somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নবীজীকে নিবেদিত আবেগঘন একটি চিঠি

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হে প্রিয়তম রাসূল, সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
নীরব অশ্রু আর ভাঙা হৃদয় নিয়ে আমি আপনাকে লিখছি। আপনাকে যথাযথভাবে জানতে না পারা, আপনার প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করতে না পারা এবং আপনার সুমহান আদর্শ অনুসরণ-অনুকরণ আর তার প্রচারে যথোপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে না পারার ব্যর্থতায় মর্মবেদনায় ভুগছি। আমি শুধু দূর থেকে আপনার দয়া ও অনুগ্রহের গল্প শুনেছি। কিন্তু কখনো অনুধাবন করতে পারিনি আপনি কিভাবে এবং কতটা গভীরে থেকে আমাকে প্রভাবিত করেছেন।

প্রাণপ্রিয় নবীজী আমার!
আমি আপনার সীরাত পড়েছি আর অবাক বিস্ময়ে শোকে-দু:খে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিরবে অশ্রু ঝড়িয়েছি। কি বেদনাবিদুর ছিল আপনার মহান জীবন! কি কঠিন থেকে কঠিনতম শোকতাপে জর্জরিত ছিলেন আপনি! জন্মের পূর্বে, পৃথিবীর আলো-বাতাসের সংস্পর্শে আসার আগেই আপনি হারিয়েছিলেন আপনার সম্মানিত পিতাকে। বাবা বলে ডাকা তো দূরের কথা, জীবনে একটিবার প্রাণভরে দেখতেও পারেননি- কেমন ছিল পিতার মুখ! পিতৃস্নেহ বঞ্চিত অবস্থায়ই আপনার জগতে আগমন এবং ক্রমে বড় হয়ে ওঠা! আরবের তখনকার নিয়মানুসারে তায়েফের সৌভাগ্যবতী বিদূষী নারী হালিমাতুস সাদিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার কোলে তুলে দেয়া হয় আপনাকে। তাঁর উপরে অর্পিত হয় আপনাকে লালন-পালনের দায়িত্ব। সেখানে চার বছর রাখার পরে আপনাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় মক্কায় আপনার মায়ের কোলে। পিতৃহীন শিশু হিসেবে ইয়াতিম হয়েই এ ধরায় যেহেতু আপনার শুভাগমন, তাই স্নেহময়ী মাতার কোলই ছিল আপনার একমাত্র আশ্রয়স্থল। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আপনি হয়তো ভুলে যেতেন পিতার অভাব। কিন্তু আল্লাহ তাআ'লার কুদরত বুঝার সাধ্য কার? মাতৃস্নেহের শীতল ছায়াকেও তিনি সরিয়ে দিলেন আপনার উপর থেকে। তাকেও উঠিয়ে নিলেন রব্বে কারীম। স্বামীর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে দাসী উম্মে আয়মন এবং শ্বশুর আবদুল মুত্তালিবকে সাথে নিয়ে আপনাকে বুকে আগলে নিয়ে মাতা আমিনা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে গেলেন সুদূর মদিনা পানে। উদ্দেশ্য, চোখভরে আপনিও যাতে দেখে আসতে পারেন আপনার পিতার কবর। কিন্তু কে জানে যে, এ যাত্রাই হবে মায়ের সাথে আপনার সর্বশেষ যাত্রা? কবর জিয়ারত শেষে এই সফর থেকে ফেরার পথে মক্কা এবং মদিনার মধ্যবর্তী আবওয়া নামক স্থানে মাত্র ছয় বছর বয়সে আপনাকে ছেড়ে স্নেহময়ী মাতাও চলে গেলেন পরপারের না ফেরার দেশে। এবার আপনি চির ইয়াতিম। বাবা ছিলেন না। বাবাকে দেখেননি চর্মচক্ষে। এবার মাকেও হারালেন। মায়ের আচলের স্নেহের শেষ পরশটুকু থেকেও এখন আপনি বঞ্চিত। আপনার ঠাঁই হলো দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কোলে। অশ্রুসিক্ত নয়নে পরম স্নেহে তিনিই কোলে তুলে নিলেন আপনাকে। কিন্তু আল্লাহ জাল্লা জালালুহূর শান বুঝার ক্ষমতা কার? দাদার অকৃত্রিম ভালোবাসার এই ছায়াও খুব বেশি দীর্ঘায়িত হলো না আপনার জীবনে। তিনিও মহান প্রতিপালকের ডাকে পরপারের পথে পাড়ি জমালেন মাত্র দুই বছরের মাথায়। আপনি তখন আট বছরের শিশু। এরপরে আপনার আশ্রয়দাতার দায়িত্ব পালন করেন পিতৃব্য আবু তালেব। তিনি নিজ সন্তানের চেয়ে বেশি স্নেহ-মমতায় লালন-পালন করেন আপনাকে। চল্লিশ বছরাধিককাল পর্যন্ত আপনার পাশে ছায়ার মত হয়ে ছিলেন তিনি।

সাইয়্যিদুল কাওনাইন, প্রিয়তম হাবিব আমার!
আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সামর্থ্য আমার নেই। শুধু এতটুকু বলতে পারি, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে ভালোবাসি একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে। আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ, আপনি পৃথিবীতে সাম্য ও মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, আপনি নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছিলেন। আপনার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা, হে দোজাহানের বাদশা!

আপনার জন্ম ও জীবন মানবজাতির জন্য ছিল মহামূল্যবান পুরস্কার। আপনার স্পর্শে মানবসভ্যতা বদলে যায়। অসংখ্য মানুষের হৃদয় জয় করেছেন আপনি। আমাদের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অগণন সম্মান ও ভালোবাসা হে প্রিয়তম!

হে প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
আমার এই ছোট্ট হৃদয়ে আজীবনের লালিত স্বপ্ন মদিনাতুল মুনাওওয়ারায় আপনার রওজায়ে আতহার যিয়ারত করা। জানি না, সে সুবর্ণ সুযোগ কোনো দিন নসিব হবে কি না। পৃথিবীর বরকতময় স্থান মদিনাতুতত্বইয়্যিবায় সবুজ গম্বুজের নিচে আপনার রওজা মোবারকের পাশে দাঁড়িয়ে আপনাকে হৃদয়ের কিছু কথা কোনো দিন প্রাণ খুলে বলতে পারবো কি না, জানা নেই। সেকারণেই আপনার কাছে হৃদয়ের অব্যক্ত কিছু কথা জানানোর অভিপ্রায়ে এই চিঠি লিখছি আজ। আপনার স্পর্শধন্য, আপনারই হাতে গড়া মসজিদে নববীতে গিয়ে আপনার স্মৃতির পরশে নিজেকে সিক্ত করতে মনপ্রাণ ব্যাকুল হয়ে থাকতো। কত দিন যে আপনাকে ভেবে ভেবে নিরবে চোখের অশ্রু ঝড়িয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। আপনাকে চর্মচোখে দেখিনি, কিন্তু এই অদেখা আপনিই আমার জীবনজুড়ে, জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছেন। প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তের প্রতিটি কাজে আপনার স্মরণ আমাকে মুগ্ধ-বিস্ময়ে জাগিয়ে রাখে। প্রতিটি সুন্নতের আলোকে আমি নিজেকে আলোকিত করার সুযোগ পেয়ে নিরন্তর ধন্য হই। তৃপ্ত হই। উজ্জীবিত-ছন্দিত-আনন্দিত হই। আপনার সুমহান আদর্শ জীবনে দুষ্ট লোকদের দ্বারা সংঘটিত যাতনার হাজারো ঘটনা আমাকে যুগপত বেদনায় আপ্লুত এবং উজ্জীবিত করে। আমি ভুলে যাই, আমার জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দু:খ-যন্ত্রণাগুলো। আপনার রওজা মোবারকের কিনারে দাঁড়িয়ে আপনার সাথে দেখা করার সৌভাগ্য যদি কোনো দিন আমার আসে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমার জীবনের অন্যতম আনন্দময় দিন হবে সেটি।



হে প্রিয়তম!
আমি আপনার জীবন এবং জীবনী সম্পর্কে জানার চেষ্টায় কখনো ক্লান্ত হই না। আপনার আদর্শ সীরাতের উপরে লিখিত কিতাবগুলো আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে পড়ি। আপনার মহান চরিত্র মাধুর্য সম্মন্ধে, আপনার মুখ নি:সৃত অমীয় বানীসম্ভার সম্মন্ধে যতই পড়ি, আমার ক্ষুদ্র অন্তর আরও জানার জন্য প্রতিনিয়ত আপনার জীবনে সংঘটিত একেকটি যাতনাময় স্মৃতির ইতিহাস পাঠে আমি দু:খভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছি। আমার ভেতরের কান্নাগুলো নিরবে অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়েছে বারবার। সময়ের গন্ডি পেরিয়ে কল্পনার ডানায় ভর করে আমি বারংবার ফিরে গিয়েছি, আপনার সময়কালে। প্রায় সাড়ে চৌদ্দশো বছর পূর্বের সময়ে। আপনার পবিত্র সাহচর্য্য-সংস্পর্শের কাছাকাছি। দুনিয়ার বুকে তাওহিদের ঝান্ডাকে উঁচু করার প্রত্যয়ে আপনি যখন মক্কার নিপীড়ক পৌত্তলিকদের উপর্যুপরি গোয়েবলসীয় আচরণের কারণে, সীমালঙ্ঘন ও বিশ্বাস ভঙ্গের ফলে তাদের সাথে লড়াই করেছিলেন এবং মদিনার মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হয়েছিলেন তখন আমিও যেন সেখানে ছিলাম! যখন তায়িফের লোকেরা আপনাকে পাথর ছুঁড়ে মারে, আমি পষ্ট যেন দেখতে পাই সেদিনের মর্মবিদারী ঘটনা! আমি যেন আপনার সাথেই ছিলাম তখন! ভাগ করে নিয়েছিলাম আপনার অব্যক্ত অশেষ যন্ত্রণার সামান্য ছিটেফোটা! মক্কার মুশরিক বাহিনী এবং মদিনার মুনাফিকদলের সম্মিলিত আক্রমনের মোকাবেলায় উহুদে যেদিন আপনি আপনার পবিত্র দান্দান মোবারক হারান, লোহার করা মস্তকে বিধে যায়, রক্তাক্ত এবং আহত হয়ে আপনি পড়ে যান পাহাড়ের একটি গর্তের ভেতরে, আর সেই ঘোর বিপদমুহূর্তে সারা প্রান্তরজুড়ে মক্কার অবিশ্বাসী দুষ্ট লোকেরা মিথ্যে অপবাদ রটিয়ে দেয়- 'ক্কদ ক্কুতিলা মুহাম্মাদ', 'মুহাম্মাদ মারা গেছেন', -চোখ বন্ধ করলেই যেন দেখতে পাই বিভীষিকাময় উহুদের সেই দিনটিও! কি এক অব্যক্ত ভালোবাসার বন্ধনে জুড়ে রেখেছেন, আজও যেন দেখতে পাই, আমিও আপনার পাশেই ছিলাম ভয়ঙ্কর সে দিনটিতে! আপনার জন্য এই ছোট্ট হৃদয়ে বেশুমার রক্তক্ষরণ হয়েছিল সেদিনের ঘটনা পড়ে! আপনি আহত-রক্তাক্ত! আল্লাহর রাসূল আহত! আহ! ব্যথিত-আহত-মুর্চ্ছিত হয়েছিল আমার ছোট্ট অন্তরও! নিজের অজান্তে হৃদয়বিদারক সেই ঘটনার বর্ণনা পাঠে ডুকরে কেঁদে উঠেছিলাম আমিও!

হে প্রিয়তম,
আমি আপনার জীবনের ঘটনাগুলি সম্পর্কে জানার ব্যাপারে কখনোই ক্লান্ত হই না এবং এগুলো কখনোই আমাকে নিত্য নতুন পাঠ শেখাতে কার্পন্য করে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যদি সদয় হয়ে আমাকে আপনার পবিত্র রওজায়ে আতহারের সামনে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করেন, আমি কি পারবো তখন আমার চোখের জল ধরে রাখতে? "আপনার সাথে মোলাকাতের দীর্ঘকালের প্রতীক্ষার অবসানে আপনাকে যখন সালাম করার সুযোগ পাব, কতই না আনন্দদায়ক এবং উত্তম হবে সেই দিনটি!" আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মহান প্রতিপালক রব্বে কারিম আমার হৃদয়ের আকুতি নিশ্চয়ই শুনছেন এবং তিনি রওজায়ে আতহারের পাশে দাঁড়িয়ে আপনাকে সালাম দেয়ার ঐকান্তিক প্রার্থনা কবুল করে করুনার বারিধারায় সিক্ত করবেন আমার ছোট্ট অন্তরকে।

হে আল্লাহর রসূল,
কিভাবে আপনাকে বলবো, বুঝতে পারছি না। মুসলিম উম্মাহর বর্তমান দুর্দশা নিয়ে ভাবতে গেলে ব্যথিত হই। গোটা মুসলিম উম্মাহ আজ ভীষণ সঙ্কটের বেড়াজালে আবদ্ধ। আমি জানি, আপনি বলেছিলেন যে, 'এমন একটা সময় আসবে যখন কারও বিশ্বাসকে ধরে রাখা উত্তপ্ত কয়লা হাতের মুঠোয় চেপে রাখার চেয়েও কঠিন হবে'। তবে কখনোই ভাবিনি যে আপনার এই ভবিষৎবাণী আমাদের এই সময়ে এসে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে রূপায়িত হবে। আপনার আনীত পরিপূর্ণ যে জীবনব্যবস্থা এবং বিশ্বাসকে আমরা খুব ভালোবাসি- যে বিশ্বাস আপনি আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য আপনার সারা জীবন ব্যয় করেছিলেন- তা আজ নিরন্তর অপবাদ এবং আক্রমণের শিকার। আমরা ধর্মপ্রাণ মুসলিমগন বাছবিচারহীনভাবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে অব্যাহতভাবে ইসলামের অবজ্ঞাকারীদের বেআইনী অভিযোগ এবং নির্মম মিথ্যাচারের লক্ষবস্তুতে পরিনত হয়েছি আজ। বিশ্বজুড়ে ইসলাম বিদ্বেষী বৃহৎ অপশক্তির নিরন্তর অপপ্রচার আর মিথ্যাচারের মোকাবেলায় সাধারণ মানুষদের ক্রমাগত আমাদের স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে যে, ইসলাম সহিংসতা অনুমোদন করে না। আপনার অনিন্দ্যসুন্দর নৈতিকতা এবং তুলনাবিহীন চারিত্রিক সততার উপর ভয়াবহ এবং ন্যাক্কারজনক আক্রমণ হচ্ছে এবং এসবের বিরুদ্ধে জবাব দেয়ার জন্য আমাদের নিতান্ত ধৈর্য্যের সাথে সত্য ইতিহাস বিশ্ববাসীর সামনে অনবরত তুলে ধরে যেতে হচ্ছে। আপনার পবিত্র চরিত্র সম্মন্ধে নিন্দুকগন কর্তৃক যেসব নিকৃষ্টতম কথা বলা হয়েছে, তা শ্রবনে বারংবার আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে যাই, হে প্রিয়তম, ক্ষমা করবেন, আপনার সামনে উচ্চারণ অযোগ্য এসবের পুনরাবৃত্তি করার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে জানি, আমাদের বার বার একই সত্য বলে যেতে হবে, যাতে সত্য উচ্চারিত হতে হতে আদিগন্ত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে এই সত্যেরই আলোকে, আপনার কালের, আপনার সময়ের আপনার স্বর্ণোজ্জ্বল যুগের সোনালি ইতিহাসের প্রকৃত সত্যগুলো উম্মোচিত হয়ে ওঠে জগতজুড়ে, যেন লোকেরা বুঝে নিতে পারে সত্যকে। বিতাড়িত-বিদূরিত হয়ে যায় মিথ্যের মরিচিকা।

প্রিয়তম!
আমি জানি, আপনি আমাদের বলেছিলেন যে, 'বিভিন্ন জাতি মুসলমানদের দিকে ছুটে আসবে, ঠিক সেভাবে যেভাবে লোকেরা খাবারের জন্য রাতের খাবার প্লেটের চারপাশে জড়ো হয়ে থাকে।' আজ বিশ্বজুড়ে নির্যাতন নিপীড়নের স্টীম রোলার চালানো হচ্ছে মুসলমানদের উপরে। আরাকান, জিনজিয়াং, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, ইয়েমেন, মিন্দানাওসহ পৃথিবীর অসংখ্য স্থানে মুসলমানদের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে নির্মম অত্যাচারের নৃশংস খড়গ। আর এসব জনপদে বছরের পর বছর এমনকি কোথাও কোথাও যুগ যুগ ধরে আমার ভাই ও বোনদের অসহনীয় সব কষ্ট ভোগ করতে দেখেও তাদের সহায়তায় কার্যকর কোনো ভূমিকা কাউকে নিতে না দেখে আমি আমার আত্মার গভীরতম অংশে ব্যথিত হয়েছি।

হে রহমাতুল্লিল আলামীন!
আজকের বিশ্বের বাস্তুহারা, দেশ এবং ঠিকানাবিহীন উদ্বাস্তু শরণার্থীদের বেশিরভাগ মুসলমান। দুর্ভাগ্যক্রমে আজকের বিশ্বে ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যে রিপোর্ট তুলে ধরার জন্য প্রচুর সংখ্যক ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছে। পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা এবং তার মিত্রদের স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রতিটি সন্ত্রাসী আক্রমণে তারা ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জোয়ার উঠিয়ে দিতে একটুও কার্পন্য করে না। আমরা মুসলমানরা সর্বাবস্থায় আমাদের জীবন এবং জীবিকার কি হবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন।



হে দোজাহানের বাদশা,
আমি আপনাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। আমার ক্ষুদ্র জীবনের অতি সামান্য সামর্থ্যের সবটুকু যদি আপনার জন্য নিবেদন করতে পারতাম কতই না উত্তম হতো! আপনি আজ স্বশরীরে আমাদের মাঝে নেই। আপনি যদি থাকতেন, প্রতিটি দু:খ-যাতনার ক্ষত বুকে নিয়ে আপনার কাছে ছুটে যেতাম। আপনার মোবারক চেহারা দর্শনে ভুলে যেতাম সকল ব্যথা-কান্না, যেমনটি ঘটে থাকতো সাহাবায়ে কেরামের জীবনে। আপনার কদম মোবারকে চুমু খেয়ে পড়ে থাকতাম আপনার আঙিনায়- ক্ষুধা-পিপাসা বিস্মৃত সেই আহলে সুফফাহর সাথী হয়ে।

হে প্রিয়তম!
আপনার অভাব কি দিয়ে পূরণ হবে? কাকে দিয়ে পূরণ হবে? কিভাবে পূর্ণ হবে? আপনার শান্তির বানীগুলো আজ আমরা ধারণ করতে পারছি না। আমরা মুসলিমগন নিজেরাই নানান দল উপদলে বিভক্ত। বিশ্বের সকল মানুষের কানে আপনার আনীত তাওহিদের বানীকে পৌঁছে দেয়ার সুমহান দায়িত্ব কে পালন করবে? বিশ্বের প্রতিটি জনপদের প্রতিটি ঘরে কে পৌঁছে দিবে আপনার রেখে যাওয়া সত্য দ্বীনের পয়গাম? আজ আমাদের ব্যর্থতাদর্শনে ভয়ে মুষড়ে উঠি। হায় হায়, কি জবাব দিব আল্লাহ তাআ'লার সামনে? যদি আপনি আমাদের বিপক্ষে মামলা দায়ের করে বসেন মহান প্রতিপালকের এজলাসে।

আজ বিশ্বজয়ে, গোটা বিশ্বকে ইসলামের ছায়াতলে আনয়ন করার জন্য প্রয়োজন আপনার সুমহান আদর্শের বাস্তব প্রয়োগ। পার্থিব লোভ-লালসা-মোহে দিকভ্রান্ত শান্তির অন্বেষায় ছুটে চলা সাড়ে আটশো কোটি মানুষের দুনিয়া এবং আখিরাতের মুক্তির জন্য প্রয়োজন আপনার অনি:শেষ ভালোবাসার সেই কোমল হাত, আপনার হৃদয়গ্রাহী ভূবনজয়ী সেই চির অমলিন হাসি, আপনার তুলনাবিহীন গভীর জ্ঞান, অনুপম শান্তি-সৌম্য এবং ন্যায়বিচারের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত, আপনার অসম-অদম্য-দুর্নিবার সাহসী শক্তি আর শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলের সাথে আপনার নজিরবিহীন সেই সহৃদয় আচরণ।

হে প্রিয়তম!
আমরা একসময় বিশ্বের জন্য আলোকবর্তিকা ছিলাম। বিশ্ববাসীর সামনে আমরা মুসলিমগন ছিলাম আশার আলো। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের সোনালী সেই দিনগুলি চলে গেল। আজ আমরা ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে সেই দিনগুলোকে শুধু স্মরণ করে, হৃদয়ের পর্দায় দেখে দেখে প্রশান্তির ঢেকুর তুলতে চেষ্টা করি যে, আমাদের একটি সমৃদ্ধ অতীত ছিল। সোনালী সকাল ছিল। পৃথিবীতে একদা স্বর্ণবেলা রচনা করেছিলাম আমরা। আজ আমাদের হয়ে কথা বলার যেন কেউ নেই। এমন কোনো দিন বোধ করি আজ আর যায় না, যেদিন নিষ্পাপ ফিলিস্তিনি কোনো শিশুর রক্তে রঞ্জিত হয়ে ওঠে না ইসরায়েলীদের কালো হাত। কিন্তু এই নিরবচ্ছিন্ন জুলূমের প্রতিবাদ করার কেউ নেই। এই অত্যাচার রুখে দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায় না কেউ। এই অসহনীয় নৃশংসতা বন্ধে এগিয়ে আসে না কোনো শক্তি।

সর্বাধিক প্রিয় হে ঐশীবাহক!
আপনাকে কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো! আমি আপনার জন্য আমার অতি ক্ষুদ্র এই জীবনটা যদি শতবার কুরবান করতে পারতাম, তাহলেও আমার বিশ্বাস, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার সামান্যটুকুও আদায় হতো না। আপনি আমার জন্য যে সমস্ত কষ্ট ও বেদনা সহ্য করেছেন তার বিপরীতে আমার এ আত্মত্যাগ অতি সামান্যই মনে হতো। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। বুকের জমিনে লালিত সবটুকু শ্রদ্ধা, সকল ভালোবাসা এবং সম্ভ্রম-সম্মান আপনার নিবেদন করছি মোবারক কদমে। আপনি যে সমস্ত অপমান সহ্য করেছেন তার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। দ্বীনের জন্য, দ্বীনকে বুলন্দ করার জন্য, দ্বীনকে পৃথিবীতে জিন্দা করার জন্য, বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে হেদায়েতের পথে আনয়নের জন্য, তাওহিদের অনন্ত আলোকে বিস্তৃত জমিনের গোটা প্রান্তরে প্রজ্জ্বলিত করার জন্য, এক আল্লাহর রবুবিয়্যাতের মূলমন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য, কালিমার আওয়াজকে বুলন্দ করার জন্য সকল অত্যাচার, প্রিয় শহর মক্কাতুল মুকাররমাকে ত্যাগ করাসহ শারীরিক মানসিক সর্ববিধ অত্যাচার-অবিচার-নিপীড়ন অকাতরে সয়ে যাওয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

দ্বীনের জন্য আপনি যে সমস্ত যুদ্ধ করেছেন, তার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনি ইসলামের এই চিরসুন্দর বিশ্বাসটি আমার কাছে আনার জন্য, অক্লান্ত পরিশ্রম করে জীবনের সমস্ত সময় এর পেছনে ব্যয় করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি একজন মুসলিম হতে পেরে ধন্য মনে করছি নিজেকে। আর বিশাল এই উপহারের জন্য কায়োমনোবাক্যে সিজদাবনত কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, মহান মালিক রব্বে কারিম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার আলীশান দরবারে।

আমি আমার প্রিয়তম রব-মালিক-খালিক মহান মালিক রব্বে কারিম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার আলীশান দরবারে ক্ষমা চাই আমার অপারগতার জন্য। আমার ভুলের জন্য। আমার পাপের জন্য। তিনি যেন আমাকে দয়াপরবশ হয়ে ক্ষমা করে দেন। আপনার নিকটেও বিনীত ক্ষমাপ্রার্থী এইজন্য যে, আপনার পরিপূর্ণ ইত্তেবা-অনুসরণ-অনুকরণ করে নিজে চলতে পারিনি। আপনার আদর্শ প্রচারের সুমহান দায়িত্বে নিজেকে যতটুকু যুক্ত করার প্রয়োজন ছিল, যেভাবে প্রয়োজন ছিল- তা পারিনি বলে। কেননা, আমি যখনই কোনো পাপকর্ম করে বসি, তখনই আমার মনের ভেতরে দাগ কাটে যে, আমি বুঝি দ্বীনের জন্য আপনার অপরিমিত কষ্ট ও সংগ্রাম এবং সর্বোপরি আপনার রেখে যাওয়া আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছি। আমাকে ক্ষমা করুন, প্রিয়তম। আমার মত অতি নগন্য, অতি ক্ষুদ্র যে আপনাকে ভালোবাসতে চায়, আপনার ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে আলোকিত এবং ধন্য হতে চায়, হতে চায় সত্যিকারের ঈমান ও উত্তম চরিত্রওয়ালা।



ছবি: অনলাইনে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন রিসোর্স থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×