নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপির পক্ষে কাজ করবেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, এজন্য ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কয়েক দফা কথাবার্তা হয়েছে। ড. ইউনূস বিএনপি চেয়ারপারসনকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য শর্তের মধ্যে রয়েছে ১. আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তাকে রাষ্ট্রপতি করতে হবে। ২. জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। ৩. দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া সকল সিনিয়র নেতাকে দলে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিনিময়ে তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আরো সম্প্রসারণ কার্যকর ও উন্নয়নে কাজ করবেন, যা আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করবে।
সুত্রমতে, ড. ইউনূস প্রকাশ্যে বিএনপিতে প্রকাশ্যে যোগ না দিয়ে একটি সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপির পক্ষে বহির্বিশ্বে দলের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে পারেন। আর ড. ইউনূসের এসব শর্তে মৌন সম্মতিও দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সূত্র আরো জানায়, রাজনীতির প্রতি ড. ইউনূসের আগ্রহ দীর্ঘ দিনের। ওয়ান ইলেভেনের পর তিনি রাজনৈতিক দল গঠনের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগও নিয়েছিলেন। আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে পরবর্তী সময়ে নিজেই ঘোষণা দিয়ে রাজনীতির মাঠ ছাড়েন। অপর সুত্রমতে, একপর্যায়ে ড. ইউনুস আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগও দিতে পারেন।
সূত্র জানায়, নতুন শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপিকে কিভাবে আরো গতিশীল ও কার্যকর এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরো সুসংহত করা যায় তা নিয়ে ভাবছেন খালেদা জিয়া। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সুপার পাওয়ার কিংবা ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি হিসেবে পরিচিত আমেরিকা-ইউরোপ কিংবা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের আরো উন্নয়নে ড. ইউনুসের অবস্খানকে কাজে লাগাতে চান তিনি। ভারতের দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত বন্ধু। নিকট ভবিষ্যতে ভারতে পার্লামেন্টে ড. ইউনূসের বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। এর আগে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন ভারতের পার্লামেন্টে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে ইউনূস হবেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। তাকে দিয়ে বিএনপি সম্পর্কে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, বিএনপি নেতৃত্বে চলছে নানামূখি সংকট। এই মুহূর্তে তারেক রহমানকে নেতৃত্বে আনা যাচ্ছে না। এই অবস্খায় ড. ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে দলে টানতে পারলে কিংবা তিনি দলের হয়ে কাজ করলে বহির্বিশ্বে দলের ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। আর ইউনূসকে পক্ষে টানতে পারলে অধ্যাপক বি চৌধুরী, ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদসহ সংস্কারপন্থী সকল নেতাকেই দলে ফিরিয়ে আনা যাবে। সেক্ষেত্রে আগামী কাউন্সিলেই দলকে নুতন করে ঢেলে সাজাতে চান খালেদা জিয়া। সুত্রমতে, বিএনপির বুদ্ধিজীবীমহলও খালেদা জিয়ার এই উদ্যোগের সঙ্গে একমত।
সূত্রমতে, ড. ইউনূস ও বিএনপি চেয়ারপারসনের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত আছে। খালেদা জিয়া মনে করছেন, ইউনুসকে দলে টানতে পারলে ইউরোপ আমেরিকা ও ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আরো উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। অপর পক্ষের মতে, বিএনপির নেতৃত্বে কট্টোর ইসলামি মৌলবাদি দলগুলোকে বাদ দিয়ে বৃহত্তর জাতীয়তাবাদি ঐক্য গড়ে তুলতে হবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া সফল হলে একপর্যায়ে এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও এই জোটে আসতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এরশাদ মহাজোটে গিয়ে কোনোভাবেই লাভবান হননি। বরং অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তার দলকে গ্রাস করে ফেলেছে। তাদের মতে, শুধু বামপন্থী দলগুলো ব্যতিত সকল দলের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা অসম্ভব নয়।
সূত্র আরো জানায়, ড. ইউনূসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় খালেদা জিয়া। এ কারণে এই মুহূর্তে চারদলীয় জোটকে সক্রিয় করার কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তিনি। তবে ড. ইউনুসের শর্তে নমনীয় থাকলেও চারদলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের পুরোপুরি বিচ্ছেদ ঘটাতে চান না দলের নীতি নির্ধারকরা। তারা মনে করেন জোটবদ্ধ না হলেও ইসলামিক আদর্শের দলগুলো সবসময় বিএনপির পাশাপাশি থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:২৯