somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

মেয়েদের ডাক্তারী পড়ার বিষয়ে ইসলাম কি বলে?

২৯ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডাক্তারি এমন একটি পেশা যে, রোগারোগ্যে, রুগীর সুস্থতায় এর বিকল্প কোনো কিছু হতে পারে না। সুন্দর মায়াময় এই পৃথিবী যত দিন টিকে থাকবে, মানুষ এখানে যত দিন বেঁচে থাকবে, সুখ দু:খও ততদিন নিত্যসঙ্গী হিসেবে থেকে যাবে। সুস্থতার পাশাপাশি অসুস্থতা তথা, অসুখ বিসুখও রয়ে যাবে মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে। প্রকৃতির নিয়মে মানুষ অসুস্থ হয়। পুরুষ অসুস্থ হন। অসুস্থ হন নারীও। সেবা শুশ্রুষা আর উপযুক্ত চিকিতসা গ্রহনে সুস্থতা আসে রুগীদের। সুস্থ হয়ে ওঠেন অসুস্থ মানুষ। তবে এই সুস্থতার জন্য পুরুষ রুগীদের জন্য চাই পুরুষ ডাক্তার। পাশাপাশি নারীদের অসুস্থাবস্থা থেকে তাদের সুস্থতায় পৌঁছাতে প্রয়োজন নারী ডাক্তার। ইসলাম শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে নারী পুরুষকে আলাদা কোনো শ্রেণিতে বিভক্ত করেনি। জ্ঞান অর্জনকে বরং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য ফরজ করেছে। শিক্ষা অর্জনকে ইসলাম সবসময়ই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। বর্তমান পৃথিবীর ক্রম অগ্রসরমান এই সময়ে মেয়েদের ডাক্তারি পড়া শুধু জায়েজ বললে কম বলা হবে, বরং নি:সন্দেহে আরও অধিক প্রয়োজন। অতিব জরুরী বিষয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তাই সঙ্গত কারণে বর্তমানে মেয়েদের ডাক্তারী পড়া শুধু জায়েজই নয়, বরং ফরজে কেফায়া। কারণ, মহিলা রুগীদের সেবা প্রদানের কাজটি কেবল মহিলা ডাক্তারদের দ্বারাই করানো উচিত। এতে করে পর্দা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এছাড়া মহিলাদের বিষয়গুলো সবচে’ ভাল বুঝার কথা মহিলা ডাক্তারদেরই। সুতরাং, নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখতে কোনো ধরণের গোরামি, কূপমন্ডুকতা কিংবা অজ্ঞতাকে ইসলাম ধর্ম কখনো সাপোর্ট করে না। বরং এসব ঝেড়ে ফেলে আলোকের দিকে যাত্রা হোক দুর্বার। নারী জাতি শিক্ষিত হোক, সম্মানিত হোক ইসলাম বরাবরই এটার পক্ষে। তবে এক্ষেত্রে একটি শর্ত ইসলাম আরোপ করে। আর সেটি হচ্ছে নারীর শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ হবে পর্দাপ্রথার অনুকূলে। এজন্য সহশিক্ষা নয়, চাই নারীদের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন মেডিকেল ইনস্টিটিউট, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের মেয়েদের যদি অবশ্যই পর্দাসহ শরীয়তের বিধানাবলী সঠিকভাবে রক্ষা করেই শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এতে করে আমাদের নারীরা শিক্ষিত হবে। সম্মানিত হবে। আমাদের মেয়েরা, আমাদের মায়েরা, আমাদের নারীরা যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, আশা করা যায় অচিরেই এবং অবশ্যই এ জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে গোটা বিশ্বে।

মেয়েদের চিকিতসা বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলার উপরে নিম্নোক্ত হাদিসেও নির্দেশনা পাওয়া যায়-

عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي حَثْمَةَ، عَنِ الشِّفَاءِ بِنْتِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا عِنْدَ حَفْصَةَ فَقَالَ لِي: «أَلَا تُعَلِّمِينَ هَذِهِ رُقْيَةَ النَّمْلَةِ كَمَا عَلَّمْتِيهَا الْكِتَابَةَ»

হযরত শিফা বিনতি আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হাফসাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা -এর নিকটে ছিলাম, তখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেনঃ 'তুমি ওকে (হাফসাহকে) যেভাবে লেখা শিখিয়েছো, সেভাবে পিপড়া (পোকা) কামড়ের ঝাড়ফুঁক শিক্ষা দাও না কেন?' [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৮৭]

প্রসঙ্গত: এই শিফা বিনতি আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা একজন কুরাইশি আরব। সেকালের আরব সমাজে জাহেলি যুগেই যিনি একজন নারী হয়েও লেখাপড়া জানতেন। তিনি কিছুটা চিকিৎসা বিজ্ঞানও জানতেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচার শুরু করলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যোগ্যতা দেখে নিজের স্ত্রীকেই (মা হাফসা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা, উমারের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর কন্যা) এই মহিলার কাছে লেখাপড়া সেখান। তারপর তাঁকে নির্দেশ দেন, অন্যান্য সাহাবীদের তাঁর চিকিৎসা বিদ্যাও শিখিয়ে দিতে। এই মহিলার যোগ্যতার কারনেই হজরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মদিনার বাজারের নিয়ন্ত্রণভার তাঁকে দিয়ে দেন।

আজকের বিজ্ঞান নির্ভর আধুনিক চিকিতসা ব্যবস্থা চালু না হলেও প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে নারী সাহাবীদের অনেকেই অসুস্থ, রুগ্ন এবং আহতদের সেবা শুশ্রূষা ও চিকিতসাসেবার কাজে নিয়োজিত থেকে আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই ইসলামের নানা যুদ্ধ ক্ষেত্রে নারী সাহাবীরা উপস্থিত থাকতেন আহত সাহাবীদের সারিয়ে তোলার কাজে। উদাহরণ হিসেবে খন্দকের যুদ্ধের নাম করা যায়। এই যুদ্ধে সা'দ বিন মু'আজ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মারাত্মক আহত হন। তাঁকে শুশ্রূষার দায়িত্ব পেলেন রুফাইদা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা। রুফাইদার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার তত্ত্বাবধানে অ্যাডমিটেড হয়ে সা'দ বিন মুয়াজ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু দীর্ঘ প্রায় এক মাস ছিলেন। ইসলাম ধর্মে মেয়েদের নার্স বা ডাক্তার হওয়ায় আপত্তি থেকে থাকলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই এই চিকিতসা এবং সেবা শুশ্রূষাকে নিষিদ্ধ করে দিতেন।

তাই আসুন, আমরা এমন একটি সমাজ বিনির্মানে এগিয়ে আসি, যে সমাজে প্রচলিত সকল প্রকার গোরামি, কূপমন্ডুকতা এবং অজ্ঞানতাকে পেছনে ফেলে দু'পায়ে দলে আমাদের নারীরা এগিয়ে যাবে আলোকের দিকে, আমাদের মেয়েরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরিনত হবে আলোকিত মানুষে; শিক্ষিত, ধার্মিক এবং আলোকিত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে তারা। দেশ এগিয়ে যাবে অনেক অনেক দূর। শিক্ষায়, সভ্যতায় এবং উন্নয়নে।

নারীদের ডাক্তারী পড়া ফরজে কেফায়া হওয়ার প্রমান্য দলিল সূত্র:

فيه دليل على جواز كتابة النساء الخ (بذل المجهود-518)

واما فرض الكفاية من العلم فهو كل علم لا يستغنى عنه فى قوام أمور الدنيا كالطب والحساب الخ (رد المحتار، مطلب فى فرض الكفاية وفرض العين-142، سعيد)

وفى الأشباه والنظائر: من فرض الكفاية……. والطب والحساب والمحتاج إليه فى المعاملات الخ

ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×