somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘ্রাণ

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নানা ধরনের চিকিৎসা করার পরও ভাল করে তার কোন রোগ ধরা পরছে না। দিন দিন শুধু তার অবনতি হচ্ছে অনেক কিছু করার পরেও তবুও তাকে বিছায়নায় শুয়ে শুয়ে দিন-রাতা কাটাতে হচ্ছে আসিফের। কখন যে সকাল হয় আর কখন রাত হয় কিছুই সে বলতে পারে না, বলতে পারে না তার মনের কথা, ইচ্ছে, সব কিছু । আসিফের চোখে কোনে শুধু পানি ঝড়তে দেখা যায়, তার সেই অসহায় করুণত্বতায় পানি দেখে পরিবারে সবাই আনমনা হয়ে তারাও হু হু করে কাঁদতে থাকে।

মাঝে মাঝে কিছু আশ্চর্য ঘটনা ঘটে, আসিফ কিছু কিছু সময়ে হঠাৎ করে পরিবর্তন দেখা যায় খাবার ডাকা থাকলে তা সে নিজেই খেয়ে নেয়, গুন গুন করে সাথে কথা বলে, কিছু সময় তার মুখে হাস্যজ্জ্বল হয়ে উঠে অনেকটা স্বাভাবিক এর মত হয়ে যায়। ওই সময়টার জন্য পরিবারের সবাই আসিফকে বেশির ভাগ একা রাখে।

সব ঘটনা ও তার পরিস্থিতি শুনে কোন ধরনের চিকিৎসকরা কিছু বলতে পারে না কোন কিছু ভালো পরামর্শও দিতে পারে না এই রোগের। সব শেষে বড় এক মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে কিছু পরামর্শ পাওয়া যায় তবে তার কোন সমাধানের ও সুস্থতার চিকিৎসা পাওয়ার মত কোন আশা পাওয়া যায়নি। আসিফের প্রাণ ত্যাগের একটা কথা বলা হয় যে, সে কোন সময় তার দেহে থেকে প্রাণ ত্যাগ করতে পারে। আর তাকে যেন প্রায়ই সময় একলা থাকতে দেয়া হয়। এ ধরনের কথা শুনে আসিফের পরিবার পুরোপুরি মর্মাহত হয়ে যায়, চোখের পানি আর মনে আত্ম-চিৎকার করে আল্লার ধ্যানে সবাই মশগুল হয়ে পরে।

‪#‎অতীত‬- আসিফের সাথে একটি মেয়ের সাথে (নাম-সুহা) এক মধুর ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। এ ভালোবাসা যেন অন্যান্য সব ভালোবাসার চাইতে অনেক অদ্ভুত ও নিখুঁত ছিল। তাদের দেহের দুটি প্রাণ ও দুটি মন এক। কারো কিছু হলে আরেকজনের হত, একজন আরেকজনের মনে কথা বুঝত, একজন আরেকজনকে প্রতিনিয়ত অনুভব আর কল্পনায় জড়িয়ে থাকতো। এক জনের চোখের পানি ছিল আরেকজনের বুকের রক্ত। কেউ কাউকে অল্প সময়ের জন্য ছেড়ে থাকতে পারতো না।

১৪ই ফ্রেব্র“য়ারী তাদের দুটি জীবনের একটি বিশেষ দিন ছিল। রাত থেকেই দুজন ফোনে কথা বলা শেষ করে ভাবছিল কে কিভাবে ভালোবাসা বেশি বাসে সেটা প্রমাণ করার জন্য দুজনই চিন্তা-ভাবনা মগ্ন হয়ে পড়েছে। চিন্তা-ভাবনা করতে করতে একসময় ভোর হয়ে ভেলা হতে শুরু করে। তাদের ভাবনা যেন শেষ হয়নি কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা যে কিভাবে তার চাইতে বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করে তাকে উইশ করবে। বেলা হবার সময় এগুতে লাগলো, রাত জেগে চিন্তা-ভাবনার সুফলতা না পাবার কাড়নে দুজনেরই মন মরা অবস্থা। যাই হোক দুজনকেই তো তাদের এই বিশেষ দিনে এক তো হতে হবে। তাই তারা ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে একজন আরেকজনের পছন্দের রঙের পোশাক পরে বেড়িয়ে পড়লো।

আসিফের আগে সুহা বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে এবং আসিফকে ফোন দিয়ে বলে, তা শুনে আসিফও দ্রুত বেড় হয়। দুজন একটি নিড়িবিল পার্কের কাছে পৌঁছায়। দেখা হয় দুজনের, দুজন একটি বড় রোডের দুপাশে দাড়িয়ে আছে তারা সেই দূরত্ব থেকে একজন আরেকজনকে দেখে অপলক ভাবে চেয়ে আছে। তখন সুহার লজ্জায় চোখের অপলক ভেঙ্গে রাস্তা পাড় হতে লাগলো তখন হঠাৎ করে এক মালবাহী ট্রাক এসে সুহাকে ধাক্কা দিয়ে ২০ হাত দুরে ফেলে দেয়। আসিফ হতভম্ব হয়ে যায়, তার পায়ের হাঁটু ভাজ হয়ে লুলিয়ে পরে, সে এখনো সেই দৃশ্যটির দিকে চেয়ে আছে। পা দুটো হাঁটু ভাঙা ভাজ হয় পরায় উঠতে পারছে না, মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পারছে না। আসিফ পলকহীন ভাবেই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে, সে কিছু করতে পারছেনা, তার মাথায় কিছুই কাজ করছে না। আসলে আসিফ সাথে সাথেই বাক-প্রতিবন্ধী হয়ে তার সারা শরীর অবশ হয়ে যায়। #

আসিফের এই দৃশ্যটাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা দুজন যখন পাশাপাশি থাকতো সুহার দেহের থেকে এক সুভাসের ঘ্রাণ বের হত। দুটি মন, দুটি দেহ সব কিছু যখন এক ছিল তখন আসিফের কাছে কাছে সেই ঘ্রাণটা তার মনে আবদ্ধ ছিল।

আসিফের মাঝে মাঝে হঠাৎ স্বাভাবিক হবার কারণ ছিল সুহার সেই ঘ্রাণটা সে প্রায়ই সময় পেতো যখন সে একলা থাকতো। তখন আসিফ মনে করতো যে সুহা তার কাছে ফিরে এসেছে, তার কাছেই আছে সুহা। সেই ঘ্রাণটা আসিফকে সব কিছু করাতো খায়িয়ে দিতো, তার সাথে যেন কথার মালা শুরু হত, মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিত, অনেক কিছু। আসিফের সেই গুন গুন শব্দটা ছিল, আসিফ যখন সেই ঘ্রাণটি পেতে তখন সে বারে বারে বলতো সুহা তুমি এসেছ, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না সুহা, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা, পারলে তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাও, সুহা, সুহা, কিছুতো বলো সুহা......

আসিফ তার এই অস্বাভাবিক জীবন প্রায় ৫বছর কাটায়। ১৪ই ফেব্র“য়রী যখন আবার বেক হয়, হঠাৎ করে আসিফ সেই দিন সকাল ঘুম থেকে চোখ খুলেনি। পরিবারে নেমে আসে শোকে ছায়া। আসিফ হয়তো চলে যায় ঘ্রাণের সাথে সুহার কাছে। দুজনই এই পৃথিবীতে রেখে যায় তাদের দেহ, রেখে যায় ভালোবাসার অনেক স্মৃতি। মিলিত হবে তাদের দুই আত্মার হবে অন্য কোন জগতে।

পৃথিবীতে সত্যিকারের ভালোবাসা এমনি সেটা বেশীর ভাগ পৃথিবীতে পরিপূর্ণতা পায় না। আসলে এরকম ভালোবাসা আসে আমাদের জন্যই, যাতে আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসতে পারি, এসব ভালোবাসা আমাদের ভালোবাসতে শেখায়। তবে আমরা এইরকম ভালোবাসায় অধিকাংশই ব্যর্থ। আর তাই আসিফ আর সুহার ভালোবাসাও এই দুনিয়াতে ব্যর্থ তবে তাদের পরজমের জন্য পরিপূর্ণ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×