ভারত ধর্মনিরপেক্ষ নাকি চরম হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র?
আজকে এ প্রশ্ন যে কারো তোলা স্বাভাবিক। আমরা জানি ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ এবং ভারতীয় সংবিধানে যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে সেহেতু ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
কিন্তু তাদের এ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কতটুকু তারা ধরে রাখতে পেরেছে?
১৯৪৬ সাল ও ১৯৯২ সালের ভয়াবহ দাঙ্গা কিংবা ১৯৯২ সালের বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা নয়, শুধুমাত্র গত কয়েকটি দিন দিল্লিতে যা ঘটেছে তার দিকে তাকালেই হবে।
গোরক্ষক ও উগ্রপন্থীদের তাণ্ডবলীলা ও হত্যার মহোৎসবে শুধুমাত্র মুসলমানরাই চরম নির্যাতনের শিকার হন নি, নির্যাতনের শিকার হয়েছে সকল মানবতাবাদী মানুষগুলো।
উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী নয় এমন হিন্দু থেকে শুরু করে সকল ধর্মের মানুষ কোনো না কোনোভাবে এ ভয়াবহতার শিকার।
মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে এ ঘটনাগুলো।
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এসিড ছুঁড়ে মারা, গর্ভবতী নারীদের পর্যন্ত আঘাত করা, ইট কাঠ দিয়ে থেথলে মারা।
মসজিদে পর্যন্ত নিরাপদ নেই কেউ। কেউ যদি আক্রান্তদের সাহায্য করে তার উপর ও শুরু হয় চরম নির্যাতন।
বিজেপি ও শিবসেনার প্রথম বার ক্ষমতায় আসার যেটুকু সাম্প্রদায়িক সংহিসতা ঘটেছে তার শতগুণ বেড়ে গেছে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর।
গোরক্ষার নামে গুজব ছড়িয়ে অসংখ্য মুসলমান হত্যা করা হয়েছে।
এনআরসির বিরোধিতা করেছে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ এমনকি শিবসেনাও। সেখানে কেন সে বিরোধিতার শাস্তি মুসলমানদের পেতে হচ্ছে? জেএনইউতে বহিরাগত ও পুলিশ সন্ত্রাসীদের আক্রমণ ও জামেয়া মিলিয়ায় যে হামলা হয়েছে তা ভারতীয় ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়।
দিপীকা পাড়ুকোন এর মত শিল্পীরাও এ নিপীড়নের শিকার।
তবে সবচেয়ে দুঃখজনক নীরবতা ভেঙেছে গুটিকয়েক লোক।
সেই ঘুরেফিরে অমর্ত্য সে, দিপীকা, অরুন্ধতী রায় আর মমতা ব্যানার্জী।
পুরো ভারত এনআরসির বিরুদ্ধে যেভাবে সরব ছিল, আজ এ গণহত্যার কালে সবাই নির্বাক।
ভারতীয় মুসলমানদের উপর অত্যাচারের উল্লেখযোগ্য বিরোধিতা কেউ করেনি কোনো কালে, এতেও ভারতের সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ বরাবরই হয়েছে।
কাশ্মীরের নির্যাতন কতটা প্রকট হয়েছে তা এ থেকেই ধারণা করা যায়।
বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেসও ব্যর্থ।
এ হত্যাযজ্ঞ থামবে কি করে? নাকি সারা বিশ্ব নীরব সাক্ষী হবে এ হত্যাকাণ্ডের?
মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের ভারত এত সহিংস কেন?
আপাতত বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে চরম ঘৃণা আর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের চরম বিরোধিতা হোক আমাদের প্রতিবাদ।
আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন ধরে রাখতে পারি, সেটাই প্রত্যাশা।