somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তব জীবন (facebook থেকে )

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


.কোথায় তুমি?
- এই তো অফিসের কাজে একটু বাইরে
আছি।
- সত্যি?
- আমাকে কি তোমার বিশ্বাস হয় না?
- বিশ্বাস না করলে কি আর আমার
সর্বস্ব
তোমায় সঁপে দিতাম?
- আচ্ছা এসব কথা পরে বলা যাবে।
আমি এখন একটু
ব্যস্ত আছি। রাখছি কেমন?
- আচ্ছা...
কথাটা শেষ করার আগেই ফোন লাইনটা
কেটে
দেয় রাকিব। মোবাইলটার স্ক্রিনের
দিকে
অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে থাকে
রিনা।
.
রিনা যে অফিসে কাজ করে রাকিব
সেই
অফিসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে কাজ
করে। অতি
অল্প বয়সেই মেধা ও দক্ষতা দিয়ে এই
কোম্পানির
অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করেছে সে।
তারপর
আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
একের পর এক
সাফল্য ধরা দিয়েছে ওর কাছে।
অন্যদিকে রিনা
খুব সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারের
মেয়ে।
রাকিবের সাথে প্রথম পরিচয়ের পরপরই
তাকে
ভাল লেগে যায় রিনার। আর লাগবেই
না কেন?
একে তো সে অফিসে উচ্চ পর্যায়ে
কাজ করে,
আবার দেখতেও সুপুরুষ। রাকিবের প্রায়
সবকিছুই
রিনাকে মুগ্ধ করত। আর এই কারণেই
রাকিবের খুব
বেশিদিন লাগেনি রিনাকে তার
আয়ত্তে
আনতে।রিনা নিজেকে এই ভেবে
ভাগ্যবতী
ভাবত যে তার জীবনে রাকিবের মত
কেউ একজন
এসেছে। আর সেজন্যই পাগলের মত
ভালবাসত সে
রাকিবকে।
.
রাকিবও প্রথম প্রথম রিনার কাছে
নিজের
ভালবাসা নানাভাবে উপস্থাপন করত।
মাত্র
কিছুদিন আগেও রাকিব অফিসের
কাজে বাইরে
গেলে রিনাকে সাথে নিয়ে যেত।
তবে আজ এক
সপ্তাহ ধরে রাকিব কেন যেন রিনাকে
অনেকটা
এড়িয়ে চলছে। রিনা ঠিকই সেটা টের
পেয়েছে।
রাতে রাকিবের নাম্বার ফোন দিয়ে
ওয়েটিং
পায় সে। পরে রাকিব ফোন করার পরেও
রাগ করে
আর ফোন রিসিভ করে না। পরদিন
রাকিব অফিসে
ঢুকতেই রিনা তার কেবিনে গিয়ে
বলে,
- কি হয়েছে তোমার?
- কই? কিছু না তো!
- সত্যিই কিছু না?
- হ্যাঁ, সত্যিই।
- তাহলে আমাকে এভাবে এড়িয়ে
যাচ্ছ কেন?
- আরে কাজের কত চাপ তা তো
দেখতেই পাচ্ছ?
- তাই বলে রাতেও ব্যস্ত থাক?
গতরাতে তো
একবারও ফোন রিসিভ করলে না!!
- সত্যি বলছি। আচ্ছা এই শুক্রবার
একসাথে লাঞ্চ
করব, ঠিক আছে?
রিনা আর কথা বাড়ায় না। অভিমান
করে কেবিন
থেকে বেড়িয়ে আসে।
.
সেদিন রাতে রাকিবকে ফোন দিয়ে
তার ফোনটা
আবার ওয়েটিং পায় রিনা। প্রায় ১
ঘণ্টা ধরে
অনবরত ফোন দেয়ার পরেও তার ফোন
ওয়েটিং
পাওয়ার ক্ষোভে নিজের মোবাইলটাই
বন্ধ করে
ফেলে রিনা। বারন্দায় গিয়ে
দাড়াতেই দেখে
সেখানে ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে।
বৃষ্টিতে
ভিজতে খুব ভাল লাগে তার। বৃষ্টিতে
হাত
বাড়িয়ে সেটা উপভোগ করতে থাকে
চোখ বন্ধ
করে। চোখ বুজতেই তার রাকিবের
সাথে
কাটানো বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কথা
মনে পরে
যায়। এমনই এক বর্ষার দিনে রাকিবকে
সে তার
সর্বস্ব সঁপে দিয়েছিল। কতই না সুখের
ছিল সেইসব
মুহূর্ত। সেসব কথা মনে পরতেই নিজের
অজান্তে
তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে আসে।
বৃষ্টির জলের
সাথে সেই অশ্রুজল মিশে একাকার হয়ে
যায়।
.
রাকিবের সাথে আজ অনেক ঝগড়া
হয়েছে রিনার।
সেজন্য এমনিতেই তার মনটা খারাপ
ছিল। তাই
অফিস মিটিঙে প্রেজেন্টেশনের সময়
বেশ কিছু
যায়গায় ভুল হয়ে যাচ্ছিল তার। কয়েক
মুহূর্তের
জন্য তো সে প্রায় সবকিছুই ভুলে
গিয়েছিল। তবে
সেটা খুব দক্ষতার সাথে সামলে নেন
আসিফ
সাহেব। রিনা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
মনে মনে
ভাবছিল আজ মনে হয় তার চাকরীটাই
চলে যাবে।
তাই অফিস লাঞ্চের সময় রিনা আসিফ
সাহেবকে
দেখতে পেয়ে ‘ধন্যবাদ’ দিতেই সে
অন্যমনস্কভাবে বলে, “এটা তেমন কিছু
না, আমার
কাজই তো এটা।” আসিফের প্রতিউত্তর
শুনে রিনা
আর কথা বাড়াল না। লোকটার কথা
শুনলেই
রিনার মনে হয় যেন কেউ উনার সাথে
গায়ে পড়ে
কথা বলছে।
.
বিকেলে অফিস শেষে রাকিবের
কেবিনে গিয়ে
দেখে রাকিব নেই। রাকিবের এভাবে
বদলে
যাওয়াটা রিনাকে বেশ ভাবাচ্ছে।
মনের ভেতর
তার হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে। অফিস
থেকে
বেড়িয়ে পার্কিং লটে নামতেই
রিনা দেখতে
পায় রাকিব অফিসের নতুন কর্মচারী
মালিহাকে
সাথে নিয়ে তার গাড়িটা ড্রাইভ
করে বের হয়ে
যাচ্ছে। রিনার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে
আসে।
নিজেকে খুব কষ্টে সামলে নিতে
চেষ্টা করে,
কিন্তু পারে না। দু’চোখ দিয়ে টপটপ
করে পানি
বেয়ে পড়ে তার।
.
“মিস রিনা, আপনি ঠিক আছেন তো?”
কিছুটা
চেনা এক কণ্ঠস্বর শুনে পিছনে ফিরে
তাকাতেই
আসিফ সাহেবকে দেখতে পায় রিনা।
রিনা খুব
দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“জ্বী”।
“এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে?”, আরিফ
সাহেব
কিছুটা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলেন। খুব কষ্টে
কান্নামিশ্রিত কণ্ঠ এড়িয়ে রিনা
বলে, “বাসায়
যাব, তাই।” আসিফ বাইরে তাকিয়ে
দেখে বেশ
ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। সেদিকে
তাকিয়ে বলে,
“বৃষ্টি নামছে, যেতে পারবেন তো?”
রিনা
অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, “জ্বী পারব
আসিফ
ভাই। বৃষ্টি কমলেই চলে যাব। আপনি
যান।”
.
রিনার কথা শুনে আসিফ চলেই
যাচ্ছিল। কি
ভেবে যেন আবার ফিরে এসে
জিজ্ঞেস করল, “তা
আপনি কোথায় যাবেন?” রিনা তার
বাসার
জায়গাটার নাম বলতেই আসিফ বলে,
“যদি কিছু
মনে না করেন আমি আপনাকে
নামিয়ে দিতে
পারি। আপনাদের ওদিকটাতেই আমার
বাসা।
অবশ্য যদি আপনার আপত্তি না থাকে।”
রিনা
বাইরের মুষলধারে বৃষ্টি দেখে
আসিফের কথায়
সম্মতি জানায়।
.
অনেক কষ্টে একটা ট্যাক্সি ক্যাব
ভাড়া করে
সেটার সামনের সিটে বসে আসিফ।
রিনা পিছনে
চুপচাপ বসে থাকে। রিনার চোখের
সামনে
রাকিবের সাথে এমন বৃষ্টিতে
গাড়িতে করে ঘুরে
বেরানো স্মৃতিগুলো ভাসতে থাকে।
মনে মনে
তার রাকিবের প্রতি শুধু একটাই প্রশ্ন
জাগে,
“কেন এমনটা করলে?” রিনাকে চুপচাপ
দেখে
আসিফ নিজেই কথা বাড়ায়, “কিছু মনে
করবেন
না। আপনাকে কয়েকদিন ধরেই বেশ
আপসেট
দেখছি। কিছু কি হয়েছে?” আসিফের
প্রশ্নে
রিনা ‘না, কিছু হয়নি’ উত্তর দিয়ে
আবার চুপ করে
বসে থাকে। আসিফ আবার একটু পরেই
বলে উঠে,
“দেখুন আমরা মানুষের মনের টানা-
পোড়েন খুব
স্বাভাবিক এক জিনিস। আপনাকে শুধু
এটুকুই বলব,
নিজেকে সামলে নিন। কারণ মানুষের
জীবন খুব
বিচিত্র। জীবন প্রতিনিয়ত মানুষকে
একেকটা
অনুভূতি আর পরিস্থিতি দিয়ে পরখ
করে। প্রকৃতির
ছয় ঋতুর মত জীবনে একেক সময় একেক রকম
পরিস্থিতি আসে। তবে আমাদেরকে
তা ঠিকই
সামলাতে হয়। কখনো আমাদের জীবনে
বসন্তের
মত সুবাতাস বইতে থাকে, আবার কখনো
বর্ষার মত
মুষলধারে বৃষ্টি, আবার কখনো গ্রীষ্মের
দাবদাহের মত জীবন জ্বলে-পুড়ে উঠে।
কিন্তু
আমাদের নিজেদেরকেই তা সামলে
নিতে হয়।
আপনাকেও তা করতে হবে।”
আসিফের কথাগুলো শুনে রিনার দু’চোখ
আবার
অশ্রুজলে ভরে উঠে। আসিফ আর কথা
বাড়ায় না।
.
রিনা এক সপ্তাহ পরেই চাকরীটা
ছেড়ে
দিয়েছিল। চাকরী ছাড়ার পরেও তার
আসিফের
সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
মাত্র ১ মাসের
পরিচয়েই আসিফ রিনার বাসায়
বিয়ের প্রস্তাব
পাঠায়। প্রথমে রিনা অবাক হলেও পরে
তা মেনে
নিয়েছে, কারণ আসিফ রিনার অতীত
সম্পর্কে সব
জানা সত্ত্বেও তাকে বিয়ের কথা
বলে। রিনা
এখন আর কোন রাকিবের মত কোন
রাজপুত্রকে
নিয়ে স্বপ্ন দেখে না, সে এখন
আসিফের মত এক
সাধারণ মানুষকে নিয়ে আজীবন
বেঁচে থাকার
বাস্তব কল্পনা করে। কারণ বাস্তব
জীবনের
সত্যিকার নায়ক আসিফের মতন
মানুষেরাই।
.
লেখকঃ Mustafa Anwar (স্বপ্নবাজ শাওন)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×