জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: নিপীড়নের বিরুদ্ধে আর কতবার আন্দোলনে নামবে শিক্ষার্থীরা?
নাদিমূল হক মন্ডল
সবুজে আবৃত ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্রীছাত্ররা আবারো আন্দোলনের রাস-ায় নামতে বাধ্য হলো। প্রবল পুরুষালী দাপটে ছাত্রীদের ব্যাক্তিস্বত্তাকে তছনছ করে যৌননির্যাতনকে ‘হালাল’ ও ‘জায়েজ’ মনে করে এমন এক শিক্ষক নামধারী বদমানুষকে ব্যাপক প্রতিরোধ ও আগাগোড়া শিকড়ছাড়া করার তাগিদকে ‘ফরজ’ জ্ঞান করেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের পুনরাবির্ভাব। নিপীড়ক শিক্ষকের বিচারের বন্দোবস- ও যৌননির্যাতন বিরোধী নীতিমালা তৈরীতে প্রশাসনিক টালবাহানার প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীদের এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। এ ধরনের আন্দোলন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নয়, নারীদের ‘যৌনবস'’ সাব্যস- করায় ‘পারদর্শী’ নিপীড়ক ও ধর্ষকসত্বা অতীতেও সবচেয়ে ব্যপকতর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র জাহাঙ্গীরনগরেই। প্রতিটি আন্দোলনেরই অপরিহার্য্য লক্ষ্য ছিল নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক মূহূর্তে নিপীড়ক ও ধর্ষকসত্বাসমুহের আরো প্রবল হয়ে উঠার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করা। প্রতিবাদী মননের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীছাত্ররা আমার সারাজীবনের নমস্য।
ইতিমধ্যেই বেশকিছুদিন সংশ্লিষ্ট বিভাগটিতে ক্লাস বন্ধ রয়েছে, শিক্ষার্থীরা চায় ‘অমানুষ’ শিক্ষককে বিদায় দিয়ে অবিলম্বে চালু হোক ক্লাস। এ দাবী দরিদ্র দেশের জনগনের গ্যাটের ট্যাক্সেও পয়সায় প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন-রের। একদিন ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকা মানেই যে দরিদ্র কৃষক পিতামাতার উপর প্রবল খড়গ নেমে আসা এই সত্যটাকে বেমালুম ভূলে বসে নিপীড়ক রক্ষার ব্রত নিয়ে বসেছে প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবী: যৌননির্যাতন বিরোধী নীতিমালা। কিন' ইতিহাসের ট্রাজিক সত্য হলো যৌননির্যাতন বিরোধী নীতিমালা তৈরী ও অনুমোদনে প্রতিটি প্রশাসনই টালবাহানার আশ্রয় নেয়, আর সে সুযোগে ধর্ষক মানিক, আনিসের প্রেতাত্মারা বারবার ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছে ‘নিপীড়ক’ শিক্ষকের চেহারা নিয়ে। এবারের এই আন্দোলনেও বরাবরের মতোই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের রয়েছে ব্যপক নৈতিক সমর্থন, তারা এই শিক্ষককে আর ক্যাম্পাসে দেখতে চায়না, চায় স'ায়ী বরখাস-করণ ও উপযুক্ত বিচার। ‘নিপীড়ক’ শিক্ষকের বরখাস-করণ যেমন জরুরী, তেমনি যৌননির্যাতন বিরোধী নীতিমালার মাধ্যমে পুরো ষ্ট্রাকচারাল অ্যারেন্জমেন্টির পরিবর্তন অত্যাবশ্যক, তা না হলে একই ধরনের ভয়াবহ ব্যাক্তিদের পুনরাবির্ভাবের সুযোগ ও সম্ভাবনা থেকেই যাবে।
মানুষ লাথি মেরে বন্দীশালা ভাঙ্গে নতুন বন্দীশালা তৈরীর জন্য নয়, তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাও চাইনা ধর্ষক ও নিপীড়করা বারবার ফিরে আসুক । নিরন-র উদ্দ্যোগহীনতার চক্র হতাশ করে আমাদের- প্রশ্ন উঠে আর কতবার, কতকাল ছাত্রীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত বিভৎস সহিংসতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদেরই আন্দোলনে নামতে হবে? নিপীড়ক তোষণ বন্ধ করে প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় আইনই কি যথার্থ খড়গ হয়ে নামতে পারেনা নিপীড়নকারীদের শিরে? যৌননির্যাতন বিরোধী নীতিমালা বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের ঘোষনা এসেছে। তবে আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের জোটবদ্ধতা ছাড়া যে কিছুই অর্জন হবেনা সেটা নিশ্চিত। দেখা যাক কী হয়।
নাদিমূল হক মন্ডল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক শিক্ষার্থী