somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারুণ্যের জয়গান

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি হেলাল হাফিজের বিখ্যাত উক্তি –“এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় তার”। এ যুদ্ধ মানে কারো উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নয়, কোন কিছুর নিয়ন্ত্রন নেয়া নয়। এ যুদ্ধ অন্যায়, অসত্যের, অবিচার, অধিকার আদায়ের, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতা লাভের এবং সর্বোপরি ইতিবাচক পরিবর্তনের। এ যুদ্ধ উন্নয়নের যাত্রাকে বেগবান করে দারিদ্রতাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন। এই যুদ্ধ দুঃখী মায়ের দুঃখ জয় করে মুখে ফোটা হাসির প্রস্রবণ।

যৌবন তথা তারুণ্যের শক্তি একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের বড় হাতিয়ার। এই তারুণ্য এমন একটি শক্তি যা ইচ্ছা করলেই অবদমিত করা যায় না, নষ্ট করে দেওয়া যায় না বা থামিয়েও দেওয়া যায় না । সব বাধাকে অতিক্রম করে জয় নিয়ে আসাই যেন একটি অভ্যাস । আমরা তারুণ্য বলতে অসম্ভবকে সম্ভব করাই বুঝি।
তারুন্যের বৈশিষ্ট হচ্ছে পরিবর্তনের, অর্থাৎ তারূণ্য এক জায়গায় স্থীর থাকেনা, পুরাতন কে নিয়ে পড়ে থাকেনা। তাদের গতি সর্বদা চলমান; তাহাদের দৃষ্টি সর্বদা উর্ধলোকে। অবদমিত দৃষ্টি দিতে তারা জানেনা।

বাংলাদেশের প্রতিটি গৌরবময় অর্জনের সার্থক রূপকার আমাদের তরুণ সমাজ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরুকরে মহান মুক্তিযুদ্ধ- প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তারুণ্যের শৌর্যদীপ্ত ভূমিকা আমাদের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে। অতন্দ্র-প্রহরী তরুণরাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শাণিত করেছে। বিশ্বব্যাপী আজ যে পরিবর্তনের জোয়ার, তার মূলে রয়েছে তরুণ সমাজের প্রগাঢ় চেতনা আর অবিচল প্রত্যয়। তাই বলতে চাই-

‘আমি ৫২’এর ভাষা আন্দোলন দেখিনি, তাতে আমার দুঃখ নেই
আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তাতে আমার দুঃখ নেই।
আমি শহীদ ভাইদের দেখিনি, তাতে আমার দুঃখ নেই।
আমি দেখিতে চাই তারুণ্যের যুদ্ধ।
আমি দেখিতে চাই পরিবর্তনের যুদ্ধ’।

হে তরুণেরা আসো যুদ্ধে নেমে পড়ি। এ যুদ্ধ প্রিয় বাংলাদেশকে দুর্নীতি, অসুস্থ্য রাজনীতি , অপসংস্কৃতি, বৈষম্য, দারিদ্র, বেকার মুক্ত একটি দৃঢ়তাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার। এসো হে তরুণেরা, ঘরে বসে একজন-দুজনের সাথে সারারাত মোবাইলে কথা বলে সময় নষ্ট না করে, অপসংস্কৃতিতে পৃষ্ঠ না হয়ে, নেশায় নিজেদের ডুবিয়ে না রেখে, পার্টিতে উলঙ্গ নাচ না নেচে, বটতলায় সময় ব্যয় না করে, জুয়া খেলে সময় নষ্ট না করে, হতাশ না হয়ে বের হয়ে আসো একসাথে কাজ করে দেশকে একটি তারূণ্য নির্ভর উদ্বিপ্ত নেতৃত্বের স্বাদ নিতে শেখাই । একবার যদি ডাক দিয়ে বের হও মনে রেখো তোমদের আটকিয়ে রাখে এমন কোন মিসাইল পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয় নাই । কারন তোমরা তরুণ, তোমরা জীবনকে অন্যের সুখের জন্য বিলিয়ে দিয়ে অভ্যস্থ।

কয়েক বছর আগে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০০ শিক্ষার্থীদের সামনে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, "তোমাদের স্বপ্নগুলো হবে বাংলাদেশের স্বপ্ন, তোমাদের ভাবনাগুলো হবে বাংলাদেশের ভাবনা, এবং তোমাদের কাজগুলো হবে বাংলাদেশের কাজ"।

অর্থাৎ তরুণ তথা যুবকের স্বপ্নে, চিন্তা-ভাবনায় এবং কাজ-কর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দেশ, সমাজ ও আপামর জনগণের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ। এসব তরুণই হবে জাতির মেরুদন্ড। এ মেরুদন্ডকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কাজে অভিভাবক, সমাজ, এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সঠিক পরিচর্যা পেলে একদিন তারাই তাদের মহৎ স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে ।

বঙ্গবন্ধুর জ্বালাময়ী ভাষণ “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, তবু এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ’। ১৯৭১ সালে রক্ত দিয়েই আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে পরাধীনতামুক্ত করেছিলেন। তবে এখন আমাদের রক্ত দিয়ে নয় পরিশ্রম দিয়েই মুক্ত করতে হবে দারিদ্রতা, দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচারসহ ইত্যাদি অসঙ্গতিকে। আর রক্তের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন মেধা এবং প্ররিশ্রমের। তরুণরা মেধা এবং প্ররিশ্রম দিয়েই গড়ে তুলবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মত এক জাতি; জাতির জন্য আনবে সত্যিকারের মুক্তি।

কিন্ত আক্ষেপের বিষোয় কেউ কি লক্ষ করেছেন আজ আমাদের এই উদ্দীপ্ত তরুন সমাজ কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ছে ! তাদের মধ্যে আর সেই ঝাপিয়ে পড়ার মত কোন আবেগ লক্ষ করা যায় না। অন্যায়কে অন্যায় এবং ন্যায়কে ন্যায় বলার বলিষ্ঠতা তাদের মধ্যে কমে গেছে। প্রতিবাদ করার মুখরতা হারিয়ে গেছে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণার নির্ভীকতা হারিয়ে গেছে।

তবে আজ তরুণদের এই হীণতা কেন । তারা কি প্রাণ শক্তি হারিয়ে ফেললো না কোথাও নিজেদের বন্দি করে ফেললো। জাতির শ্রেষ্ঠ পুঁজি যদি নিস্তেজ এবং অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে তাহলে তার মধ্যে পতিত লোহার মতই মরিচা পড়তে থাকবে। মরিচা পড়তে পড়তে তার আপন বৈশিষ্ঠ্য হারিয়ে হয়ে পড়বে জড়মূর্তি। আর জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদের এই হাল হলে নিঃসন্দেহে বেহাল হবে জাতি।

কাজী নজরুল ইসলাম ‘যৌবনের গান’ এ তারূণ্যের জড়তাকে বার্ধক্যের সাথে তুলনা করেছেন- “বার্ধক্য তাহাই—যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে, বৃদ্ধ তাহারাই—যাহারা মায়াচ্ছন্ন নব মানবের অভিনব জয় যাত্রার শুধু বোঝা নয়, বিঘ্ন; শতাব্দীর নব যাত্রীর চলার ছন্দে ছন্দ মিলাইয়া যাহারা কুচকাওয়াজ করিতে জানে না, পারে না; যাহারা জীব হইয়াও জড়; যাহারা অটল সংস্কারের পাষাণস্তূপ আঁকড়িয়া পড়িয়া আছে”।

একটি সমাজ উন্নয়নের মুলমন্ত্র হচ্ছে-“জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে”। সবচেয়ে বড় সামাজিক পুঁজি তৈরি হবে তখনই যখন সমাজের সবাই একতাবদ্ধ হয়ে আপন শক্তিতে জ্বলে উঠে সকল সমস্যা মোকাবেলা করে সুখসমৃদ্ধি নিয়ে আসার চেষ্টা করবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত একটি উক্তি মনে পড়ে গেল। তিনি বলেন- “If a community wants the state to perform some of its jobs it will surely become idle and inefficient. This was never the case in our society. “যদি কোন সম্প্রদায় চায় যে সরকার তাদের কিছু কার্য সম্পাদন করুক, তাহলে নিশ্চিতভাবে তারা অলস এবং অকর্মন্য হয়ে পড়বে। আমাদের সমাজে কখনো এরকম ছিল না”। আর কোন সম্প্রদায়কে নিজস্ব শক্তিতে জ্বলে উঠার ক্ষেত্রে তরণ বা যুব সমাজ বিনে সম্ভব নয়। আমরা জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ তে দেখেছি কিভাবে একটি তরুণদল একটি সংগঠনের ব্যানারে বিনামূল্যে এবং বিনাপারিশ্রমিকে সামাজিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে- নিজেরা রাস্তা সংস্কার করছে, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করছে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, পরিবেশ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করাসহ আরো সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজের ভিত্তি হলো সংগঠন বা ক্লাব। সংগঠন ছাড়া সমাজ চলতে পারে না। শক্তিশালী তরুণ সংগঠনই পারে উন্নত ও আধুনিক সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণ করতে। তাই প্রত্যেক গ্রাম এলাকায় তরুণদের সক্রিয় সংগঠন থাকা আবশ্যক।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থা UNFPA এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায় বিশ্বের ৭.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যায় মধ্যে লক্ষ্যনীয়ভাবে তরুণদের সংখ্যা ১.৮ বিলিয়ন; এর মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাস করে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০% তরুণ। আন্তর্জাতিক এই সংগঠন তাই দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য তরুণদের উপর ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানায়।

তাই, ঝর্ণার মতো উদ্যম আর তেজোদ্দীপ্ত সূর্যের মতো টগবগে তরুণদের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তাদের শিক্ষিত ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে জাতির উন্নয়নে কাজে লাগাতে সরকারের বিস্তর দায়িত্ব রয়েছে। সুষমসমাজ এবং আধুনিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে যুবসমাজ কাজে লাগবে। তারা দেশের কাজে আত্বনিয়োগ করে এবং নানা গঠনমূলক ও মানব কল্যাণকর কর্তব্য সম্পাদনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির গৌরব বর্ধন করবে এটাই সকলের কাম্য।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×