somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

হেমন্ত: কুয়াশার রহস্যময় আবরণে আবৃত প্রাচুর্যের মায়াময় ঋতু

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
হেমন্ত: কুয়াশার রহস্যময় আবরণে আবৃত প্রাচুর্যের মায়াময় ঋতু

সকল ছবি, অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

কুয়াশার সূক্ষ্ম, রূপালী পর্দা টেনে হেমন্ত নেমে এসেছে ধরণীতে। যেন এক গোপন প্রেমিকা নীরবে নিভৃতে তার আগমন ঘোষণা করেছে। প্রকৃতির ক্যানভাসে এখন তার মোহনীয় ছোয়া, যা হৃদয়কে ছুয়ে যায় অসীম আবেগে। শিশিরভেজা শিউলি ফুলের পাপড়িতে, ছাতিম গাছের ঝরা পাতায়, লতাপাতার সবুজ ঢেউয়ে এই ঋতু চুপিসাড়ে এসে বসেছে সোনালী ধানের মাঠের কোলে।

শরতের উজ্জ্বল শুভ্রতা বিদায় নিয়েছে; প্রকৃতিতে ঘটেছে হেমন্তের আগমন, যার পদচিহ্ন নরম, কিন্তু স্পর্শে জীবন পায় পূর্ণতার সোনালী আভা। হৃদয় ভরে ওঠে অপার আনন্দে, যেন প্রকৃতি নিজেই কানেকানে করে বলছে: "আমি তোমাদের কাছে এসেছি, ডালিভরা ভালোবাসা নিয়ে।"



বর্ষার উচ্ছ্বাস আর শরতের লাবণ্যময় আলোড়ন এখন অতীত। হেমন্ত এসেছে লাজুক যাত্রীর মতো। হাতে ফসলের আশীর্বাদ, মনে প্রশান্তির মধুর সুর। বাংলার ছয় ঋতুর চক্রে এ যেন শরতের উজ্জ্বলতা আর শীতের ঠান্ডার মাঝে এক মন্ত্রমুগ্ধ সেতুবন্ধন। কার্তিকের প্রথম প্রভাতে কুয়াশার স্নিগ্ধ আবরণে মুড়ে গেছে চারপাশ; প্রকৃতি পরেছে রহস্যময় ঘোমটা, যা আত্মার গভীরে এনে দেয় অদ্ভুত শান্তি।

উত্তরাঞ্চলে শীতের পদধ্বনি স্পষ্ট। রাতে ঝরে শিশিরের ফোঁটা, সকালে ভাসে ঘন কুয়াশার চাদর। পঞ্চগড়ের পথে হাঁটলে মনে হয়, শীত লুকিয়ে আছে কুয়াশার আড়ালে। এমনকি ঢাকার বাতাসেও মিশে গেছে হেমন্তের মিষ্টি শীতলতা, যেন প্রকৃতি বলছে: "সময় এসেছে নতুন করে সাজার, হৃদয়কে ছুয়ে দেওয়ার।"

ভোরের শিশিরে ঝলমলে ঘাসের টিপ, শিউলির ঝরা পাপড়ি, কলাপাতার কিনারায় সবকিছু মুক্তোর মতো চকচক করে। প্রথম সূর্যকিরণে সেই শিশিরকণা হয়ে ওঠে আলোর খেলা, ছড়িয়ে পড়ে অপার্থিব সৌন্দর্য। শিউলি গাছের তলায় ফুলের ছড়ানো মেলা, মৃদু গন্ধে ভরে যায় বাতাস। যেন প্রকৃতি গেয়ে উঠেছে মোহময় সকালের গান।



গ্রামের পুকুরঘাটে শিশুরা খেলে জলের সাথে, শাপলা তুলে আনে, হাসির ফোয়ারা তোলে। কলসি কাঁধে মেয়েরা আসে জল নিতে। তাদের চোখে-মুখে শিশিরের মতো তাজা আনন্দ। দূর থেকে ভেসে আসে পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ, কাকের ডাক, কাশফুলের নাচ। সব মিলে হেমন্তের প্রভাত এক জীবন্ত চিত্রপট, যা হৃদয়কে ভরিয়ে তোলে অপার ভালোবাসায়।

হেমন্ত মানেই নবান্নের উল্লাস। দিগন্তজোড়া ধানখেতে সোনার ঢেউ খেলে যায়। কৃষকেরা গান গেয়ে ফসল কাটে, উঠোনে চলে ধান মাড়াইয়ের কাজ। বাতাসে মিশে যায় নতুন চালের মনমাতানো গন্ধ। ঘরে ঘরে পিঠাপুলির আয়োজন, হাসির ঢল, গানের মেলা। এ যেন হেমন্তের আনন্দময় জগৎ, যা হৃদয়কে ছুয়ে যায় অসীম উচ্ছ্বাসে।

মাঠে পেকে উঠেছে আমন ধানের সোনালী শীষ; কেউ সবজির চাষে মন দিয়েছে, কেউ নৌকায় ভরছে সোনার মতো ধান্য। দিনশেষে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠে সন্তুষ্টির হাসি। হেমন্ত তাদের জীবনে এনেছে অফুরন্ত সমৃদ্ধির বার্তা, হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে কৃতজ্ঞতার গভীর অনুভূতি।



আকাশ বিশাল, উদার। শরতের ভাসমান মেঘ এখন শান্ত, নীল ছাদে ছড়িয়ে পড়ে সোনালী আলো। দুপুরে উজ্জ্বলতা, বিকেলে নরম কুয়াশা। গোধূলিতে সূর্যাস্তের লাল-সোনালী আভায় প্রকৃতি আঁকে অলৌকিক ক্যানভাস। দিন ছোট হয়ে আসে, সন্ধ্যা নামে তাড়াতাড়ি।

পাতাঝরার মৃদু সুরে, হালকা বিষাদের ছোয়ায় নেমে আসে গভীর নীরবতা। কিন্তু এ বিষাদ খালি নয়, বরং ভরপুর। ফুলের মেলা, ফলের সম্ভার, ফসলের প্রাচুর্যে। প্রকৃতি উজাড় করে দেয় জীবনের মহান উৎসবে, যা আত্মাকে ভরিয়ে দেয় অসীম কৃতজ্ঞতায়।

হেমন্তের রূপে, গন্ধে, ছোয়ায় মিশে আছে প্রেমের মাধুর্য, সমৃদ্ধির আলো, প্রশান্তির গভীরতা। সুফিয়া কামালের কথায় যেন হৃদয়ের গভীরে বাজে:

“সবুজ পাতার খামে হলুদ চিঠি লেখে হেমন্ত।”

এই ঋতুতে জীবনের প্রতি ক্ষণ এক অমর কবিতা। প্রকৃতি তার নিজস্ব ছন্দে লিখে চলেছে। গ্রামের ধুলোয়, নদীর তীরে, ধানের শীষের সুবাসে আমরা পাই নতুন প্রেরণা: বেঁচে থাকার, সৃষ্টি করার।

কুয়াশার চাদরে মোড়া হেমন্ত শেখায়, জীবন অপরূপ, রঙিন, প্রতি মুহূর্তে লুকিয়ে আছে অসীম সম্ভাবনা। তার কোমল আলোয়, শীতল হাওয়ায় আমরা খুঁজে পাই নিজস্ব সত্তা, বাংলার মাটির অমোঘ সৌন্দর্য। যা হৃদয়কে ছুয়ে যায় গভীর, অটুট ভালোবাসায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:২২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×