somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্থানসংখ্যা

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহতাব হোসেনের প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম ‘তনিমার সুইসাইড নোট।’ গত বছর প্রকাশিত এই গ্রন্থে যে চৌদ্দটি গল্প আছে, তার এগারোটিই উত্তমপুরুষে লেখা। ‘ফেরা’ ও ‘অনিকেত প্রান্তর’ নামের দুটি গল্প নামপুরুষে হলেও, যেই গল্পটি থেকে গ্রন্থের নাম দেয়া হয়েছে, সে-ই ‘তনিমার সুইসাইড নোট’ গল্পটার বর্ণনাভঙ্গি অন্যরকম। কারণ, লেখক এতে উত্তমপুরুষ থেকে সোজা নামপুরুষে চলে গিয়েছেন। অবশ্য, এটা সচেতনভাবে না-কি অবচেতনভাবে হয়েছে, তা লেখকই বলতে পারবেন।



যে কোনও লেখকের জন্য উত্তমপুরুষ আদর্শ বর্ণনাভঙ্গী। কারণ, পাঠকেরা সহজেই লেখার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এ জন্য বেশীরভাগ লেখক এটির ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু উত্তমপুরুষে লিখলে, প্রধান চরিত্রে অতিকথন এসে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই গ্রন্থের ‘যূথীর দুপুরবেলা’ গল্পটিতে এই ব্যাপারটি ঘটেছে।

মাহতাব হোসেনের গদ্য সুখপাঠ্য। নিজের মত করেই লিখেছেন গল্পগুলো। গ্রন্থটির ভূমিকায় সেই স্বীকারোক্তি আছে। তার গল্পগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দৈনন্দিন জীবন। ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়ে যায় মফস্বল। যা পড়তে ভাল লাগে। গ্রাম থেকে শহরে আসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য কোচিং করা, সিনেমা হলে যাওয়া, টিউশনি করানো, ছাত্রীর শিক্ষকের প্রতি মুগ্ধতা, অভিভাবকের আন্তরিকতা, স্কুলফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা হওয়া; চারপাশে ছড়ানো এইসব উপকরণই লেখক নিজের মত করে আহরণ করেছেন। দুর্বোধ্যতাকে এড়িয়ে যাওয়ার কারণে গল্পগুলো নস্টালজিয়াকে সামান্য উস্কে দিয়ে যায়।

এই গ্রন্থে প্রচুর নারী চরিত্র আছে। বিশেষ করে ‘স্নিগ্ধার টেলিফোন’ গল্পটির কথা বলা যায়। এখানে স্নিগ্ধা একই সঙ্গে দুজনের সঙ্গে প্রেমের সম্ভাবনা রেখেছে। কিন্তু লেখনীর কারণে মনে হবে, এ’রকম হতেই পারে। উদাহরণ হিসেবে ‘অনিকেত প্রান্তর’ গল্পটির নাম নেয়া যায়। এটি পড়ার পর শায়না বেগম ওরফে বাটুলের মা জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠবেন। এখানে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে পড়ে থাকা একটি লাশ নিয়ে যে গল্পটি বলা হয়েছে, তা সত্যিকার অর্থেই বিস্ময়কর। পাঠক গল্পটি পড়ার পর, শেষদিকে এসে বাটুলের পরিণতি আবিস্কার করে চমকে যাবেন। এবং বুঝতে পারবেন, গল্পকার প্রথম থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিলেন। একটি ভাল গল্পের জন্য সফলভাবে প্লট নির্মান করা জরুরী। কারণ, অনিশ্চয়তা, পূর্বাভাস, স্মৃতিচারণ, গল্পের কাঠামো, সমাপ্তি মিলিয়েই গল্প জমে ওঠে। ‘অনিকেত প্রান্তর’ গল্পটিতে তার অনেকখানিই ছিল। এ কারণে এটিকে গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ গল্পও বলা যায়।

‘ফেরা’ গল্পটির প্লটটা গ্রামের। নামপুরুষে লিখলেও গল্পটিতে বৈ-সাদৃশ্য চোখে পড়ে। বিশেষ করে, লেখক গল্পটা জমিয়ে তুলে যখন শেষের দিকে এগিয়ে যা-ন, তখন তা গল্প থেকে বেরিয়ে আসে। কারণ, এই পর্বে এসে লেখক তার গল্পের ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করেন। তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদিও এর সেটিংস’টা অন্যরকম। শুধু এটিই নয়, বেশীরভাগ গল্পের সেটিংস বেশ ভালো। এই দিক থেকে গ্রন্থের শেষ গল্প ‘মাতসুমি ফ্রম জাপান’ খানিকটা আলাদা।

মাহতাব হোসেন গল্পের ভেতর স্মৃতিচারণ করতে পছন্দ করেন। গ্রন্থের প্রথম গল্প ‘আমার চোখে সমুদ্র জল’ এ তিনি লিখেছেন, ‘একবার মিরপুর এক নম্বরের চাইনিজে একটা বিয়ের দাওয়াত ছিল।’ এটা পড়তে গিয়ে কোনও অস্বাভাবিকতা ঠেকবে না। কিন্তু বারবার এই স্টাইল ব্যবহার করলে গতি হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
ষোল’র বইমেলায় প্রকাশিত এই গ্রন্থটি পাঠকেরা গ্রহণ করেছিলেন। যার কারণে মাত্র তেরো দিনেই প্রথম মুদ্রণ ফুরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর প্রকাশক ‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’ চোদ্দটি গল্পতেই প্রচুর অযত্নের ছাপ রেখেছেন। যার কারণে গ্রন্থটির অঙ্গহানি হয়েছে।

‘তনিমার সুইসাইড নোট’ মাহতাব হোসেনের উত্থানসংখ্যা। এ কারণে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা উচিত নয়। তারপরেও লেখক হিসেবে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি নিয়ে বলি; সেটা হল, তার হাতে নারী চরিত্রগুলো বেশ নিরাপদে থাকে। যা আমাদের আগামীর দিকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করবে।

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

রচনাটি দৈনিক আজাদিতে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×