপ বা জরিপ থাকলেও কোটায় কমবেশি বা সুবিধায় বিন্দুমাত্র কমবেশি অন্তত আমার চোখে পড়ে নাই।

আমি সরাসরি কোটা/ভাতা/সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বিপক্ষে নই। কিন্তু কোন জায়গা থেকে আস্তেধীরে কমাতে শুরু করবে সে বিষয়ে জেনেও না জানার ভান করার বিপক্ষে। আপনি একবারে সব বন্ধও করে দিতে পারবেন না। এতে অযাচিত বিপ্লবের মুখোমুখি হতে পারেন, আন্দোলনের মুখোমুখি হতে পারেন। আপনাকে কোথাও একটু একটু করে কমাতে হবে আবার কোথাও একটু একটু করে দিতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, রেমিট্যান্স বাংলাদেশের টিকে থাকার জন্য একটি বড় মাধ্যম বা মিডিয়াম। লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ বিদেশ থেকে যখন টাকা পাঠায় সেখানে ভ্যাট-ট্যাক্স বসালে তো চলবে না। বরং সেখানে আরো টাকা যুক্ত করতে হবে এবং তাদের অবদানের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করতে হবে। এজন্য অবশ্য হাতেগোনা দুই-একটি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও রাষ্ট্র নিজ থেকে খুব বেশি সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নাই কখনো। আজও বিকাশে রেমিট্যান্স এলে ভ্যাট কিন্তু ঠিকই কেটে নেয়। কেন ফ্রি-তে দিলে রাষ্ট্রে এটুকু ভ্যাট সহ্য করতে পারে না? অথচ, যে রেমিট্যান্স ছাড়া এই দেশ অচল!

পরিশেষে, আমাদের আগে বুঝতে হবে ‘ভালো পক্ষপাতিত্ব’ জিনিসটা আসলে কী? এইচএসসিতে যে দারিদ্র্য মেয়েটাকে দুই নম্বর দিলে পাশ করে যেত তাকে ফেল করিয়ে দেশ সামনে এগুবে না। সোজা বিষয়। কারণ ঐ ২ নম্বরের জন্য আর তার পরিবার তাকে পড়াশোনা-ই করাতে চাইবে না। সামান্য ক’টা টাকার জন্য প্রশ্নফাঁস/সুপারিশ করে চাকুরী দিলে চলবে না, এতে করে ইংরেজি বিষয়ে আরো ব্যর্থতা আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×