আমাদের দেশ-সমাজটা ভীষণভাবে বিভক্ত। রাজনৈতিকভাবে বিশেষ করে। ওয়ান-এলেভেনের পর আশা করেছিলাম পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। বিশেষ করে যারা এই পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করেছেন এবং সরকারে নানাভাবে ভূমিকা রাখছেন তারা আরও উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করবেন, সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষকে তাদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করবেন-এমনটাই আশা করেছিলাম। সত্যি বলতে কি এ ব্যাপারে কিছুটা হতাশ হয়েছি।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেল এবং তার জের ধরে সারা দেশে সহিংসতা আর সন্ত্রাস দেখা গেল তা আমাদের সবাইকে আতঙ্কিত করেছে। এই অবস্থা আবার দেশে ফিরে আসবে তা আমরা কেউ কল্পনাও করিনি। কিন্তু বাস্তবতা হল সেটা ঘটেছে।
ওয়ান-এলেভেনের পর ধারণা করেছিলাম হাসিনা-খালেদার রেশারেশি-জেদাজেদির রাজনীতিরও অবসান হবে। এখন যারা সরকার চালাচ্ছেন তারা ওই পরিস্থিতির উর্ধে উঠবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে মনে হচ্ছে সরকারের মধ্যে এক ধরণের জেদের মনোভাব কাজ করছে। সরকার কি আন্দোলনকারী ছাত্র আর শিক্ষকদের প্রতিপক্ষ ভাবছে? ছাত্র-শিক্ষকদের একটা অংশের বাড়াবাড়ি ছিল। কিন্তু এরকম বাড়াবাড়ি কি অতীতে আরও অনেকে করেনি? আমি অবশ্য এটা বলে বাড়াবাড়ির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছি না বা যুক্তি দিচ্ছি না। আমি বিশেষ করে শিক্ষক সমিতির নেতাদের কারো কারো অত্যুৎসাহী আচরণ আমাদের অতীতের রাজনীতির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
একটা বিষয় আমাকে ইদানিং ভাবাচ্ছে- এই ছাত্র-শিক্ষকদের জেলে রেখে ঢাকা বা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কি শান্ত থাকবে? বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর? এটা ভয় বা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বলছি না। কিন্তু এই আশঙ্কা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।
সরকার কি পারে না ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে? জেলে আটক ছাত্র-শিক্ষকদের জামিন দিয়ে স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন ফিরিয়ে দিতে? এরকম একটা পদক্ষেপ উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করবে। কদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্যসহ সিনিয়র সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে দায়িত্বশীল সেনা কর্মকর্তাদের একটা বৈঠকের খবর পেয়েছিলাম। আশা করেছিলাম এরপর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। জেল থেকে ছাড়া পাবেন বন্দি ছাত্র-শিক্ষকরা।
সরকারের সবাইকে বিশেষ করে বেসামরিক উপদেষ্টা ও সামরিক নেতাদের কাছে একজন নাগরিক হিসাবে আমার চিন্তাভাবনাটুকু পৌঁছানোর চেষ্টা করলাম। আশা করি তারা উদারতা দেখাবেন।
সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা।