somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলে ভরা বাঙ্গালীদের ভুল বুঝানোর ডিগ্রী হচ্ছে বার এট ল বা ব্যারিস্টার

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্যারিস্টার উপনিবেশকাল থেকে চলে আসা উপমহাদেশের এক সম্মানজনক ডিগ্রি। ওকালতি পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা আছে, এমন অনেকেই চায় বার অ্যাট ল’ ডিগ্রি নিতে। তার আগে জানতে হবে ব্যারিস্টার কে বা বার এট ল ডিগ্রী কি?
ব্যারিস্টারঃ ব্যারিস্টার একজন আইনজীবী যিনি উপযুক্ত বিচারব্যবস্থায় আদালতের সামনে একজন আইনজীবী হিসাবে মামলাকারীর পক্ষে মামলা পেশ করেন। একজন ব্যারিস্টার আদালতে কথা বলেন এবং বিচারক বা জুরির সামনে মামলাটি উপস্থাপন করেন।
কিছু বিচার বিভাগে, ব্যারিস্টার প্রমাণ আইন, নীতিশাস্ত্র এবং আদালতের অনুশীলন এবং পদ্ধতি সম্পর্কে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ পান। বিপরীতে, একজন আইনজীবী সাধারণত মক্কেলদের সাথে দেখা করেন, প্রস্তুতিমূলক এবং প্রশাসনিক কাজ করেন এবং আইনি পরামর্শ দেন। এই ভূমিকায়, তিনি আইনি দলিলের খসড়া এবং পর্যালোচনা করতে পারেন, মক্কেলের সাথে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন, প্রমাণ প্রস্তুত করতে পারেন এবং সাধারণত একটি মামলা-মোকদ্দমার যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে পারেন। আদালতে থাকাকালীন একজন আইনজীবী ব্যারিস্টারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন প্রদান করতে পারেন, যেমন মামলার বড় পরিমাণে নথি পরিচালনা করা বা এমনকি বিচার চলতে থাকা অবস্থায় আদালতের কক্ষের বাইরে কোনও নিষ্পত্তি সমঝোতা করা।কয়েকটি বিচারব্যবস্থায় ব্যারিস্টারদের সাধারণত "মামলা পরিচালনা" করা নিষিদ্ধ করা হয়।
নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি অঞ্চলের সাধারণ আইনগত ব্যবস্থাগুলোর মতো কয়েকটি দেশে, আইনজীবীরা ব্যারিস্টার এবং আইনজীবী উভয় ভূমিকায় আইনচর্চার অধিকারী, তবে কেবল ব্যারিস্টার হিসাবে আইনচর্চারজন্য একটি পৃথক যোগ্যতার ব্যবস্থা রয়েছে।
আদালতে ব্যারিস্টাররা প্রায়শই তাদের পোশাকের মাধ্যমে সলিসিটারদের থেকে দৃশ্যমানভাবে পৃথক হন। উদাহরণস্বরূপ, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ব্যারিস্টার সাধারণত ঘোড়াশহর উইগ, স্টিফ কলার, ব্যান্ড এবং একটি গাউন পরিধান করেন। জানুয়ারি ২০০৮ সাল থেকে সলিসিটারের উকিলরাও উইগ পরার অধিকারী হয়েছিলেন, তবে বিভিন্ন গাউন পরেন
অনেক দেশে ব্যারিস্টার এবং আইনজীবিদের মধ্যে ঐতিহ্যগত বিভাগগুলি ভেঙে যাচ্ছে। ব্যারিস্টাররা একবার উচ্চ আদালতের সামনে উপস্থিতিতে একচেটিয়া অধিকার উপভোগ করেছিলেন, কিন্তু গ্রেট ব্রিটেনে এটি এখন বাতিল করা হয়েছে, এবং সলিসিটারের আইনজীবী সাধারণত ক্লায়েন্টদের বিচারের জন্য উপস্থিত হতে পারেন।

ব্যারিস্টার অ্যাট ল’র সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে বার অ্যাট ল’। আইন পেশায় যারা নিয়োজিত হতে চান, তাদের জন্য ইংল্যান্ড বার কাউন্সিলের একটি সম্মানজনক সনদ হচ্ছে বার অ্যাট ল’। একজন ব্যারিস্টার হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য ৯ মাসের একটি বার ভোকেশনাল কোর্স (বিভিসি) করতে হয়, যার বর্তমান নাম বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (বিপিটিসি) । এতে ১২টি নৈশভোজে অংশ নিতে হয়। কোর্স সফলভাবে শেষ করলে মেলে ইংল্যান্ড বার কাউন্সিলের সনদ।
বার অ্যাট ল’ কোর্সটি ইংল্যান্ডের চারটি ইন’স-এর যে কোনো একটি থেকে করতে হয়। অর্থাৎ লিনকনস ইন, গ্রেইস ইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল এ চারটি ইন’স-এর মধ্যে যে কোনো একটি আপনাকে বেছে নিতে হবে। সনদ ইন থেকে দেওয়া হলেও কোনো একটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করতে হয়। ইন’স অব কোর্ট, স্কুল অব ল’, কলেজ অব ল’, বিপিপি ল’ স্কুল, নটিংহ্যাম, নর্দামব্রিয়া, ব্রিস্টল, কার্ডিফ, ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন এ ৯টি প্রতিষ্ঠানে বার অ্যাট ল’ করা যায়। এর যে কোনো একটিতে পড়তে পারেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যারিস্টার এর আইনগত কোন ভিত্তি বা গুরুত্ব নাই। আছে শুধু ব্রিটিশ গোলামীর অংশ হিসেবে মনস্তাত্বিক অগ্রাধিকার। ব্রিটিশ উপনিবেশ আমাদের মনের উপর এমন প্রভাব ফেলেছে যে তারা যা করে তাই ভালো। তাদের গায়ের রং ফর্সা তাই আমরা সুন্দর বলতে গায়ের রং ফর্সাকে বুঝিয়ে থাকি। অথচ কালোর মধ্যেও সুন্দরের অবস্থান রয়েছে। তাইতো রবীন্দ্রনাথ বিলেতের ব্যারিস্টারী ডিগ্রীকে পায়ে ঠেলতে পেরেছিলেন এবং উপনিবেশিক মানসিকত থেকে বের হয়ে এসে বলতে পেরেছেন,“ কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক। মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ ”।
কেরানী তৈরী করা ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে অবুঝ বাঙ্গালী আজ উচ্চ শিক্ষা নিতে লন্ডনে গমন করে আইনের উপর উচ্চতর ডিগ্রী ব্যারিস্টার এট ল গ্রহন করে দেশে ফিরে আসছেন যা আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে সাধারণ আইন ডিগ্রীর সমান। ব্যারিস্টার = বাংলাদেশের পাবলিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের উপর চার বছর মেয়াদী ডিগ্রী= যে কোন বিষয়ে স্নাতক+ দুই বছর মেয়াদী এলএলবি ডিগ্রী। এদের প্রত্যেককেই বার কাউন্সিল এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অ্যাডভোকেট বা আইনজীবি হতে হয়ে। অর্থাৎ ব্যারিস্টার মানেই আইনজীবি নয় আইনের উপর ডিগ্রীধারী কোন ব্যক্তি বিশেষ।
বাংলাদেশের আইনজীবীদের বলা হয় অ্যাডভোকেট। আমেরিকাতে আইনজীবীকে বলা হয় অ্যাটর্নি। তেমনি করে অস্ট্রেলিয়ার আইনজীবীকে বলা হয় ব্যারিস্টার আর ইংল্যান্ডের আইনজীবিদের বলা হয় সলিসিটর।
ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে আইনজীবিদের মধ্যে বিশেষ আইনজীবীদের বলা হতো ব্যারিস্টার। পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে বার কাউন্সিল আইনে সকল আইনজীবিদের অ্যাডভোকেট বলা হয় ।
ব্রিটিশ শাসন নেই কিন্তু বাঙ্গালীদের মনে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব রয়ে গেছে। তাই তারা ব্রিটিশ শিক্ষা নিতে সদা তৎপর। বাঙ্গালীর এই ব্রিটিশ প্রীতি বুঝতে পেরে লন্ডন থেকে এক বিশেষ ডিগ্রী প্রবর্তন করা হয় যার ব্যবহার ইংল্যান্ডে নাই আছে শুধু বাঙ্গালীর মননে । সেই ডিগ্রীর নাম ব্যারিস্টার এট ল বা বার এট ল শুধু ব্যারিস্টার। লন্ডন থেকে এই ডিগ্রী প্রদান করা হলেও ইংল্যান্ডে কেউ নামের সাথে ব্যারিস্টার ব্যবহার করতে পারে না। বাংলাদেশের আইনেও এর কোন প্রাধান্য নাই শুধু অবুঝ বাঙ্গালীর হ্রদয়ে উচু স্থান দখল করে আছে ব্যারিস্টার।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৫৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×