somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

অতি সাধারণ ও নিখুঁত মানুষ থেকে সাবধান! মিররিং (Mirroring) এবং CAGE ম্যানিপুলেশনের ফাঁদ

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছু মানুষের সাথে মোটেই ঝামেলায় জড়াবেন না। এই মানুষগুলোকে মোটামুটি উপর থেকে দেখলে নিরীহ প্রকৃতির মানুষ বলে মনে হতে পারে। সাধারণ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে অতি সাধারণ মানুষ বলেও মনে হতে পারে। লেনদেনে সবসময় স্বচ্ছতা বজায় রাখেন। কারো সাথে খারাপ আচরণ করার রেকর্ড নাই। এমনকি তিনি যে ফোন নম্বর ব্যবহার করছেন সে ফোন নম্বর ৫-৭ বছরের পুরনো। একই ই-মেইল অ্যাড্রেস, একই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ, একই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত লেনদেন—এসব দেখলে মনে হবে, আপনি চাইলেই মুহুর্তের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে সব তথ্য হাতে পেয়ে যাবেন।

সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুকে হাতেগোনা তার কিছু বন্ধু আছে এবং তারা সক্রিয়। মানে যখন তিনি কোনোকিছু পোস্ট করেন তখন তার বন্ধুরা খুব সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেন। ইন্সটাগ্রামে বাছাই করা বেশ কিছু ছবি, সময় ও তারিখ অনুযায়ী খুবই গোছানো। মনে হবে অতিরিক্ত একটি ফেসবুক পোস্ট, অতিরিক্ত একটি টুইট বা অতিরিক্ত একটি ফটোও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন নাই। তার ফোনে অতিরিক্ত অ্যাপ্লিকেশন দেখবেন না। হাতেগোনা ও অতি পরিচিত বা সবাই ব্যবহার করেন এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশন।

তিনি কখনোই কথা দিয়ে কথার খেলাপ করেন না, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। তার কাছে সকাল ১০টা মানে হচ্ছে সকাল ১০টা, বিকেল ৩টা মানে হচ্ছে বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা মানেই সন্ধ্যা ৬টা। তিনি কখনোই দেরি করেন না। তিনি যখন আপনার সাথে দেখা করেন তখন আপনি লক্ষ্য করবেন যে, তিনি বেশ গোছানো ও পরিপাটি এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ‘সাধারণ’। তিনি শব্দচয়নের ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক। কাউকে কষ্ট দিয়ে মোটেই কথা বলেন না।

আপনি যতদূর তার সম্পর্কে জানবেন তা হলো একটি গোছানো জীবনের চিত্র। অহেতুক ঝামেলা তিনি পছন্দ করেন না। অহেতুক কিছুই তিনি করেন না। উনার পড়াশোনা, চাকুরী ও ব্যবসাও বেশ নিয়ন্ত্রিত। মনে হবে উনি আসলে ঠিকঠিক জানেন উনাকে কখন কি করতে হবে। এর বাইরেও তিনি অনেক ভালো শ্রোতা। আপনার দুঃখের গল্প তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা শুনে যেতে পারেন যদি তার হাতে সময় থাকে। তার সম্পর্কে আপনি যত জানবেন আপনি তত বেশি মুগ্ধ হবেন। আপনার জীবনের গল্পের সাথে তার গল্পের একধরনের মিল খুঁজে পাবেন।

রাত দুপুরে ফোন করলেও তিনি শান্ত হয়ে আপনার কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে থাকেন। আস্তেধীরে আপনার মধ্যে তার মত হবার তীব্র ইচ্ছার প্রকাশ পেতে পারে। আপনি চাইবেন এমন একজন বন্ধু আপনার জীবনে থাকুক। অথবা, আপনি সারাজীবন এমন একজন প্রেমিক/প্রেমিকাকে-ই তো খুঁজছিলেন!

শুরু শুরুতে আপনাদের মধ্যে দেখাশোনা হবে কাকতালীয়ভাবে এবং একটা সময় পর ঘনঘন দেখা হতে পারে। তিনি যখন নিজ সম্পর্কে কথা বলেন সেটার বয়ান আপনার দুঃখ-কষ্ট কে পরোক্ষভাবে যেন সমর্থন জানায়।

এরকম ব্যক্তির পুরো প্রোফাইল ঘেঁটে অন্তত একটি খুঁত খুঁজে পাওয়া মুশকিল হতে পারে। আপনাকে তিনি প্রায় প্রায় বলতে পারেন, “পৃথিবীতে তোমার মত আরো মানুষ থাকলে পুরো পৃথিবীটাই অনেক সুন্দর হত!” অথবা, “আপনার চোখে কাজল খুব মানায়!” বা, “আপনাকে এই শার্টে খুব মানিয়েছে!”

তিনি শুধু শোনেন না, পর্যবেক্ষণও করেন। আপনার পছন্দ ও অপছন্দের খবর রাখেন। হয়তো হঠাৎ আপনার জন্মদিনে আপনার পছন্দের একটি জামা উপহার দিয়ে বলতে পারে, “আগামীকাল এই জামা পরে আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?” আপনি ঠিক ‘না’ করতে পারবেন না।

আপনি ইতিমধ্যেই উনার আচরণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। আপনি তার মত হতে চান। এখন আপনি তার পরামর্শে পোশাক-আশাক পর্যন্ত পরেন। কারণ আপনার মনে হয়, মানুষটি অতি নিখুঁত, সুতরাং তার পছন্দের মূল্যায়ন করা মানে হচ্ছে নিজেরই মূল্যায়ন করা। আপনি আপনার মধ্যেই এই নিখুঁত হবার বিষয়টি আস্তেধীরে টেনে আনতে শুরু করেন। আপনি চান প্রায় হুবহু তার মত হতে এবং সম্ভব হলে তাকে ছাড়িয়ে যেতে।

তিনি যদি আস্তে হাঁটতে পছন্দ করেন তবে আপনিও আস্তেধীরে হাঁটবেন। তিনি যদি আস্তে কথা বলেন আপনিও আস্তেধীরে কথা বলতে শুরু করবেন। তিনি যে আচরণ দেখান আপনিও অনুরুপ আচরণ দেখাবেন।

আর এই স্লো-বার্ণ ম্যানিপুলেশন কৌশল আপনাকে ইতিমধ্যেই ‘মিররিং (Mirroring)’ -এর দিকে ঠেলে দিয়েছে। ঐ ব্যক্তি এখানে হয়ে ওঠে একটি আয়না এবং আপনি তার প্রতিচ্ছবি মাত্র। আপনার নিজস্ব কোনো ব্যক্তিত্ব এতে গড়ে উঠবে না। আর এই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব গড়ে না উঠাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘আইডেন্টিটি ডিফিউশন (Identity Diffusion)’ এবং ‘Enmeshment’।

১. Identity Diffusion = কে আমি, কী আমার মূল্যবোধ—এ নিয়ে স্পষ্ট ধারণার অভাব; অস্থির, অসম্পূর্ণ আত্মপরিচয়।
২. Enmeshment = নিজেকে আরেকজনের (পার্টনার/প্যারেন্ট/গুরু) থেকে আলাদা করে ভাবতে না পারা; মানসিকভাবে ‘একাকার’ হয়ে যাওয়া।

এছাড়াও তিনি যে কাজল পরার প্রশংসা করছেন বা জামা উপহার দিচ্ছেন এটা এক ধরণের ‘স্টাইল-হাইজ্যাকিং’। এই ধরণের প্রোফাইলিং-এর ক্ষেত্রে ‘Taste Implantation via Grooming Signature’ বলাই সবচেয়ে নির্ভুল হতে পারে। কারণ আপনি আগামীতে ঐ রেস্তোরাঁয় খেতে যাবেন যেখানে আপনি তার সাথে একবার হলেও বসেছিলেন।

কিন্তু এই পুরো কৌশল প্রয়োগ করে একটি আর্থিক মডেলও দাঁড় করানো যায়। যেখানে আপনাকে তিনি খুব সহজেই পার্টনার হিসেবে পাবেন।

উদাহরণস্বরূপ: তিনি প্রথমে তার একটি স্টার্ট-আপ আইডিয়া আপনাকে জানাবেন। তারপর তিনি দেখাবেন, কেন তিনি সেটা বাস্তবে করতে পারছেন না। তারপর দেখাবেন, একজন পার্টনার হলেই তিনি ঐ স্টার্ট-আপ শুরু করতে পারবেন।

আপনার তখন মনে হবে যেহেতু মানুষটা এতবেশি স্বচ্ছ ও নিখুঁত সেহেতু তার আইডিয়াও ওয়ার্ক করবে। আর আইডিয়া খেটে গেলে আপনিও দুই পয়সা পাবেন। সমস্যা এখানে আর্থিক মডেলের নয়। সমস্যা হলো, ঐ ব্যক্তির আইডিয়াকে আপনার নিজের আইডিয়া হিসেবে মনে করা এবং সেটা নিয়ে গাধার মত করে কাজ করে যাওয়া।

এই পর্যায়ে আপনাকে পাঁচ স্তরের ম্যানিপুলেশন করা হতে পারে:

১. Vision Seeding: আমার এক স্টার্ট-আপ আইডিয়া আছে, কিন্তু একা করতে পারছি না। টার্গেট মানে ‘আপনি’ ভাবেন, এত নিখুঁত মানুষের আইডিয়াও নিশ্চয় জিনিয়াস কিছু হবে।
২. Shared Dream Framing: তুমি যদি আমার পার্টনার হও, আমরা একসাথে কাজ করতে পারবো। এখন স্বপ্নটা তারও; কিন্তু ভাবনাটা আপনার।
৩. Micro-Investment Hook: প্রথম ধাপে আমাদের ছোট্ট একটা বাজেট দরকার। তুমি যদি বিশ্বাস করো, তবে একটু সাহায্য করো। ছোট্ট অংক → বড় অংক; ক্রমবর্ধমান ‘সিঙ্ক কস্ট’।
৪. Identity Collateral: তুমি তো আমার মতো হয়ে গেছো! এখন আমাদের পথ এক। টার্গেট আর ফিরে যেতে পারছে না; ব্যর্থতা মানে নিজের মানে ‘আপনার’ ব্যর্থতা।
৫. Gaslighting Buffer: যদি সন্দেহ করো তাহলে সে বলতে পারে, “তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না?” এটা এক ধরণের রিভার্স গিল্ট; সন্দেহ দমন।

এই পাঁচ ধাপ একসাথে ‘CAGE (Capture-Align-Guide-Extract)’ মডেল নামেও পরিচিত।

সতর্কতা: আমাদের ডার্ক সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করতে এজন্যই নিষেধ করা হয়। কারণ প্রতারণা থেকে মুক্তি ও প্রতারণার কৌশল একইসাথে পড়া হয়ে যায়। এখানে সত্যিই কেউ ভালো বন্ধু হতে পারে, প্রেমিক/প্রেমিকা হতে পারে। কাজল চোখে সত্যিই আপনাকে মানাতে পারে। আর ঐ শার্ট সত্যিই আপনার গায়ের রঙের সাথে যেতে পারে। এই ধরণের ব্যক্তি মানেই এমন ভয়ংকর তা নিশ্চিত হয়ে বলা উচিত নয়। কেউ কেউ সত্যিই আপনাকে ভালোবাসেন।

ছবি: Qwen
Also Read It On: অতি সাধারণ ও নিখুঁত মানুষ থেকে সাবধান! মিররিং (Mirroring) এবং CAGE ম্যানিপুলেশনের ফাঁদ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×