somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

শুদ্ধ বানানে বাংলা শিখি- ১, বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম

১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি: অন্তর্জাল।

শুদ্ধ বানানে বাংলা শিখি- ১, বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম

আমার আবার অভ্যাস সুবিধার নয়। ছোটবেলা থেকে যেখানে যা পাই তাতেই একবার নজর দিই। ঐ যে কথায় বলে না, যেখানে দেখিবে ছাই... । পথ চলতে পায়ের কাছে একটা কাগজের টুকরো পড়ে থাকতে দেখলেও সেটাকে তুলে নিয়ে পড়ে দেখার একটা বদ স্বভাব রয়েছে আমার। হয়তো এই স্বভাবগত কারণেই সমস্যাটা আমার ক্ষেত্রে একটু বেশি। বাংলা লেখা পড়তে গেলে বানানগত সমস্যা ইদানিং বেশ চোখে লাগে। বানানে যে কি পরিমান বিভ্রাট বলে বুঝানো কঠিন। একেকজন একেকরকম করে বাংলা লিখে থাকেন। ভুলভাল বানানে লেখা পড়ে মেজাজ বিগড়ে যায় প্রায়শই। আমাদের সামগ্রিকভাবে সকলের মাঝে বানান সচেতনতার মানসিকতা গড়ে তুলতে না পারলে বাংলা ভাষার শ্রী বিনষ্ট হবে। ভাষা হবে সৌন্দর্যহীন। পথেঘাটে ঝুলিয়ে রাখা সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে প্রেসে ছাপানো পত্রিকা, বই কিংবা অনলাইন বাংলা মিডিয়া, কোথায় শান্তি পাবেন? আমি হলপ করে বলতে পারি, কোথাও নয়। কোথাও দু'দন্ড শান্তি পাওয়ার জো নেই। সবখানেই যেইসেই অবস্থা। বাংলা বানানের হতশ্রী চেহারা কমবেশি সবখানেই চোখে পড়বে। একই শব্দ নানাভাবে নানাজন লেখেন। কোনটা যে সঠিক বানান সাধারণ পাঠকের বুঝার উপায় থাকে না। মূলত: এই সমস্যাগুলো আমাকে খুবই ভাবায়। আর সেই ভাবনা থেকেই এই পোস্টের অবতারণা। আশা করি, কয়েক পর্বে বানান নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরার সুযোগ পাব, যা আমাদের সকলের জন্যই উপকারী হবে। মহান আল্লাহ তাআ'লার কাছে তাওফিক প্রার্থনা করছি।

১.১. এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিক্রম ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।

১.২. যেসব তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ঈ বা উ এবং তার কার চিহ্ন ি ু হবে। যেমন: কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, চুল্লি, তরণি, ধমনি, ধরণি, নাড়ি, পঞ্জি, পদবি, পল্লি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, যুবতি, রচনাবলি, লহরি, শ্রেণি, সরণি, সূচিপত্র; উর্ণা, উষা।

১.৩. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: অর্জ্জন, ঊর্দ্ধ্ব, কার্ত্তিক, কার্য্য, বার্দ্ধক্য, মূর্চ্ছা, সূর্য্য ইত্যাদির পরিবর্তে যথাক্রমে অর্জন, ঊর্ধ্ব, কর্ম, কার্তিক, কার্য, বার্ধক্য, মূর্ছা, সূর্য ইত্যাদি হবে।

১.৪. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) হবে। যেমন: অহম্ + কার = অহংকার এভাবে ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন। সন্ধিবদ্ধ না হলে ঙ স্থানে ং হবে না। যেমন: অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্খা, আতঙ্ক, কঙ্কাল, গঙ্গা, বঙ্কিম, বঙ্গ, লঙ্ঘন, শঙ্কা, শৃঙ্খলা, সঙ্গে, সঙ্গী।

১.৫. সংস্কৃত ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম-অনুযায়ী সেগুলিতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন: গুণী গুণিজন, প্রাণী প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ। তবে এগুলির সমাসবদ্ধ রূপে ঈ-কারের ব্যবহারও চলতে পারে। যেমন: গুণী গুণীজন, প্রাণী প্রাণীবিদ্যা, মন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদ। ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দের সঙ্গে -ত্ব ও -তা প্রত্যয় যুক্ত হলে ই-কার হবে। যেমন: কৃতী কৃতিত্ব, দায়ী দায়িত্ব, প্রতিযোগী প্রতিযোগিতা, মন্ত্রী মন্ত্রিত্ব, সহযোগী সহযোগিতা।

১.৬. বিসর্গ (ঃ) শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না। যেমন: ইতস্তত, কার্যত, ক্রমশ, পুনঃপুন, প্রথমত, প্রধানত, প্রয়াত, প্রায়শ, ফলত, বস্তুত, মূলত। এছাড়া নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে শব্দমধ্যস্ত বিসর্গ-বর্জিত রূপ গৃহীত হবে। যেমন: দুস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পৃহ, নিশ্বাস।

২.১.

ই, ঈ, উ, ঊ


সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কারচিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে। যেমন: আরবি, আসামি, ইংরেজি, ইমান, ইরানি, উনিশ, ওকালতি, কাহিনি, কুমির, কেরামতি, খুশি, খেয়ালি, গাড়ি, গোয়ালিনি, চাচি, জমিদারি, জাপানি, জার্মানি, টুপি, তরকারি, দাড়ি, দাদি, দাবি, দিঘি, দিদি, নানি, নিচু, পশমি, পাখি, পাগলামি, পাগলি, পিশি, ফরাসি, ফরিয়াদি, ফারসি, ফিরিঙ্গি, বর্ণালি, বাঁশি, বাঙালি, বাড়ি, বিবি, বুড়ি, বেআইনি, বেশি (প্রচুর অর্থে), বোমাবাজি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে), মামি, মালি, মাসি, মাস্টারি, রানি, রুপালি, রেশমি, শাড়ি, সরকারি, সিদ্ধি, সোনালি, হাতি, হিজরি, হিন্দি, হেঁয়ালি। চুন, পুজো, পুব, মুলা, মুলো।

পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে। যেমন: ছেলেটি, বইটি, লোকটি।

সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া-বিশেষণ ও যোজগ পদরূপে কী শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন: এটা কী বই? কী আনন্দ! কী আর বলব? কী করছ? কী করে যাবে? কী খেলে? কী জানি? কী দুরাশা! তোমার কী! কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে! কী যে করি! কী বাংলা কী ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি পারদর্শী। কীভাবে, কীরকম, কীরূপে প্রভৃতি শব্দেও ঈ-কার হবে। যেসব প্রশ্নবাচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না হবে, সেইসব বাক্যে ব্যবহৃত হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন: তুমি কি যাবে? সে কি এসেছিল?

২.২.

এ, অ্যা


বাংলায় এ বর্ণ বা ে-কার দিয়ে এ এবং অ্যা এই উভয় ধ্বনি নির্দেশিত হয়। যেমন: কেন, কেনো (ক্রয় করো); খেলা, খেলি; গেল, গেলে, গেছে; দেখা, দেখি; জেন, যেন। তবে তদ্ভব এবং বিশেষভাবে দেশি শব্দ রয়েছে যেগুলির ্যা-কার যুক্ত রূপ বহুল পরিচিত। যেমন: ব্যাঙ, ল্যাঠা। এসব শব্দে ্যা অপরিবর্তিত থাকবে। বিদেশি শব্দে ক্ষেত্র-অনুযায়ী অ্যা বা ্যা-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন: অ্যাকাউন্ট, অ্যান্ড (and), অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাংক, ভ্যাট, ম্যানেজার, হ্যাট (Hat)।

মূল উৎস: বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২) উৎস: বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২)

২.৩.



বাংলা অ-ধ্বনির উচ্চারণ বহু ক্ষেত্রে ও-র মতো হয়। শব্দশেষের এসব অ-ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমন: কালো, খাটো, ছোটো, ভালো; এগারো, বারো, তেরো, পনেরো, ষোলো, সতেরো, আঠারো; করানো, খাওয়ানো, চড়ানো, চরানো, চালানো, দেখানো, শেখানো, নামানো, পাঠানো, বসানো, শেখানো, শোনানো, হাসানো; কুড়ানো, নিকানো, বাঁকানো, বাঁধানো, ঘোরালো, জোরালো, ধারালো, প্যাঁচানো; করো, চড়ো, জেনো, ধরো, পড়ো, বলো, বসো, শেখো; করাতো, কেনো, দেরো, হতো, হবো, হলো; কোনো, মতো। ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় শব্দের আদিতেও ও-কার লেখা যেতে পারে। যেমন: কোরো, বোলো, বোসো।

২.৪.

ং, ঙ


শব্দের শেষে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহৃত হবে। যেমন: গাং, ঢং, পালং, রং, রাং, সং। তবে অনুস্বারের সঙ্গে স্বর যুক্ত হলে ঙ হবে। যেমন: বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের। বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দে অনুস্বার থাকবে।

২.৫.

ক্ষ, খ


অতৎসম শব্দে যুক্ত-ক্ষ এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে। যেমন: খিদে, খুদ, খুদে, খুর (গবাদি পশুর পায়ের শেষ প্রান্ত), খেত, খ্যাপা ইত্যাদি।

২.৬.

জ, য


বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি-অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন: কাগজ, জাদু, জাহাজ, জুলুম, জেব্রা, বাজার, হাজার।

ইসলাম ধর্ম-সংক্রান্ত কয়েকটি শব্দে বিকল্পে লেখা যেতে পারে। যেমন: আযান, ওযু, কাযা, নামাজ, মুয়াযযিন, যোহর, রমযান, হযরত।

উৎস: বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×