somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ নিয়ে কিছু কথা

০৮ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসার সামনের রাস্তার ওপারে অট্টালিকা নির্মাণের কাজ চলছে।কেউ ইট ভেঙ্গে টুকরো করছে কেউবা বালি-সিমেন্টের মিশ্রন তৈরি করছে,কেউ কেউ সেইসব মিশ্রনের গামলা মাথায় নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে নির্মানাধীন ভবনের একেবারে উপরের শেষ সীমানা পর্যন্ত।এসবই নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্য।এরা নির্মাণ-শ্রমিক।রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-জল উপেক্ষা করে প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওদের এই রুটিন।এটাই ওদের জীবিকার উপায়।এর ব্যত্যয় হলে চুলায় হাঁড়ি চড়বেনা।খাবার জুটবেনা ক্ষুধার্ত শিশুগুলোর মুখেও।যুগ যুগ ধরেই জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বাইরে,দেশ থেকে দেশান্তরে যাচ্ছে।সেখানে নতুনত্ব কিছুই নেই।নতুন যা তা হলো এই শ্রমিকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে নারী-শ্রমিক।কোথায় নেই এই নারী-শ্রমিক?কলকারখানা ( বিশেষ করে পোষাক-নির্মাণের কারখানাগুলোতে),হোটেল-রেস্টুরেন্ট,রাস্তায় ফেরি করে জিনিস-পত্র বিক্রি,কাঁচা বাজারে সবজি বিক্রি,বাসাবাড়ির কাজ,পুরুষের মেসের রাঁধুনীর কাজ সবকিছুতেই আছে এই নারী-শ্রমিকেরা।এদের কেউ বিধবা,কেউ স্বামী পরিত্যক্তা( স্বামী অন্য বঊ নিয়ে থাকে খরচ-পত্র দেয়না বাচ্চাদের জন্যও না এমন গল্প খুব সাধারণ),স্বজনহীন(বাবা-মা নেই ভাইরাও দেখেনা ), আবার অনেকেই আছে স্বামী অসুস্থ কাজ করতে পারেনা।এদের প্রায় সকলেরই একাধিক সন্তান-সন্ততি আছে।এদের ছাড়াও নারী-শিশু বা অল্পবয়সী নারী কর্মীদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।পোশাক-নির্মাণের কাজে এইসব অল্পবয়সী নারী-কর্মীদের দেখা যায় বেশী।
এরা কিন্তু এই শহরের আদি-বাসিন্দা নয়।এককালে হয়তো কোন সুজলা-সুফলা গ্রামের লক্ষীমন্ত বধু হয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে আপন ঘর-গেরস্থালির টুকটাক কাজেই কেটে যেতো তার সারাটা দিন ।গ্রামের ডানপিটে মেয়েটি সারাদিন এ বাড়ী- বাড়ী ঘুরে বেড়াতো।আজ আর সেই ঘর নেই--সেই বসত-ভিটা নেই।যান্ত্রিক শহরের এক যন্ত্রমানব হয়ে সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতেই কাটে তার দিন।কাজের শেষে ঘর বলতে নোংরা বস্তির আলো-বাতাসহীন একটা আশ্রয়।তাও এইসব বস্তির একটা সম্পূর্ণ ঘরের মালিকানা আছে যার সে অনেক ভাগ্যবান।বস্তির একটা ঘরকে ভাগাভাগি করে ৩/৪টা পরিবার মিলে থাকে এমন মানুষের সংখ্যাই বেশী।সারাদিন পুরুষের সাথে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে ----দিনের শেষে বিশ্রামের জন্য নেই তার কোন আলাদা নির্জনতা যাকে আমরা ভাগ্যবান শিক্ষিতজনেরা 'প্রাইভেসী' বলে আখ্যায়িত করে থাকি। এছাড়াও ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন-যাপন করা নারীরা,শিশুরা যাদের রাত কাটে খোলা আকাশের নীচে হয়তো কখনো কোন বারান্দায় নাহয় ফুটপাতে। এই হতদরিদ্র মানুষগুলো পর্দা-বেপর্দা,পরপুরুষ,বেগানা , এইসব নিয়ে মাথা ঘামানোর অবকাশ পায়না।এদের ধর্ম রক্ষা করার দায়িত্ব নেননা কোন ধর্ম-প্রাণ নেতা। এইসব হতভাগা মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা কিন্তু রাষ্ট্র এবং সমাজ উভয়েরই।
রাষ্ট্র যখন একটি অবহেলিত জনগোষ্ঠির-( এখানে জনগোষ্ঠি বলতে নারীকেই বোঝাচ্ছি যেহেতু মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী নারী হওয়া সত্ত্বেও পুরুষপ্রধান সমাজের নানা বৈষম্য এবং অবহেলার শিকার)উন্নয়নের কথা বলে তখন স্বাভাবিকভাবেই আশাবাদী হয়ে উঠি। আশাবাদী হয়ে উঠি বিশেষতঃ এই হতদরিদ্র নারী-সমাজের কথা চিন্তা করেই উন্নয়নের ধারায় যদি এরা জীবন-যাপনের মৌলিক চাহিদাগুলোতে খানিকটা সহায়তা পায়।
মন খারাপ হয়ে যায় তখনই যখন দেখি হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নারীর উন্নয়নের এই ধারাতে বাধা সৃষ্টি করে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ। এমনকি পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে ব্যবহার করা হয় রাস্তায় পিকেটিং করার হাতিয়ার হিসেবে(প্রতিটি মুসলিম পরিবারে অন্ততঃ একটি কোরআন শরীফ থাকে এবং একে রক্ষণাবেক্ষন করা হয় সর্বাধিক মর্যাদায়----এমনকি ওযু ছাড়া স্পর্শ করাও যায়না)।
নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাস্তবায়নে বাধাদানকারী ভদ্রলোকদের কাছে দাবী আগে হতদরিদ্র নারী সমাজের ইজ্জ্বত-আব্রু -ধর্মীয় অনুশাসন মানার মতো সুযোগ এবং পরিবেশ নিশ্চিত করে দেন ----তারপরে অন্য কথা।
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×