somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালন ফকির ও কতিপয় গুরুতর প্রসঙ্গঃ পর্ব-৩

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

পর্বঃ ৩
উল্লেখ করা আবশ্যক যে, লালনের বহু গান আমি প্রায় শল্যচিকিৎসকের মতো ব্যবচ্ছেদ করে করে দেখেছি; সেখানে আর যাই হোক, ইসলামের নামগন্ধও নেই। বরং যা আছে, তা মুসলমানের ঈমান ও আকীদার জন্য এতোই ভয়ংকর যে, তার প্রতি যৎসামান্য দুর্বলতা পোষণ করলেও নিশ্চিতভাবে মুশরিক ও মুনাফিকদের দলভূক্ত হয়ে যেতে হয়। অবশ্য তারপরও আমি সর্বাংশে আমার নিজস্ব বিবেচনার ওপরই নির্ভর করি নি; বিশিষ্ট গবেষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী আমাকে অনেক বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছেন। ডঃ চৌধুরী লালনের প্রতি সবিশেষ অনুরাগী; এবং তার অনুরাগ এতটাই প্রবল যে, বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত তার ’লালন শাহ’ গ্রন্থে তিনি প্রথমে যে লেখকের নিবেদন পেশ করেছেন, সেই নিবেদন তিনি শেষ করেছেন আলোক সাঁই শব্দবন্ধটি দিয়ে।

কুষ্টিয়ার অত্যন্ত বনেদী ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেধাবী এই নিরর্থক লালনভক্তি আমাকে পীড়িত করে, কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ। ডঃ চৌধুরী যেটা প্রীতিকর ও প্রশংসনীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্য তা হলো কোন অনুরাগ বা কোন ক্ষতি-বৃদ্ধির আশংকাবশত তিনি কখনো সত্যকে আড়াল করতে প্রলুব্ধ হন না। আমি তার দ্বারা বিপুলভাবে উপকৃত হয়েছি; অনেক সত্য কথা তিনি এমন অকপটে আমাকে জানিয়েছেন, যার দ্বারা থিকথিকে লালনপ্রীতির বিপজ্জনক দংশন থেকে বহু মুসলমানের জন্য আত্নরক্ষার একটা পথ তৈরী হতে পারে। আল্লাহপাক আবুল আহসান চৌধুরীকে অন্তত এই কাজটির জন্য হলেও পার্থিব ও পারলৌকিক কামিয়াবী দান করুন, এই দোয়া করি।

লালনকে যারা মারেফাতের উচ্চ মাকামে অধিষ্ঠিত একজন আউলিয়া বলে বিবেচনা করেন, তাদের জ্ঞাতার্থে লালনগীতির কিছু পংক্তি তুলে ধরলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় যে, তিনি ইসলামের পৃষ্টদেশে ছুরিকাঘাতে ওস্তাদ এমন এক নিপুণ ও মারাত্নক আউলিয়ারূপী আততায়ী, যার কাছে এমনটি নবুয়তের নোংরা দাবিদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও যথেষ্ট ছেলে মানুষ। অবশ্য লালন যদি রবীন্দ্রনাথ কি নজরুল কি অতুল প্রসাদের মতো শুধুই কবি বা সঙ্গীতকার হতেন, কিছু বলার ছিল না। কারণ, অতি নগণ্য ব্যতিক্রম ছাড়া, গান তো তার স্বভাবী নিয়মেই মানুষকে অল্পাধিক তিগ্রস্থ করে। এবং প্রায়শ যেহেতু আমাদের লাভ ক্ষতির হিসাবের মধ্যে যথেষ্ট গরমিল বিদ্যমান, শৈল্পিক সুষমা ও নান্দনিকতার নামে এই ক্ষতি আমরা অনেকে মেনেও নিয়েছি।

কিন্তু লালন যেহেতু গানের আড়ালে মুসলমানদের পার্থিব ও পারলৌকিক সর্বনাশ সাধনে এক বিশুদ্ধ ইবলিসি পথের রাহবার, ইসলামের তাওহীদি ঐশ্বর্যের এ ঘোরতর দুশমন, ইসলামের সকল নীতি ও নৈতিকতাকে ভেঙ্গে দিয়ে এক নোংরা নর্দমা সৃষ্টির রূপকার, তার মুখ ও মুখোশের পরিচয় তুলে ধরা তাই একটি জরুরী কাজ। অবশ্য আল্লাহপাকের ঘোষণা, যারা অন্ধ, মূক ও বধির যাদের বস্থিত কলব একেবারে মৃত-তারা আর ফিরবে না। কিন্তু অনেক মুসলমান তো এমনও আছে, যারা অসতর্কতাবশত ভুলক্রমে ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত, তাদের পক্ষে লালনের গর্হিত সম্মোহন ছিন্নকরত ইসলামের কাছে ফিরে আসা অসম্ভব নয়।

লালন যে সত্যই কত বড় আউলিয়া তার কিছু পরিচয় বিখ্যাত পংক্তির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে পারি। অনাদির আদি শ্রীকৃষ্ণ নিধি, আর কি গৌর আসবে ফিরে, গোসাই আমার দিন কি যাবে এই হালে, অথবা গৌর কি আইন আনলে নদীয়ায়, দয়াল নিতাই আমার ফেলে যাবে না-এই সকল গান থেকে কী প্রমাণিত হয়? শ্রীকৃষ্ণ, গৌর গোবিন্দ, নিতাই, গুরু গোঁসাই-এসব নিয়ে যার ভক্তির দরিয়া রসরতির কামক্রীড়ায় সর্বদা তরঙ্গমুখর হয়ে থাকে, ইসলাম থেকে তার অবস্থান যে কত দূরবর্তী , তার ভূমিকা যে কত সাংর্ষষিক, তা নিয়ে বির্তকের অণুমাত্র অবকাশ নেই।

অনেকে বলবেন, লালনের যে বিশাল দর্শন, সঠিক অনুধাবন মতার অভাবহেতু আমি তার গভীরে প্রবেশ করতে পারিনি। আসলে দেহ থেকে দেহাতীতের দিকে যাত্রা, সসীম দেহভান্ডান্ডের মধ্যে অসীম ব্রক্ষ্মান্ডের অনুসন্ধানই লালনের দর্শন মহিমা। এর সঙ্গে সাধারণ যৌনতার সম্ভাবনা অত্যন্ত ীণ। যেহেতু ভক্তির দ্বারে বাধা আছেন সাঁই, তাকে পরম ভক্তিভাব নিয়ে দেহকে পূজার নৈবদ্য করে সমর্পণ করাই তো সাধনসিদ্ধির একমাত্র উপায়। এই উপায়েই হাওয়ার ঘরে চোরকে বশে আনা যায়, দৃষ্টিগোচর হয় রসসমুদ্রে ভাসমান সোনার মানুষ মনের মানুষ ও গুরু গোসাঁইয়ের অটল রূপশ্রী। দেহটা উপকরণ মাত্র, ল্যটা অনেক দুরের জিনিস। অতএব না বুঝে লালনকে অভিযুক্ত করা খুবই অসমীচিন, খুবই অর্বাচীনতা।

আমার অমতা আমি স্বীকার করি। এত দূরের জিনিস এত গভীর জিনিস আমার পে অনুধান করা সত্যই অসম্ভব। ড. আবুল আহসান চৌধুরী তার লালন শাহ গ্রন্থে অনেক দেখে শুনে ভেবে চিন্তে খুব অকপটে ও নির্মোহচিত্তে বলেছেন, বাউলের সাধনায় যোগতন্ত্র মৈথুন ও সহজ সাধনার ধারা এসে মিলছে এবং প্রফেসর চৌধুরী বাউলদের নিখাদ পরিচিতি সম্পর্কে কিন্তু সুচিন্তিত চুড়ান্ত কথাটিও উল্লেখ করেছেন, বাউলেরা রাগপন্থী। কামাচার বা মিথুনাত্নক যোগ সাধনই বাউল পদ্ধতি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪০
১৬টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×