somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংস্কৃতিক পরিবেশন, অধিপতি মধ্যবিত্তের আত্নপরিচয়ের প্রশ্ন ও নিম্নবিত্তের ‘নির্মান’

৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(ব্যাক্তিগত নোট:
“আপনি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখুন। দাঁড়কাকেরা পাতিকাকদের কিভাবে মেরে তাড়িয়ে দিচ্ছে’। ‘আমি তাকিয়ে দেখলাম, আট দশটা দাঁড়কাক একজোট হয়ে যেখানেই পাতিকাক দেখছে খেদিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার পরদিন থেকে দেখতে থাকলাম দাঁড়কাকেরা দলবেঁধে জঙ্গিবিমানের মতো বেগে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানেই পাতিকাক দেখছে হমলা করছে। কাকের জগতেও হিংস্রতা ও মাস্তানি প্রবেশ করেছে। একসময় হয়ত এমনও হতে পারে দাঁড়কাকেরা এই শহর থেকে পাতিকাকদের তাড়িয়ে দেবে।” (আহমেদ ছফা, ১৯৯৬)
আমি মধ্যবিত্ত; জন্ম, অর্জন দু’সূত্রেই এবং ’শিক্ষিত’। পরিবার থেকে চেনানো জীবনপরিজন ও জ্ঞাতিদের প্রবল অংশই মধ্যবিত্ত, ‘শিক্ষিত’। বিষয় এ নয় যে নিম্নবিত্ত, ‘অশিক্ষিত’ আত্মীয় নেই, যা বিষয় তাহলোঃ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নিম্নবিত্ত, ‘অশিক্ষিত’দের নয় বরং আগ্রহ নিয়ে চেনানো হয়েছে ‘শিক্ষিত’ মধ্যবিত্তদের, মিশতেও উৎসাহিত করা হয়েছে এদের সাথেই। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ও বেড়ে উঠার অভিজ্ঞতা, এ শ্রেণীর অধিপতির ভূমিকা টের পেতে সাহায্য করেছে নানানভাবে, নানান সময়, বিভিন্ন ঘটনায়।

সে থেকেই নিজের মধ্যেই জিজ্ঞাসার দানাবাধা। আমি কি সেই দাঁড়কাকরূপী মধ্যবিত্ত, যে কিনা পাতিকাকরূপী নিম্নবিত্তের উপর অধিপতি? মধ্যবিত্তের অধিপতি ভূমিকা নিজের কাছে মানতে না পারা A¯^w¯—Ki, সেকারণেই এ শ্রেণীর (ক্ষমতা)অনুশীলনের উন্মোচন গুরুত্ব পূর্ণ মনে হয়েছে, বিদ্যা জাগতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই। উত্তর আধুনিক জ্ঞানচর্চার বৈশিষ্ট্যঃ জ্ঞানকে রাজনীতি হতে বিযুক্ত করে না দেখা বরং জ্ঞান কিভাবে ক্ষমতার সাথে যুক্ত তার তালাশ করা, আমাকে প্রভাবিত করে। নিজ শ্রেণীর অধিপতি ভূমিকা উল্টে পাল্টে দেখবার চেষ্টা এসব কিছুরই ফলাফল।

১.
ঔপনিবেশিক রূপান্তরের ফলে গড়ে উঠা মধ্যবিত্ত একটা বড় সময় ধরে অধিপতি (Dominant) শ্রেণী, বাংলাদেশের অসম ধনতান্ত্রিক কাঠামোয় সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী। এ মধ্যবিত্ত স্রেফ আর্থ-রাজনৈতিক হিসেব নিকেশের বিষয় নয়, এ শ্রেণীসত্ত্বার ওতপ্রোত বিষয় বুদ্ধিবৃত্তিক, মতাদর্শগত। তাই ঔপনিবেশিক অভিঘাতসৃষ্ট মধ্যবিত্তের কেন্দ্রীয় নির্ধারকসূচক ‘শিক্ষা’, ‘চাকুরী’ ‘নৈতিকতা’র মতাদর্শ। মধ্যবিত্তের মতাদর্শ নৈতিকতার মানদন্ডে পরিণত, মতাদর্শের ক্ষমতাশালী নির্মাতা ও রক্ষক। বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম, শিক্ষা, মতাদর্শ, প্রগতি’র ধারণা এ শ্রেণীর আধিপত্যের বৈধতাযন্ত্র।

কিভাবে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মতাদর্শিক হুকুমাত বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক নেতৃত্বে’র দখল তৈরী করে, কিভাবে অপরাপর মানুষজন হতে মধ্যবিত্ত ‘নিজ’ ¯^vZš¿Zvi কথা বলে অথবা কিভাবে বাদবাকি মানুষজনকে ‘অপর’ হিসাবে গঠন করে এসবকিছুই ছিল কেন্দ্রীয় জিজ্ঞাসা। মধ্যবিত্তের অধিপতি ডিসকোর্সকে বুঝতে চেষ্টা করা, সে ডিসকোর্সে অপরাপর মানুষজনদের সম্পর্কে জ্ঞান ও অর্থ’র উৎপাদন প্রক্রিয়া উপলব্ধি এবং অন্তর্নিহিত ক্ষমতা সম্পর্ক উন্মোচন তথা ‘নিজ’, ‘আত্ম’ হতে ভিন্ন অপর ‘বর্গ’/‘শ্রেণী’র প্রতি মধ্যবিত্ত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তাই অধিশ্রয়ণ। কোন প্রক্রিয়ায় মধ্যবিত্ত অবস্থান নেয়, কিভাবে নিম্নবিত্ত পরিবেশিত হয়- এই অবস্থান ও পরিবেশনের সামাজিক সংগঠন (Social Organization) কী? এটা উদ্‌ঘাটন (Unpack) এবং বিশ্লেষণ আমার কাজ। এ প্রবন্ধে আমার মূল প্রয়াসঃ (ক) নিম্নবিত্ত সম্পর্কিত- মধ্যবিত্ত ধ্যানধারণাকে আলাদা করার (খ) সেগুলির ডিসকোর্সকে শনাক্ত করার (গ) ডিসকোর্সগুলির মধ্যে দিয়ে ব্যবস্থা ও ক্ষমতাকে চিনতে চেষ্টা করার।

২.
অধিশ্রয়ণ ‘মধ্যবিত্ত’, তাই জরুরী মধ্যবিত্ত প্রত্যয়ন। এটি সমস্যাবিযুক্ত তর্কাতিত প্রসঙ্গ নয়। তাই মধ্যবিত্ত বলতে কি বোঝাচ্ছি এই বুদ্ধিবৃত্তিক মোকাবেলাটি ভিত্তিপ্রস্তর, যা করার রাস্তায় পূর্বেকার চিন্তুকদের শ্রেণী ও শ্রেণী গঠন সম্পর্কিত আলাপ কেন্দ্রে, সেসবের বিচার বিশ্লেষণ হয়েছে, প্রাসঙ্গিক নির্যাস বাছাই করেছি, অনেক কিছু হতে সরেছিও এবং এভাবেই নিজের প্রত্যয়ন দানা বাধে।
সমাজ সমুহের ইতিহাসকে শ্রেণী সংগ্রামের Awš^ó হিসাবে যা দেখায় তা মার্ক্স চৈতন্য উৎসরিত। শ্রেণী বোঝবার ক্ষেত্রে চিন্তন ঘরানা হিসাবে ‘মার্ক্সবাদ’ শক্তিশালী। মার্ক্স চিন্তা বলেঃ উৎপাদন শক্তি (যেমনঃ যন্ত্রপাতি, দক্ষতা, কৌশল ইত্যাদি যা দ্বারা মানুষ কাজ করে), উৎপাদন সম্পর্ক (যেখানে উৎপাদকরা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে) সম্মীলনে সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো গঠিত হয় এবং এই অর্থনৈতিক কাঠামো সমাজের চিন্তা, ভাবনা, অভ্যাস ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রন করে। মার্ক্স দেখান যে উৎপাদন সম্পর্ক দ্বারাই মানুষ একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং এই সম্পর্কই উপরিকাঠামো হিসাবে ধর্ম, রাজনীতি, আইন মতাদর্শ বা বিশেষ ধরনের সামাজিক সচেতনতা গঠন করে। শ্রেণী সম্পদের সাথে ও সম্পদের মালিকানার সাথে যুক্ত, সম্পদের নিয়ন্ত্রনের সাথে যুক্ত এবং বলে (প্রধানত) ক্ষমতা ও প্রভাব তাদেরই যাদের মালিকানা ও দখলে থাকে সমাজের (প্রধান ধরনের) সম্পদ। সমাজের ক্ষমতার দিক থেকে অধিপতিরা এমন বন্দোবস্ত তৈরী করে যা অন্য জনমানুষ নয় বরং তাদের নিজেদের ¯^v_© ও সুবিধা নিশ্চিত করে। যারা উৎপাদন উপকরণের দখল নিতে পারে তারাই রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক অধিপতি/শাসক শ্রেণী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশের মতো প্রান্তিক পূঁজিবাদী দেশে শ্রেণীর গঠন বুঝতে কী ধরনের তাত্ত্বিক পরিকাঠামো কাজের, এটা কী স্রেফ আর্থ- রাজনৈতিক হিসেব নিকেশের বিষয়? কেবল পূজিপ্রবাহ, আদান প্রদান, আর্ন্তজাতিকীকরনের মধ্যদিয়ে আদতে মধ্যবিত্ত শ্‌্েরণীকে বোঝা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মুসলমান মধ্যবিত্ত হচ্ছে অধিপতি (Dominant) শ্রেণী। কিন্তু যখন ‘মধ্যবিত্ত’ কে স্রেফ আর্থ-রাজনৈতিক বিষয় হিসাবে দেখা হয় তখন শ্রেণী ‘সামগ্রিক সামজিক গঠন’ হিসাবে ধরা পড়ে না। মানস চৌধুরী ও রেহনুমা আহমেদ বলছেন, “শ্রেণী সত্তার ওতপ্রোত বিষয় যেমন অর্থনৈতিক রাজনৈতিক তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিক, মতাদর্শগত। তাদের মতে, শক্তিশালীশ্রেণী বলতে সবচেয়ে বেশী সম্পদের মালিক বুর্জোয়া বোঝানোর যে চেষ্টা-বাস্তবে শিল্প বিপ্লব না হওয়ার কারণে এবং ঔপনিবেশিক প্রভাবের কারণে ইউরোপীয় আদলের বুর্জোয়া নেই-এখানে বরং দাপুটে শ্রেণী হল মধ্যবিত্ত।
মধ্যবিত্ত কে? এই জিজ্ঞাসার উত্তরে গ্রামসীর চিন্তা কাজের রাস্তা দেখায়। তার বিশ্লেষনে শ্রেণী গঠন পুজিবাদী বিকাশের সাথে ¯^qswµqfv‡e ঘটেনা, এমনকি সম্পদ, অর্থ, শুধুমাত্র এসবের হিসাবে শক্তিশালী অধিপতি শ্রেণীকে নিহ্নিত করা অসম্ভব, সেটাই গ্রামসীর যুক্তি। গ্রামসীর এই বিশ্লেষণকেই ডেভিডফ ও হল আঠারো ও উনিশ শতকের বৃটিশ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর গঠন বুঝতে ব্যবহার করেছেন। রেহনুমা আহমেদ ও মানস চৌধুরী বাঙ্গালী মুসলমান মধ্যবিত্ত উপলব্ধিতে এর ব্যবহার করছেন।
অন্য অনেকেও মধ্যবিত্ত সংজ্ঞায়নে ‘আয়’ কে একমাত্র ফ্যাক্টর ভাবার বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। যেমনঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মন্তব্য করেন, “তারা আসলে বিত্তের দিক থেকে মধ্য না হলেও চিত্তের দিকে থেকে মধ্য। সে কারনে এদেরকে মধ্যবিত্ত না বলে মধ্যচিত্তই বলা উচিত।” শহুরে মধ্যবিত্তের বড় অংশ (শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ, নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা) অর্থনৈতিক দিক থেকে নিম্নবিত্তের খুব কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও যেদিকগুলি তাদেরকে মধ্যবিত্তের গোত্রভূক্ত করে তা তাদের আয় নয়, সেগুলো হচ্ছে, শিক্ষাও মানসিক জগত, সাংস্কৃতিকজগত, জীবনশৈলী বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের সাথে ইংল্যান্ডের মধ্যশ্রেণী অথবা ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্নদেশের বুর্জোয়ার উৎপত্তি’র দিক থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে।
আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের সুনির্দিষ্ট কতক বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করেছেন:
(1) এরা উৎপাদনযন্ত্রের মালিক নন, যদিও কিছু স্থাবর/অস্থাবর সম্পদের মালিক হতে পারেন।
(2) কায়িক নয় বরং মানসিক শ্রম এদের জীবিকা নির্বাহের কেন্দ্রে।
(3) শিক্ষা পরিবারে এবং সামাজিক অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ।
(4) আয়সীমা (সাধারণভাবে) সীমিত ও নির্দিষ্ট।
(5) প্রাচুর্য্যময় নয় কিন্তু ¯^”Qj|
(6) বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্যের চর্চা বেশী, বুর্জোয়া ভাবাদর্শ নির্মান ও বিকাশে ভূমিকা রাখে।১৭
(7) জনমতের মুখ্য সংগঠক, বুদ্ধিজীবি প্রধানত এদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত।
(8) পুঁজিবাদী উৎপাদন নয় বরং মূখ্য ভূমিকা বিতরণ, ব্যবস্থাপানা ও ভাবাদর্শ নির্মাণে। ইউরোপে মধ্যবিত্তশ্রেণী শিল্প মালিক ও পুঁজিবাদী সম্পত্তি মালিক শ্রেণীর তুলনায়। আধিপত্য জোরদার করতে পারেনি। কিন্তু ভারতবর্ষে মধ্যবিত্ত অধিপতি শ্রেণী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
গত কয়েক শতকের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রপঞ্চ হল ঔপনিবেশিকতা যার ফলে উপনিবেশিত মানুষজনের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ভাঙ্গন আসে, বদল ঘটে এবং ঔপনিবেশিকতার প্রভাব নিয়ে পুনর্গঠিত হয়। উপনিবেশিত মানুষজনদের জীবন আগে কেমন ছিল, তারা (ইংরেজ) আসার পর কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, বুঝা জরুরী। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীও এই ঔপনিবেশিক রূপান্তরের ফসল: উনিশ শতকের শেষভাগ এবং বিশ শতকের প্রথম ভাগে ঔপনিবেশিক পুঁজির চাহিদানুযায়ী চাকরিজীবি আমলা হতে গড়ে উঠেছে এই মুসলমান মধ্যবিত্ত, হিন্দুদের তুলনায় কিছুটা দেরীতে হলেও শিক্ষিত সমাজ হিসাবে শ্রেণী পরিচিতি লাভ করলো, মর্যাদার স্মারক হয়ে উঠল প্রশাসনের শাসন সহায়ক ‘চাকরী’।
ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক আধিপত্যকে অবশ্যই নিছক দমন পীড়ন দিয়ে বুঝা যাবেনা বরং এমন রূপান্তর প্রক্রিয়া হিসাবে দেখতে হবে যেখানে পুরনো কামনা এবং জীবন পদ্ধতির ধ্বংস প্রাপ্ত হয় ও একটি নতুন ধরণ সেটার স্থান দখল করে নেয়। আসাদ মনে করেন সভ্যতা ও পশ্চীমাকরণের ভূমিকা একটি অখন্ড সংস্কৃতি তৈরী না করলেও কিছু (Modalities of legal moral behaviour) উৎপাদন করে। এটি সবাইকে আমন্ত্রণ জানায় পশ্চীমা বৈশ্বিকতা নিরীখে নিজেকে বিচারে। আসাদের তত্ত্বায়ন ব্যবহার করেই আমরা বুঝতে পারি যে, ঔপনিবেশিকতার ফল মধ্যবিত্ত চিন্তা ভাবনাতেও অনুবাদিত। বৃটিশ শাসক এমন একটি শ্রেণী সৃষ্টি করতে চেয়েছিল যারা হবে রক্তও গাত্রবর্ণে ভারতীয়, কিন্তু রুচী, মতামত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিতে ইংরেজ। ফলে পাশ্চাত্যের সামাজিক ধারণা আমদানী করে নবগঠিত মধ্যবিত্তের মধ্যে তা সমপ্রসারিত করা হয়।
ফলে বাঙ্গালী মুসলমান মধ্যবিত্তের গঠনে পশ্চীমা ধ্যানধারণা খুবই মৌলিক, মুসলমান মধ্যবিত্তের আধিপত্যের নির্মাণে সহায়ক শিক্ষাটা কেবল প্রথাগত শিক্ষা নয় বরং নৈতিক শিক্ষা, সে ‘নৈতিক শিক্ষা’ যুক্ত পশ্চীমা ধ্যানধারণা ও প্রগতিবাদীতার সাথে। ফলে যৌনতা, সম্পর্ক, বিয়ে ব্যবস্থা, দাম্পত্য, সূচীতার রূপান্তরিত ধারণা অধিপতি শ্রেণী হিসাবে মধ্যবিত্তের ¯^vZš¿m~PK বৈশিষ্ট্যে রূপান্তরিত হয়। বাঙ্গালী মুসলমান মধ্যবিত্তের গঠন এবং এই সমাজের রূপান্তর বুঝবার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের প্রবল উপস্থিতি, পাশ্চাত্য অপাশ্চাত্যের ক্ষমতা সম্পর্ক এবং সেই ক্ষমতা সম্পর্কে স্থানীয় কার্যকারীতা সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
যে বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ হয় তার অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন মাসোহারাভোগীশিক্ষিত, ভদ্রলোক, যারা কিনা প্রশাসন, আইনগত এবং এই জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এই ভদ্রলোক শ্রেণী নিজেদেরকে গ্রামীণ কৃষক, শহুরে দরিদ্র এবং ইংরেজ প্রশাসক বর্গের থেকে ¯^Zš¿ শ্রেণী হিসাবে তুলে ধরতেন। পত্রপত্রিকায় এই শ্রেণীর নিজেদেরকে ‘মধ্যবিত্ত শ্রেণী’ হিসাবে তুলে ধরতেন এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে উপস্থাপন করতেন। শ্রেণীর মাঝেই শিক্ষা আবদ্ধ ছিল এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা বলে তারা শ্রেণীর উপযোগী পেশায় প্রবেশাধিকার লাভ করতেন।
বরাবর ইংরেজদের প্রতি বৈরীভাব পোষন করা ভারতীয় মুসলমান সমাজে ১৮৭০ থেকে ১৮৭১ খৃষ্টাব্দ নাগাদ যখন একদিকে নেতৃত্বের অভাব এবং অন্যদিকে ইংরেজ শাসক গোষ্ঠীর ভয়াবহ দমননীতির ফলে উপমহাদেশে ওহাবী আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে তখন নতুন চিন্তাভাবনার উদ্রেক হয়। প্রথমত বিরাজমান পরিস্থিতিতে ইংরেজশাসনকে মেনে নেয়া সমীচীন হবে ফলে তারা প্রথমবারের মতো মুসলমান সমপ্রদায় হিসাবে ইংরেজ শাসকদের বিরোধীতার পথ পরিহার করলেন, বাঙ্গালী মুসলমান মধ্যবিত্তশ্রেণীর গোড়াপত্তন হল। ইংরেজী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পেল, ছোটখাট চাকুরীও পাওয়া গেল। মুসলমান জাতির নেতৃত্বের দাবীদার হয়ে উঠলেন এই নবগঠমান মধ্যবিত্ত, পুরাতন জমিদার নবাবরা বারবার চিহ্নিত হলেন ‘নীতিহীন’ এবং ‘অধ:পতিত’ গোষ্ঠী হিসাবে। ‘দাম্পত্যপনা’র মতাদর্শে পরিবর্তন আসে, বিশাল জায়গা জুড়ে আসন গাড়ে যৌনসূচিতা। এভাবেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চৈতন্য নির্মিত হয়
৩.
মধ্যবিত্ত মিডিয়া দ্বারা আকৃষ্ট, বিনোদন তাদেরকে টানে, তারা বিনোদনের ভোক্তা। কোননা কোন সাংস্কৃতিক উৎপাদের স্পর্শে আসবার সুযোগ তাদের রয়েছে। মধ্যবিত্তের ভিজ্যুয়াল দুনিয়ায় কি কি অন্তর্ভুক্ত ? তা বুঝতে গিয়ে মনে হয়েছে কি কি অন্তর্ভুক্ত নয় এ প্রশ্নটাই গূরুত্বপূর্ণ! টেলিভিশন,চলচ্চিত্র,যাত্রা,মঞ্চ অপশনে সীমাবদ্ধ আমার বোকামী প্রমাণিত হয় একাধিকজনের ইন্টারনেটকে বিনোদন হিসেবে ব্যবহারের কথা বলাতে। মধ্যবিত্তের ভিজ্যুয়াল দুনিয়া পুন:সংগঠিত, কারো কাছে কম্পিউটার প্রাসঙ্গিক, “টানে কারণ সৃষ্টিশীল কিছু করার জন্য সবচেয়ে ভাল মাধ্যম”, এক চ্যানেলের টি.ভি থেকে একাধিক চ্যানেল, ভি.সি.ডি মারফত পি.সি তে বিনোদন এবং ইন্টারনেট পর্যন্ত সমপ্রসারিত। ড্রইংরুম বা লিভিংরুমের চারদেয়ালের মাঝে গড়ে উঠেছে নিরাপদ ভিজ্যুয়াল দুনিয়া, পি.সির সামনে।
তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন। টেলিভিশনকে বাছাই করবার কারণ মোটামুটি এরকম: যেমনটা কিনা একজন শিক্ষার্থী, বলেন “কারণ বর্তমান টেলিভিশন বা মঞ্চের নাটক গুলিতে অনেক শিক্ষনীয় ব্যাপার থাকে এবং পরিবারের যেকোন সদস্যের সাথে বসে দেখা যায়।”টেলিভিশনের সাথে সাথে মঞ্চের কথা, চলচ্চিত্রের কথাও বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ:‘যাত্রা’ নিয়ে কথা বলতে মধ্যবিত্ত A¯^w¯— ।মঞ্চ আর যাত্রার মধ্যে তীব্র বৈপরীত্য, বিরুদ্ধময়তা টানা হয়,মঞ্চকে বিবেচনা: ‘জ্ঞান পাওয়ার মাধ্যম’ ‘দর্শকদের অভিব্যক্তি’ উৎস, ‘তাৎক্ষণিক অভিনয়’ ক্ষেত্র হিসেবে।প্যারাডক্সটি হল যাত্রাতেও এক ধরনের জ্ঞান তৈরী হয়, দর্শকদের সামনাসামনি ঘটে বলে দর্শকদের অভিব্যক্তি, তাৎক্ষণিক অভিনয়ের সুযোগঘটে, কিন্তু মধ্যবিত্ত যাত্রা সম্পর্কিত আলাপে যেসব বৈশিষ্ট্য তারা উল্লেখ করেছিলেন মঞ্চনাটক দেখার কারণ হিসেবে, সেগুলি যে যাত্রারও বৈশিষ্ট্য তা উল্লেখ না করে বরং যাত্রাকে বৈশিষ্ট্যায়িত করাহয় এই শব্দ/বাক্যগুলোর দ্বারা : ‘খুব খারাপ’ ‘যাওয়া যায় না’ ÔLower classÕ ‘অইলো কিছু’ ‘ক্ষীণ’ ‘অশ্লীল’। অর্থাৎ মঞ্চকে (এবং টেলিভিশনকে) যুক্ত করা হয় নিজেদের মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির সাথে, ইতিবাচকভাবে। অন্যদিকে, ‘যাত্রা’ কে ‘খারাপ’ ‘যাওয়া যায় না’ ‘অইলো কিছু’ ‘ক্ষীণ’ ‘অশ্লীল’ ‘ Lower classÕGi সাথে।আরো আশঙ্কার কথা মধ্যবিত্তজনদের অনেকে যারা যাত্রা দেখেনি কখনো, (তারা নিজেরাই বলছে সেটা) অথচ না দেখেই ‘নেতিবাচক’ বৈশিষ্ট্য জুড়ে দিচ্ছে এবং অপর নিম্নবিত্তের সাথেই এই ‘নেতিবাচক’ বৈশিষ্ট্যের অনিবার্য যোগসূত্র দেখাচ্ছে। ঢাকা সিনেমার সাথে যুক্ত মানুষেরা ‘অশ্লীল’ ‘অশিক্ষিত’, বিকৃতরুচি’র ধারক এবং তারা তৈরী করে ‘রিক্সাওয়ালার সিনেমা’, নিম্নবিত্তের সিনেমা’ ‘উদ্দেশ্য কেবল বাণিজ্যিক’ ইত্যাদি। নিম্নবিত্ত মানুষজনদের যৌনানুশীলন নিয়ে মধ্যবিত্ত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা আমরা নাট্যকারের চোখে দিয়ে ৫১ বর্তীতে পাই আবার এই কালে যখন কিনা গার্মেন্টস ব্যবসা দাপটে, গার্মেন্টসের মেয়েরা নগরীতে বস্তির পাশাপাশি গজায়মান মেস গুলিতে জায়গা করে নিচ্ছে একটি ছোটরুমেই বেশ কয়েকজন মিলে থাকছে তখন পাড়াগুলির মধ্যবিত্তের এ নিয়ে ব্যপক A¯^w¯— তৈরী হচ্ছে। মধবিত্ত চোখে বস্তিবাসীর এবং গার্মেন্টস কর্মীদের নীতি নৈতিকতার বালাই নেই, পোষাক আশাকের ক্ষেত্রে লাজ শরমের বালাই নেই মধ্যবিত্ত চোখে গার্মেন্টসের একটি অর্থ বাছবিচার যৌনতা , আমাকে মধ্যবিত্তসদস্য জানায় কাজের জায়গা আলাদা না থাকায় এবং সন্ধারপরেও অভারটাইম থাকায় অবিবাহিত মেয়েরা তো বটেই এমনকি বিবাহিত মেয়েরাও খারাপ প্রভাবে পড়ে এবং সেকারণেই এদের চরিত্র ভাল নেই। “যে এই মন্তব্যটি করেছিল সে নিজেই বলছে সে গার্মেন্টসে যায়নি অর্থাৎ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলেও মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের ‘সতীত্ব’ নিয়ে অনায়াস প্রশ্ন তুলে। উপন্যাস নাটকে চলচ্চিত্রে বস্তির মানুষজনের জীবনের ধ্বংসাত্মক চিত্র কেন্দ্রীয়। মধ্যবিত্ত চোখে দেখা চলচ্চিত্র অথবা অপরাপর মিডিয়ার বস্তি চিত্রনের আকর বৈশিষ্ট্য: একজন বস্তিবাসী হাজির করা যে কিনা বেপরোয়া ক্ষুধার্ত, মাতাল, কামুক, মাতাপিতা নিষ্ঠুর এবং সন্তানের ব্যাপারে খোজখবর নেয় না। কেস হিসাবে জনপ্রিয় ৫১বর্তী , তার সাক্ষাৎ প্রমাণ, বলা হয় “বস্তি/টস্তি খুবই ডেঞ্জারাস জায়গা সাবধানে যেও” বস্তি থেকে যে ছেলেটি ৫১বর্তী বাড়ীতে আশ্রয় পায় তার সম্পর্কে মন্তব্য: “এই ছেলেকে বাড়ীতে রাখবি, এতো তালা ভাংতো, চুরি করতো?”
অর্থাৎ শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কাছে নিজ শ্রেণীর অনুশীলন, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, নৈতিকতা ছাড়া অন্যান্য সবকিছু, যেমন অন্য শ্রেণীর রুচি, বিকৃত। অশ্লীলতা নিয়ে যেমনটা আমরা দেখতে পাই সুস্থ্য সংস্কৃতি বনাম অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধতা তেমনি ‘রিক্সাওয়ালার ছবি’ হিসাবে এফ.ডি.সির ছবিকে আখ্যায়িত করার পিছনে মধ্যবিত্ত নিজ মূল্যবোধকে, অনুশীলনকে আদর্শ ধরে তার নিরীখেই মূল্যায়ন করছে। অর্থাৎ ‘অশ্লীলতা’ নিয়ে মধ্যবিত্ত উৎকন্ঠা কেবলমাত্র একটি বিশেষ শ্রেণীর রুচি এবং বিপদজনক হলো নিম্নবিত্তের প্রতিক্রিয়া কিংবা ভালো লাগাটা সচেতন ও প্রগতিশীল হিসাবে নিজেদের যারা দাবী করেন তাদের কাছে কোন অর্থ বহন করেনা। নিজ শ্রেণী চৈতন্য দ্বারা নিম্নবিত্ত সংস্কৃতির এই ঋণাত্মক ধারণায়ন নিম্নবিত্তকে প্রান্তিকীকরণ করে, নিম্নবর্গকে নৈতিক অক্ষম প্রতিপন্ন করে, নিম্নবিত্তের সক্রিয় সত্ত্বাকে অদৃশ্য করে এবং মধ্যবিত্তের নৈতিক দাপটকেই আরো প্রবল করে। নিম্নবিত্ত সংস্কৃতি ও মানুষের বালখিল্যকরণ যা আমরা দেখি তা মধ্যবিত্ত সত্ত্বাকে সুগঠিত করে। চলচ্চিত্রের অশ্লীলতা নিয়ে মধ্যবিত্ত সোচ্চার হওয়া তাই ”একই সাথে নৈতিকতার জোরে মধ্যবিত্ত কতৃক অন্যশ্রেণীর ভিজ্যুয়াল দুনিয়া শাসন”। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক বক্তব্য তথা রাজনীতি বিযুক্ত নয়, স্রেফ ‘নির্দোষ’ বিনোদন, মানুষজনকে ‘নির্মল’ আনন্দ দেয়ার উপাদান নয়, রাজনীতি আছে এবং শিল্পমান নির্ভর করে সাংস্কৃতিক যোগ্যতার উপর নয় বরং শ্রেণী মূল্যবোধই নির্ধারণ করে দিচ্ছে কী অশ্লীল কী অশ্লীল নয়,যেমনটা রেহনুমা আহমেদ বলেন। সাংস্কৃতিক উৎপাদ ও মধ্যবিত্ত আলাপচারিতাতে আমরা দেখি কিছু মৌলিক ধারণা, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি,কাজ করেছে। এই মৌলিক ধারণা / দৃষ্টিভঙ্গির “রাজনৈতিক অর্থ” আছে: উৎপাদগুলো বক্তব্য ধারণ করে, বাস্তবতাকে বিশেষভাবে নির্মান করে এবং এই মধ্যবিত্ত নির্মাণে প্রান্তিক নিম্নবর্গ। বাস্তবতা পূন: নির্মানের বৃহত্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এসব আলাপ মধ্যবিত্ত দৃষ্টিভঙ্গির বৈধতা তৈরি করে এবং অন্য শ্রেণীর পছন্দ, বাছাই, ইচ্ছা, কামনা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস,সংস্কৃতি এবং অনুশীলনকে খারিজ করে, নস্যাৎ করে, অধ:স্তন করে। সেই সাথে মধ্যবিত্ত আত্নপরিচয়ও গঠিত হয়।

৪.
নিম্নবিত্তের নির্মান এবং পরিবেশন একই সাথে মধ্যবিত্ত ক্ষমতার প্রকাশ ও উৎস, দুটিই। মধ্যবিত্ত ক্ষমতা কাঠামো নিম্নবিত্তের নির্মান করে ক্ষমতার প্রকাশ ঘটায়। আবার একই সাথে নিম্নবিত্তের এই নির্মান দ্বারা মধ্যবিত্তের নিজের আত্মগঠনও সম্পন্ন হয়। এ আত্মগঠনে শ্লীল/অশ্লীল, এক ¯^vgx-¯¿x বিয়ে/বহু বিয়ে, অবিশ্বস্ত/বিশ্বস্ত, রুচিশীল/কুরচি বিরুদ্ধতাগুলোতে নিম্নবিত্তকে ‘অশ্লীল’ ছবির ভোক্তা/বহু বিয়েকারী অবিশ্বস্ত অবস্থানে স্থাপন নিজের ‘শ্লীল’ এক ¯^vgx-¯¿x বিয়ে, রুচিশীল, বিশ্বস্ততার নৈতিক আত্মপরিচয় গঠন (Constitute) করে। এই নীতিনৈতিকতা মধ্যবিত্তের আত্মপরিচয় ও শ্রেণী আধিপত্য গঠন করে।
অধিপতি শ্রেণী হিসাবে মধ্যবিত্তের শ্রেণীসত্তার ওতোপ্রোত বিষয় রাজনীতি, অর্থনীতি ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক, মতাদর্শগত এবং এক্ষেত্রে নিম্নবিত্তের যে ইমেজগুলো দৃষ্ট সেগুলো মধ্যবিত্ত নীতিনৈতিকতা ও †kªYx¯^v‡_©i কৌশলগত প্রতিরক্ষার কাজ করে। ‘ষ্টেরিওটাইপ’ নিম্নবিত্তের অধ:স্তনতার বিরুদ্ধে মূলত মধ্যবিত্ত নীতি নৈতিকতার মডেলকেই শক্তিশালী করে।
গুরুত্বপূর্ণ : কীভাবে নিম্নবিত্তকে প্রেক্ষিত করে মধ্যবিত্ত নৈতিকতা শক্তিশালী হয়ে উঠে। আমরা দেখি পরিবেশনের চতুরতা, ষ্ট্র্যাটেজী: একটি পরিসর তৈরী করা হয় যা জটিল। শুধু মধ্যবিত্তকে মিডিয়ায় আনা হয়নি, দরিদ্র মানুষজনও আসে। তবে সে দরিদ্ররা ভরকেন্দ্র নয়,পরিসরে মধ্যবিত্তের পাশে দরিদ্র মানুষজনের স্থাপন: শ্রেণীদ্বয়ের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া, সংযুক্তি সুযোগ করে দেয় মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ উচ্চরণের (যেমন: নিম্নবিত্তের ২য় বিয়ে দেখানো সম্ভব করে মধ্যবিত্ত GK-¯^vgx¯¿x বিয়ের শ্রেষ্টতা প্রচার)। নিম্নবিত্ত নিয়ে মধ্যবিত্ত চরিত্রের আক্ষেপ ব্যক্তি ছাপিয়ে মধ্যবিত্তশ্রেণী কন্ঠ হয়ে উঠে, এবং একই সাথে মধ্যবিত্তের সত্তাশ্রেষ্ঠত্ব, অনুশীলনশ্রেষ্ঠত্ব, মূল্যবোধ শ্রেষ্ঠত্বের বয়ান পুনরুৎপাদন করে। যেমনটা আমরা দেখতে পাই সংস্কৃতি সম্পর্কিত আলাপে নিম্নবিত্তকে ‘কুরুচিকর’ বৈশিষ্টায়িত করা একভাবে দেখায় মধ্যবিত্ত হল Ô¯^vfvweKÕ এবং ‘রুচি’ সমৃদ্ধ ‘কালচার’ বা সংস্কৃতির উৎসারক। সবকমূলক লেকচার মধ্যবিত্তের একটি অভিভাবক সূলভ ইমেজ তৈরী করে যেনবা মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের ত্রাতা।
তাই নির্যাসিত করতে পারি: মিডিয়া পরিবেশনের গতানুগতিক প্রবণতা মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের প্রতীক, যা দেখায় মধ্যবিত্ত স্রেফ আর্থ-রাজনৈতিক বর্গ নয় বরং মধ্যবিত্ত আত্মশ্রেণীগঠনে নীতিনৈতিকতা, নির্দিষ্ট ধরনের মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নবিত্ত রিক্সাওয়ালা, বস্তিবাসী মানুষজনের স্থাপিত অবস্থান একদিকে অধ:স্তনতা প্রকাশক এবং সেই সাথে মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের প্রকাশক। ‘রুচি’/‘কুরুচি’, ‘অশ্লীল’/শ্লীল’, এক বিয়ে/বহু বিয়ে, নৈতিক/অনৈতিক বিভাজন তৈরী এবং জিইয়ে রাখা আধিপত্যশীল মধ্যবিত্তের আত্মনির্মাণ প্রকল্পেরই প্রবণতা।

১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×