somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগের তারুন্য-তারুন্যের শাহবাগ: বিনম্র অভিবাদন তোমায়

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল বিকেল। তখনও অফিস সময় শেষ হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তখনও দু’ঘন্টা বাকি। কিন্তু সহকর্মীদের মধ্যে একটি জোট তৈরি হয়ে গেল। দলবেঁধে যাওয়া হবে। কোথায়? শাহবাগে। যার নতুন নাম এখন শাহাবাগ স্কয়ার। কেউ বলছেন শাহবাগ চত্ত্বর। ৭১ এর যুদ্ধাপরাধী, খুনী ও মানবতাবিরুধী অপরাধে যাবজ্জ্বীবন দন্ডপ্রাপ্ত জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবিতে জেগে উঠা দেশপ্রেমিক তারুন্যের উচ্ছলতা আর প্রচন্ড প্রতিবাদের গর্ভ থেকে জেগে উঠা এ এক নতুন জমিন। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের নতুন ক্ষেত্র। নতুন ঠিকানা। দেশ মাতৃকার প্রতি গভীর মমতাবোধ, ভালবাসা আর অগ্রজদের প্রতি দায়বোধ থেকে এ এক নতুন দ্রোহের জন্ম। আর এ দ্রোহের সাথে, প্রতিবাদের সাথে, প্রতিরোধে যুক্ত হওয়ার গভীর বাসনার প্রতিফলন হচ্ছে অফিসের রুটিন কাজ ফেলে শাহবাগের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা। একজন সহকর্মী বললেন, একাত্তুর দেখিনি। যুদ্ধে যেতে পারিনি। সে অভিজ্ঞতা নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আজকের তরুন প্রজন্ম হিসেবে এটি আমাদের জন্য নতুন সুযোগ। নতুন সম্ভাবনা। নতুন এক একাত্তুরকে খুব কাছ থেকে অনুভব করা। অযুত কন্ঠে জানান দেয়া যে, কাদের মোল্লা সহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসী চাই-ই-চাই।

শান্তি ও দ্রোহের এক অভাবিত সম্মিলন ঘটেছে আজ শাহবাগে। শাহবাগ হাটতে শুরু করেছে শাহবাগের সীমানা থেকে। হাটতে হাটতে শাহবাগ পৌছে যাচ্ছে পরীবাগ-বাংলামোটর, কাকরাইল, ফার্মগেট। শাহবাগ পৌছে যাচ্ছে রমনা। তারপর শাহবাগ থেকে জন্ম নিচ্ছে নতুন শাহবাগ; চট্রগ্রাম, বগুড়ায়, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, সবখানে। গোটা বাংলাদেশ আজ যেন শাহবাগ। প্রতিবাদী শাহবাগ। টগবগে শাহবাগ। তারুন্যের শাহবাগ। নতুন মুক্তিযুদ্ধের শাহবাগ। শাহবাগ তোমায় বিনম্র অভিনন্দন।

যুদ্ধাপরাধ এর বিচার বন্ধে সক্রিয় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী খুব সচেতনভাবে অনেক দিন থেকে বলে আসছিল যে, আজাকের তরুন-তরুনীর কাছে ৭১ এর কোন আবেদন নেই। যুদ্ধাপরাধ এর বিচার নিয়ে তারা ভাবিত নয়। বরং ৪০ বছর পর এমন ইস্যুর অবতারণা নতুন প্রজন্মের অনাগত সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া। তাদের ধারণা ছিল বাজার আর ভোগবাদী অর্থনীতি যেভাবে ক্রমাগত সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধের উৎপাদন-পুনরোৎপাদন করছে তাতে জামাত নেতা গোযম গংদের কি রায় হলো, কার কী সাজা হলো তা নিয়ে আজকের তারুণ্য কোন চিন্তা করে না। করবে না। এটি তাদের চিন্তার বিষয় নয়। কিন্তু ব্লগার ও অনলাইনভিত্তিক প্লাটফরমে সক্রিয় তরুন-তরুনীদের তাৎক্ষণিকভাবে ফেটে পড়ার মধ্যে প্রমাণিত হলো আজকের তারুন্যের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একেবারেই তরতাজা বিষয়। কোন ভুলে যাওয়া গীত নয়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি আমাদের প্রাণের দাবি। তাইতে প্লাকার্ডের সাদা কাগজ ভরে উঠে কবির কবিতার লাইন দিয়ে- কাঁদতে আসিনি, ফাঁসীর দাবি নিয়ে এসেছি। না শাহবাগে কেউ কাঁদছে না। কান্নার প্রশ্নই আসে না। বরং ফাঁসীর দাবিই উচ্চকিত হয়ে উঠছে শাহবাগের এখানে-ওখানে, গানে, শ্লোগানে, সিনেমায়, প্রতিবাদী কন্ঠস্বর-এ।

সব চেয়ে ইতিবাচক দিক হলো যে এ দ্রোহের সূচনা হয়েছে একেবারে নতুন প্রজন্মের হাতে। এ সময়ের তরুন-তরুনীদের হাতে। কোন ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক দলের হাতে নয়। যে সম্ভাবনা রাজনৈতিক সংগঠন জাগিয়ে তুলতে পারে নি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নেতাকর্মী গড়ে তুলতে পারেনি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শক্তিবলে দাবিদার আ’লীগ পারে নি সেটিই সম্ভব করে তুলেছে এ তরুনরা। রাজনীতিক রথি-মহারথিদের নৈতিকভাবে বাধ্য করেছে শাহবাগ ছুটে আসতে। হাত মেলাতে। ঐকমত্য প্রকাশ করতে।
হে শাহবাগের তারুন্য-তারুন্যের শাহবাগ: বিনম্র অভিবাদন তোমায়!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×