somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

বাবরি মসজিদে প্রথম আঘাতকারী বলবীর সিং (বর্তমানে মাস্টার মুহাম্মাদ আমির) -এর একটি সাক্ষাতকার An interview of Balbir Singh (Mohammad Aamir) about destruction of Babri Masjid with monthly magazine armughan

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাবরি মসজিদে প্রথম আঘাতকারীর ইসলাম গ্রহণ - ছবি : সংগৃহীত

বাবরি মসজিদে প্রথম আঘাতকারী বলবীর সিং (বর্তমানে মাস্টার মুহাম্মাদ আমির) -এর একটি সাক্ষাতকার An interview of Balbir Singh (Master Muhammad Aamir) about destruction of Babri Masjid with monthly magazine armughan

গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি বলা প্রয়োজন প্রথমেই:

মনের কোনে দীর্ঘদিনের সুপ্ত ইচ্ছে ছিল, বলবীর সিং (বর্তমানে মাস্টার মুহাম্মাদ আমির) এর জীবনের বাক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখবো। যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত না পাওয়ায় সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি এত দিন। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে আলীশানে অগণিত অসংখ্য শুকরিয়া, তিনি তার নগন্য এই গোলামের হৃদয়ের গহীনে পুষে রাখা সেই বাসনা আজ পূরণ করলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অশেষ রহমতে নেটে খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে একটি সুন্দর জিনিষ পেয়ে গেলাম। মুহাম্মাদ আমির ভাই (বলবীর সিং) তার থেকে গ্রহনকৃত এই সাক্ষাতকারটি নেটের সংশ্লিষ্ট সাইটে এসে পাঠ করেছেন এবং নিজেই এই সাক্ষাতকারটি পাঠান্তে এর নিচে দু'টি কমেন্ট করেছেন। Tuesday, December 8, 2009 ইং তারিখে Click This Link ওয়েবসাইটে তার সাক্ষতকারটি প্রকাশ হয়। আর তিনি এখানে পরপর দু'টি কমেন্ট করেন যথাক্রমে October 1, 2010 at 3:00 AM এবং December 14, 2010 at 1:30 AM ইং তারিখ। এই ব্যাপারটা দেখে খুবই ভালো লাগছে যে, তিনি এসে এখানে কমেন্ট করার মাধ্যমে এই সাক্ষাতকারটির সত্যায়ন হয়ে গেছে। কারও বানানো কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে বাড়িয়ে বলা কোনো কথা যে সাক্ষাতকারটি নয়, মুহাম্মাদ আমির ভাই (বলবীর সিং) কর্তৃক এই সত্যায়নই এর বড় প্রমান। স্ক্রীণ শট/ ছবি যুক্ত-



ওয়েব লিঙ্ক- Interview of Master Amir

মুহাম্মাদ আমির ভাই (বলবীর সিং) এর সাথে সাক্ষাতকারের প্রেক্ষাপট:

এই বিষয়টি সকলের নিকটই পরিষ্কার যে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জায়গা হচ্ছে আল্লাহ তাআ'লার ঘর তথা, মসজিদ । কিন্তু ওই ঘর যদি কেউ ভেঙে দেয় তা হবে খুবই নিকৃষ্ট কাজ। পবিত্র কালামে হাকিম আল কুরআনেও মসজিদ নির্মানে বাধাদানকারীকে নিকৃষ্ট অত্যাচারী তথা বড় যালিম সাব্যস্ত করা হয়েছে। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُوْلَـئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلاَّ خَآئِفِينَ لهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

'যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালিম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।' সূরাহ আল বাক্কারাহ, আয়াত-১১৪

And who is more unjust than he who forbids that in places for the worship of Allah, Allah.s name should be celebrated?-whose zeal is (in fact) to ruin them? It was not fitting that such should themselves enter them except in fear. For them there is nothing but disgrace in this world, and in the world to come, an exceeding torment

জ্বি হ্যাঁ, বলছিলাম ভারতের অযোধ্যায় অবস্থিত বাবরি মসজিদের কথা। এই মসজিদ ধ্বংসের কথা। ঐতিহাসিক এই মসজিদ ভাঙতে প্রথম আঘাত যিনি করেছিলেন তার নাম ছিল বলবির সিং। তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার কুদরত বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি কাকে, কখন এবং কিভাবে হেদায়েতের অমৃত সুধাপানে ধন্য করেন, বলা সম্ভব নয় কারোরই। মহান মালিকের অশেষ রহমতে সেই পাল্টে গেছে সেই বলবির সিংয়ের জীবন। তিনি আর এখন নেই বলবির সিং। অনুশোচনার অগ্নিতে দগ্ধ হয়ে বদলে গেছেন তিনি। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে তিনি এখন একজন একনিষ্ঠ মুসলিম। মুহাম্মদ আমের তার নাম। তিনি মুসলিম সুখবর শুধু এইটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়, যিনি একদিন মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই তিনিই এখন পথে পথে ঘুরে আল্লাহ তাআলা’র ঘর পুনর্নির্মাণ ও নতুন মসজিদ নির্মাণ করছেন। নতুন পুরাতন সব মিলিয়ে শতাধিক মসজিদ নির্মাণে কাজ করেছেন মুহাম্মাদ আমির। মসজিদ ভাঙ্গার মহানায়ক এখন মসজিদ গড়ার নায়ক ! সময়ের ব্যবধান মাত্র ২৫ বছর কিন্তু এককালের মসজিদ ধ্বংসকারী ব্যক্তি কিভাবে এমন আমূল পাল্টে গেলেন? কোন্ শক্তি, কোন্ মন্ত্রণা পেছন থেকে অব্যহতভাবে প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে তাকে? আজ তার এই বদলে যাওয়ার গল্পগুলো শুনবো তারই মুখে। মুহাম্মাদ আমিরের এই সাক্ষাতকারটি গ্রহন করেছিলেন মাসিক আরমুগান পত্রিকার পক্ষে আহমদ আওয়াহ। পরবর্তীতে এই সাক্ষাতকারটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয় এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং ওয়েব সাইটে তা প্রকাশ করা হয়। সাক্ষাতকার:

মুহাম্মদ আমের : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আহমদ আওয়াহ : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

প্রশ্ন : প্রথমে আপনার পরিচয় দিন।

উত্তর :
জন্মসূত্রে আমার নাম বলবির সিং । ১৯৭০ সালের ৬ ডিসেম্বর হরিয়ানা প্রদেশের পানিপথ জেলার এক রাজপুত পরিবারে আমার জন্ম। আমার বাবা ছিলেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। যে কোনো ধরণের জুলুম-নিপীড়নের বিরোধী ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে দেশ-বিভাগের সময় হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তিনি দেখেছিলেন। সে সময়কার ব্যাপক মুসলিম হত্যাকে দেশের জন্য বড় ধরনের কলঙ্ক মনে করতেন তিনি। অবশিষ্ট মুসলমানদেরকে পুনর্বাসনের ব্যাপারে তিনি খুবই সাহায্য করেছেন। তিনি তাঁর বিদ্যালয়ের মুসলমান ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখতেন।

গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে আমি পানিপথে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই। মুম্বাইয়ের পর পানিপথ ছিল শিবসেনার সবচেয়ে মজবুত কেন্দ্র। বিশেষ করে যুবক শ্রেণী ও স্কুলের লোকেরা শিবসেনার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। অনেক শিবসেনার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং আমিও পানিপথ শাখায় আমার নাম লেখাই।

পানিপথের ইতিহাস তুলে ধরে সেখানকার যুবকদের মধ্যে মুসলিম সম্রাটদের বিরুদ্ধে বিরাট ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হতো। আমার বাবা যখন জানতে পারলেন যে, আমি শিবসেনায় নাম লিখিয়েছি তখন তিনি আমাকে ইতিহাসের সূত্র ধরে বোঝাতে চেষ্টা করলেন। সম্রাট বাবর, বিশেষ করে সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে ন্যায় ও ইনসাফ এবং অমুসলিমদের সঙ্গে করা তার আচরণের কাহিনী তিনি আমাকে শোনান এবং আমাকে আন্ত:ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার গুরুত্বের বিষয়গুলো বোঝাতে চেষ্টা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময়কার জুলুম-নিপীড়ন, হত্যা ও ধ্বংসাত্মক ঘটনাবলী শুনিয়ে আমাকে শিবসেনার যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে ফিরিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আমার বাবার সেসব চেষ্টা বিফলে যায়। আমার উপলব্ধিতে কোনো কিছুই তখন ধরা পড়েনি। হয়তো সেটা আমার সেই বিশেষ বয়সের কারণে হয়ে থাকতে পারে। উঠতি বয়স। বেপরোয়া মনোভাব ছিল তখন সবকিছুতে।



প্রশ্ন : ফুলাত থাকাকালে বাবরি মসজিদ ভাঙার ক্ষেত্রে আপনার অংশগ্রহণের কথা শুনিয়েছিলেন। এবার একটু বিস্তারিতভাবে সে সম্পর্কে আমাদেরকে বলুন।

উত্তর :
ঘটনাটি এ রকম, ৯০ সালে লালকৃঞ্চ আদভানির রথযাত্রায় আমাকে পানিপথের কর্মসূচী সফল করার ক্ষেত্রে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়। রথযাত্রায় দায়িত্বশীল নেতারা আমাদের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের আগুন জ্বালিয়ে দেন। আমি শিবজীর নামে শপথ গ্রহণ করি যে, যাই কিছু ঘটুক না কেন আর কেউ কিছু করুক আর নাই করুক, আমি একাই গিয়ে রাম মন্দিরের ওপর থেকে জুলুম করে চাপিয়ে দেয়া (মসজিদের রূপে) অবকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ি দেবই। এ যাত্রায় আমার কর্মতৎপরতার ফলে আমাকে শিবসেনার যুব শাখার সহ-সভাপতিনির্বাচিত করা হয়। আমি আমার যুব টিম নিয়ে ৩০ অক্টোবর অযোধ্যায় গিয়ে পৌঁছি। বহু চেষ্টা করেও আমি বাবরি মসজিদের কাছে পৌঁছতে পারলাম না। এর ফলে আমার শরীরে ঘৃণা ও বিদ্বষের আগুন আরো জ্বলে ওঠে।

আমি আমার সাথীদেরকে বারবার বলছিলাম এরকম জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। রামের জন্মভূমিতে আরবদের কারণে রামভক্তদের ওপর গুলি চলবে, এ কেমন অন্যায় ও জুলুম! আমার খুব রাগ হচ্ছিল। আমি রাগে ক্ষোভে ফুসছিলাম।কখনো মনে হচ্ছিল যে, আমি নিজেকেই শেষ করে দেই। আমি আত্মহত্যা করি। সারা দেশে ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছিল। আমি সেদিনের জন্য খুবই অস্থির ছিলাম যেন আমার সুযোগ মিলে যায় আর আমি নিজ হাতে বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেই। এভাবে একদিন দু’দিন করে সেই অপেক্ষার দিনটিও কাছে এসে পড়ল, যে দিনটাকে আমি সে সময় খুশির দিন ভাবতাম। আমি আমার কিছু আবেগ-দীপ্ত সাথীকে নিয়ে ৯২ সালের ১ ডিসেম্বর প্রথমে অযোধ্যায় যাই। আমার সাথীদের মধ্যে যোগীন্দর পাল নামে এক যুবক ছিলেন। তার বাড়ি সোনীপথের নিকটবর্তী জাটদের গ্রামে। সে ছিল আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার বাবা ছিলেন একজন বিরাট জমিদার। জমিদার হলেও তিনি মানুষকে খ্বু ভালবাসতেন। তিনি তার একমাত্র ছেলেকে অযোধ্যায় যেতে বাধা দেন। তার বড় চাচাও তাকে ফেরাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সে কোনো বাধা মানেনি।

আমরা ৬ ডিসেম্বর আগের রাত্রে বাবরি মসজিদের একবারে কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছি এবং মসজিদের সামনে কিছু মুসলমানদের বাড়ির ছাদে রাত কাটাই। আমার বারবার মনে হত, না জানি আমাদেরকে ৩০ অক্টোবরের মত আজও এই ‘শুভ’ কাজ থেকে বঞ্চিত হতে হয়! কয়েকবারই মনে হয়েছে, নেতা না জানি কী করেন, আমাদরে নিজেদের গিয়েই কর সেবা শুরু করা উচিত। কিন্তু আমাদের নেতা আমাদেরকে বাধা দিলেন এবং শৃংখলার সঙ্গে থাকতে বললেন। আমি তার ভাষণ শুনতে শুনতে ঘরের ছাদ থেকে নেমে এলাম এবং কোদাল হাতে বাবরি মসজিদ ভাঙতে অগ্রসর হলাম।

আমার মনের বাসনা পূরণের সময় এলো। আমি মাঝের গম্বুজটির ওপর কোদাল দিয়ে আঘাত করলাম এবং ভগবান রামের নামে জোরে জোরে ধ্বনি দিলাম। দেখতে না দেখতেই মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল। মসজিদ ভেঙে পড়ার আগেই আমরা নিচে নেমে পড়ি। আমরা খুবই আনন্দিত ছিলাম। রাম লীলা লাগানোর পর তার সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে আমারা আমাদের বাড়ি-ঘরে ফিরে এলাম। সাথে করে নিয়ে এলাম মসজিদের দু’টুকরো করে ইট, যা আমরা খুশিমনে আমাদের পানিপথের সাথীদের দেখালাম। তারা আমাদের পিঠ চাপড়ে আমাদের কৃতিত্বে আনন্দ প্রকাশ করল। শিবসেনার অফিসেও দুটি করে ইট রেখে দেয়া হয়। এরপর এক বিরাট সভা হয় এবং সকলেই তাদের বক্তৃতায় অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আমার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে। আমি আমার বাড়ি গিয়েও অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গ একথা বলেছিলাম।

আমার বাবা খুব অসন্তুষ্ট হন। এ ব্যাপারে তার গভীর দুঃখের কথা জানিয়ে আমাকে পরিষ্কার বলে দেন, এখন এই ঘরে আমি আর তুমি দু’জনে এক সঙ্গে থাকতে পারি না। তুমি থাকলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব, নইলে তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। মালিকের ঘর যে ভেঙেছে আমি তার মুখ দেখতে চাই না। আমার মৃত্যু পর্যন্ত তুমি তোমার মুখ কখনো আমাকে দেখাবে না। আমি ধারণাও করতে পারিনি এমনটা ঘটবে। আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম। তিনি আমাকে এও বলেন যে, এ ধরণের জালিমদের কারণে এদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশেষে রাগে-ক্ষোভে তিনি বাড়ি ছেড়ে যেতে উদ্যত হলেন। আমি ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে বললাম, আপনি বাড়ি ছেড়ে যাবেন না। আমি নিজেই আর এ বাড়িতে থাকতে চাই না, যেখানে একজন রাম মন্দির ভক্তকে জালিম মনে করা হয়। এরপর আমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসি এবং পানিপথে থাকতে শুরু করি।

প্রশ্ন : আপনি আপনার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কিছু বলুন?

উত্তর :
প্রিয় ভাই আহমদ! আমার আল্লাহ কত মেহেরবান ও দয়ালু। তিনি চাননি আমি জুলুম ও শিরকের অন্ধকারে হাবুডুবু খাই। যিনি আমাকে ইসলামের নূর ও হেদায়েত দ্বারা ধন্য করেছেন। আমার মত জালিম যে কিনা তার পবিত্র ঘরকে ভেঙেছে সে-ই তাকে হেদায়েত দানে ধন্য করেছেন।

ঘটনা ছিল, আমার বন্ধু যোগিন্দর বাবরি মসজিদের কিছু ইট এনে রেখেছিল এবং মাইক দিয়ে ঘোষনা দেয় যে, ইটগুলো রামমন্দিরের ওপর নির্মিত অবকাঠামোর। সৌভাগ্যক্রমে তা আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। সমস্ত হিন্দু ভাই যেন এর ওপর পেশাব করে। আর কী! ঘোষণা হতেই ভিড় লেগে গেল।

এবার মসজিদের যিনি মালিক তার ক্ষমতা প্রদর্শনের পালা। চার-পাঁচ দিন পর যোগিন্দরের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। সে পাগল হয়ে যায়, সম্পূর্ণ উলঙ্গ থাকতে শুরু করে। পরনে আদৌ কাপড় রাখত না। সম্মানিত জমিদার চৌধুরীর একমাত্র ছেলে ছিল সে। তার বাবা এতে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। ছেলের সুচিকিৎসার জন্য সাধু-সন্ন্যাসী ও আলিম-ওলামা দেখান। বার বার মহান মালিকের কাছে মাফ চাইতে থাকেন। দান খয়রাত করতে থাকেন। কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি না হয়ে বরং খারাপই হতে থাকে। একদিন তিনি বাইরে যেতেই সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। মা চিৎকার করতে শুরু করলে মহল্লাবাসী ছুটে এসে তাকে রক্ষা করে। এরপর থেকে তাকে শেকলে বেধে রাখা হয়। যোগীন্দরের বাবা ছিলেন খুবই সম্মানিত লোক। তিনি এই ঘটনা শুনে ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময় কেউ তাকে বলে যে, এখানে সোনিপথে ঈদগাহের পাশে একটি মাদরাসা আছে। ওখানে একজন বড় মাওলানা সাহেব এসে থাকেন। একবার গিয়ে তার সঙ্গে আপনি দেখা করুন। এরপর যদি কিছু না হয় তখন যা হয় করবেন।

তিনি সোনীপথে যান। গিয়ে জানতে পারেন, মাওলানা সাহেব মাসের এক তারিখে আসেন। বিগত পরশু এসে পরদিন চলে গেছেন। মাদ্রাসার ইমাম সাহেব তাকে বলেন যে, অবস্থা খারাপ হবার দরুণ ৬ ডিসেম্বরের আগে হরিয়ানার বহু ইমাম এখান থেকে উত্তর প্রদেশে চলে গিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এক মাস পর্যন্ত ফিরে আসেননি। এ জন্য মাওলানা সাহেব ১ তারিখে এ বিষয়ে বক্তৃতা করেন এবং বক্তৃতায় বিরাট জোর দিয়ে একথা বলেন যে, মুসলমানরা এসব অমুসলিম ভাইকে যদি ইসলামের দাওয়াত দিতেন তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্ম হতো না। তিনি বলেন যে, বাবরি মসজিদ ভাঙার জিম্মাদার একদিক থেকে আমারা মুসলমানরাও। আর এখনও যদি আমাদের হুঁশ হয় এবং আমরা যদি দাওয়াতের হক আদায় করতে থাকি তাহলে এই মসজিদ যারা ভেঙেছে, তারা মসজিদ নির্মাতা হতে পারে। হতে পারে তারাই মসজিদের খাদেম।

মাদ্রাসার ইমাম সাহেব যোগীন্দরের বাবাকে বলেন, আমি ঝাড়-ফুঁক করতাম। কিন্তু আমাদের হযরত মাওলানা আমাকে একাজ করা থেকে থামিয়ে দিয়েছেন। কেননা একাজে অনেক সময় মিথ্যা বলতে এবং মহিলাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়। আর আপনার ছেলের ওপর তো কোনো জাদু কিংবা জিন-ভুতের আছরও নেই বরং এ তো সেই মালিকের আযাবের ফল। আপনার জন্য একটি সুযোগ আছে। মাওলানা সাহেব আগামী পরশু বুধবার দুপুরে এখানে আসছেন। আপনি তখন তার সঙ্গে দেখা করুন এবং আপনার কথা তাকে বলুন। আপনার ছেলে আশা করি ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু আপনাকে একটি কাজ করতে হবে আর তা হলো, আপনার ছেলে যদি ভালো হয়ে যায় তবে আপনাকে মুসলমান হতে হবে। চৌধুরী সাহেব বললেন, আমার ছেলে ভালো হয়ে গেলে আমি সবকিছু করার জন্য তৈরি আছি।

বুধবার সকালে যোগীন্দরের বাবা ছেলেকে নিয়ে সেই মাদ্রাসায় গিয়ে মাওলানা সাহেবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। দুপুর বেলা যোহরের আগেই মাওলানা সাহেবের আগমন ঘটে। শেকলে বাধা যোগিন্দর সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায় দাঁড়ানো। চৌধুরী সাহেব কাঁদতে কাঁদতে মাওলানা সাহেবের পায়ে ওপর পড়ে যান এবং বলতে থাকেন, মাওলানা সাহেব! আমি এই আহম্মকটাকে খুবই ঠেকাতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে পানিপথের এক কুচক্রীর চক্রান্তে পড়ে। মাওলানা সাহেব! আমার ওপর দয়া করুন। আমাকে মার্জনা করে দিন। আমার ঘর বাঁচান। মাওলানা সাহেব কঠোর ভাষায় তাকা মাথা তুলতে বলেন এবং পুরো ঘটনা শোনেন।

তিনি চৌধুরী সাহেবকে বলেন যে, সমগ্র জগত সংসার নিয়ন্ত্রণকারী সর্বশক্তিমান আল্লাহর ঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে তারা এত বড় পাপ করেছে এবং এত বড় জুলুম করেছে যে, যদি তিনি গোটা বিশ্বচরাচর ধ্বংস করে দেন তাহলে তা যথার্থ হবে। এতো বরং কমই হয়েছে যে, এই পাপের বোঝা কেবল একাকী তার ওপর পড়েছে। আমরাও সেই সর্বশক্তিমান মালিকের বান্দা এবং এক দিক থেকে এই বিরাট পাপের অংশীদার আমরাও। আর তা এই দিক দিয়ে যে, আমরা তাদেরকে বোঝাবার হক আদায় করিনি যারা বাবরি মসজিদ ভেঙেছে। এখন আমাদের আয়ত্বে আর কিছুই নেই। আমরা কেবল এতটুকু করতে পারি যে. আপনি সেই মালিকের সামনে কাঁদেন এবং তার কাছে ক্ষমা চান। আর আমরাও ক্ষমা চাই।

এরপর মাওলানা সাহেব বললেন, মসজিদের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি মালিকের কাছে অন্তর দিয়ে মাফ চান। প্রার্থনা করতে থাকুন যে, মালিক! আমার বিপদ কেবল আপনিই দূর করতে পারেন, আর কেউ দূর করতে পারে না।

মাওলানা সাহেব মসজিদে গেলেন। নামায পড়লেন। অল্প সময়ের জন্য উপস্থিত লোকদের সামনে বক্তৃতাও দিলেন এবং দোয় করলেন। মাওলানা সাহেব সকলকেই যোগিন্দর ও তার বাবার জন্য দোয়া করতে বললেন। অনুষ্ঠান শেষ হবার পর মসজিদে নাশতা হল। নাশতা থেকে মুক্ত হবার পর মসজিদ থেকে বরে হতেই আল্লাহর কী মেহেরবানি দেখুন, যোগীন্দর তার বাবার মাথা থেকে পাগড়ি টেনে নিয়ে তার উলঙ্গ শরীর ঢাকল এবং দিব্যি সুস্থ মানুষের মতো তার বাবার সাথে কথা বলতে লাগল। সকলেই এ দৃশ্য দেখে আনন্দিত হলেন।

মাদ্রাসার ইমাম সাহেব যোগীন্দরের বাবাকে তার প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং বললেন, যেই মালিক তাকে ভালো করে দিয়েছেন, আপনি যদি ওয়াদা মাফিক মুসলমান না হও তাহলে সে আবার এর চেয়েও মারাত্মক পাগল হতে পারে।

এরপর যোগীন্দরের বাবাকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হতেই যোগিন্দর জিজ্ঞেস করল, বাবা! আপনি, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, মুসলমান হতে। তখন যোগিন্দর বলল, আমাকে তো আপনার আগে মুসলমান হতে হবে এবং আমাকে বাবরি মসজিদ পূর্ণবার অবশ্যই নির্মাণ করতে হবে। তারপর তারা উভয়ে খুশি মনে ওযু করলেন। তাদেরকে কলেমা পড়ানো হল। বাবার নাম মুহাম্মদ উসমান এবং ছেলের নাম মুহাম্মদ ওমর রাখা হল। এরপর তারা খুবই খুশি হয়ে নিজেদের গ্রামে ফিরে গেলেন। গ্রামে একটি ছোট মসজিদ ছিল। তারা মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। ইমাম সাহেব স্থানীয় মুসলমানদেরকে তাদের বাপ বেটার মুসলমান হবার কথা জানিয়ে দিলেন। ফলে একজন দু’জনের কান থেকে গোটা এলাকায় একথা ছড়িয়ে পড়ল। হিন্দুদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে এলাকার প্রভাবশালী হিন্দুদের এ নিয়ে মিটিং হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, তাদের দু’জনকেই রাতের বেলা মেরে ফেলতে হবে। অন্যথায় তাঁরা অনেক লোকের ধর্ম নষ্ট করে দেবে। তাদের এই মিটিংয়ে একজন ধর্মত্যাগী উপস্থিত ছিল। সে ইমাম সাহেবকে গোপনে তাদের চক্রান্তের কথা জানিয়ে দেয়। ফলে আল্লাহর মেহেরবানিতে রাতের অন্ধকারে তাদেরকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয়। তারা ফুলাত গিয়ে পৌঁছেন। পরে তাদেরকে ৪০ দিনের জন্য তাবলিগ জামায়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর আমীর সাহেবের পরামর্শে যোগীন্দর (ওমর) তিন চিল্লাও দেয়। পরে যোগীন্দরের মা-ও মুসলমান হয়ে যায়।

এরপর মুহাম্মদ ওমরের (যোগিন্দর) বিয়ে হয় দিল্লীর এক ভালো মুসলিম পরিবারে। এখন তারা বেশ আনন্দের সঙ্গেই দিল্লিতে সপরিবারে বসবাস করছেন। গ্রামের জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি সব বিক্রি করে তারা দিল্লীতে একটি কারখানা দিয়েছেন।



প্রশ্ন : মাস্টার সাহেব! আমি আপনাকে আপনার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনি কিভাবে মুসলমান হলেন? আপনি যোগীন্দরের ও তার পরিবারের (মুসলমান হবার) কাহিনী শোনালেন। যদিও তা খুবই চমকপ্রদ ও বিস্ময়কর, কিন্তু আমি তো আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাই, কিভাবে আপনি ইসলাম গ্রহণ করলেন সে সম্পর্কে।

উত্তর : প্রিয় ভাইটি আমার! আসলে আমার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী এর থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। এজন্য আমি এর প্রথম অংশ শোনালাম। এখন দ্বিতীয় অংশ শুনুন।

১৯৯৩ সালের ৯ মার্চ আমার বাবা হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয়া এবং তাতে আমার অংশ গ্রহণ তাকে খুবই আঘাত দিয়েছিল। তিনি প্রায়ই আমার মাকে বলতেন, মালিক আমাকে মুসলমানদের মধ্যে জন্ম দিলেন না কেন? আমি যদি মুসলমানদের ঘরে জন্ম নিতাম তাহলে অন্তত জুলুম-নিপীড়ন সহ্যকারীদের তালিকায় আমার নাম থাকত। তিনি আমার পরিবারের সদস্যদের বলে গিয়েছিলেন, আমি মারা গেলে আমার লাশের কাছে যেন বলবীর না আসে, প্রথা ও রেওয়াজ মাফিক আগুনে যেন পোড়ানো না হয়। হিন্দুদের শ্মশানে যেন না নেয়া হয়। পরিবারের লোকেরা তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ি সব কিছু করে। আট দিন পর আমি আমার বাবার মৃত্যু সংবাদ পাই। এত আমার মন ভেঙে যায়। তার মৃত্যুর পর বাবরি মসজিদ ভাঙা আমার কাছে জুলুম মনে হতে থাকে এবং গর্বের বদলে আফসোস হতে থাকে। আমার অন্তর যেন হঠাৎ দ্প কের নিভে যায়। আমি বাড়ি গেলে মা আমার বাবার কথা স্মরণ করে কাঁদতে থাকেন এবং বলতে থাকেন এমন একজন ভালো মানুষকে তুই কষ্ট দিয়ে মেরে ফেললি! তুই কতটা নিচ ও হীন জাতের মানুষ। মায়ের এ ধরনের আচারণের কারণে আমি বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেই।

জুন মাসে মুহাম্মদ ওমর (যোগিন্দর) তাবলিগ জামায়াত থেকে ফিরে এলো। সে পানিপথে আমার সঙ্গে দেখা করল এবং তার পুরো ঘটনা আমাকে বলল। বিগত দু’মাস থেকে আমার মন সব সময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকত, না জানি কোনো আসমানি বালা-মুসবিত আমার ওপর এসে পড়ে। বাবার দুঃখ ও মনোকষ্ট এবং বাবরি মসজিদ ভাঙার দরুন আমার মন সব সময় খারাপ থাকত। মুহাম্মদ ওমরের কথা শুনে আমি আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লাম।

ওমর ভাই আমাকে বললেন, আমি যেন ২৩ জুন সোনিপথে মাওলানা সাহেবের সাথে গিয়ে অবশ্যই দেখা করি। আরো ভালো হয় যদি তার সঙ্গে আমি কিছু দিন থাকি। আমি প্রোগ্রাম বানালাম। কিন্তু পৌঁছতে আমার কিছুটা দেরি হয়। ওমর ভাই আমার আগেই পৌঁছে গিয়েছিল এবং মাওলানা সাহেবকে আমার অবস্থা সম্পর্কে সব বলেছিল। আমি সেখানে গেলে মাওলানা সাহেব আমাকে কাছে টেনে নিলেন এবং বললেন, যোগিন্দরের সঙ্গে সর্বময় মালিক যা করেছেন আপনার সঙ্গেও একই রূপ ব্যবহার করা হতে পারে। আর মালিক যদি এই জগতে শাস্তি নাও দেন তাহলে মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী জীবনে যেই শাস্তি মিলবে আপনি তা কল্পনাও করতে পারবেন না।
এক ঘন্টা মাওলানা সাহেবের সাথে থাকার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আসমানি বালার হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে । মাওলানা সাহেব দু’দিনের জন্য বাইরে কোনো সফরে যাচ্ছিলেন। আমি তার সাথে যেতে চাইলাম। তিনি খুব খুশি হয়েই অনুমতি দিলেন।

একদিন হরিয়ানা, এরপর দিল্লী ও খোর্জার সফর ছিল। দু’দিন পর তিনি ফুলাত ফিরে এলেন। এ দু’দিন আমার মন ইসলাম গ্রহণের জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমি ওমর ভাইকে আমার ইচ্ছার কথা বললাম। সে খুব খুশি হয়ে মাওলানা সাহেবকে তা জানাল। আলহামদুলিল্লাহ! ২৫ জুন ১৯৯৩ যোহর নামাযের পর আমি ইসলাম কবুল করি। মাওলানা সাহেব আমার নাম রাখেন মুহাম্মদ আমের। ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা এবং নামাযের নিয়ম-কানুন ও দরকারি মাসলা-মাসায়েল শেখার জন্য তিনি আমাকে কিছুদিন ফুলাত থাকার পরামর্শ দিলেন। আমি আমার স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাদের সমস্যার কথা বললে তিনি বাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন। আমি কয়েক মাস ফুলাত এসে থাকলাম এবং আমার স্ত্রীর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কাজ করতে থাকি। তিন মাস পর আলহামদুলিল্লাহ! আমার স্ত্রীও মুসলমান হয়ে যায়।

প্রশ্ন : আপনার মায়ের কী হলো?

উত্তর : আমি আমার মাকে মুসলমান হবার ব্যাপারে জানালে তিনি খুব খুশি হন এবং বলেন, তোর বাপের আত্মা এতে শান্তি পাবে। আমার মাও ঐ বছরেই মুসলমান হন।

প্রশ্ন : এখন আপনি কি করছেন?

উত্তর : বর্তমানে আমি একটি জুনিয়র হাইস্কুল চালাচ্ছি। স্কুলে ইসলামী শিক্ষার সাথে সাথে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষারও ব্যবস্থা আছে।



প্রশ্ন : আব্বা বলছিলেন, আপনি হরিয়ানা, পাঞ্জাবসহ বিভিন্না জায়গায় বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদগুলো পুনরায় চালু করার জন্য চেষ্টা করছেন?

উত্তর : ওমর ভাইয়ের সাথে মিলে আমরা ঠিক করেছি আল্লাহর ঘর ভেঙে আমরা যে বিরাট গুনাহ করেছি তার কাফ্ফারা হিসাবে আমরা বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদগুলো চালু করব এবং নতুন নতুন মসজিদ বানাব। আমরা দু’জনে মিলে আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিব। আমি বন্ধ মসজিদগুলো চালু করব আর ওমর ভাই নতুন নতুন মসজিদ বানাতে চেষ্টা চালাবেন। এ ব্যাপারে মসজিদ বানাবার ও সেগুলো লোকে ভরপুর করাবার কর্মসূচি হাতে নিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! এ পর্যন্ত আমি হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি ও মিরাট সেনানিবাস এলাকায় ১৩টি বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদ পুনরায় চালু করেছি। ওমর ভাই আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত সে ২০টি মসজিদ তৈরি করেছে এবং একুশতম মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেছে। আমরা উভয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাবরি মসজিদ ভাঙার বার্ষিকীতে ৬ ডিসেম্বর তারিখে একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদে অবশ্যই নামায শুরু করাতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ! আমরা আজ পর্যন্ত কোন বছরেই এটা করতে ব্যর্থ হইনি। অবশ্য শ’য়ের লক্ষ্য পূরণ এখনও অনেক দূরে। আশা করছি এবছর এর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। আটটি মসজিদ সম্পর্কে কথাবর্তা চলছে। আশা করি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেগুলো চালু হয়ে যাবে। ওমর ভাই অনেক আগেই তো লক্ষ্য অর্জনে আমার চেয়ে এগিয়ে আছে। আর আসলে আমার কাজও তো তারই ভাগে পড়ে। আমাকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার মাধ্যম তো মূলত সেই।

প্রশ্ন : পাঠকদের জন্য আপনি কি কিছু বলবেন?

উত্তর : সকল মুসলমানের কাছে আমার একটিই নিবেদন আর তা হলো, নিজের জীবনের লক্ষ্য কী তা জেনে এবং ইসলামকে মানবতার আমানত মনে করে একে মানুষের কাছে পৌঁছে দিই, পৌঁছে দেবার কথা ভাবি। কেবল ইসলামের প্রতি দুশমনীর কারণে তার থেকে বদলা নেবার প্রতিশোধ গ্রহণে উৎসাহিত না হই। আহমদ ভাই! আমি একথা একেবারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাবরী মসজিদ ভাঙায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক শিবসেনা, বজরং দলের সদস্যসহ সকল হিন্দু যদি এটা জানত যে, ইসলাম কী! মুসলমান কাকে বলে? কুরআনুল করিম কী? মসজিদ আসলে কোনো বস্তুর নাম, তাহলে তাদের সবাই মসজিদ নির্মাণের কথা ভাবতে পারত, মসজিদ ভাঙার প্রশ্নই উঠতো না। আমি আমার প্রবল প্রত্যয় থেকে বলছি, বাল থ্যাকার, উইরে কুঠিয়ার যদি ইসলামের প্রকৃত সত্য ও মর্মবাণী জানতে পারে এবং জানতে পারে যে, ইসলাম (কেবল মুসলমানদের নয়) সবার ধর্ম, এটি আমাদের দরকার তাহলে তাদের প্রত্যেকেই নিজ খরচে বাবরী মসজিদ পূণর্বার নির্মাণ করাকে নিজেদের সৌভাগ্য ভাববে।

আহমদ ভাই! সে যাকগে, কিছু লোক তো এমন আছে যারা মুসলমানদের প্রতি শত্রুতায় বিখ্যাত, কিন্তু এখন এক শ' কোটি হিন্দুর মধ্যে এমন এক লাখও হবে না। সত্য কথা বলতে কী, আমি বোধহয় বাড়িয়ে বলছি, ৯৯ কোটি ৯৯ লাখ লোক তো আমার বাবার মতো, যারা মানবতার বন্ধু এবং ইসলামী রীতিনীতি অন্তর দিয়েই পছন্দ করে। আহমদ ভাই! আমার বাবা (কাঁদতে কাঁদতে) কী স্বভাবগতভাবে মুসলমান ছিলেন না? কিন্তু মুসলমানরা তাকে দাওয়াত না দেবার কারণে তিনি কুফরি অবস্থায় মারা গেছেন।

মাওলানা সাহেব সত্য বলেছেন, আমরা যারা বাবরি মসজিদ ভেঙেছি তারা না জানার কারনে এবং মুসলমানদের না চেনার কারণে এমন জুলুম করেছি। আমরা অজানা ও অজ্ঞতার দরুণ ও ধরনের জুলুম করেছি। আমার পিতার কুফরি অবস্থায় মারা যাবার কথা যখন রাত্রে মনে হয় তখন আমার ঘুম পালিয়ে যায়। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুম আসে না। ঘুমের জন্য আমাকে ওষুধ খেতে হয়। হায়! মুসলমানদের যদি এই ব্যাথার অনুভূতি হতো! আল্লাহ হাফেজ।



সূত্র :

১। Interview of Master Amir

২। মাসিক আরমুগান পত্রিকা

৩। Master Amir ((Ex Shiv sena Leader BALBIR SINGH) - interview Master Amir ((Ex Shiv sena Leader BALBIR SINGH) - interview

৪। How did Mohammad Aamir become Balbir Singh? बलबीर सिंह कैसे बना मुहम्मद आमिर?

৫। view this link

৬। Meet Master Mohammed Amir the builder of masajid, previously known as Balbir Singh the demolisher of Babri masjid

৭। Interview of Master Amir

৮। এছাড়া নিচের লিঙ্ক থেকে দেখে আসতে পারেন সাম্প্রতিক সময়ের ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতকার, যারা ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন-

[link|https://windsofislam.blogspot.com/2010/12/21-new-muslims-interviews-wwwarmughanin.html|21 New Muslims Interviews - [www.armughan.net] in English]

ছবি: সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×