আমরা বাংলাদেশিরা নিজেদেরকে বাঙ্গালী হিসেবে প্রমাণ করতে সব সময় একটু বেশি সোচ্চার! এপার বাংলা আর ওপার বাংলা বলে একটা শব্দ প্রায়ই সংস্কৃতি কর্মীদের মুখে শুনে থাকি। কিন্তু এই দু’টো শব্দ শুনলেই গাঁ টা জ্বালা করে উঠে। এটা শুধু বাংলা নয়, এটা বাংলাদেশ। এটা আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ। আমাদের দেশের সংস্কৃতি কর্মীরা নির্লজ্জের মত সব সময় দুই বাংলাকে এক করার কথা বলে থাকেন। তেমন কিছুদিন আগে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে সফর সঙ্গি হয়ে আসা প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, এই কাটা তারের বেড়া আমাদেরকে আলাদা করতে পারবে না। আমার মনে হয় এই সীমান্ত না থাকাই উচিত। দুই বাংলা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া উচিত। আমরা বাঙ্গালী বাঙ্গালী ভাই ভাই।
কিন্তু তারা যদি সত্যিকারের বাঙ্গালী হতো তবেই এই কথা বলা যক্তিসংগত হতো। তারা প্রত্যেকেই আন্দোপ্রান্ত একজন ভারতীয় অথবা ইন্ডিয়ান। তার প্রমাণ বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রসেনজিতের করা সেই নেক্কারজনক স্ট্যাটাস। কোন ভাই তার ভাইকে নিয়ে এমন স্ট্যাটাস লিখতে পারে? আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ বাঙ্গালী বলতে গদগদ হয়ে পড়েন। তারা মুখ তিন ইঞ্চি ফুলিয়ে বলেন, আমরা বাঙ্গালী আমরা বীরের জাতি। আরে মিয়া, বাঙ্গালী বীরের জাতি এই কথা কোথায় পাইছো? বাঙ্গালী হলো ভীরুর জাতি। আর আমরা বাংলাদেশিরা বীরের জাতি। পশ্চিশবঙ্গের বাঙ্গালরা আমাদের অংশ নয়। কারণ তারা বাঙ্গালী চেতনাবোধে বিশ্বাসী নয় তারা ভারতীয় চেতনাবোধে বিশ্বাসী।
এবার আসি মূল পয়েন্টে, এতোদিনের পুরনো কথাগুলো আজ আবারো বলার প্রয়োজন বোধ করছি মাইলস এবং ফসিলস কে নিয়ে জমে ওঠা নতুন বিতর্ক। মাইলস একজন বাংলাদেশি হিসেবে সঠিক কাজটাই করেছে। আর ভিন্নদিকে ফসিলসরাও ভারতীয় হিসেবে সঠিক কাজটা করেছে। কেউই কিন্তু ভুল করেনি। আর ফসিলস তাদের এই কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছে, তারা বাঙ্গালীর আগেও একজন ভারতীয়। আর তাদের এই চেতনাবোধকে আমি সম্মান জানাই। আর আমাদের মধ্যে যারা নিজেদেরকে বাংলাদেশি ভাবার আগে বাঙ্গালী ভাবেন তাদের মুখে লাত্থি জানাই। দেখ! শেখ! নিজের দেশকে কিভাবে বড় করে তুলতে হয় শিখ!
হতভাগা বাংলাদেশি তোমাদের আরো কিছু শিখতে হবে। ঈদ আসলেই বাংলাদেশে ২৯ টি টিভি চ্যানেলে লাইভ কনসার্টের ধুম পড়ে যায়। আর সেই সব কনসার্টের মূল আকর্ষণ রূপে উপস্থাপন করা হয়, কলকাতার অঞ্জন দত্ত অথবা ব্যান্ডদল ভূমি কিংবা ব্যান্ডদল ফসিলস। হ্যা বিশ্বাস করেন, আমরা বাংলাদেশিরাই নিজেদের শিল্পীদেরকে উপেক্ষা করে কলকাতার শিল্পীদের নিয়ে মেতে থাকি। আর দর্শকরাও যে কতটা নির্লজ্জ তা তো আপনারাই দেখতে পান! গত ঈদের একটি অনুষ্ঠানে অঞ্জন দত্ত গান গাইতে আসলেন। লাইভ কনসার্টে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য কল দিলেন, নাট্য অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। ফোন দিয়ে গদগদ করে দাদ...... দাদা.......... বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। কথায় বলে না, বাড়ির গরু উঠানের ঘাস খায় না। আমরা বাংলাদেশিরা নিজেদের শিল্পীদের ভাত দিতে পারি না আবার কলকাতার ছাগলদের নিয়ে মেতে থাকি।
আরো কিছু মজার কথা আপনাদের বলি! এই ফসিলস কিন্তু গান গাওয়া শুরু করে মাইলসকে দেখেই । গত বছর ফষিলসও কনসার্ট করতে বাংলাদেশে আসে। ফোন লাইভ কনসার্টে সাফিন আহমেদ টেলিফোন করেন। তখন ফসিলস কি তাকে বাবা বলবে নাকি আব্বু বলবে এমন একটা অবস্থা! আর সেই ফসিলস আর মাইলকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে। কলকাতার মানুষ যখনো ব্যান্ড কি তাই জানতো না, তখন আমাদের আজম খান বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে কনসার্ট করে বেড়াতো। কলকাতার মানুষরা যখন গিটার ধরতেও জানতো না। তখন আমাদের লাকী আকন্দ ‘আমায় ডেকো না’ গানটির মত কালজ্বয়ী গান উপহার দিয়েছে। কলকাতার মোছাড়ু ব্যান্ড শিল্পীরা যখন গাও গাওয়া শুরু করল, তখন তাদের আইডল হল জেমস,আইয়ুব বাচ্চু প্রমুখরা। আর আমরা কিনা আমাদের শিল্পীদেরই মূল্যায়ন করতে জানি না। যে ভারতে বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলও দেখা যায় না, সেই ভারতের ৪৫ টি টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে হরহামেসা চলছে। তাহলে এর দ্বারাই কি প্রমাণিত হয় না, আমরা মেরুদন্ডহীন! আমরা জাতীয়তাহীন। এখনো সুযোগ আছে সোচ্চার হও। নিজেদের সামর্থনুযায়ী মাথা উঁচু করে করে দাড়াই। আসুন নিজেদের সম্পদকে ভালোবাসতে শিখি। কিন্তু বাঙ্গালী হয়ে নয় বাংলাদেশি হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫১