লাখো তৌহিদী জনতার কান্না আহাজারিতে চির বিদায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.
লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্মরণকালের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ নামাজে জানাজা শেষে হেফাজতে ইসলামের আমির শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বাদ জোহর (দুপুর ২টায়) হাটহাজারী মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে মাদরাসার কবরস্থানে দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ আলেমে দ্বীনকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। লাখো তৌহিদী জনতার কালেমা শাহাদাৎ ও দোয়া-দরূদের মধ্য দিয়ে তাকে দাফন করা হয়।
দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন, দেশের হাজার হাজার আলেমের শিক্ষক আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে শেষ বিদায় জানাতে আসা মানুষের ঢলে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নামাজে জানাজায় শরিক হন লাখ লাখ মানুষ। মরহুমের বড় পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। তার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি তার পরিবারের পক্ষ থেকে পিতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্য দোয়া কামনা করেন। এ সময় জানাজায় শরিক লাখো জনতা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আল্লামা শফীর অগণিত ছাত্র চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। জানাজা পূর্ব লাখো মানুষের সমাবেশে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এদেশে মাদরাসা শিক্ষা তথা কওমি ধারার শিক্ষা বিস্তার ও প্রসারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার একান্ত প্রচেষ্টায় এদেশের কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। নামাজে জানাজা শেষে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অর্ধশত বছরের স্মৃতি বিজড়িত মাদরাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে তার কফিন নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
সকাল ৯টায় তার কফিন ঢাকা থেকে হাটহাজারী মাদরাসায় আনা হয়। মাদরাসার একটি শ্রেণিকক্ষে কফিন সকলের দেখার জন্য রাখা হয়। লাখো জনতা সারিবদ্ধভাবে তাকে শেষবারের মতো দেখেন। মাদরসা শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত এবং আল্লামা শফীর অছিয়ত অনুযায়ী হাটহাজারী মাদরাসায় জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় শুরা কমিটি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হয়।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা দেশের কওমি শিক্ষার কিংবদন্তি এ আলেমের ইন্তেকালে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
১০৩ বছর বয়সী আল্লাম শাহ আহমদ শফী দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে এর আগেও দফায় দফায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মাধ্যমে ৯২ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এ দেশের তৌহিদী জনতার ঈমান, আক্বিদা রক্ষার আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
কওমি ধারার ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ, বিশ্ববরেণ্য এ আলেম সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। রাঙ্গুনিয়ায় তার নিজ বাড়ি হলেও তার ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুই ছিল হাটহাজারী মাদরাসাকে ঘিরে। ২০ বছরের শিক্ষকতা এবং ৩০ বছরের মহাপরিচালকের (মুহতামিম) দায়িত্ব পালনকালে হাটহাজারী মাদরাসাতেই তিনি থাকতেন।
হেফাজতের আমিরের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
হেফাজতে ইসলামের আমির বিশিষ্ট আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে আহমদ শফী মারা যান। আগামীকাল শনিবার বাদ জোহর হাটহাজারী মাদ্রাসায় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে।
সন্ধ্যায় এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আল্লামা শফী দেশে-বিদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদকে হারাল।‘
রাষ্ট্রপতি মরহুম আল্লামা শফীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অপর এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের আমিরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আহমদ শফী দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও ভূমিকা রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আরও যারা শোক প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন-
আল্লামা শফীর ইন্তেকালে সাইয়েদ আরশাদ মাদানির শোক
উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেমে দ্বীন, হেফাজতে ইসলামের আমির, বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাসমূহের শীর্ষ সংগঠন আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া এর চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিস, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, আল-জামিয়াতুল আহলিয়া মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম মাদ্রাসার সম্মানিত মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শাইখুল ইসলাম সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানির ছোট ছেলে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের বর্তমান প্রেসিডেন্ট, দারুল উলূম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস সাইয়েদ আরশাদ মাদানি।
গতকাল শুক্রবার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে দেয়া এক শোক বার্তায় সাইয়েদ আরশাদ মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
আল্লামা শফী একজন সৎ নির্ভীক আলেমে দ্বীন ছিলেন: আইজিপি
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। আজ শনিবার সকালে এক শোক বার্তায় এ কথা জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
শোকবার্তায় আইজিপি বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী একজন সৎ এবং নির্ভীক আলেমে দ্বীন ছিলেন। অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে তার আপসহীন ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য ও তার ভক্ত অনুসারীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
আল্লামা শফী সাহেবের ইন্তেকালে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের শোক
হেফাজতে ইসলামের আমির, কওমি মাদসার সম্মিলিত শিক্ষা সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ ও কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালে দেশের মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের একমাত্র পেশাজীবী অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন ও মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এক শোকবার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, আল্লামা শফী সাহেব দেশে-বিদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর ইন্তেকালে দেশ একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদকে হারালো।
নেতৃদ্বয় মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সাথেসাথে পরিবার-পরিজন, আত্মিয়-স্বজন, শুভাকাংখি, গুনগ্রাহীসহ তাঁর সকল ভক্তগণ যাতে এ শোকার্ত সময়ে ধৈর্যধারণ করতে পারেন সেজন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করেন।
আমরা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দরবারে বরেণ্য এই আলেমে দ্বীনের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান বানিয়ে নেয়ার প্রার্থনা রাখছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৭