somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অকৃত্রিম মাতৃভক্তি এবং আমাদের জন্য শিক্ষা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনন্যসাধারণ মাতৃভক্তি এবং আমাদের জন্য শিক্ষা

ধরণীর শ্রেষ্ঠতম মহামানব সাইয়্যিদুল মুরসালীন রহমাতুল্লিল আলামীন সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীতে আগমন করেন ইয়াতিম অবস্থায়। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতৃহীন হন। মায়ের স্নেহ ভালোবাসাও লাভ করেন খুবই সামান্য সময়। মাত্র দু'বছর কাল তিনি মাতৃক্রোড়ে স্থান পেয়েছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার কুদরত বুঝার সাধ্য কারও নেই। তিনি তাঁর প্রিয় হাবিবকে এমনই ভিন্ন এক জীবন দান করেছিলেন। এর পেছনে হয়তো বিশ্ব জাহানের মালিক মহান বারি তাআ'লার পক্ষ থেকে রয়েছে সুনিপূণ পরিকল্পনা এবং সবিশেষ হিকমত। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারীকে তিনি পিতৃহীন ইয়াতিম অবস্থায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে, শৈশবে- মাত্র ছয় বছর বয়সে স্নেহময়ী গর্ভধারিণী মায়ের মাতৃছায়াও তাঁর মাথার উপর থেকে সরিয়ে নিয়ে জগতের সকল ইয়াতিমের শ্রেষ্ঠ ইয়াতিমের মর্যাদায় ভূষিত করেছেন- যাতে পৃথিবীর কোনো ইয়াতিমের বুক ফেটে এই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে না আসে যে, হায়! আমি তো চির ইয়াতিম! পৃথিবীতে আমার বাবা নেই! কিংবা আমি মাতৃহীন! প্রিয় নবিজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ জাল্লা শানুহূ ইয়াতিমদের সর্দার বানিয়ে জগতের সকল ইয়াতিমের দুঃখ যাতনাকে ভুলে থাকার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সাইয়্যিদুল মুরসালীন সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পিতৃ মাতৃহীন অবস্থায় রেখে তাঁর শৈশব কৈশোর এবং যৌবনের দিনগুলোকে এমনভাবে অতিবাহিত করার সুযোগ করে দিয়েছেন যে, যারা তাকে অক্ষর জ্ঞান শেখাবেন এমন কেউ যেন তাঁর পাশে না থাকেন। যাতে তার প্রতি নবুয়তের মহান দায়িত্ব অর্পনের পরে অবিশ্বাসীরা তাকে এ কথা বলে মিথ্যে অপবাদ দিতে না পারেন যে, 'তিনি যেহেতু লেখাপড়া জানা মানুষ, ওহীর নামে তিনি যা বলছেন, এসব মূলতঃ তিনি বানিয়ে বানিয়ে বলছেন, এগুলো তাঁর নিজেরই রচিত কবিতা সাহিত্য।'

তৎকালীন আরবের অভিজাত পরিবারে তাদের সন্তানদের নিজেদের মায়েদের দুধ পান করানোর পরিবর্তে জন্মের পরপরই ধাত্রীবিদ্যায় পারদর্শী বেদুঈনদের হাতে তুলে দেয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। এর কারণ ছিল, শহরের দূষণযুক্ত পরিবেশের বদলে শিশু যাতে মুক্ত প্রান্তরের সবুজে ঘেরা পরিচ্ছন্ন আবহাওয়ায় সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে। মক্কাতুল মুকাররমাহ পাহাড়ঘেরা শুষ্ক এবং অনুর্বর পাথুরে ভূমি হওয়ার ফলে তাজা ফল-ফসলের অভাব এখানে সর্বদাই ছিল। পক্ষান্তরে মক্কার অনতিদূরে অবস্থিত তায়েফসহ আশপাশ অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকা উর্বর এবং গাছপালা সুশোভিত হওয়ায় তাজা ফলফলাদিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য আহার্য্য দ্রব্যাদি সহজলভ্য ছিল।

তায়েফের সাথে মক্কাবাসীদের একটা দীর্ঘ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ব্যবসা বানিজ্য ছাড়াও মক্কাবাসী সচ্ছল পরিবারের শিশুদের লালন পালনের জন্য তায়েফের পরিবার নিয়ে আসতো। আর এর ফলে তারা একটি ভালো মানের সম্মানি লাভ করতো। তায়েফ উর্বর এবং সবুজ শ্যামল হওয়ায় তায়েফের পশুরা কচি ঘাস পেত ফলে সেগুলোও ছিল দুগ্ধবতী। বেদুইনদের ভাষাও ছিল সমৃদ্ধ। তাছাড়া মক্কায় পবিত্র কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর লোক সমাগম হত। ফলে সেখানে সংক্রামক ব্যাধিতে শিশু মৃত্যু হারও ছিল অধিক। তাই শহর থেকে শিশুদের দূরে রাখা হত। যাতে তারা নিরোগ থেকে নিটোল স্বাস্থের অধিকারী হয়ে উঠতে পারে।

বস্তুতঃ শিশুকে সুস্বাস্থের অধিকারী করে গড়ে তুলতে- একইসঙ্গে বেদুইন জীবনের সংস্পর্শে সাহসী স্বভাব আর সুন্দর ভাষা শেখানোর অভিপ্রায়ে তারা তাদের কলিজার টুকরো বাচ্চাদের বেদুইনদের হাতে তুলে দিতেন। রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাকেও লালন পালনের ভার প্রদান করা হয় তায়েফের বিদূষী নারী হালিমাতুস সাদিয়াকে। তবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণের পর সর্বপ্রথম নিজের মায়ের দুধ পান করেন।

এরপরে দ্বিতীয় নারী হিসেবে ছুয়াইবা এই সম্মান লাভ করেন। ছুয়াইবা ছিলেন আবু লাহাবের দাসী। প্রিয় নবীজীর জন্মগ্রহণের সুসংবাদ নিয়ে ছুয়াইবা গিয়েছিলেন আবু লাহাবের কাছে। এ খুশির সংবাদ শ্রবণে আবু লাহাব তাঁকে স্বাধীন করে দেন।

সবশেষে তিনি দুধ পান করেন হালিমাতুস সাদিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার। তার কোলেই অতিবাহিত হয় জন্মের পর থেকে শৈশবের চারটি বছর। পরম আদর স্নেহে লালিতপালিত হন।

বেদুইনদের সেই কাফেলার প্রত্যেকেই শিশু মোহাম্মদ ﷺ ইয়াতিম জানতে পেরে ফিরে যাচ্ছিলেন।

কারণ তারা মূলত এই আশায় শিশুদের নিয়ে যেতেন যেন শিশুকে ফেরত দেবার সময় অধিক উপঢৌকন পেতে পারেন। কিন্তু মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন পিতৃহীন।

এটা স্বাভাবিক তাঁর জন্য অধিক খরচ করার কেউ ছিল না। কিন্তু মক্কায় পৌঁছুতে বিলম্ব হওয়ায় আর কোনও শিশুকে হালিমা রা. খুঁজে পাচ্ছিলেন না। খালি হাতে ফিরে যাবার চে' বরং তাঁরা মোহাম্মদ ﷺ কে গ্রহণ করেন।

হালিমা রা. তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, 'এমনও তো হতে পারে এই ইয়াতিম শিশুর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমাদের কল্যাণ প্রদান করবেন।'

এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, তাঁরা মূলত উন্নত মননের অধিকারী ছিলেন। ইয়াতীমের প্রতি দয়াদ্র ছিলেন।

আর হয়েছিলও তাই। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর বরকত তাঁদের পরিবারকে এত সমৃদ্ধ করেছিল যে, তাঁরা তাদের গোত্রের সবচে' স্বচ্ছল পরিবারে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁদের পশুগুলো প্রচুর পরিমাণে পশম, দুধ ও বাচ্চা দিত।

হালিমা রা. এর পরিবার এত সন্তুষ্ট হন যে, তাদের অন্তরে উপঢৌকন লাভের আর কোনও আকাঙখাই ছিল না।

চার বছর বয়সে তাঁরা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর মা আমিনার কাছে ফেরত দিয়ে আসেন।

আদতে এত দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চা প্রতিপালনের রীতি ছিল না। কিন্তু যখনই কিছু দিন পর পর মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর মায়ের কাছে সাক্ষাত করতে নিয়ে আসতেন- নানা অজুহাতে পুনঃপুন অনুরোধ করে হালিমা রা সময় বৃদ্ধি করে নিতেন।

তিনি বালক মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর প্রতি অত্যধিক স্নেহ পরবশ হয়ে পড়েছিলেন। নিজ মায়ের কাছে ফেরত আসার মাত্র দুছরের মধ্যেই, সেই শৈশবেই মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মাকে হারান। ফলত মায়ের স্নেহবঞ্চিতই রইলেন তিনি।

আমেনার আযাদকৃত দাসী উম্মে আয়মান এরপর থেকে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাতৃস্নেহে বড়ো করেন। আমৃত্যু তিনি সেই স্নেহ করে গেছেন। খাদিজা রা. এঁর সঙ্গে বিয়ের সময়েও তিনি মায়ের সেই ভূমিকা পালন করেছেন।

এমনকি খাদিজা রা. এঁর সাথে রাসুল ﷺ এঁর বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার আগে নিজে কোনও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নি। ‌এতটাই স্নেহ করতেন তিনি। সমস্ত যুদ্ধে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর পাশে ছিলেন তিনি। আহা, মা!

পরিণত বয়সে স্বীয় মাতৃসেবার কোনও সুযোগ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর জন্য ছিল না। কিন্তু তিনি তাঁর বাকি তিন দুধমাতা ছুয়াইবা এবং হালিমা, উম্মে আয়মান রা. কে কখনোই ভুলেন নি।

ছুয়াইবা রা. দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছিল, দুগ্ধপানের বিনিময় হিসেবে এটা ছিল অনেক বেশি। তবুও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্মান করতেন। অর্থ ও বস্ত্র হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করতেন নিয়মিত। খোঁজ রাখতেন। প্রয়োজন পূরণ করতেন।

তাঁর প্রথমা স্ত্রী খাদিজা রা. নিজে আরবের সবচে' সম্ভ্রান্ত ও ধনী মহিলা হয়েও একজন আজাদকৃত সেই দাসীর খিদমতে হাজির হতেন। ছুয়াইবা রা. মারা যান ৭ ম হিজরিতে। তাঁর পুত্র তাঁর আগেই মারা যান।

তাঁর মৃত্যুতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যথিত হন। খোঁজ করতে তাঁর আর কোনও স্বজন আছে কি না। যাতে এই মাতৃসুলভ সম্পর্কের স্বীকৃতি তিনি বজায় রাখতে পারেন। যদিও তাঁর আর কোনও আত্মীয় খুঁজে পাওয়া যায় নি।

উম্মে আয়মান রা. কেও আযাদ করা হয়েছিল। আর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে নিজের মা বলতেন। এমনকি একবার 'একমাত্র অবশিষ্ট পরিবার' বলেও অভহিত করেছিলেন। রাসুল ﷺ তাঁর যাবতীয় উপার্জনের একটা অংশ তাঁর খিদমতে পেশ করতেন।

রাসুল ﷺ তাঁর আরেক দুধমাতা হালিমাকেও কখনো ভুলেন নি। সুযোগ পেলেই তাঁর খিদমত করেছেলো। একবার যখন সমগ্র আরবে দুর্ভিক্ষে মুখোমুখি হলো।

হালিমা তখন মক্কায় আসলেন, যুবক মোহাম্মদ ﷺ নিজের স্বচ্ছলতা না থাকা স্বত্ত্বেও তাঁকে চল্লিশটা বকরী ও একটা উটনী প্রদান করেন।

তাঁর নবুওয়তকালে হালিমা রা. যখনই তাঁর কাছে আসতেন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ দরবার থেকে উঠে দাঁড়াতেন, এগিয়ে আনতে যেতেন আর বলতে থাকতেন থাকতেন, 'আমার আম্মা, আমার আম্মা…'।

নিজে হাত ধরে তাঁকে ভেতরে আনতেন। নিজের গায়ের মোবারক চাদর বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসতে দিতেন। হুনায়ুনের যুদ্ধে হাওয়াযিন গোত্রের এক হাজার যুদ্ধবন্দীকে বিনা মুক্তিপণে রাসুল ﷺ ক্ষমা করে দেন।

কেবল হালিমা রা. এর সাথে এই গোত্রের সম্পর্কের সম্মানে। অথচ তিনি চাইলে লক্ষ লক্ষ মুদ্রা মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করতে পারতেন। কিন্তু দুধ মাতার সম্মানে সেসব ত্যাগ করেছেন। উম্মতকে শিখিয়েছেন।

তাঁর নিজের মা বেঁচে ছিলেন না, দুধমাতাকে সম্মান করে উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন মাতৃসম্মান কেমন করে প্রদর্শন করতে হয়। রাসুল ﷺ নিজের গায়ের জামা খুলে দুধমাতাকে বসতে দিয়েছেন।

আমরা আমাদের মায়েদের কতখানি সম্মান করি?

রাসুল ﷺ নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হাজারো বন্দি শত্রুকে বিনা মুক্তিপণে ক্ষমা করে শিখিয়েছেন- আমাদের পেশাগত, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ব্যস্ততা, টাকাকড়ির নেশা যেন মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায়।

যেন মাকে সময় দেওয়ার অযুহাত হয়ে না উঠে এসব। মায়ের সেবা গ্রহণ করা নয় বরং আমরা তাঁর সেবা করব। আমাদের কাপড় আমাদের মায়েরা কেন কাঁচবেন? বরং আমরা তাঁর কাপড় কাঁচব৷ তাঁর পাতে ভাত তুলে দেব, মুখে তুলে দেব।

রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো আসমান ও জমিনে সমস্ত সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হওয়া স্বত্ত্বেও নিজের দুগ্ধমাতাকে নিজের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর থেকে বেশি আর কাউকে সম্মান করেন নি।

আমাদেরকেও শিক্ষা দিয়েছেন, এই আল্লাহর আরশের নীচে মায়ের থেকে বেশি সম্মান আর ইজ্জত কারো পাবার অধিকার নেই।

কেবলই দিবসী উদযাপন নয়- বরং যাপনের জীবনে মায়েরা থাকুন যথাযথ স্থানে।

আমার নেতা, আমার প্রধানমন্ত্রী, আমার রাষ্ট্রপতি, আমার অফিসের বস, আমার শায়েখ তাদের প্রত্যেকের চেয়ে বেশি সম্মানিত আমার মা।

মা থাকবেন ব্যক্তিগত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সবার উপরে৷ এটা সেই প্রিসিডেন্স যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য প্রণয়ন করে গেছেন।

তাই মায়েদের, জগতের সব নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহ. বলতেন, 'নারীরা পৃথিবীর অর্ধেক। বাকি অর্ধেকের জন্মও তাঁরাই দেন। ফলত যেন তাঁরাই সমগ্র পৃথিবী।'

সুয়ায়বা ছিলেন আবু লাহাবের দাসী। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ঠ হলে তিনিই প্রথম আবু লাহাবের কাছে সংবাদ নিয়ে যান। আবু লাহাব ভাতিজার জন্মগ্রহণের খবর পেয়ে খুবই খুশি হল। সে তার দাসী সুয়ায়বাকে আজাদ করে দিয়ে বলে, "যাও, আমার ভাতিজার দেখভাল করো।"

এর বিনিময় আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। সুয়ায়বাকে মুক্ত করে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতিপালনে নিযুক্ত করায় জাহান্নামে তাকে এক আঙুল পরিমাণ পানি পান করানো হয়। কারণ সে একটি আঙুলের ইশারায় তাঁকে আজাদ করেছিল। আবার সে সুয়ায়বাকে সোমবারে আজাদ করেছিল বিধায় প্রতি সোমবারে তার শাস্তি লাঘব করা হয়।

সুয়ায়বা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনদিন পর থেকে নিজের ছেলে মাসরুহর সাথে দুধ পান করান। সুয়ায়বার দুধ পান করেছেন হযরত হামজা এবং আবু সালামাহ রাদি.। তাঁরা দুজনই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ সম্পর্কীয় ভাই। যদিও রক্ত সম্পর্কের দিক দিক হযরত হামজা রাদি. হলেন চাচা।

মক্কাতে অবস্থানকালে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুয়ায়বার খোঁজখবর নিতেন। তাঁর সব প্রয়োজন তিনি মিটাতে চেষ্টা করতেন। মায়ের সম্মান দিতেন। হযরত খাদিজা রা.-সাথে বিবাহ বন্ধনের পর স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে সুয়ায়বার খবর রাখতেন। হযরত খাদিজা রা. তাঁকে শাশুড়ির ন্যায় আচরণ করতেন। মদিনাতে হিজরতের পরও তাঁর জন্য খাবার-কাপড় পাঠিয়ে দিতেন। সপ্তম হিজরিতে খায়বার যুদ্ধ থেকে ফেরার পর রাসূল ﷺ দুধ মা সুয়ায়বার মৃত্যু সংবাদ শুনে দুঃখিত হন। তারপর তাঁর ছেলে মাসরুহর খোঁজখবর নিতেন।

হযরত হালিমা রা. তাঁকে দুধ পান করান কয়েক বছর। তাঁর প্রতি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মুহাব্বতও ছিল প্রগাঢ়। তিনি হালিমা রা.-কে 'প্রিয় মা' বলে সম্বোধন করতেন। ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনে ছিলেন উদার। নিজের গায়ের কম্বল বিছিয়ে দুধ মাতাকে বসতে দিতেন। মা ডাক দিলে দৌড়ে গিয়ে সাড়া দিতেন।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বিয়ের পর একদিন হালিমা রা. মক্কায় দুধ সম্পর্কীয় সন্তানকে দেখতে আসলেন। তিনি বেশ কয়েকদিন হযরত খাদিজার রা. সান্নিধ্যে শাশুড়ির মর্যাদায় ছিলেন। তখন মদিনাতে ভয়ানক এক দুর্ভিক্ষ চলছিল। সেই দুর্ভিক্ষের ফলে হযরত হালিমা রা. আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। মারাত্মক অভাব দেখা দেয়। বেড়ানো শেষে মদিনাতে ফিরে যাওয়ার কালে হযরত খাদিজা রা. তাঁকে ৪০ টি ভেড়া এবং একটি উট উপহার দেন।

মক্কা বিজয়ের দিন হযরত হালিমা রা.-এর বোন—যিনি আবতাহে অবস্থান করছিলেন—চামড়ার থলেতে করে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জন্য মাখন ও পনির নিয়ে আসলেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দেখে উৎসাহী হয়ে প্রথমই জিজ্ঞেস করলেন, "আমাদ দুধ মা কেমন আছেন?"

যখন জানানো হল, তিনি আর বেঁচে নেই তখন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দুটো চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। মা হারার ব্যথায় ব্যথাতুর ছিলেন তিনি।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ খালার বিদায় কালে হাদিয়া হিসাবে তাঁকে কিছু কাপড়চোপড়, একটি উট এবং ২০০ দিরহাম হাতে তুলে দেন।

যাওয়ার কালে তিনি বললেন, "তুমি আগের মতোই বিশ্বস্ত এবং প্রেমময় আছো।"

এ ছিল দুধ মাতা এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের প্রতি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ। এবার সেই আয়ানায় নিজেদেরকে দেখে নিই। ত্রুটি থাকলে এখনই সংশোধন করে নিই। মাতা পিতা জীবিত থেকে থাকুন কিংবা মৃত্যুবরণ করে চলে গিয়েছেন, যেটাই হোক, সর্বাবস্থায় তাদের জন্য প্রতি নামাজের পরে কায়মনোবাক্যে মহান রবের নিকট দু'ফোটা চোখের অশ্রু ফেলে দুআ করি-

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা।

হে আমার পালনকর্তা, পিতা মাতা উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে অতুলনীয় দয়ামায়ায় লালন-পালন করেছেন।



রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর গর্ভধারিণী মাতা আমিনা বিনতে ওহাব এর কবর। ১৯৯৮ সালে মক্কা এবং মদিনার মধ্যবর্তী আল আবওয়া নামক স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়। তবে পরবর্তীতে এটি বুলডোজার এবং গ্যাসোলিন দ্বারা ধ্বংস করা হয়। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া, Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×