যেমন হওয়া উচিত একজন মুসলিমের দৈনন্দিন রুটিন!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার প্রতি এবং আখিরাতে বিশ্বাসী মুসলিম ব্যক্তির জীবন ইবাদত নির্ভর। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ছাড়াও সকাল সন্ধ্যায় পালনীয় তার জন্য মাসনূন আমল এবং দোআ তাসবিহ রয়েছে। এমনকি প্রত্যেক কাজেই তার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট দোআ তাসবিহ। এগুলো পাঠ এবং পালনের মাধ্যমে তাকে মেনে চলতে হয় ইসলামী শরিয়াতের বিধি-বিধান। শরয়ী এসব বিধি-বিধান ও নিয়ম কানূন অনুযায়ী নির্দিষ্ট নিয়ম এবং সীমার মধ্যে থেকেই জীবন পরিচালনা করতে হয় তাকে। যে কারণে তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রতিটি কাজকর্ম হওয়া চাই সুন্দর, সর্বোৎকৃষ্ট এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ। তার আচার-আচরণ, কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, লেনদেন, চলাফেরা ইত্যাদি, মোটকথা সামগ্রিক বিচারে তাকে হতে হবে আলোকিত এমন একজন মানুষ যার কাজ দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, যার কথা দ্বারা কেউ কষ্ট পাবে না, যার আচরণে কেউ আহত হবে না, যার হাত ও মুখ অন্যের গ্রাস কেড়ে নিবে না। দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে একজন মুসলিম তার সারা দিন ও রাতের সময়গুলোকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগাতে পারে, সে সম্মন্ধেই অত্র নিবন্ধ। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের উত্তম জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন।
ভুল রুটিনে বিপন্ন জীবনঃ
সুন্দর এই পৃথিবীতে আমরা সকলেই কম বেশি ব্যস্ত। জীবন যেমন থেমে নেই, ব্যস্ততারও শেষ নেই। ব্যস্ততা থাকবেই। ব্যস্ততা থাকাটাই স্বাভাবিক। জীবন শেষ হয়ে গেলে প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। ইতি ঘটে সকল ব্যস্ততারও। কিন্তু আমাদের অনেকেরই জীবন সয়লাব হয়ে আছে অযাচিত, অপ্রয়োজনীয় কিংবা পরিমিতিবোধহীনতায় সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ব্যস্ততা আর অনর্থক কোলাহলে। এই ভুল ব্যস্ততার পেছনে পড়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত অমল ধবল জীবন কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আর এর কারণ হল, আমাদের দিনের শুরুটাই হয় ভুলভাবে। রাত বারোটার পরে ঘুমানো আর দিনের দশটা বাজিয়ে ঘুম থেকে ওঠা আমাদের নিত্য-নৈমত্তিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা নববী আদর্শ এবং সুন্নাহ পরিপন্থি মারাত্মক একটি ভুল রুটিন। আর এই ভুল রুটিনের কারণে বরকতশূন্য হয়ে পড়ছে আমাদের গোটা জীবন। কোথাও যেন শান্তি-প্রশস্তি নেই। বারাকাহ-প্রাচুর্য্য নেই। রহমত যেন উবে গেছে জীবন থেকে। শান্তির নীড়ের বদলে আমাদের ঘর-সংসারগুলো যেন ক্রমশঃ হয়ে উঠছে অশান্তির কারখানা। পরিবারগুলো থেকে বিদায় নিচ্ছে শৃঙ্খলা, সৌন্দর্য্য এবং প্রশান্তির পরশ।
জীবনের বরকত আগে ঘুমানো এবং আগে জাগ্রত হওয়ার মাঝেঃ
জীবনের সকল ক্ষেত্রে বরকত লাভ, প্রয়োজনীয় প্রতিটি কাজের সুষম সমন্বয় এবং সত্যিকারের শৃঙ্খলা অর্জনের জন্য ইসলামী শরিয়াহ নির্দেশিত দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করার বিকল্প আমাদের নেই। ইসলামী শরিয়াহ নির্দেশিত সেই রুটিন হচ্ছে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত পদ্ধতিতে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসৃত জীবনযাপনের তরিকার আনুপুঙ্খিক বাস্তবায়ন। বলা বাহুল্য, ইসলাম আমাদের আগে আগে ঘুমুতে এবং অতি প্রত্যুষে জাগতে উৎসাহিত করে। এটিই ছিল রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সারা জীবনের ধারাবাহিক এবং নিয়মিত আমল। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের প্রথম প্রহরে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া দীর্ঘ সময় জেগে থাকতেন না তিনি বরং তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তেন এবং রাত দ্বিপ্রহরের পরপরই আবার জাগ্রত হতেন। অতঃপর কিয়ামুল্লাইল তথা তাহাজ্জুদে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতেন। এমনকি অধিকাংশ সময় ফজরের ওয়াক্ত অবদি চলতে থাকতো তাঁর রাতের সেই ইবাদত। আমাদের জীবনও কি এমন হওয়া উচিত ছিল না? আমরা কেন শেষ রাতের নিস্তব্ধতায় মহান বারি তাআ'লা যখন প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হন, অভাবী, বঞ্চিত, প্রার্থনাকারীদের সকাতর প্রার্থনা শোনার জন্য বারেবারে আহবান করতে থাকেন, কবুল করে নেয়ার জন্য ডাকতে থাকেন, কে আছ অভাবী? আমার কাছে চাও, আমি অভাব পূরণ করে দিব। কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী? আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো, আমি ক্ষমা করে দিব। এমনি করে প্রেম বিগলিত কন্ঠে ডাকতে থাকেন আর মুঠি মুঠি রহমতের বারিধারা বর্ষন করতে থাকেন বিশ্ববাসী সকলের জন্য - প্রিয় বন্ধু, তখন আমরা কেন ঘুমের ঘোরে অচেতন হয়ে পড়ে থাকি? আমরা কেন জাগতে পারি না? আমরা কেন মহান মালিকের নিরব রাতের সেই ঐকান্তিক আহবান শুনতে পাই না? আমরা কেন তাঁর সেই আকুল ডাকে সারা দিয়ে নিজেদের কিসমত বুলন্দ করে নিতে পারি না? আমরা কেন আমাদের ভাগ্যকে বদলে নিতে পারি না? আমরা কেন আমাদের তাকদীরকে প্রশস্ত এবং প্রসন্ন করে নিতে পারি না?
মুসলিম ব্যক্তির দিনের সূচনা হবে সুবহে সাদিক থেকেঃ
একজন মুসলমানের দিনের সূচনা হবে সুবহে সাদিক থেকে, নিদেনপক্ষে সূর্য উঠার আগে। এভাবে সে ফজরের নামাজান্তে ভোরের শুভ্র হাওয়া এবং নির্মল প্রাকৃতিক সজীবতা গায়ে মাখতে পারে। সকালের পরিবেশ এত সতেজ এবং কোমল থাকার রহস্যই হচ্ছে, সকালের সম্পূর্ণ সময়টাই থাকে মুনাফিকমুক্ত। মুনাফিকদের এই সময়টা কাটে গভীর নিদ্রায় বিভোর থেকে। মূলতঃ দুই শ্রেণির লোক রাত জাগে। একটি শ্রেণি আল্লাহর ভয়ে রুকু, সিজদা এবং তিলাওয়াত আর ক্রন্দনে অতিবাহিত করে রাতের অধিকাংশ সময়, বিশেষ করে রহমতের বৃষ্টিস্নাত রজনীর শেষ প্রহর। রাতের বেশিরভাগ সময় ইবাদত বন্দেগীতে কাটানোর কারণে ফজরের নামাজ আদায়ের পরের সময়টাতে কিছু সময় এদের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আর দ্বিতীয় শ্রেণিটির অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে অবাধ্যচারিতায় বিভোর হয়ে ওঠে এরা। দুষ্কর্ম এবং বৈধ কিংবা অবৈধ প্রত্যেক আনন্দ উল্লাসকে এরা সর্বোতভাবে ভোগ করতে চায়। দিনের আলোয় এদের চেনা যায় না। পোশাকে আষাকে পরিপাটি। পুরোদস্তুর ভদ্রলোকের মুখোশের আড়ালে এরাই হয়ে ওঠে রাতের দুষ্কৃতকারী। চুরি, ডাকাতিসহ নানাবিধ অপকর্মে জড়িত হয়ে শেষমেষ অপরাধবোধের মাত্রাজ্ঞানই ভুলে যায় এরা। মুনাফিক শ্রেণির সাথে সখ্যতা রাখা এই দলের অপরাধীদের দিনের সূচনাই হয়ে থাকে সকালের কোমলতার অবসানে, প্রভাতের প্রশান্তিদায়ক হিমেল বাতাসের মৃদু পরশের পরিসমাপ্তির পরে।
প্রত্যুষে সয্যা ত্যাগকারীদের জন্য দোআ করেছেন নবীজিঃ
যারা সকালে ঘুম থেকে উঠে থাকেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বরকতের দুআ করেছেন, “হে আল্লাহ! আমার উম্মতের মধ্যে যারা ভোরে জাগে, তাদের জীবনে বরকত দান করুন”। -মুসনাদে আহমদ, সহিহ ইবনে হিব্বান
দুখের বিষয় হলো আমাদের লাইফস্টাইল একদমই এর বিপরীত।
বড় আজব কথা বলতেন আমাদের পূর্বসূরী জ্ঞানীগণঃ
আমরা অযথাই রাত অনেক রাত করে ঘুমাই, ফলে ফজরের নামাজ ওয়াক্ত মতো পড়া আমাদের নসিব হয় না। আমাদের সালাফেরা, আমাদের পূর্বসূরী জ্ঞানীগণ বলতেন, “যারা সূর্য উঠার পর ফজরের নামাজ পড়ে, তারা কীভাবে আল্লাহর কাছে রিজিক আশা করে আমাদের বুঝে আসে না”!
শয়তানের দেয়া গিট্টু খুলেই উঠে যেতে হবে প্রত্যুষেঃ
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা ঘুমালে শয়তান তোমাদের ঘাড়ে তিনটা গিট্টু দেয়, প্রতিটা গিট্টুতে ‘রাত এখনো অনেক লম্বা, তুমি ঘুমাও’ বলে শয়তান ফুঁ দেয়।
ঘুম থেকে উঠে কেউ আল্লাহর নাম নিলে প্রথম গিট্টু খুলে যায়। এরপর উজু করলে দ্বিতীয় গিট্টু খুলে যায়। এরপর যদি নামাজ আদায় করে তাহলে তৃতীয় গিট্টুটিও খুলে যায়। ফলে তার দিনের শুরুটা হয় কর্মময় এবং প্রশান্ত চিত্তে। অন্যথায় তার সকাল শুরু হয় অলস এবং মনমরা অবস্থায়”। -সহিহ বুখারি
কখনও পড়ে দেখেছেন প্রভাতে পঠিতব্য অর্থবহ এবং মন ভালো করে দেয়া অনিন্দ্য সুন্দর দুআগুলো?
এরপর রয়েছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক পঠিত সকালের অনিন্দ্য সুন্দর দুআগুলো। এই দুআগুলো পড়লে একজন পাঠকের মন ভালো না হয়ে পারে না। এইসব দুআর বৈজ্ঞানিক কার্যক্ষমতা আমরা হয়তো হাজার বছর ধরেও বুঝিনি। সম্প্রতি আধুনিক বিভিন্ন ধরণের মেডিটেশনে এর চেয়ে কম পাওয়ারফুল শব্দগুলোই ‘অ্যাফারমেশন’ নামে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াতের চেয়ে মন ভালো করার আর কিছু আছে কি?
মাসনুন দুআ আদায় করে কিছুক্ষণ অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করে কুরআন তিলাওয়াত করবেন।
ফরজ নামাজের পরে জীবিকার তালাশে বের হওয়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজঃ
এরপর সকালের নাস্তা সেরে দিনের কাজের জন্য বের হবেন এবং জীবিকার তালাশে যুক্ত হবেন যে কোনো হালাল পেশায়। এখানে মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম সুদকে হারাম করেছে। কারণ, সুদের মাধ্যমে কোন রকমের কষ্ট, অংশিদারিত্ব এবং রিস্ক ব্যতিরেকে শুধু টাকা দিয়ে টাকা উপার্জন করা হয়। এভাবে যার অনেক টাকা সে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকবে আর টাকা দিয়ে টাকা কামাবে। কোন রকম মেহনত ছাড়া। এই সুদি উপার্জন ইসলামি দর্শন এবং নীতি বিরোধী। আল্লাহ তাআলা মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করে তাতে তাদের বসবাস করতে দিয়েছেন যাতে তারা পৃথিবীকে আবাদ করে এবং আরও সমৃদ্ধ করে। পায়ের উপরে পা তুলে খাওয়া মানুষ সৃষ্টির চিরাচরিত নিয়ম, উদ্দেশ্য এবং প্রথার ব্যতিক্রম।
জীবন থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গ্রহণ করার মতই মানুষের উচিত পৃথিবীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা। পৃথিবীর যে পরিমাণ জিনিস আমরা ব্যবহার করি আমাদের উচিত সেই পরিমান বা তার থেকে বেশি একই জিনিস সৃষ্টি করা; যাতে পরবর্তী প্রজন্ম সুন্দর একটি পৃথিবী পেতে পারে। কোনো মুসলমানের জন্যই অযথা বেকার বসে থেকে জীবন এবং জীবনের অতি মূল্যবান সময় নষ্ট করা উচিত নয়। কোনো কাজ না করে, খেয়ে আর ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করা ইসলামের আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। এমনকি এই কর্মহীনতা যদি ইবাদতের নামেও হয়, তবু ইসলাম এর অনুমেদন দেয় না। কারণ, ইসলামে সন্ন্যাসবাদের কোনও স্থান নেই।
দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো বেকারত্বঃ
ইমাম বাইহাকি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, ‘দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো বেকারত্ব।'
আল্লামা মুনাভি রহ. এই কথার সাথে আরও যুক্ত করে তার ফয়জুল কাদিরে লিখেন, ‘কোন ব্যক্তি যখন বেকার বসে থাকে তখন তার অন্তরে বিবিধ কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হয়। কারণ, বাহ্যিকভাবে বেকার থাকা গেলেও মানুষের অন্তর কখনই বেকার থাকে না। বরং অন্তরকে কাজ দিয়ে না রাখলে সেখানে শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রাধান্য লাভ করে এবং শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ এমনসব কাজে জড়িয়ে পড়ে, যাতে ক্ষতি ছাড়া কারও কোন উপকার হয় না।
একবার উমর রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু বাহ্যিক বেশভূষা দেখে এক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই ব্যক্তির কি কোন পেশা আছে? ‘তার কোন পেশা নেই’ -শুনার সাথে সাথে তিনি চোখ ফিরিয়ে নেন।
এই নিন্দা হলো কোন রকমের কাজকর্ম না করে নিজের সম্পদ খেয়ে ধ্বংস করার ব্যাপারে। আর যারা নিজেরা কাজ না করে অন্যের সম্পদ খেয়ে শেষ করে তারা তো আরও অধিক নিন্দার যোগ্য। এই জন্য বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম পেশাহীন ব্যক্তিকে ধ্বংসস্তূপে বাস করা পেঁচার সাথে তুলনা করেন, যাতে কারোরই কোনো ফায়দা নেই।
সত্যিকারের মুসলিমের প্রতিটি কাজই ইবাদতঃ
মুসলমান বিশুদ্ধ নিয়ত এবং সঠিক পন্থায় জাগতিক যেসব কাজকর্ম করে, সেগুলোও ইবাদত এবং এমনকি অনেক কাজ জিহাদ হিসেবেও গণ্য হয়। কারণ, প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে আদায় করা মুসলমানের ওপর অর্পিত দায়িত্ব। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, ‘আল্লাহ প্রতিটি জিসিসের উপর ‘ইহসান’ আবশ্যক করেছেন। আর ইহসান হলো প্রতিটি জিনিস সুন্দর এবং সুচারুরূপে সম্পন্ন করা।
যেমনটি আমরা অন্য হাদিসে দেখতে পাই, যেখানে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যখন কোন কাজ করবে, তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবে’। -সুনানে বাইহাকি
অপরকে সাহায্য করাও সাদাকাহঃ
দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যে একজন মুসলমানের জন্য যে বিষয়টি কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয় তা হলো, মানুষকে সাহায্য করা এবং সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা। কারণ, এসব তার আমলনামায় সাদাকাহ হিসাবে গণ্য হয়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের উপর সাদাকাহ আবশ্যক। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, কেউ যদি সাদাকাহ করার মতো কিছু না পায়? নবীজি বললেন, সে নিজ হাতে কামাই করবে। এতে সে নিজেও লাভবান হবে, সাদাকাও করতে পারবে। তারা বললেন, যদি তা করতে সক্ষম না হয়? তিনি বললেন, গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করবে। তারা বললেন, যদি তা করতে না পারে? তিনি বললেন, সৎ কাজের আদেশ করবে। তারা বললেন, যদি তাও করতে না পারে? নবীজি বললেন, তাহলে সে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে, এটাই তার জন্য সাদাকাহ হবে। -সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০২২
হাদিসে উল্লেখিত এই সাদাকাহ এবং সমাজের প্রতি ব্যক্তির দায় প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। এই কর্তব্য সমাজের প্রতিটি সদস্যের। ইসলাম রহমতের ধর্ম। সেই হিসেবে প্রতিটি মুসলমানের উচিত সমাজের জন্য রহমতস্বরূপ হওয়া। ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করলে প্রত্যেক মুসলমান হয়ে উঠবে কল্যাণের একেকটি অনিঃশেষ ঝর্নাধারা। যা তার চার পাশের সজীবতা বৃদ্ধিতে অবিরত বয়ে চলবে।
দুই ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসা করে দেয়াও সাদাকাহঃ
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, ‘যত দিন সূর্য উঠবে, তত দিন প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিটি গ্রন্থির উপরে রয়েছে সাদাকাহ (বলা বাহুল্য, শুধু দান করাই সাদাকাহ নয়)। দু'জন ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসা করে দেয়াও সাদাকাহ। কাউকে বাহনের উপরে উঠতে বা তার সামান উঠাতে সহায়তা বা সাহায্য করাও সাদাকাহ।
উত্তম কথা বলাও সাদাকাহঃ
উত্তম কথা বলা সাদাকাহ। নামাজের জন্য মসজিদের দিকে উঠানো প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকাহ। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও সাদাকাহ।
স্রষ্টার আনুগত্য এবং সৃষ্টির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাই প্রকৃত শুকরিয়া আদায়ঃ
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। এই জন্য মানুষের উচিত এসবের শুকরিয়া আদায় করা। আর শুকরিয়া আদায়ের তরিকা হলো, স্রষ্টার আনুগত্য এবং সৃষ্টির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
জামাআতের সাথে আদায় হওয়া চাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজঃ
সূর্য হেলে পড়লে যুহরের আজান দেয়া হয়। প্রথম ওয়াক্তেই যুহরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। কারণ, প্রথম ওয়াক্তে নিহিত রয়েছে আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টি। আল্লাহ তাআলা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করতে বলেছেন। আর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম জামাতে পশ্চাদগামীদের ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার মত কথায় তাদের ভয় প্রদর্শন করে জামাআতের গুরুত্ব বুঝাতে চেয়েছেন।
জামাআতের নামাজে সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াবঃ
তাছাড়া, একা নামাজ পড়ার চেয়ে মসজিদে জামাআতের সাথে আদায়কৃত নামাজে সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। মুসলমান দ্বিপ্রহরে আল্লাহ তাআ'লা প্রদত্ত রিজিক থেকে সীমাহীন অপচয় এবং সীমাহীন সংযম ব্যতিরেকে মধ্যম পন্থায় দুপুরের খাবার গ্রহণ করবে। যেমনটি আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা গ্রহণ কর এবং পানাহার কর, তবে অপচয় কর না। আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না’। -সুরা আরাফ, আয়াত ৩২
কাইলুলা একটি সুন্নত আমলঃ
গরমের সময় বিশেষত গ্রীষ্মকালে দুপুরের পানাহারের পরে কিছু সময় কাইলুলা (বিশ্রাম) করার প্রয়োজন হয়, এতে শেষ রাতে জেগে উঠে রাতের ইবাদত করা সহজ হয়। সূরা আন নূরের ৫৮ নং আয়াতে কইলুলার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।
‘মধ্যবর্তী নামাজ’ বলে আসরের নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপঃ
আসরের ওয়াক্ত শুরু হলে কাইলুলা বা অন্যসব ব্যস্ততা রেখে সবাই মসজিদের দিকে যাবেন। আসরের নামাজে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। এই নামাজকে ‘মধ্যবর্তী নামাজ’ হিসেবে উল্লেখ করে কুরআনে আলাদাভাবে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই ব্যস্ততা, ব্যবসা বাণিজ্য বা খেল-তামাশায় মত্ত থেকে এই নামাজকে অবহেলা করা যাবে না। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের মধ্যে রয়েছে এমন মানুষ, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখতে পারে না’। -সূরা আন নূর, আয়াত ৩৮
বিনা ওজরে সূর্যাস্তের মুহূর্তে আসরের নামাজ আদায় করা মুনাফিকির আলামতঃ
তাই কোন মুসলমানের উচিত নয় আসরের নামাজকে পিছিয়ে একদম শেষ ওয়াক্তে আদায় করা। কারণ, আসরের নামাজ একদম শেষ ওয়াক্তে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করলে মুনাফিকরাই কেবল আদায় করে থাকে। যেমন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, ‘ওই নামাজ হলো মুনাফিকের নামাজ, যে বসে বসে সূর্যের দিকে তাকাতে থাকে আর যখন তা অস্তপ্রায় হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে চারবার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১২৯৯
মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিন প্রথম ওয়াক্তেইঃ
সূর্য ডুবে গেলে মুসলমানগণ দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবমান হবেন এবং মাগরিবের নামাজ প্রথম ওয়াক্তেই আদায় করবেন। কেননা মাগরিবের ওয়াক্ত খুবই সংক্ষিপ্ত। মাগরিবের নামাজের পরে সকালের মতো মাসনুন দুআ এবং জিকির আদায় করবেন।
আশা ক্কবলাল ইশা, অর্থাৎ, উত্তম হচ্ছে ইশার পূর্বে রাতের খাবার খাওয়াঃ
একজন মুসলিম রাতের খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করবেন। এরপর সুন্নত সহকারে ইশার নামাজ পড়বেন। শেষ রাতে উঠার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হলে বিতির রেখে দেবে, অন্যতায় তখনই পড়ে নেবে। প্রয়োজনে রাতের খাবার ইশার পরেও খাওয়া যেতে পারে, তবে রাতের খাবারের পরেই ইশার নামাজ আদায় করা উচিত। রাতের খাবার এবং ইশার নামাজ একইসাথে হাজির হলে আগে খাবার খেয়ে নেবেন। বুখারি-মুসলিমের হাদিসে এমনটাই এসেছে। খেয়ে নামাজ পড়ার কারণ হলো, যাতে নামাজে পরিপূর্ণ মনোযোগ দেওয়া যায়। ঘুমের আগে নির্দিষ্ট কোনো কাজ থাকলে তা করবেন, যেমন কারও সাথে দেখা করা অথবা অন্য কোনো বিশেষ কাজ সম্পন্ন করা।
কিছু সময় অধ্যয়নের জন্য রাখা চাইঃ
দৈনন্দিন রুটিনে কিছুটা সময় নিজের অধ্যয়নের জন্য রাখা উচিত। যাতে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা নবীজিকে বলেছেন, ‘হে নবী আপনি বলুন, প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন’। নিজের দুনিয়া এবং আখেরাত সজ্জিত করার জন্য তাই দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় নির্বাচিত কিতাবাদি পড়ার জন্য বরাদ্দ করা উচিত। জনৈক জ্ঞানী সুন্দর বলেছেন, ‘তুমি যা পড় তা যদি আমাকে বল, তাহলে তুমি যে আসলে কে তা আমি তোমাকে বলে দিতে পারব!’
বিনোদনেরও কিছুটা প্রয়োজন রয়েছে বৈকিঃ
দিনের কিছু সময় বৈধ খেলাধুলা এবং শরিয়ত-সম্মত বিনোদনে ব্যয় করা দোষের কিছু নয়। তবে কাজ, ঘুম, বিশ্রাম, নিজের শরীর, পরিবারের হক, আত্মীয়-স্বজনের হকসহ যেকোনো হক সর্বোপরি আল্লাহর হক তথা এবাদতে অবহেলা করে তা কখনই করা যাবে না। এসকল দায়িত্ব যথাযথ আদায়ের পরই খেলাধুলা এবং বিনোদনের কথা আসে।
সময়ের সদ্ব্যবহার করা চাইঃ
অবশ্য এসব হক আদায় করতে গিয়েও বাড়াবাড়ি করা যাবে না। কারণ, একদিকে সময় বেশি দিলে আবশ্যিকভাবেই অন্যদিকে সময় কম পড়বে। এই জন্য সময় এবং কার কতটুকু হক এই ব্যাপারে সবার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। কুরআনুল কারিমের এই আয়াতও সুষম বণ্টনের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে। ইরশাদ হচ্ছে,
أَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيزَانِ
‘তোমরা মাপের ব্যাপারে অন্যায় করো না। -সূরা আর রাহমান, আয়াত ৮
وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ
ন্যায়ের সাথে মাপ ঠিক রেখো এবং মাপে কম দিয়ো না।’ -সূরা আর রাহমান, আয়াত ৯
দশটি হক আদায়ের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবেঃ
আল্লাহ তাআলা কুরআনে যে দশটি হকের কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর ব্যাপারে মুসলমানদের কখনোই বিস্মৃত হওয়া উচিত নয়। ইরশাদ হচ্ছে,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا
‘আর তোমরা (১) আল্লাহর এবাদত করো, তার সাথে কোনো কিছু শরিক করো না, (২) পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো এবং (৩) আত্মীয়-স্বজন, (৪) এতিম (৫) মিসকিন, (৬) কাছের প্রতিবেশি, (৭) দূরের প্রতিবেশি, (৮) ঘনিষ্ট সহচর, (৯) পথিকজন, (১০) তোমাদের দাস-দাসীর সাথেও (ভালো ব্যাবহার করো)। -সূরা আন নিসা, আয়াত ৩৬
এখানে উল্লেখিত দশটি হকের মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হক হলো সকল সৃষ্টির স্রষ্টা, সকল কিছুর মালিক, জীবন-মৃত্যু এবং যাবতীয় নেয়ামত দাতা আল্লাহ তাআলার হক। কারণ, ‘প্রতিটি নেয়ামতই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে’। অতএব আল্লাহ তাআলার হকের ব্যাপারে কোনো রকম অবহেলা এবং গাফলতির সুযোগ নেই।
নামাজ শ্রেষ্ঠতম ইবাদতঃ
আর আল্লাহ তাআলার হকের মধ্যে দৈনন্দিন আদায়যোগ্য প্রকাশ্য হক হলো নামাজ। এই জন্য নামাজের খুশু-খুজু মুমিনের প্রথম-প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তারা খুশু-খুজুর সাথে নামাজ আদায় করে’। নামাজের প্রতি যত্নশীলতাকে মুমিনের বৈশিষ্ট্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘আর তারা নামাজের প্রতি যত্নশীল’।
আর যারা নামাজে অলসতা প্রদর্শন করে, তাদের ধ্বংসের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ সেই নামাজিদের জন্য, যারা নামাজ আদায়ের ব্যাপারে অমনোযোগী’।
মাতাপিতার হক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণঃ
দ্বিতীয় প্রধান হক হলো মাতাপিতার। তাওহিদ এবং আল্লাহর এবাদতের পর কুরআনে সবচেয়ে গুরুত্বসহকারে মাতাপিতার হকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন-সুন্নায় বিশেষত মায়ের হকের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হচ্ছে,
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا ۚ
‘তার মা তাকে কষ্ট করে গর্বে ধারণ করেছে এবং কষ্ট করে প্রসব করেছে। তাকে গর্বে ধারণ এবং দুধ ছাড়াতে ত্রিশ মাস সময় লেগেছে’। -সূরা আহকাফ, আয়াত ১৫
বছরের নির্দিষ্ট কোনো দিনে ‘মাতৃদিবস’ পালন করে দায়মুক্তির আধুনিক আনুষ্ঠানিকতাকে ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম বরং বছরের প্রতিটি দিনকেই মাতৃদিবসের মর্যাদা দিতে বলে।
আদায় করা চাই আত্মীয়-স্বজনের হকঃ
পিতামাতার হকের পর আসে ভাইবোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালা, ছেলে-মেয়েসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের হক। সমাজের একজন সদস্য হিসাবে এতিম-মিসকিন, কাছের প্রতিবেশি, দূরের প্রতিবেশি, ঘনিষ্ট সহচর, পথিকজন, দাস-দাসীর হক যথাযথ আদায়ের পর চার পাশের জীবনমান উন্নয়নের দায়ও তার ওপর বর্তায়। মোটকথা ইসলাম তার অনুসারীদের জীবন ও জগতের মানোন্নয়নের নির্দেশ দেয়।
ঘুমানোর পূর্বে দিনের শেষ কাজটি হোক সিজদায় অবনত হওয়াঃ
দিনশেষে একজন মুসলমান যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যাবে, তখন তার জন্য উত্তম হলো অজু করে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে নেওয়া। এরপর আল্লাহর জিকির এবং ঘুমের মাসনুন দুআ পড়ে ডান কাতে শুয়ে পড়বে।
এই বিষয়ে পাঠ করার মত অনেক কিতাব রয়েছে, যেগুলো আমাদের পড়া উচিতঃ
আমাদের পূর্বসূরী উলামায়ে কেরাম দিবস-রজনীর আমল বিষয়ক যে সব কিতাবাদি লিখেছেন, প্রত্যেকের উচিত সাধ্যমতো সেগুলো পাঠ করা এবং তদোনুযায়ী আমল করা। দিন-রাতের আমল বিষয়ে ইমাম নাসাঈর ‘আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি’ একই শিরোনামে নাসাঈর ছাত্র ইবনুস সুন্নির গ্রন্থ, ইমাম নববির ‘আল-আজকার’, ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ‘আল-কালিমুত তায়্যিব’, তার ছাত্র ইমাম ইবনুল কায়্যিমের ‘আল-ওয়াবিলুস সুয়াইব’, ইমাম ইবনুল জাওজির ‘আল-হিসনুল হাসিন’ ইমাম শাওকানির ব্যাখ্যাগ্রন্থসহ সমকালীন উলামায়ে কেরামের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে। সেগুলো থেকে সবার উপকৃত হওয়া উচিত।
সূত্রঃ মিসরের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদ বিশ্ববরেণ্য ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারযাভীর লেখা অবলম্বনে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:২৬