somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকার রাস্তায় ৫ বছর

০৫ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা শহরে আমার আসা খুব বেশি দিন হয়নি। এতদিন ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকার কথা শুনতাম আর এখন এখানে এসে তা নিজের চলাফেরায় লক্ষ্য করছি । আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে ঢাকা শহর পৃথিবীর যে কোন শহরের থেকে শ্রেষ্ঠ। এর পেছনে অনেক যৌক্তিক কারণ আছে। আমাদের ঢাকায় কোন কিছুর অভাব নাই, এখানকার মানুষের টাকা-পয়সার কোন সমস্যা নাই। আভিজাত্যের মধ্যে সবাই বসবাস করে। একজন সাধারণ মানুষের মাসিক আয় যদি ত্রিশ হাজারের বেশি হয়, তাহলে সে স্বপ্ন দেখে একটা গাড়ি কেনার। এই ঢাকা শহরেই গাড়ির (প্রাইভেট কার) সংখ্যা লাখ দু’য়েক এর বেশি হবে। একটা পরিবারেই বাবার গাড়ি, মার গাড়ি, ছেলের গাড়ি, মেয়ের গাড়ি, শুধুই গাড়ির ছড়াছড়ি।

আমার লিখার উদ্দেশ্য গাড়ি কেনা বা গাড়ি কে নিয়ে নয়। আমি যখন অফিস থেকে বাসা ফিরে জ্যামে আটকে থাকি, তখন যদি রাস্তার দিকে একবার তাকিয়ে থাকি, দেখি ৫০০ মিটার জ্যামের মধ্যে যদি ১০টা বাস থাকে, তাহলে ১৫০টা থাকে প্রাইভেট কার। তাহলে দিন দিন প্রাইভেট কার কেনার সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে, তবে আমাদের ঢাকা শহরটা দুদিন পর কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? যদি প্রাইভেট কার কেনা কমানো না যায়, তবে রাস্তার জ্যাম কমানোর উপায় বের করতে হবে। আমরা বাঙালিরা আর কতদিন এই জ্যামের মধ্যে নিজের আয়ুটাকে কমাতে থাকবো? বাচ্চা কেক নিয়ে জন্মদিনের দিন বসে থাকে কখন আব্বু অফিস থেকে আসবে, মা ডাক্তার দেখাবার জন্য সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে কখন সন্তান অফিস থেকে আসবে? আমরা যদি নিজেরাই বুঝতে না পারি গন্তব্যে যাবার জন্য আমাদের কতটুকু সময় লাগবে, তাহলে এর থেকে আফসোস আর কি থাকতে পারে?

কারও যদি উত্তরায় বাসা হয়, আর তার অফিস যদি মতিঝিল এ হয়, তাহলে তাকে প্রতিদিন শুধু যাতায়াতের জন্য সময় রাখতে হবে মোট ২-৩ ঘন্টা। অথচ এইটুকু পথ যেতে আসতে মোট ১ ঘন্টাও লাগবার কথা নয়। তাহলে প্রতিদিন যদি আসা-যাওয়ার জন্য আমাদের ২ ঘন্টা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়, তাহলে একটু হিসাব করলেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। মাসে ৬০ ঘন্টা, বছরে ৭২০ ঘন্টা। তাহলে একটা মানুষ যদি ৬০ বছর জীবিত থাকে, তাহলে তার মোট ৪৩,২০০ ঘন্টা সময় শুধুই রাস্তায় কাটাতে হয়। এই সময়টাকে যদি বছরে রূপান্তর করা যায়, তাহলে দাঁড়ায় ৪.৯ বছর বা প্রায় ৫ বছর। তাহলে আমরা ঢাকা শহরের মানুষদের প্রায় ৫ বছর জ্যামে আটকা পড়ে রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে। এই কথাটি শুধু আমার নয়, আমার মত ঢাকার প্রায় দু’কোটি মানুষের।

তাহলে এভাবে আর কতদিন? আমরা কি কোনই সমাধানে আসতে পারিনা? মিরপুর-১২ থেকে রওনা দিয়ে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত গিয়েছে অথচ একটিবারও জ্যামে আটকা পড়েনি, এরকম নজীর কখনও কেউ দেখেনি। আমরা সমাধান চাই। মানুষ যদি চাঁদে যেতে পারে, মানুষ যদি এভারেস্ট বিজয় অর্জন করতে পারে, তাহলে মানুষের দ্বারা অসম্ভব কিছুই নাই। ঢাকার জ্যামও কোন সমস্যা নয়। আমাদের প্রয়োজন সেটা অতিক্রম করা, যাতে মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে বলতে পারে কখন অফিসে পৌঁছবে আর অফিস থেকে বের হয়েও যেনো ধারণা করতে পারে সে কখন বাসায় যাবে।

আমরা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, শুধুই জ্যাম কমালেই ঢাকা শহরটা পুরোটাই মানুষের কাছে স্বপ্নের মত হয়ে যাবে। আমরা চাই ঢাকা বিশ্বের দরবারে আদর্শ হয়ে থাকুক। নতুন নতুন রাস্তা তৈরি করলেই যে জ্যাম কমবে, এমনটি ঠিক না, বরং সেখানে জ্যাম আরও বাড়ে। রাস্তাগুলোকে যতটা সম্ভব একমুখী করতে হবে (যদি সম্ভব হয়), যাতে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ীগুলোকে যেতে দেয়ার জন্য সিগন্যালে পড়তে না হয়। আরও একটা ব্যাপার লক্ষনীয় যে, শুধুমাত্র মোড়ে মোড়ে জ্যামে আটকা পড়ে । যদি সম্ভব হয়, প্রতিটি মোড়ে মোড়ে একটা করে ছোট ওভার ব্রীজ তৈরি করা যায় (১০০-২০০ মিটার) তাহলে জ্যাম অনেকাংশে কমে যেতে পারে। এগুলো আমার চিন্তাধারা, সবার সাথে এগুলো নাও মিলতে পারে। তবে সবার মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা আছে। সবার গ্রহণযোগ্য পরামর্শেই উঠে আসতে পারে এর কাঙ্খিত সমাধান।

এখানে আরও সমাধান আসতে পারে, যদি সম্ভব হয়, ঢাকাকে ডি-সেন্ট্রালাইজেশন করানো। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরকে বিভিন্ন সেক্টর / সিটি অনুযায়ী ভাগ করে দেয়া। তাহলে ঢাকার উপর থেকে চাপ অনেকাংশে কমে যাবে আর অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোও একটু উন্নতির ছাপ দেখতে পাবে। কারণ ঢাকা যে তুলনায় উন্নত, সেই তুলনায় অন্যান্য বিভাগীয় শহর যেমন, রাজশাহী, খুলনা কিংবা সিলেট বা বরিশাল সেই অনুপাতে উন্নত না। সব বিভাগীয় শহরগুলোয় ঢাকার অফিস বা কোম্পানীগুলোকে স্থানান্তরিত করা গেলে (যদিও কষ্টকর) হয়ত সমস্যার অনেক সমাধান আশা করা যেতে পারে। আমার চিন্তাধারায় ভুল থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×