somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শর্টেস্ট সিরিয়াল রিভিউ: Deathnote

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন অলস কোন দুপুরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। আপনার সামনে কিছুদূরেই একজন সুন্দরী হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ রাস্তার মাথা থেকে একজন সন্ত্রাসী বের হয়ে আসলো।সুন্দরীর দিকে ছুরি ধরে তার হাতের ব্যাগটা ছিনিয়ে নিতে গেল। এই দৃশ্য দেখেই আপনার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। আপনি সন্ত্রাসীকে শায়েস্তা করার জন্য এগিয়ে যেতে গিয়েও থেমে গেলেন। বাস্তবতা আপনাকে পিছে টেনে ধরল। আপনি আস্তে করে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করলেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আপনি দগ্ধ হতে লাগলেন। একটা কন্ঠ আপনার ভিতরে বার বার চিৎকার করে বলতে থাকল, “এটা ঠিক না, এটা ঠিক না!” কিন্তু কি করবেন ! আপনার হাত-পা যে বাঁধা! মনে মনে এই সমাজের হাজারো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও, বাস্তবে আপনি নিপাট ভদ্রলোক, একজন নিখুঁত মধ্যবিত্ত।
এই সমাজের প্রায় প্রতিটা মানুষেরই মানসিক অবস্থা কম-বেশি এমনই।এখন এই অবস্থায় একদিন হঠাৎ দৈবক্রমে আপনি “মৃত্যুর বই” নামে একটা নোটবুক কুড়িয়ে পেলেন। প্রথম পৃষ্ঠাটা উল্টিয়ে দেখলেন তাতে লেখা, এই বইয়ে যার নাম লেখা হবে সে-ই মারা যাবে! ব্যাপারটা আপনার কাছে প্রথমে কৌতুক মনে হলেও একসময় আপনি ঠিকই আগ্রহী হয়ে উঠলেন। হাজার হোক, আপনি অতিষ্ঠ, নির্যাতিত- একটা বইয়ে নাম লিখার ফলে যদি কোন অপরাধী মারাও যায়, তাতে ক্ষতি কী! পরীক্ষামুলকভাবে প্রথম নাম লেখার পর আপনি বিস্ময়করভাবে আবিষ্কার করলেন, বইয়ে যা লেখা আছে তা পুরোটাই সঠিক! আপনি এখন কী করবেন? অবশ্যই আপনি এই ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের মনমত করে পৃথিবী গড়ার দিকে মন দিবেন। যে পৃথিবীতে আপনি থাকবেন স্রষ্টার ক্ষমতায়। আপনার কথাই হবে আইন। আসল স্রষ্টার সাথে আপনার পার্থক্য শুধু হবে- আপনি সৃষ্টি করতে পারবেন না, পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন শুধু ধ্বংসের মাধ্যমে! কিন্তু এই অপরিসীম ক্ষমতা কী শেষপর্যন্ত নৈতিকতার মাপকাঠিতে পাস নম্বর পাবে? এর পরিণতি কী সুখকর নাকি আসলে এর কোন পরিণতিই নেই?


এরকমই একটা দৃশ্যপট নিয়ে গড়ে উঠেছে অ্যানিমেশন সিরিজ “Deathnote ” এর চিত্রনাট্য। জাপানের একজন সাধারণ বালক “ইয়াগামী লাইট”, যে ব্যক্তিজীবনে একজন ভালো ছাত্র, সুনাগরিক এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী। সমাজ এবং রাষ্ট্রের অসংগতিগুলো তাকে ভাবায়। কিন্তু তারমত সাধারন মানুষের যে আসলে কিছুই করার নেই। তার হাতেই একসময় দৈবক্রমে “Deathnote” এসে পরে। সে প্রথমে চমকে গেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে অপরাধীদের দমন করতে শুরু করে। কিন্তু তার এই দমননীতি আইনপ্রণেতাদের পছন্দ হয় না। আইনের বাইরে চলা যেকোন কিছুই যে আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ! তাই তার বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত চালায়। তদন্তে নেতৃত্ব দেয় “এল” নামে একজন গোয়েন্দা, যার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। প্রশাসনে প্রচলিত একটা ধারণা যে, “এল” এর পছন্দ না হলে সে কখনও কোন তদন্তে হাত দেয় না।তার উপর আবার “এল” এর চেহারা কেউ কখনও দেখে নি!সবসময় গোপনে থেকেই একজন সহকারীর সাহায্যে সে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করেছে। শুরু হয়ে যায়, “এল” বনাম “ইয়াগামী লাইট” এর বুদ্ধিদীপ্ত ও উপভোগ্য লড়াই।
এই অ্যানিম সিরিজটা জাপানী জাতীয় টেলিভিশনে (NHN) এ প্রচারের শুরু থেকেই বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। এমনকি দর্শকদের অনুরোধে সিরিজটা একবার শেষ করার পরও নির্মাতারা চিত্রনাট্যে আংশিক পরিবর্তন করে আবার হাজির হয় টিভি পর্দায়। এই সিরিজের চরিত্রগুলো নিয়ে পরবর্তীতে মুভীও তৈরি হয়। অন্যান্য অ্যানিমেশন সিরিজের সাথে এর মুল পার্থক্য হচ্ছে চিত্রনাট্যের অনন্যতা। মুলত অ্যানিমেশন সিরিজগুলোতে কাহিনীগুলো হয় কিছুটা রুপকথা নির্ভর। এই সিরিজের মুল ভিত্তি কাল্পনিক হলেও কাহিনীর প্রতি পদে পদে দর্শকদের ধাক্কা খেতে হয়। হঠাৎ পাওয়া ক্ষমতা মানুষকে অবিশ্বাস্যভাবে বদলে দেয়। ইয়াগামী লাইটও নিজেকে সকল সমালোচনার ঊর্ধে ভাবতে শুরু করে। “গড” কমপ্লেক্সে ভুগতে থাকা ইয়াগামীর মন থেকে ভালো-মন্দের পার্থক্য মুছে যায়। ক্ষমতাধর স্বৈরশাসক এর মত সে তার বিরুদ্ধ মতকে ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু তার পথে বাঁধা হয়ে দাড়ানো “এল” এর মত চরম সাহসী এবং ধূর্ত একজন প্রতিপক্ষকে কী সে আসলেই ঘায়েল করতে পারবে? আর পাশাপাশি আছে তাঁর পক্ষে নীরবে-নিভৃতে গড়ে উঠা ভক্তকুলের বিড়ম্বনা। মনে মনে নিজেকে “গড” মানলেও, ইয়াগামী চাটুকারিতা দেখতে পারে না। সে চায় কেউ তার ইবাদাত করুক, কিন্তু ইবাদাতের বাহুল্যতা তার অস্তিত্বকে হুমকীর মুখে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত কী ইয়াগামীর স্বপ্নের পৃথিবী বাস্তবতার মুখ দেখেছিলো?


এর উত্তর না হয় দর্শকরা সিরিজটা দেখেই জেনে নিক। প্রথম প্রথম একটু বিরক্ত লাগলেও (অ্যানিম দেখার অভ্যাস না থাকলে)২/৩ পর্ব পরই সিরিজটা উপভোগ্য লাগা শুরু হবে।

সিরিজ সম্পর্কে আমার রেটিং: ৮/১০
IMDB রেটিং: ৮.৮/১০
টরেন্ট ডাউনলোড লিংক এখানে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:০২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×