somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিদ্ধ সংগঠনের মতই চলছে জামায়াতের কার্যক্রম -এইটার আর বিচার কইরা কি হবে?

০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মগবাজারে কেন্দ্রীয়, পল্টনে মহানগর জামায়াত ও শিবিরের কেন্দ্রীয়সহ সারা দেশে এই দলের সব কার্যালয় তিন বছর ধরে বন্ধ। কোথাও কেউ প্রকাশ্যে কোনো মুভ করতে পারছেন না নেতা-কর্মী বা সমর্থকরা। শীর্ষ নেতাদের অনেকেরই অবস্থান ফাঁসির দড়ির নিচে। জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, দেশব্যাপী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দমননীতি চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায়ও ভীত নয় জামায়াত, আবার তারা সরকারের ফাঁদেও পা দিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার যত নিপীড়নই চালাক না কেন, জামায়াতে ইসলামী তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরবে না। আর নিপীড়ন চালিয়ে এ সরকারও বেশি দিন থাকতে পারবে না।

জামায়াতের একাধিক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জানান, পুলিশ প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে প্রকাশ্যে বের হওয়া দূরের কথা, ঘরের ভিতরেও পাঁচজন সদস্য এক হতে পারছেন না। এমনকি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে। এ ছাড়াও যশোর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও কঙ্বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গত দেড় মাসে শতাধিক নেতা-কর্মীকে ধরে নিয়ে বন্দুক যুদ্ধের নামে সবার হাঁটুর নিচে একই জায়গায় গুলি করার অভিযোগ করেছে জামায়াত। এতে অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন, আবার অনেকের পা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের প্রায় সব নেতা-কর্মীই এখন কোনো না কোনো মামলার আসামি। ছাত্রশিবিরের অসংখ্য সদস্যের শিক্ষাজীবন বিনষ্ট হয়ে গেছে। দলটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি উচ্চ আদালতে মীমাংসার অপেক্ষায়। সবমিলিয়ে রীতিমতো বিপর্যস্ত জামায়াত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯ দল থেকে বের হওয়ার শর্তে সরকার জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের মামলা থেকে রক্ষাসহ দলটিকে নিষিদ্ধ করবেন না এমন টোপ দিয়েছিল সম্প্রতি। কিন্তু সেই টোপ এখন পর্যন্তও গিলেনি দলটি। বরং পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেই চলবে জামায়াত নেতারা।

সূত্রটি আরো জানায়, লন্ডনে অবস্থানরত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যরিস্টার আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। জামায়াতকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ১৯ দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে আসার জন্য। পরবর্তীতে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে গেলে সে নির্বাচনেও জামায়াতকে পৃথকভাবে অংশ নিতে হবে। বিনিময়ে দলটির নিবন্ধন বাতিল হবে না। যুদ্ধাপরাধের মামলায় দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকরের বিষয়টি নিয়েও কথা হয়। কিন্তু ব্যারিস্টার রাজ্জাক কোনো সমাঝোতায় আসেননি। আর সেজন্যেই তিনি এখন পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারছেন না। দলীয় নেতাকর্মিদের দাবি, ব্যারিস্টার রাজ্জাক দেশে ফিরলে বিমানবন্দর থেকেই তাকে আটক করা হবে। মিডিয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারাধীন দলের শীর্ষ নেতাদের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। একইসঙ্গে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের কর্তা ব্যক্তি, কূটনীতিক ও দেশ দু'টির প্রভাবশালী সরকারি-বেসরকারি লোকদের সঙ্গেও দেখা করছেন তিনি। এদিকে দলের নেতারা মনে করেন, আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ভালই চলছে জামায়াত। অজ্ঞাত স্থান থেকে নিয়মিত মিডিয়ায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠাচ্ছে তারা। মোবাইল ইন্টারনেট ফেস-বুকের মাধ্যমে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে। তাদের সমর্থিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে খরচ বহন করা হচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভালো ফল পেয়েছে তারা। এছাড়া ২০১০ সাল থেকে আইন-শৃখলা বাহিনীর হাতে হতাহত, গুম, খুনসহ রাজনৈতিক-মামলা সংক্রান্ত তিনটি তালিকা প্রস্তুত করেছে দলটির একটি বিশেষ গবেষণা সেল। খুব শিগগিরই তালিকাগুলো দেশের কূটনৈতিক ও বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে পৌছেঁ দেওয়া হবে। তালিকা অনুযায়ী গতবছরের ৩ মার্চ থেকে চলতি বছরের ৭ মে পর্যন্ত তাদের দলের সর্বমোট ২৩৩ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এসব নেতাকর্মীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে পুলিশ ও র্যাবকে দায়ী করা হয়েছে। তালিকায় ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন কারণে সহিংসতায় আহত, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, রিমান্ড, গুম, সাজা, গুলিবিদ্ধ এবং হামলাকারীর পরিচয়সহ এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে জামায়াত-শিবিরের ৬০ হাজার ৪ শ ৭১ জন নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়াও সারাদেশে তাদের সমর্থক অভিযোগে প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে এই তালিকায়।


জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর এবারই সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে রয়েছে তারা। নিষিদ্ধ দলের মতোই চলছে জামায়াত। বিগত জাতীয় সংসদেও ছিল তাদের প্রতিনিধিত্ব। এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। কয়েকজনের ফাঁসির রায় হয়ে আছে। ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের পর মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। কোনো নেতা-কর্মীর অফিসে আসা-যাওয়া নেই। তালা ঝুলছে সব কার্যালয়ে। কোনোটিতে তদারকি করে যাচ্ছেন কর্মচারীরা। নেতা-কর্মীরা অফিসে গেলেও গোপন বৈঠকের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। তবে তারা বাসা, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন অনেক ঝুঁকি নিয়ে।



নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা বলেন, দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মির বাসা আর ব্যবসায়িক কার্যালয়ই এখন জামায়াতের অফিস। তিনি বলেন, জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে সাংবিধানিক পন্থায় রাজনীতি করছে। দেশের সংবিধান ও আইন অনুসরণ করেই নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে নিবন্ধন দিয়েছে। এরইমধ্যে জামায়াত গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছে। আমরা আশাবাদী মহামান্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাব। তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেই চলবে জামায়াতের রাজনীতি। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াতকে ১৯ দলীয় জোট ত্যাগসহ আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে দলের নিবন্ধন বাতিল না করার আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু জামায়াত সরকারের হামলা-মামলায় যেমন ভীত নেয়, তেমনি সরকারের ফাঁদেও আর শেষ সময় পা দেবে না।

উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×