somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়

০১ লা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রথমঃ
চারদিকে আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাধিয়ে আসছে। আশেপাশে শুধু অপরিচিত মানুষের ভীড়। উল্লসিত চোখগুলো আমাকে গিলে খাচ্ছে। একটু নার্ভাস লাগছে। বুঝছি না, কি করা উচিত কিংবা কোথায় যাবো। একটা পরিচিত মুখ খুব বেশি দরকার। এরকম অপরিচিত মানুষের ভীড়ে আমার কেমন জানি ডুবে যাওয়ার অনুভূতি হয়। আমি তখন তল খুঁজে পাওয়ার জন্য পরিচিত মুখ খুঁজতে থাকি, কখনও পাই, কখনও পাই না। অবশ্য খুঁজে না পেলেও আমার তেমন কোন সমস্যা হয় না। আমি এব্যাপারগুলোতে বেশ অভ্যস্ত। কারণ আমার জন্মই হয়েছে জৌলুশের মাঝে, জন্ম থেকেই যে আমি উদযাপনের উপলক্ষ !!
হ্যা, আমিই প্রথম। সবকিছুর মধ্যমনি আমি। সবাই আমাকে চায়। কেউ আমাকে পায় আর কেউ আমার পিছনে আজীবন ছুটতে ছুটতে একসময় মুখ থুবড়ে পরে, মারা যায়। কিন্তু তারপরও সবাই আমাকে চায়। আমি সবার জীবনের ফ্যান্টাসি। আমি কারও কারও কাছে প্রিয় মানুষের আলিঙ্গন থেকেও প্রিয়। কারও কারও কাছে আমি আলোর দুত। কেউ কেউ আমাকে পরমেশ্বর মনে করে। এমন নাযে, আমাকে ছাড়া জীবনের স্পন্দন থেমে যাবে কিন্তু তারপরও এই পৃথিবীতে আমিই হচ্ছি চরম আরাধ্য!!
কিন্তু জানেন, আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা সুখী নই। বরং বেশ বিব্রত, আমি যে সবাইকে সুখী করতে পারি না !! আমি কারও জীবনে পরশমণি হয়ে আসি আর কারও জীবনে আসি সর্বগ্রাসী হয়ে। কেউ আমার আলোর ছটায় আলোর পথযাত্রী হয় আর কেউ অন্ধ হয়ে যায়। আমি কাউকে দোষ দেই না। আমার সাথে অহংকারের খুব সখ্য। আমার সব গ্রাহকরা এই বন্ধুত্বকে সহজভাবে নিতে পারে না। অনেকেতো শুধু আমার বন্ধুর সাহচর্য পাওয়ার জন্যই আমাকে পেতে চায়!! কিন্তু যারাই অহংকারকে সহজভাবে নিতে পেরেছে তারাই আমার আসল সৌন্দর্যকে বুঝতে পেরেছে।
ভাবছেন, আমি খুব সুন্দর তাই না? হ্যা, আসলেই আমি খুব সুন্দর। তবে আমার সৌন্দর্যকে বুঝতে হলে আমাকে পেতে হয়। কারণ আমি সাধারণের মাঝে চলি না। আমি থাকি অনেক উঁচুতে। আমার এখান থেকে সবকিছু ছোট মনে হয়। যদিও আমি জানি সবকিছু যত ছোট করে আমি দেখছি সব আসলে তত ছোট নয়। এ ব্যাপারে একটা ঘটনা বলি। যেমন একদিন দেখি হাল্কা পাতলা গড়নের এক ছেলে দৌড়ে আসছে আমার দিকে। ওর আশেপাশে কেউ নেই। সে অনেক দুরে থাকতেই আমার চোখে পড়ে গেছে। আমার আশেপাশে অনেক মানুষ থাকলেও কে আমার দিকে দৌড়ে আসছে তা আমি আগেভাগেই বুঝতে পারি। কারণ অজস্র বিন্দুর মাঝে কোনটা আস্তে আস্তে বৃত্ত হচ্ছে তা বুঝা তেমন কোন কষ্টের কাজই না !! ছেলেটা যতই কাছে আসছিলো ধীরে ধীরে তার চেহারা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম এই ছেলেটাকে আমি আগে কোথাও দেখেছি। আরেহ !! এইতো সেই ছেলেটা যে এই অল্প কয়েকদিন আগেই আমার কাছাকাছি এসে আবার উল্টোপথে হাঁটা ধরেছিলো !! দীর্ঘ পথ হাঁটার ক্লান্তিতে সে বুঝতেই পারে নি যে আমি তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। আপনারা হয়ত ভাবছেন, এ কেমন কথা ? আমিতো অদৃশ্য কিছু নই। না, আমি দৃশ্যমান কিন্তু আমাকে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় না। যে যোগ্য একমাত্র সেই আমাকে পায়। যে ছেলেটার কথা বলছিলাম সে এর আগেও কয়েকবার আমার খুব কাছে এসেছিলো। প্রতিবারই সে আমার খুব কাছে এসেও ব্যর্থ হয়েছে। তবে প্রতিবারই তার সাথে কেউ না কেঊ থাকত যার কাছে আমি ধরা দিতাম। তার সঙ্গীর চোখে সে আমাকে খুঁজে পেত। কিন্তু আজকে সে ছিলো একা এবং আমিও ধরা দিতে প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু অল্পের জন্য হল না !! বেটার লাক নেক্সট টাইম !!
এত কিছুর পরও কিন্তু আমি বড় একা। ঐ যে বললাম আমি থাকি অনেক অনেক উঁচুতে। আমার চারপাশে শুধু তীব্র আলো আর এক ছায়াসঙ্গী অহ্নগকার ছাড়া আর কেউ নেই। আমি অহংকারকে পছন্দ করি না। ওর জন্মই হয়েছে আমার আলোকিত অংশগুলোকে সবসময় ঢেকে রাখার জন্য। আমি সবার মাঝে আলো বিলাতে চাই কিন্তু ও আমাকে চারদিকে অদ্ভুত অদৃশ্য দেয়াল তুলে রাখে। তাই আমাকে যে পায় সেও দেয়ালবন্দী হয়ে পড়ে। আমি অনেকবার চেস্টা করেছি অহংকারে দেয়াল ভাঙতে। কিন্তু হায়, সেই দেয়াল ভাঙ্গার এখতিয়ার আমার স্রস্টা আমাকে দেয় নি। একমাত্র আমার গ্রাহকেরাই পারে ঐ দেয়াল ভাঙতে।
অহংকার আমার সাথে সবসময় থাকার পরেও আমি কিন্তু অহংকারী না। আমি আমার দুই পাশে সবসময় দ্বিতীয় আর তৃতীয়কে রাখি। তারা আমার খুব ভালো বন্ধু না হলেও আমি তাদেরকে বিপদে আপদে সাহায্য করি। আমি জানি উপরে উপরে আমার সাথে হাসিমুখে কথা বললেও তাদের হাতে ক্ষমতা থাকলে আমাকে এতদিনে মেরে ফেলত। তারপরও আমার দরজা সবসময় তাদের জন্য খোলা। সবাই ভালো থাকুক এটাই আমি চাই।


দ্বিতীয়ঃ
কষ্ট হচ্ছে। মাথাটা কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে। বুঝছি না আসলে আমার দোষটা কি ছিলো !! আশেপাশের মানুষজন সবাই অন্য কাউকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি তার চেহারা দেখতে পারছি না। অবশ্য আমি জানি আমাকে বেশিক্ষণ একা থাকতে হবে না। একটু পরে কিছু পরিচিত মুখ আমার দিকে এগিয়ে আসবে। হ্যা, ঐতো ওরা আসছে। ওদের মুখও আমার মত গম্ভীর। পৃথিবীর সব হাসি যেন কেউ কেড়ে নিয়েছে আমাদের মুখ থেকে।
আমি দ্বিতীয়। জী, প্রথমের পরেই আমি আসি। আমাকে চিনতে পারছেন না ? পারবেন কিভাবে !! আপনারাতো সবাই প্রথমকে নিয়ে ব্যস্ত। আপনারা প্রবাদ বানিয়েছেন, “পৃথিবীতে সবাই একমাত্র জয়ীকেই (প্রথমকে) মনে রাখে।“ প্রথমের আশেপাশে কেউ আছে কি নেই তা আপনাদের নজরে আসে না। অনেকেতো আমার অর্জন নিয়ে তাচ্ছিল্যও করে, যেন আমাকে পাওয়া এমন কোন ব্যাপারই না। অথচ আমি সবসময় প্রথমের কাছাকাছিই থাকি। প্রথম যেমন থাকে অনেক উঁচুতে, তেমনি আমিও উপরেই থাকি। শুধুমাত্র শীর্ষবিন্দুতে থাকি না বলে অনেকে আমাকে দেখতে পায় না। অনেকে দেখতে পেয়েও চোখ সরিয়ে নেয়। সবার দৃষ্টি থাকে প্রথমের দিকে।
জন্ম পর থেকেই দেখে আসছি আমার প্রতি সবার উদাসীনতা। এতে আমি অভ্যস্ত। কিন্তু এই উদাসীনতা কিন্তু কারও জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না। কেউ বোঝে না আমাকে গুরুত্ব না দিলে কেউ প্রথমের কাছে যেতে পারবেনা। আমি হচ্ছি উপরে উঠার সিড়ি। আমার দিকে না তাকিয়ে উপরে উঠতে গেলে মুখ থুবড়ে পরতে হয়। অবশ্য প্রথমের মত আমিও সবার কাছে ধরা দেই না। তবে আমার ধরা দেওয়ার নিয়ম প্রথমের থেকে একটু ভিন্ন। আমাকে যে ভালোবাসে তাকে আমি একসময় না একসময় প্রথমের কাছে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেই। কিন্তু যে আমার প্রতি তাচ্ছিল্য দেখায় তাকে আমি আটকে রাখি, বুকে জড়িয়ে রাখি। কি অদ্ভুত তাই না?
এইতো সেদিনের ঘটনা। একটা খুব সাধারণ মেয়ে আমাকে ভালোবেসেছিলো। ওর জীবনে অনেক কষ্ট, তারপরও অনেক সংগ্রাম করে সে বেঁচে ছিলো। যুদ্ধ করে আমার কাছে আসতে আসতে সে ক্লান্ত হয়ে পরেছিলো। আমার কাছে এসে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে আমি তাকে অনেক যত্নআত্তি করে জাগিয়ে তুলি। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর সে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি তাকে আঙ্গুলের ইশারায় প্রথমের কাছে যাবার পথটা দেখিয়ে দেই। পথ চলতে চলতে সে যেন আর ক্লান্ত না হয়ে পরে সেজন্য ওকে আমি কিছু পানি আর খাবার দিয়ে দেই। ওর কানে ফিসফিস করে যখন আমি প্রথমের কাছে যাবার মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলাম তখন ও একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওর চোখ থেকে পৃথিবীর সব শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা মিশে একাকার হয়ে অদ্ভুত এক দ্যুতি ছড়াচ্ছিলো। আমি বেশিক্ষণ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি নি। আমার বুকটা প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কেমন জানি দুমড়ে মুচড়ে উঠছিল। আমার জন্মই যে হয়্বেছে ভালোবাসার মানুষদেরকে উপরে ওঠার সিঁড়ি দেখিয়ে দিতে !!
আরেকদিন আরেকটা ছেলে এসেছিলো। গম্ভীর মুখে আমার কাছে এসে প্রথমের কাছে যাওয়ার পথ খুজছিলো। ছেলেটার প্রতিমুহূর্তে চলাফেরা, কথাবার্তায় আমার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পাচ্ছিলো। আমাকে সে দেখেও দেখে না, আমি যেন অচ্ছুৎ। আমি তখন তাকে আমার বিশাল চাদর দিয়ে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলি। ওর জগত অন্ধকার হয়ে আসে, ছটফট করতে করতে পথ খুঁজতে থাকে। আমি করুণার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকি কিন্তু আমার চাদর সরিয়ে নেই না। এটা আমার স্রষ্টার আদেশ। যতক্ষণ পর্যন্ত ছেলেটার মাঝে আমার প্রতি ভালোবাসা না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকে ছাড়তে পারব না। এক সময় ছেলেটা ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পরে। আমি তাকে আমার কাছে রেখে দেই।
ভাবছেন, আমি বোধহয় খুব ব্যস্ত, আমার নিশ্চয়ই অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমি বড় একা। আজীবন ভালোবাসার মানুষদের উপর অধিকার ছেড়ে দিতে দিতে আমি আমার আশেপাশে দেয়াল তৈরি করে ফেলেছি। এই দেয়ালের মাঝে আমার সঙ্গী শুধুই “আফসোস” আর “দীর্ঘশ্বাস”। ওরাই একমাত্র আমার দুঃখগুলোকে বোঝে। কিন্তু ওরা আমার সাথে তেমন একটা কথা বলে না। তাই আমি নিজের মাঝেই ডুবে থাকি সারাক্ষণ আর শুন্য দৃষ্টিতে পথের দিকে চেয়ে থাকি। মাঝে মাঝে ধুমকেতুর মত “প্রতিজ্ঞা” আসে আমার কাছে। তখন আমার আবছায়া অন্ধকার জগত আলোয় ভরে যায়। প্রতিজ্ঞা আসলে আমি আমার বন্দীশালার দরজা খুলে দেই। তখন কেউ না কেউ প্রথমের কাছে যাবার পথ খুঁজে পায়। সে চলে যাবার সাথে সাথেই প্রতিজ্ঞাও চলে যায়। আমি আবার অন্ধকারে ডুবে যাই। এভাবেই জীবন চলছে, এভাবেই চলবে। কারও ক্ষতি করার কোন ইচ্ছা আমার নেই। কিন্তু যখন দেখি পৃথিবীর মানুষেরা নিজেদের অযোগ্যতার দায় আমার উপর চাপায়, আমাকে গালাগালি করে তখন খুব খারাপ লাগে। আমি তখন আরও আষ্টেপৃষ্ঠে তাদেরকে জড়িয়ে ধরি। আমাকে মুল্য না দেওয়া পর্যন্ত ছাড়ি না। মাঝে মাঝে অবস্থার অবনতি ঘটলে আমি তাদেরকে নিচে নামার পথ দেখিয়ে দেই। কেউ ফিরে যায়, আর কেউ জেদ ধরে বসে থাকে “প্রতিজ্ঞা” নামক ধুমকেতুর আশায়।
এবং তৃতীয়:
হইচইয়ের শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে। বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। আমার এভাবে ঘুমিয়ে পরাটা উচিত হয়নি। অবশ্য কি করব, আমাকে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। আমার চারপাশে ভিড় লেগেই আছে। দেখা যায় একটু পর পর কেউ না কেউ উল্লাস করছে। এই উল্লাসের মাঝেই কেউ আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, তবে এই কান্না সুখের কান্না।
আমার চারপাশে শুধু সুখ আর সুখ। কারণ আমার বন্ধু হচ্ছে “আশা”। সে সবসময় আমার সাথেই থাকে। আমার সব না বলা কথা তার জানা আবার তার সব কথাও আমি জানি। আমরা যেন একে অপরের পরম বন্ধু। আশার আলোয় ভরা আমার জগতে কোন আঁধার টিকতে পারে না।
এত সুখের আঁধার হওয়ার পরও কিন্তু সবাই যে আমাকে চায় এমন কিন্তু না। আমি সবার কাছে অনেকটা সান্তনা পুরষ্কারের মত। তবে আমাকে যে পায় তার চারিদিক আমি আশার আলো দিয়ে ভরিয়ে দেই। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের মাঝে সে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আমাকে পেয়ে খুশী হওয়ার পরও আমাকে নিয়ে কেউ গল্প লিখে না, আমাকে কেউ ভালোবাসে না। আমি সম্ভাবনাময় কোন কিশোরের স্বপ্নের মত, আমি সাফল্য না পেতে পেতে হতাশ হয়ে যাওয়া কোন মানুষের হঠাৎ পাওয়া কোন আনন্দের মত। আমি হচ্ছি অভিজাত আর সাধারণের মাঝে শেষ সীমানা। আমাকে পেলে সবার মনে আরও পাওয়ার আকাঙ্খা জাগে। আমাকে পেলে হতোদ্যম যোদ্ধা পূর্ণদ্যোমে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরে। আমি হচ্ছি ক্যাফেইনের মত।
আমার অনেক ক্ষমতা। প্রথম আর দ্বিতীয়ের দিকে কারা এগিয়ে যাবে তা আমিই নির্ধারণ করি। আমি পরম আকাঙ্খিতও নই, আবার অচ্ছ্যুতও নই। আমি বাঁচি সাধারণের মাঝে। অভিজাতেরা আমাকে নিয়ে তেমন একটা কথা বলে না। মাঝে মাঝে প্রথমের বাসিন্দারা আমার দিকে আগ্রহ ভরে তাকায়। হয়তো আমার মাঝে তাদের ভবিষ্যত প্রতিদন্দীদের খোঁজে। আমাকে দেখার সময় তাদের চোখে কৌতুহল আর স্নেহ খেলা করে। আর দ্বিতীয়তে থাকা হতাশ মানুষগুলো আমার দিকে তাকায় ভয়ার্ত চোখে। তারা হয়তো ভাবে আমি এখনই বোধহয় তাদেরকে টেনে নিচে নামাবো। কিন্তু আসলে আমি পরম সুখী এক সত্ত্বা। আমার কারও সাথে কোন লেনদেন নেই। আমি হচ্ছি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।
একবার এক ছোট শিশু আমার দিকে হামাগুড়ি দিতে দিতে কিভাবে যেন চলে এসেছিলো। তার সাথে তার বাবা-মা নেই। সে একা একাই হাসছে-খেলছে। আমি তাকে কাছে টেনে নিয়েছিলাম। তার কপালে এঁকে দিয়েছিলাম সম্ভাবনার তীলক। একটু পরই দেখি দুর থেকে তার বাবা-মা ছুটে আসছে। তারা দৌড়ে এসে আমার কোলে শিশুটিকে দেখে থমকে যায়। হয়তো তারা ভাবছিলো শিশুটি কিভাবে আমার কাছে এলো !! অথবা তারা হয়তো শিশুটিকে পাবার আশাই হারিয়ে ফেলেছিলো। হঠাৎ করে তাকে দেখতে পেয়ে তারা বোবা হয়ে গিয়েছিলো। যেটাই হোক, একটু পরেই উল্লাসে ফেটে পড়ে। দৌড়ে এসে আমার কোল থেকে শিশুটিকে ছিনিয়ে নেয়। অবাক চোখে শিশুটির কপালে আঁকা তীলক দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই জায়াগাটা শিশুটির আরও আত্নীয়-স্বজনে ভরে যায়। সবার মধ্যমণি হয়ে শিশুটি আপনমনে খেলতে থাকে। আস্তে আস্তে শিশুটির সাফল্যের খবর ঘরে ঘরে পৌছে যেতে থাকে। সহজ সরল মানুষগুলো শিশুটিকে ঘিরে স্বপ্ন বুনতে থাকে।
আমি তাই প্রথম আর দ্বিতীয় থেকে অনেক আলাদা। ওদের মত করে আমি আমার গ্রাহকদেরকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলি না। তাই আমাকেও প্রথম আর দ্বিতীয় থেকে একটু আলাদা করে ডাকা হয়। আমার সাথে সবসময় উপাধি হিসেবে “এবং” উচ্চারণ করা হয়। আমি এটা নিয়ে বেশ গর্বিত। যখন আমার স্রষ্টা আমাকে “এবং তৃতীয়” বলে ডাকে তখন খুব ভালো লাগে। মোট কথা, আমি আমার জীবন নিয়ে সুখী।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৭
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×