রুমি তার লিখাতে কখনও হাস্যরসাত্মকভাবে আবার কখনওবা কাব্যিক কিছু এলোমেলো কথার মধ্য দিয়ে কিছু না কিছু ভাবুক কথা বলতে চেয়েছেন । সেসব ভাবুক হলেও এটা বলা যায় না যে সেসব অর্থহীন , একটু মনোনিবেশ করলেই এর দর্শনগত অর্থ প্রতিভাত হয় । রুমি যা কিছু বলতে চেয়েছে সবই ছন্দবদ্ধভাবেই বলেছে । প্রাচীনকালে কোন উপাখ্যানকে যেমন মহাকাব্যের মধ্যে দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে রুমিও তাই করেছেন । সুখপাঠ্যের স্বার্থে সেই কাব্যিক ধারাকে উপেক্ষা করে তিনটি গল্প এখানে উপস্থাপন করলাম । সেসব কতটা রসবোধক আর কতটা ভাবোদ্দীপক তা আমি নিশ্চিত করে বলছি না । তা না হয় আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম, আশা করি ভালো লাগবে সবার !!
ঘটনা ১:
আরবের এক মনোহরি দোকানীর কাছে ছিল এক তোতা পাখি । যেন তেন তোতা পাথি নয় , কথা বলা তোতা পাখি । তবে নির্দিষ্ট কিছু বাক্য নয় একেবারে কথা খৈ ফুটতে দেখা যেত এই তোতার মুখে । তোতাটা দেখতেও সুন্দর ছিল । চটকদার কথা বলবার জন্য সকলের কাছে সে প্রিয় ছিল । বলতে গেলে দোকানীর দোকানে জন সমাগম লেগেই থাকতো এই তোতার জন্য ।
তো একদিন দোকানী তোতাকে দোকানে রেখে বাহিরে গেলেন । তোতাকেই দিয়ে গেলেন দোকান দেখভাল করবার দায়িত্ব । তোতাও নিবিড় মনে দোকানের ওপর চোখ রেখে চলেছে । আচমকা কোত্থেকে এক বিড়াল লাফ দিয়ে এসে ঢুকলো দোকানের ভেতরে । যতই চটকদার কথা বলুক না কেন সে তো আর বাজ নয় যে একদম দ্বন্দ্বমনোভাবাপন্ন হবে সে । তার প্রকৃতিস্বরূপ সে দিল ডানা ঝাঁপটে লাফ । ফলত, তার ডানার ধাক্কায় ভেঙে গেল দামী বাদামের তেলের বোতলটা ।
তেলে চটচটে হয়ে গেল আশেপাশের সব পণ্য । তোতাও ভয় পেয়ে এক কোণে জুবুথুবু হয়ে বসে রইল ।
একটু পরে এল দোকানী, এসে দেখে দোকানের অবস্থা তেলে তেলসিক্ত হয়ে গেছে । দোকানের কোণে তোতাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে দোকানী ভেবে নিল এই তোতাই ইচ্ছে করে এমনটা করেছে । তাই রাগে অন্ধ হয়ে একটা চ্যালাকাঠ দিয়ে দিল তোতার মাথাতে বেমাক্কা এক বাড়ি । আঘাতটা এতটাই জোড়াল ছিল যে আঘাতের চোটে তোতার মাথার সমস্ত পর ঝড়ে গেল ।
এরপর থেকে আগের সেই কথার খৈ ফুটে না তোতার মুখে । চটকদার কথা বলে আর মানুষকে আমোদ দিতো না সে । একদম চুপচাপ হয়ে গেল সে । খাবার দাবারও খেত না নিয়মিত । আবার তোতার এমন নিস্পৃহ আচরণ দেখে মানুষের আগমনও কমে গেল দোকানে । দোকানীর তো দুঃখে প্রাণ যায় যায় অবস্থা । নিজের দোষে নিজেই নির্বাক করে দিয়েছে প্রিয় পাখিটিকে । এখন কী উপায় ? কীভাবে আবার আগের মত প্রাণচঞ্চল করে তোলা যায় এই পাখিকে ।
একদিন দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন একজন সুফী যার মাথা পুরো কামানো ছিল । পাখিটি সেই ন্যাড়া সুফীকে দেখে এতদিন পর মুখ খুলল । গলায় দুঃখের সুর নিয়ে বলল, “ আহারে ভাই , তোমার আবার কোন অনাকাঙ্খিত অর্কমের জন্য এমন ন্যাড়া হতে হলো ? তোমাকেও কী দামী তেলের জন্য পিটিয়ে ন্যাড়া করে দিয়েছে ভাই আমার !”
এখানেই গল্পটা শেষ হয়ে যায় আর রুমী এই গল্পের শেষে বলেছেন আমরা নিজের সাথে যা ঘটেছে তাই দিয়ে অন্যকে বিচার করতে যাই । কী পাঠক তাই কী ??
ঘটনা ২:
এবারের ঘটনাটা কিঞ্চিৎ ১৮+ । তাই সাবধানে পড়বেন !
জনৈকা স্ত্রী তার স্বামীকে স্বামীর অধিনস্ত দামীর সাথে প্রেম করতে কোনভাবেই সুযোগ দেয় না । সবসময় চোখে চোখে রাখেন এমনকি দুজনকে কখনওই একা ছেড়ে দেন না দুদণ্ড সময়ের জন্য । নিজের সাথে সাথেই রাখেন তিনি দাসীকে । তো এভাবে কয়েক বছর কেটে যায় । একদিন তিনি শহরের হাম্মামখানায় গোসলের সময় খেয়াল করলেন একটা পাত্র আনতে তিনি ভুলে গেছেন । তাই দাসীকে বললেন, “ যাও তো নিয়ে এসো তো পাত্র খানা ।”
দাসী তো এই কথা শুনে দিল ভোঁ দৌড় । যাক এতদিনে অভিসারে যাবার একটা সুযোগ পেল সে । তাই প্রায় যেন উড়ে এসে পৌঁছালো ঘরে , আর পৌঁছেই শুরু হলো প্রেম-মিলন । দুজনে এতটাই মগ্ন হলো যে দরজায় ছিটকিনি দিতে গেল ভুলে ।
ওদিকে স্ত্রীর হঠাৎ মনে পড়লো সর্বনেশে কাণ্ড নিজ হাতেই তিনি ঘটতে দিলেন । নিজে যেঁচেই কাঠে আগুন ধরিয়ে দিলেন । তাই ভেজা চুল না মুছেই ছুট লাগালেন বাড়ির দিকে । পড়ি কী মরি করে বাড়ি এসে লাথি মেরে খুললেন দরজা । আকস্মিক পায়ের দ্রুত আওয়াজ পেয়ে দুজনে আগেই প্রেম আলিঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল । স্ত্রী এসে দেখল দাসীটি পান পাত্র থেকে পানি ঢালছে । আর তার স্বামী জায়নামাজে গেলেন দাঁড়িয়ে ।
স্ত্রী খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলেন দুজনকে । দাসীর উরু বেয়ে যোনীরস পড়তে দেখলেন তিনি । পোশাক আলুথালু হয়ে আছে, চুলের বিন্যাস দেখে বোঝাই যাচ্ছে এই চুলে পুরুষের হাত পড়েছে । ওদিকে স্বামীর জোব্বার অবস্থা এমন যে তার জননাঙ্গের কিঞ্চিৎ দৃশ্যমান । স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে দাসীর যোনীরসে সিক্ত হয়ে আছে তার জননাঙ্গ ।
এইসব দেখে স্ত্রী প্রথমেই নামাজরত স্বামী ঘাড় বরাবর এক শাহী চড় । দিয়ে বললেন , “ ব্যাটা মোনাফেক , এইভাবে কেউ নামাজ পড়ে ? এইরকম নাপাক শরীরে নিয়ে কেউ নামাজে দাঁড়ায় ? নাকি অভিসারে গিয়ে সেটাও ভুলে গেছিস ।”
বরাবরের মত গল্প এখানেই শেষ হয়ে যায় আর রুমি শেষে এসে লিখেন , “ আসলে সরাসরি বাসনা মেটাতে না পারলে মানুষ মোনাফেক হয়ে যায় । তখন সে গোপনে বাসনা মেটায় !”
ঘটনা ৩:
আরবের বাজারে ,
এক লোক , বেশভূষায় বোঝাই যায় যে সে একজন দরবেশ । ভরদুপুরে হাতে একটি প্রদীপ নিয়ে বাজারের ভিতর ইতস্তত কী যেন খুঁজছিলেন । একে তো মরুর গনগনে গরম আর অন্যদিকে ভর দুপুর । এইসময় এই ধরনের সংয়ের কীর্তি দেখতে কার ভালো লাগে ? তাই এক দোকানী তাকে ডেকে বলল , “ কী রে ভাই , এ কোন ধরনের মশকরা ? এই ভরদুপুরে অমন প্রদীপ হাতে কী খুঁজছো বল দেখি!”
দরবেশ বললেন , “ এমন কিছু যার ভেতরে ঐশ্বরিক “হু” নিশ্বাস আছে !”
দোকানী তার ব্যবসায়ি মনোভাব নিয়ে বললেন, “ অ, তো এখানে অনেক কিছু আছে তার মধ্য থেকে তোমার পছন্দের জিনিস বেছে নাও !”
দরবেশ হেসে বলল, “ না না এসব নয় । আমি এমন মানুষ খুঁজছি যার ভেতর রাগ আর কামনা আছে একই সাথে সে সত্য মনুষ্যত্বের ধ্বজাধারী !”
গল্পটা এখানেই শেষ । রুমি এখানে কী বুঝিয়েছে আমি আর বলছি না ।
এখানে কী বুঝিয়েছে তা আমি ব্লগারদের ওপর ছেড়ে দিলাম । আপনারাই ভেবে বলুন তো কী বলা হলো !!
রচনাকারী: নিবর্হণ নির্ঘোষ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪১