রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বর্তমানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের উচিত মিয়ানমারকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সার্বিক দিক থেকে বর্জন করা এবং চাপ সৃষ্টি করা।
হাতিসংঘের কাছে সমাধান চেয়ে কোন সুফল মিলবে না, কেননা হাতিসংঘ শুধু মার্কিন মুলুকের পা চেটে যেতেই পারবে।
এক্ষেত্রে মালদ্বীপের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
মালদ্বীপ ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
তুরস্ক সুদূর ইউরোপ থেকে এসে আজ রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে কথা বলছে, সেটা সত্যিই অভূতপূর্ব ব্যাপার। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তরের তৎপরতাও গ্রহনযোগ্য।
তবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান স্থায়ীভাবে প্রয়োজন।
বাংলাদেশ অতীতকাল থেকে এ পর্যন্ত যত রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে তারা কিন্তু কখনো ফিরে যায় নি।
এতে রোহিঙ্গারা কিছুটা স্বস্তি পেলেও বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ। একদিকে বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা, বেকারত্ব, দারিদ্রতা ও অন্যান্য সমস্যা, তার উপরে শরণার্থী চাপ খুবই মুশকিলে পড়েছি আমরা।
তাছাড়া ভারতীয়সহ আফ্রিকার অনেক জনগোষ্ঠী অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করতেছে, এটাও বিশাল সমস্যা।
রোহিঙ্গাদের অনেকেই বেকার সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশে কর্মসংস্থান না করতে পেরে স্মাগলিং, সিরিয়াল কিলিংসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত হচ্ছে এবং বাংলাদেশী জাতীয়তা পরিচয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতেছে।
এবছরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, কিন্তু এদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী বর্তমান এক লক্ষ ছাড়াও বাংলাদেশে দশ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম বিভিন্ন সময়ে এসে আশ্রয়ের নামে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেছে, ঠিক দুই লক্ষ রোহিঙ্গা লোক পাকিস্তানে আছে, পাঁচ লক্ষ সৌদি আরবে, লক্ষাধিক থাইল্যান্ডে,অর্ধ লক্ষ ভারকে, আট লক্ষ আরাকান রাজ্যে বসবাস করে। তাছাড়া মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশে রোহিঙ্গারা বসবাস করতেছে।
রোহিঙ্গাদের দমন পীড়ন প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চললেও ১৯৩৮ সালে জেনারেল অং সান সামরিক কায়দায় ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ক্ষমতা গ্রহনের পর এ দমন পীড়নের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়। প্রথম দিকে এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলেও পরবর্তীতে এটা আন্তর্জাতিক সমস্যায় রূপ নেয়।
মিয়ানমারের পূর্ব দিকে মঙ্গোলিয়া ও চীন এবং উত্তরে ভারত এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর থাকায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের সম্পূর্ণ চাপ বাংলাদেশের ঘাড়ের উপর পড়তেছে।
মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার ১০% মুসলিম, যার মধ্যে রোহিঙ্গা হচ্ছে ২%।
মুসলমানদের সাথে বার্মিজ বৌদ্ধদের জাতিগত সংঘাত থাকলেও, স্বাধীন রাজ্য আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী স্বাধিকার চাওয়ায় তাদের উপরে দমন পীড়নের মাত্রা অত্যধিক। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের কবলে থাকা মিয়ানমার অং সান সূচির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর বা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরতে পারেনি। এ দিক থেকে গণতান্ত্রিক জনগোষ্ঠীও এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারতেছে না। এখনো মিয়ানমারের ক্ষমতা অঘোষিত ভাবে সামরিক শাসনের কব্জায়।
রোহিঙ্গা সংকটে বিশ্বজনমত ও বিশ্ব সংস্থাগুলোর প্রতি বাংলাদেশের চাপ প্রয়োগ অনিবার্য। চাইলেই বাংলাদেশ ব্যক্তিগত বিরোধ না থাকায় অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে যুদ্ধে জড়াতে পারে না। তাছাড়া মিয়ানমারের সমর্থনে রয়েছে ভারত, চীন ও ইসরাইলের মত ক্ষমতাধরেরা।
তবে আমাদের আমজনতার করণীয় রোহিঙ্গাদের সাধ্যমত সাহায্য করা এবং মিয়ানমারের পর্যটন, পণ্যকে বর্জন করা।
ইয়াবার মত মাদককে যথাসম্ভব বর্জন করা এবং এর ব্যবহার প্রতিহত করা। তবে আমাদের অভ্যন্তরীণ বসবাসরত বৌদ্ধদের প্রতি ঘৃণা বা সহিংস মনোভাব পোষণ একদমই করা অনুচিত।