somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরা যদি করে পণ করতে পারে দু:খ বিমোচন

০৯ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. খায়রুল। নামের আগে পরে কিছু আছে কিনা জানিনা। দেখা হলে আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম দিতাম। একটু সামনের দিকে বেঁকে হন্টনরত ও তখন নিতান্ত সরল একটা হাসি দিয়ে বলত 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম'। বাস এতটুকুই। কোনদিন মনটা একটু হালকা থাকলে (নিত্যদিন চারঘণ্টা তত্তীয় ক্লাস আর টানা চারঘণ্টা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ব্যবহারিক ক্লাসের ধকল এরপর যাতায়াত আর পড়ানো দুয়ে মিলে প্রায় চারঘণ্টার টিউশনি এ সবের সম্মিলিত আছর থেকে মনটা মুক্ত থাকলে) সংক্ষিপ্ত ভাবে জিজ্ঞেস করতাম 'কেমন আছ'? আবারও মুচকি হাসি বিলিয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর 'ভাল'। ও আমাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করত কিনা সেটা মনে পড়ে না। সামান্য কয়েকটা দাড়িবিশিষ্ট(প্রচলিত ভাষায় ছাগলের দাড়ি) মাঝে মাঝে দেখতাম নামাজের রুমে। দীর্ঘ ছয় বৎসরে তার সাথে আমার মিথস্ক্রিয়া এই কয়েকটা কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোনদিন তার সাথে এর অতিরিক্ত কোন কথা বা মিথস্ক্রিয়া হয়ে উঠেনি। আজ গত কয়েকদিন ধরে মনে পড়ছে ভীষণ। এখনও তার সহজ সরল মুচকি হাসিতে উদ্ভাসিত চেহারা জ্বলজ্বল করে ভাসছে চোখের সামনে। কেন এমন হচ্ছে? কেন স্রেফ সালাম আর কুশল বিনিময় ছাড়া আর কোন কথাবার্তা হয়নি যার সাথে তার ছবিটা চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে? হায়রে মৃত্যু! জীবিত যে খায়রুলকে সামনে পড়া অবস্থায় ছাড়া আর কখনও মনে হত না তাকে তুমি এত আপন করে দিলে?

২. অন্য সব ছাত্রের মত মা-বাবার সাথে ঈদুল ফিতর উদযাপন করার জন্য বাড়িতে গিয়েছিল খায়রুল। সেখান থেকে স্বপ্নের ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে পারেনি সহজ সরল এই ছেলেটি। আর কোনদিন সে ফিরে আসবে না মুচকি হেসে কারো সালামের উত্তর দিতে। কিংবা সে ফিরে আসবে না ইফতার মাহফিলের জন্য টাকা জমা দিতে গিয়ে ভাংতি সমস্যায় পড়া সব বন্ধুদের বলতে 'সবাই আমার কাছে টাকা দেও আমি ভাংতি কইরা দেই'। গত ২৫ সেপ্টেম্বর মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে খায়রুল চলে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে অনন্তের পথে। কোনদিন আর সে ফিরে আসবে না।

৩. পরিবারের বড় ছেলে ছিল খায়রুল। ওর আব্বা এমপিওভুক্ত নয় এমন একটা এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক। ওর ছোট ভাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে সম্মান প্রথম বর্ষে পড়ে। পুরো পরিবারের ব্যয়ভার ওর আব্বার সামান্য এই চাকরির আয় দিয়ে বহন করা সম্ভব হত কিনা কে জানে। হয়ত খায়রুলকে টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতে হত। সড়ক দুর্ঘটনার পর ওর চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল ওকে। সেখানেও মোটা অংকের টাকা বকেয়া হয়ে আছে যদিও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সবমিলিয়ে আর্থিকভাবে ওর পরিবারের অবস্থা খুবই শোচনীয়।

৪. একটু আগে হলে ডাইনিং-ক্যান্টিনের তুলনায় ভাল মানের খাবারের জন্য তৈরি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মেস শহীদুল্লাহ হলস্থ '১নং মেস' এর মাসিক সভা শেষ করে ফিরলাম। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এই মেসগুলো সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়ে গঠিত ১১ সদস্য বিশিষ্ট ২ মাস মেয়াদী কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। বাজারও করে প্রতি ১০ দিনের জন্য নির্বাচিত হওয়া একজন করে সদস্য। সিরিয়াল অনুযায়ী মোটামুটি সিনিয়র ছাত্ররা এগুলোর সদস্য হতে পারেন। যাহোক, সভার নিয়মিত আলোচ্যসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করার পরপরই খায়রুলের সহপাঠী রাসেল সাধারণ সদস্যদের আসন থেকে উঠে আসল এবং খায়রুলের মৃত্যসংবাদ ও তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তোলে ধরে সব সদস্যদের আহবান জানাল খায়রুলের ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা এ ব্যাপারে চিন্তা করতে। প্রস্তাব উঠল মেসের প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে খায়রুলের পরিবারের জন্য ১০০ টাকা করে নেয়া হোক। সকল সদস্যের সম্মতিক্রমে পাশ হল সেই প্রস্তাব। শুনলাম '১নং মেস' এর পরে তৈরি হওয়া এ হলেরই অন্য এক মেস 'বিকল্প মেস' এর সদস্যরাও নাকি একই রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।


'মহাপতঙ্গ' এর সেই চড়ুই পাখিটার কথা মনে পড়ছে ভীষণ। হলে সীট পলিটিক্স, ছাত্রনেতা আর কর্মীদের ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, শিক্ষক রাজনীতি আর হাজারো রকমের 'ছি: ছি:' ধিক্কার পাওয়ার বৈশিষ্ট্য থাকার পরও চড়ুই পাখিটাকে দোপেয়ে দৈত্যদের উদ্দেশ্যে ওরই সঙ্গিনীর গাওয়া গানটা স্মরণ করিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে: 'ওরা যদি করে পণ, করতে পারে দু:খ বিমোচন'।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×