somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রধানমন্ত্রী যখন হুঙ্কার ছাড়লেন, "কাউকে ছাড়া হবেনা", ততদিনে সবাই পগাড় পার। :) :)

১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারায়ণগঞ্জের এই দফায় ৭ জনকে একযোগে অপহরণ এবং তাদের সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা ঘটনার পর যখন সমাজের সুশীলদের একাংশের এতোদিনকার ইচ্ছাকৃত ঘুম অবশেষে ভাঙলো, তখন সবাই এই বলে নড়ে-চড়ে বসলেন - আসলেই ঘটনাটি মারাত্মক। কিন্তু সারাদেশে একের পর এক এভাবে যখন গুম, অপহরণ, হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছিল, ঘটিয়েই যাচ্ছিল সরকার, তখন সাধারণ মানুষ বারংবার উচ্চকিত হয়েছিলেন এবং দুয়ারে দুয়ারে ফরিয়াদ জানাচ্ছিলেন বিচারের এবং এসব ঘটনাবলী বন্ধের জন্য - তখনো এই কুম্ভকর্ণদের ঘুম ভাঙ্গেনি। আর ঘুম ভাঙার তাগিদও তারা অনুভব করলেন না এই কারণে যে, ওসব ঘটনা তো সাধারণের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাদের উপর তো এসে বিপদ পড়েনি। কিন্তু বেলা’র রেজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণ করার পরে উপরতলার মানুষরা বুঝলেন - ওরা সদর দরোজায় তো বটেই, একেবারে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তখনই এসব সুশীলরা কিছুটা সোচ্চার হলেন। আবার ভাগ্যবান শ্রেণীর আবু বকর যখন ছাড়া পেয়ে গেলেন অক্ষত অবস্থায়, তখন আবার তারা কিছুটা মিইয়ে পড়লেন। অথচ এর মধ্যেই সাধারণ মানুষ, পেশাজীবীসহ অন্যান্যদের গুম, খুন, অপহরণ সবই চলতে থাকলো আগের নিয়মে।

এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ঘটনা যখন ঘটলো, তখন সাধারণ মানুষ দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আরও বেশী সরব হলেন, সোচ্চার হলেন, বেচে থাকবেন কিনা এমন আশংকার দোলাচলে যখন দুলছিলেন এবং ওই কারণে কণ্ঠ সরব হলো, বেচে থাকার তাগিদে কণ্ঠে উচ্চারিত হলো বেচে থাকার আকুতি - তখন সুশীলদের একটি অংশও যোগ দিলেন। তবে যোগ দিলেন ওই সব সাধারণ মানুষের জন্য নয়, নিজ স্বার্থে।

অপরদিকে, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবজাত ভঙ্গিতে, স্বাভাবিক নিয়মেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেদিলেন এবং বললেন, একবার নয় অসংখ্যবার - এসব ঘটনার সঙ্গে সরকার বা আওয়ামী লীগের কেউই জড়িত নয়। দেশকে জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য বিরোধী পক্ষ এ কাজটি করেছে, সাধারণভাবে তিনি যা করে থাকেন এবং তার পুরনো স্টাইলে তিনি বললেন, বিএনপি আর কতিপয় সুশীল মিলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায়। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রপাগান্ডা মেশিনারী বা কার্যক্রম এতোই শক্তিশালী যে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে ওই বক্তব্যের কোরাস গাইতে শুরু করলো।

কিন্তু এক রোববারে ঘটনা ঘটলেও, নারায়ণগঞ্জবাসীর শংকা, আতংক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা যখন ছড়িয়ে পড়লো দেশময় - যখনই ক্ষমতাসীনরা ইচ্ছাকৃত কোরাস গেয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করলো, সময়ক্ষেপণ করলো, তখন সবাই জেনে গেছে কারা ঘটনা ঘটিয়েছে। সমগ্র দেশবাসী যখন জানে, বুঝে গেছে ঘটনাগুলো, জেনে ফেলেছে কারা ঘটিয়েছে ঘটনা - তখন সরকারী উদ্যোগে সময়ক্ষেপণের ওই রাস্তাটি খোলা রাখা হলো ইচ্ছাকৃতভাবেই।

ক্ষমতাসীনদের মনোজগতের বৈকল্য এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে, তারা ধারণা করেছিল, ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয়া খুবই সহজ হবে - যেমনটা চেষ্টা করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জেরই ত্বকী হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে। কিন্তু দেশবাসী যখন এই আস্থাহীনদের উপরে কোনোরূপ আস্থা না রেখেই রাজপথে বেরিয়ে পড়লো, তখন ক্ষমতাসীনরা বুঝতে পারলো কৌশল পাল্টাতে হবে।

এক প্রত্যুষে প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীনরা হঠাৎ করে গাইতে শুরু করলেন নতুন গান এবং হুংকার দিলেন ‘জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’। আর এই নতুন গান গাইতে সময়ক্ষেপন করা হলো কমপক্ষে ৭ দিন। ইতোমধ্যে সবাই নির্বিঘ্নে চলে গেছে। তাদের সেইফ এক্সিট দেয়া সম্পর্কে ঢাকার দৈনিক ইত্তেফাক তাদের রিপোর্টে বলেছে, কখন কিভাবে নূর হোসেনরা চলে গেছে দেশ ছেড়ে। এরপরে সরকার সরব হলো এবং হুংকার দিতে শুরু করলো। এই যে হুংকার সে সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন জনমনে রয়েছে - ১. সরকার বা সরকারের নির্দেশে পুলিশ প্রশাসনসহ পুরো প্রশাসন কেন কমপক্ষে ৭ দিন ঘুমিয়ে ছিল? ২. স্বজনদের মামলার সঙ্গে সঙ্গে কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হলো না? ৩. কেন সরকার প্রধান ঘটনা তদন্তের আগেই দোষী সাব্যস্ত করে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে যাচ্ছিলেন? ৪. কেন ঘটনার অনেক পরে নূর হোসেনের বাড়ী তল্লাশি করা হলো, কেন সঙ্গে সঙ্গে সকল অভিযুক্তদের বাড়ি তল্লাশি করা হলো না? ৫. পুলিশ থেকে বলা হলো - সবাই গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে। তাহলে গোয়েন্দানজরদারির ভেতরে থাকার পরেও যাদের নামে মামলা হয়েছে তাদের সবাইকে খুজে পাওয়া গেল না? ৬. কেন শুধু নূর হোসেন বা তার সাথীদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে - এখানে গডফাদারের নাম বার বার উচ্চারিত হলেও, জনগণের মুখে মুখে এ নাম থাকলেও কেন কোনোবারই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয় না? ৭. র‌্যাবের বিরুদ্ধে কমিশনার নজরুলের শ্বশুরের ৬ কোটি টাকার লেনদেনের গুরুত্বর অভিযোগ উঠার পরে কেন সেই র‌্যাবকে দিয়েই র‌্যাবের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো? ৮. হাইকোর্টকে পরে কেন স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলতো হলো। কেন সরকারীভাবেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো না? ৯. নারায়ণগঞ্জের এতো ঘটনা ঘটার পরেও কেন কোনো বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে না? ১০. রোববারে হাইকোর্ট গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেও এতো সময় কেন ক্ষেপণ করা হলো? ১১. প্যানেল মেয়র নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান নানা তথ্য দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করলে তার দিকেই এখন কেন আবার সেই অভিযোগকারীরাই নানা বক্তব্য দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো বক্তব্য নেই কেন এবং তার নিরাপত্তার কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?

এক আশ্চর্য অত্যাধুনিক যন্ত্রের নাম আওয়ামী লীগ। এই যন্ত্রের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হলে - ওই তারাই বেরিয়ে আসবে খাটি, সহি, ন্যায়-নিষ্ঠ, দুর্নীতিবিরোধী, দেশপ্রেমিক, জঙ্গীবাদ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হিসেবে।

এ এক অদ্ভূত স্বৈরাচারী মানসিকতা।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×