somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উদ্বৃত্ত মূল্য লুন্ঠনের ডাক্তারি ফর্মূলা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাপারটি কাকতালীয়। হাসিরও বটে। তবে এ কাকতালীয়, হাস্যকর ঘটনাটি না ঘটলে পুঁজির সঞ্চায়ন ও মুনাফা লাভের বিস্তৃত এবং কার্যকর চলমান ডাক্তারী ফর্মূলাটি সম্পর্কে এতটা কাছে থেকে জানা হতো না। অনুমান করা যেত না বিভিন্ন প্যথলজীক্যাল টেস্টের মাধ্যমে কমিশনভূগী ডাক্তাররা কী পরিমাণ অর্থ লুন্ঠন করেন। লুন্ঠন এ জন্য বললাম যে, কোন প্রকার পরিশ্রম ছাড়া শুধু কমিশন হিসেবে এ টাকা ডাক্তারা পেয়ে থাকেন (অবশ্যই সব ডাক্তার নন, বিপরীত চিত্র নিশ্চই আছে)।
আমাদের দেশের ডাক্তারা তাদের প্রেসক্রিপশনের জন্য প্রতিটি পরীক্ষার বিপরীতে কমিশন পেয়ে থাকেন। এটি জানা কথা। ডাক্তারদের এ কমিশন খাওয়া (কমিশনজীবী, ডাক্তারদের একটি বড় অংশের এটি এখন দ্বিতীয় পেশা) নিয়ে যতই ক্ষোভ থাকুক না কেন আমরা বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছি। কিন্তু ডাক্তারদের এ কমিশনের শতকরা হার কত? এ সম্পর্কেই একটি সাদামাটা ধারণা পাওয়া গেল আমার ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া সে কাকতালীয় ঘটনা থেকে।
সামান্য কয়েকটি টেস্টের জন্য একটি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলাম সে দিন। টেস্টগুলোর নাম আমার জানা ছিল। ফলে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নেয়া হয়নি সাথে করে। রিসিপশনে প্রেসক্রিপশন চাইলে বললাম-প্রেসক্রিপশন লাগবে না। আমি নাম গুলো বলছি, আপনারা লিখুন। যথারীতি খুব দ্রুত টেস্টের নামগুলো বললাম। টেস্টের নামগুলো কম্পিউটারে পোস্টিই দিয়ে আমাকে বললো, টেস্টগুলোর মোট ফি চারশত বিশ টাকা। তবে আপনার কমিশন ১২০ টাকা বাদ দিয়ে আপনাকে দিতে হবে মোট তিনশত টাকা। আমি ভাবলাম, হয়তো কোন স্পেশাল মার্কেটিং প্রমোশন ক্যাম্পেইন চলছে। সে জন্য এ ব্যবস্থা। কমিশন পেয়েও আমিও খুশি। যাক একশো আশি টাকা বেঁচে গেল। পাগলা ঘোড়ার মতো প্রতিদিন ছুটে চলা এ বাজার মূল্যে কয়কজি চালতো সংসারের জন্য কেনা যাবে।
রিসিপশন থেকে একজন আমাকে সরাসরি ল্যাবে নিয়ে গেলেন। খুব তাড়াহুড়া করে আমার পরীক্ষাগুলোর ব্যবস্থা করলেন। মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। আমিও বেজায় খুশি। এ রকম সার্ভিসই তো চাই। সবসময়, সব রুগীদের জন্য। সব পরীক্ষার জন্য আমার ব্লাড ও ইউরিন স্যাম্পল দেয়ার পর যখন তাদের মার্কেটিং ম্যানেজার আমার কাছে আসলেন এবং তার ভিজিটিং কার্ডটি দিয়ে বললেন, স্যার আপনি এদিকে কোন ক্লিনিকে প্রাকটিস করলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, তখনই আমার আক্কেল গুড়ুম। আমি বুঝতে পারলাম যা হওয়ার তা হয়েছে। কোন ধরনের প্রেসক্রিপশন ছাড়া টেস্টগুলোর নাম সাবলীলভাবে বলতে পারায় তারা আমাকে যে, পেশায় একজন ডাক্তার ভেবেছেন, এবং সে ভুল ভাবনা থেকে যে আমার কমিশন প্রাপ্তি সেটি বুঝতে আর বাকী রইলো না। যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসলাম। ডাক্তার না হয়েও ডাক্তারী ফর্মূলায় কমিশন প্রাপ্তিতে হাসি ও কষ্ট দু'টোই অনুভূত হতে থাকলো। মনে মনে হিসাব কষতে থাকলাম আমি যে কমিশনটি পেয়েছি তা ঐ ডায়গনস্টিক সেন্টারের লাভ সহ যে প্রকৃত মূল্য তার কত ভাগ? আমাকে ডাক্তার ভেবে ভুল করে যে কমিশনটি দেয়া হয়েছে সে হিসেবে দেখা যায় একজন ডাক্তার তার প্রেসক্রিপশনে লিখিত প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য কোন ধরনের পরিশ্রম ছাড়াই শতকরা ৪০টাকা আয় করেন। কোন ধরনের পরিশ্রম ছাড়া এ জন্যই বললাম, কারণ দয়া করে রুগী দেখার জন্যতো রুগী আমাদের মহান ডাক্তারদের আগেই ফি দিয়ে থাকেন।
আমি মনে মনে আরও একটি হিসেব কষার চেষ্টা করলাম। আমি যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে গিয়েছি তা মোটামুটি একটি মাঝারি মানের। প্রতিদিন গড়ে এক-দেড়শো রুগী বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করাতে যান ওখানে। যদি প্রতিটি রুগীর গড় টেস্টের মূল্য পাঁচশত টাকা হয় (প্রকৃত পক্ষে পরিমাণটা বেশি হবে) তবে একশ জন রুগী থেকে এ ডায়গনস্টিক সেন্টার ফি বাবত পেয়ে থাকে দিন প্রতি গড়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা। এ পঞ্চাশ হাজারের ডাক্তারী কমিশন হচ্ছে বিশ হাজার টাকা। সে হিসেবে ডাক্তারা প্রতি মাসে কোন ধরনের পরিশ্রম ছাড়া গরিব রুগীর কাছ থেকে লুন্ঠন করে ৬ লাখ টাকা ( এ হিসাবটা অবশ্যই ন্যুনতম)। বছরে ৭২ লাখ টাকা। এটি একটি মাঝারি আকারের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হিসেব। ঢাকা শহরের সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হিসেবটা কষলে ডাক্তারী ফর্মূলায় রুগীদের কাছ থেকে লুন্ঠিনকৃত টাকার পরিমাণটা কত দাঁড়াতে পারে আমার মনে হয় সে হিসাবটা এখানে না দিলেও চলে।
এ ভাবে ডাক্তারী বিদ্যার ফলিত ফর্মূলা দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে চুষে নেয়া হচ্ছে তাদের অর্জিত আয় এবং সঞ্চয়। আয় অবচয়ের ফাঁদ পড়ছে গরীর রুগী-জনসাধারণ। অপরদিকে প্রতিদিন বেড়ে চলছে মানব-রোগের পুঁজিতান্ত্রিক বাণিজ্য। গড়ে উঠছে ক্লিনিক-হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সবই ব্যক্তি মালিকানায়। যেখানে মুনাফাই একমাত্র কথা। রোগী, তার অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনার অযোগ্য। সরকারি হাসপাতালগুলোকে পরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালই ছিল গরিব-জনসাধারণের একমাত্র ভরসা। মানুষ, মানুষের রোগ-শোককে পণ্যে পরিণত করার এ ব্যবস্থার কাছে কি মানাবিক আদর্শ-মূল্যবোধ পরাজিত হতেই থাকবে? এ জবাটি কে দেবে?

(পুনশ্চ: ডাক্তার না হয়ে জীবনে একবার ডাক্তারী ফর্মূলায় কমিশন ভোগ করার জন্য দুনিয়ার সমস্ত কমিশনভুগী ডাক্তারের কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীলদের সাথে আছেন......)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:১৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×