somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপূর্ণতা (ছোটগল্প)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এই মুহূর্তে যে আমার পাশে বসে আছে সে আমার বিয়ে করা বউ!
ভাবতেই অবাক লাগছে। আমি বিয়ে করার জন্য গ্রামের বাড়ি যাইনি। বিয়ে করার কোন পরিকল্পনা আমার ছিল না। আমার মত নির্ভেজাল মানুষ বউ যোগাড় করতে পারবেনা, আমার মা তা আগেই টের পেয়েছিলেন। অসুস্থতার কথা বলে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যেতে বললেন, তারপর বিকালে মেয়ের বাসায়। সব কিছু বুলেট ট্রেনে চেপে দৃশ্য দেখার মত মনে হচ্ছে! ধুর না গেলেই ভালো হত। আমার মত একলা থাকা মানুষের সাথে আরেকজন থাকবে কিভাবে? আমি রাত হলে তারস্বরে ভিনদেশী তারা গাই, গল্প লিখি, মুভি দেখি না হলে বই পড়ি আর সকালে ডিম ভেজে নাস্তা করে অফিস যাই। সবার কাছে এ যাপিত জীবন সাধারণ কিন্তু আমার কাছে স্বর্গীয়।

ওর নাম অধরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট। বাংলা’য় পড়েছে। বিয়ের দিন মানে আজকে আমার সাথে অধরা’র তেমন কথা বার্তাই হয়নি। জিগ্যেস করলাম কিসে পড়েছেন? উত্তর এল, বাংলাতে। কোন হল’এ থাকতেন? এবার উত্তর এল, রোকেয়া হলে। মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে তার হবু বউমার সাথে গল্প জুড়ে দিলেন। আমাকে আগেই সাবধান করে দেয়া হয়েছিলো তুই কোন কথা বলবি না। তোর কাঠ-খোট্টা কথা শুনলে তোকে কেউ বিয়ে করবেনা। আমি সেই দুই উত্তর নিয়ে কিচমিচের মত চুপসে রইলাম। ছোট মামার দিকে তাকালাম, সে খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত। আমার দিকে তাকানোর মত সময় তার হাতে নেই।

মেয়ে দেখা-দেখির পালা শেষ। মামা আমার দিকে হাসি মাখা আলু আলু মুখ নিয়ে জিগ্যেস করলেন, মেয়ে পছন্দ হইছে? দেখে কেমন মনে হল?
-ভালো মনে হল। কিন্তু।
কিন্তু-টিন্তু বাদ তুই এখানে বস, আপাকে বলি কাজী ডাকতে। আমি হা হয়ে মামার চলে যাওয়া দেখছি, এই লোক কি বিয়ে খাওয়ার ধান্ধায় আমার সাথে এগুলো করতেছে? খেয়ে খেয়ে আলু হইছে, হাটলে ফ্লোর কাঁপে।

শোন, মেয়ে ভালো। আমি সব খোঁজ খবর নিয়েছি। কয় মাস হল পড়ালেখা শেষ করে এসেছে। এখন চাকরী বাকরীর জন্য পড়ালেখা করছে। তুই একা থাকিস, তোর তো দেখার কেউ নাই ওখানে। আমি তো থাকি এই গ্রামে, এখানে সবাই একসাথে থাকি, ভালোই আছি।
-মা আমি ঢাকাতে যাওয়ার পর থেকেই একা থাকি। আমার সাথে কেউ থাকতো না।
এরকম সম্বন্ধ আর পাওয়া যাবেনা। মেয়ে নম্র-ভদ্র, আমাদের বাসায় বেড়াইতে গেছিলো পাশের বাসার রেণু আপার সাথে, তখনই তো আমি দেখে তোর জন্য পছন্দ করছি। কাজী সাহেব এখনই চলে আসবে তুই ওযু করে ড্রইং রুমে আয়।
-তার মানে আগে থেকেই সব রেডি!
-হুম সব রেডি, তুই বাড়ি আসতেই চাস না, মেয়ে মানুষ হুট করে কখন বিয়ে হয়ে যায়!
আমার মাথা কাজ করছে না, এরকম অনুভূতি হত আরসিসি পরীক্ষার সময়।

অধরা কান্নাকাটি করছে অনেকক্ষণ। বাঙ্গালি মেয়েরা বিয়ের পর পর কান্নাকাটি করা তাদের দায়িত্ব মনে করে। তাকে কি বলে থামানো যায়? বাসের ভিতর সবাই তাকায় আছে। তাকে একটা শক্ত কথা বলে দেখা যায়।
-তুমি আজ থেকে আমার দাসী বুঝছ। যা বলবো তাই শুনবা। বেশি বুঝবা না।

আমার কথা কাজে দিছে। অধরা কান্না থামিয়ে আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিয়ের দিন অন্যরা কাঁদে তাই সেও কাঁদছিল, এখন নিজের ইচ্ছায় কাঁদবে বলে মনে হচ্ছে। মাথা নামিয়ে দুম মেরে বসে আছে। নিশ্চিত সে আমার উপর রাগ করেছে। তবুও চুপ মেরে আছে, এতেই শান্তি। তোমার ওয়াশরুমে যাওয়া লাগলে যাও, এখন ব্রেক দিছে।
-আপনি চলেন, একা ভয় করছে। ব্যাগে গহনা আছে, টাকা আছে।
-আচ্ছা চলো। আর শুনো আমাকে আদেশের সুরে কখনো কিছু বলবা না।
-আচ্ছা বলবো না।

অধরা আমাকে কিছুই বলছে না। সে খুবই স্বভাবিক আচরণ করছে। ভাবটা এমন, সে জানে সত্যিকারের মানুষটা আমি এমন না। এই মুহূর্তে স্বাভাবিক থাকার অর্থ অধরা বোকা অথবা বুদ্ধিমতী। মাঝামাঝি কোন অবস্থানে সে নেই।

বাড়ি ফিরতে রাত বারোটা। এসি বাস তাই ক্লান্তি নেই। অধরা আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল, আমিও ঘুমিয়েছি অনেকক্ষণ। সিএনজিতে বাসায় আসতে লাগলো বিশ মিনিট। দুই রুমের ফ্ল্যাট, নিজের রাজত্ব আমার। আজ থেকে আরেকজন ভাগীদার, ভাবতেই মনে হচ্ছে আমার সব কাজেই সে ভাগ বসাবে। অবশ্য একটু উপকার হবে। মাঝে মাঝে চা-কফি বানিয়ে খাওয়াবে, এই কাজটা আমার কাছে ভীষণ আলসেমি লাগে, কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এই রাত বারোটায় এক কাপ চা।
-আপনি বেলকোনিতে বসেন আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি।
-আমি চা খাবো কিভাবে বুঝলা?
-যারা রাত জেগে গল্প লেখে, বই পড়ে তাদের এগুলা অভ্যাস থাকেই। আর আপনি তো চাকরী করেন, দিনে তো আর এগুলার সময় পান না।
আচ্ছা যাও। চা-কফি বানানোর সব কিছুই রান্না ঘরে আছে। একটূ খুঁজে নিতে হবে আর কি।

দুই কাপ চা হাতে অধরা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আজকের পত্রিকার গল্পটা খুঁটিয়ে পড়ছিলাম। ব্যাটারা গতবারের মত অলংকরনের নামে কাটা ছেড়া করলে আর গল্প দিবো না।

চেয়ার টেনে আমার অধরা আমার পাশে বসলো, ‘চা নেন। আমি আপনার লেখা গল্পটা পড়েছি। আচ্ছা সুমতী’র কি হবে পরের পার্টে, ও কি অর্ণবের সাথে পালিয়ে যাবে? নাকি ঐ বড়লোক ছেলেটাকেই বিয়ে করবে, বাড়ি থেকে যার সাথে বিয়ে ঠিক করছে।
- গল্পটা পড়ছ তুমি?
-হ্যা পড়ছি। আজকে সকালে পত্রিকা কিনেছি আপনার গল্প পড়ার জন্য।
-সুমতী’র বিয়ে হোক তুমি চাও?
-নাহ, আমি তা চাইনা। অর্ণব ছেলেটা একটা সাধারণ নায়ক চরিত্র, পড়লে একদম বাস্তব মনে হয়। আমার কিছু বই কিনতে হবে, কাল শাহবাগ যাবো। আমার সাথে যাবেন?
-কি বই কিনবা?
-কিছু ইংরেজি সাহিত্যের বই, কিনবো। নোবেল পেল এবার, ইশিগুরো না কি যেন নাম!
-ওহ হ্যা, আমিও কিনবো ভাবছিলাম। ওনার প্রথম বইটা আমি পড়েছি।
-কালপুরুষ চিনো তুমি?
-হ্যা চিনি। ঐ যে আকাশে দেখা যায় চার কোণে চারটা তারা, আর মাঝে তিনটা।
আপনার বইয়ের ছবি দেখেছি ফেইসবুকে। বইয়ের ভাগ দিবেন তো আমাকে? আমি নীললোহিত সমগ্র দিয়ে শুরু করবো। বইয়ের পাশাপাশি রান্নাঘরের ভাগটাও দিতে হবে। এত অগছালো মানুষ থাকে?

আমি অধরার দিকে তাকিয়ে আছি। সে সত্যিই আমার সবকিছুর ভাগ নিতে চাচ্ছে। তার চোখে মুখে দায়িত্বশীলতা ফুটে উঠেছে।
- শুনো আমাকে তুমি করে বলবে। আমি তোমার অফিসের বস না।
-আপনার দাসী আমি। বাসের ভিতর আপনি নিজেই তো বললেন। তুমি বলা ঠিক হবে?
অধরা কথাগুলো বলে আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলো না। অন্ধকারে তার মৃদু হাসিমাখা মুখটা চোখে পড়লো। আমি কালপুরুষের দিকে চেয়ে আছি। আজ আর কালকের কালপুরুষ এর কোন পার্থক্য আছে?

আচ্ছা আমাদের অপূর্ণতা কি আমরা সব সময় বুঝে উঠতে পারি?



ছবিঃ গুগল সার্চ
-সমাপ্ত-
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৩১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×