somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশকে দিয়ে দিলে কী অবৈধ চোরাই বাইকগুলো বৈধ হয়ে যাবে?

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দেশে বর্তমানে লাইসেন্সবিহীন, চোরাই, অবৈধ মোটর সাইকেলের সংখ্যা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের চেয়ে চোরাই মোটর সাইকেলের সংখ্যাই ঢের বেশি হবে এবং প্রায় ঘরে ঘরে এটি পৌছেছে।

গত ৫ আগস্ট তারিখে জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘লাইসেন্সবিহীন, চোরাই বা অবৈধ মোটর চালিত যানবাহন আটকের পর দেশের বিভিন্ন থানায় পড়ে থাকা গাড়ি ও মোটরসাইকেল যাতে পুলিশ ব্যবহার করতে পারে সেজন্য আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আদালতের অনুমতি ছাড়া এসব গাড়ি ব্যবহার করা যায় না। তাই আইনের জটিলতা নিরসনের জন্য সংসদীয় কমিটি আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি।

আটককৃত মোটর সাইকেলগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশই চোরাই, কোন কগজপত্রাদি নাই। কিন্তু কথা হলো, মোটর সাইকেলগুলো দেশের মধ্যে আসলো কোথা থেকে? এগুলো এমন তো নয় যে রাতের অন্ধকারে কেউ এসে ফেলে রেথে গেছে বা সবাই স’মিলে কাঠ দিয়ে বানিয়ে ফেলেছে। অথবা যদ্দুর জানি জিনজিরাতেও আস্ত মোটর সাইকেল বানায় না।

তাহলে দেশের কয়েকলাখ কাগজপত্রহীন, ভুয়া, চোরাই মোটর বাইক কি করে এলো এটা নিয়ে কি সেদিনের মিটিংয়ে কোন আলোচনা হয়েছিল? দেশের চারদিকে ভারত-রাষ্ট্র তারকাটার বেড়া তুলে রেখেছে। তার এপাশে আছে আমাদের ‘সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী’ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’, যাদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করা। তো, সেই বাহিনী, তারপর পথে পথে থানা-পুলিশ থাকতে এই চোরাই বাইকগুলো কি করে মানুষেল দুয়ারে দুয়ারে এসে পৌছালো?

এই দায় থেকে কী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ মুক্ত থাকতে পারেন। এমন অনেক গল্প শুনেছি, ভারত থেকে মানুষ বেড়িয়ে আসার পথে বন্দরে তাদের পুটলিতে ৩টা তো ৪টা নতুন ভারতীয় শাড়ি থাকলে সেগুলো রেখে দেওয়া হয়, চোরচালানীর অযুহাতে। তাহলে এই বিশাল বিশাল বাইকগুলো ভোঁ করে বর্ডার পার হয়ে এক দেশে থেকে আরেক দেশের মধ্যে ঢুকে পড়লো? কেউ দেখলো না?

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ,দেশের আইন আছে, বিচার আছে, বিচারের জন্য বিধি আছে এবং পন্থা আছে। কোন একটি বিষয়ে বিচার কিংবা শাস্তি তা এককভাবে হতে পারে না। একজন নয়,দুজন নয় কয়েক লাখ মানুষ চেরাই- নম্বরছাড়া বাইক চালচ্ছে, রাষ্ট্রের কাজ সেগুলো আটক করা কিন্তু আটকের সাথে সাথে সেগুলোর ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ কতটুকু আছে তাও ভাবতে হবে। কেন না জিনিসটা চোরাই; চোরাই একটা জিনিস কোন বিচার ছাড়া আমরা পুলিশকে দিতে দেওয়ার কথা বলতে পারি না। তার আগে, চোরাই মালের সংশ্লিষ্টদের বের করে আনা এবং জড়িতদের বের করা সেটিও রাষ্ট্রের কাজ।

মোটর সাইকেলগুলো অবৈধভাবে দেশে এসছে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু, যে বা যারা সেই মোটর সাইকেলটি কিনেছেন তিনি এই দেশের নাগরিকে এবং নগদ অর্থে কিনেছেন েএবং বাইকটি যখন পুলিশ তার হাত থেকে আটক করছে তাহলে সে কখিত মালিক। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র কি করে একজন নাগরিকের সম্পদ আটক করে কোন বিচার ছাড়া সেটি সরকারের একটি বাহিনীকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব তুললে পারে?

আইনের দৃষ্টিতে যদি বলা হয়, যার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সে চোর। তাহলে অবশ্যই সে চোর কেন তাকে আটক করা হচ্ছে না? কেন তারও বিচার হচ্ছে না? আর যে অবৈধ মাল আটক করা হচ্ছে তা পরিমাণে দু/ একটি না কয়েক লাখ প্রায়। সেক্ষেত্রে জনগণের অর্থে সরকার যে আথা-সামরিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পালন করছে তাদেরকে গলিয়ে কি করে এসব মালামাল দেশে প্রবেশ করলো, কেন তাদেরকে সেজন্য জবাবদিতি করতে হবে না?

জনগণ অর্থ ব্যয়ে নিরাপদ সীমান্তের জন্য বাহিনী রেখেছে, তাদেরকে গলিয়ে কি করে লাখ লাখ অবৈধ বাইক দেশের মধ্যে প্রবেশ করলো? কেন সে জন্য সেই বাহিনী তার জন্য জবাবদিহি করবে না? গত সাত/ আট বছর ধরে অবৈধভাবে মোটর বাইক আসছে ভারত থেকে, কেন প্রথম থেকে সেগুলোকে রোধ করা হয়নি? যখন ১/২/১০/২০ টি সংখ্যায় ছিলো কেন তখন কথিত মালিকদের ধরে চোরাই মাল রাখার জন্য তাদের বিচার করা হয়নি? লাখ লাখ মোটর সাইকেল দেশে সয়লাব হবার পর কেন এ উদ্যোগ নেওয়া হলো?


অবৈধভাবে আসা মোটরসাইকেলগুলো আসে ভারত থেকে। সে দেশে কম দামে পাওয়া যায় বলে একটি চক্র সেগুলো সেখান থেকে কিনে বর্ডার পার করিয়ে এদেশে কিছু বাড়তি দামে বিক্রি করে দেয়। যদি দেশে ০২ লাখ অবৈধ মোটর সাইকেল থাকে এবং প্রতিটি মোটর সাইকেল সীমান্ত থেকে কিনতে যদি গড়ে ০১ লাখ টাকা করে দেয় তাহলে ২০০ কোটি টাকা চোরাই মাইক কিনেছে মানুষ। এবং অবৈধভাবে দেশ থেকে ২০০ কোটি টাকা ভারতে চলে গেছে, যা জনগণের টাকা- দেশের টাকা। তাহলে কেন গত সাত/ আট বছর ধরে আমরা সেটিকে পুষে রাখলাম? কেন সরকার সেটি নিয়ে মাথায় ঘামায়নি? নাকি কেউ বা কারা চেয়েছিলেন এমনটি হোক?

মোটর বাইক মানুষকে গতি দেয় এবং যে মানুষ মোটর বাইকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে সে নাকি পরবর্তীতে বাইক ছাড়া চলতে পারে না। সুতরাং, সমীকরণটা যদি এমন হয়, যে অবৈধ বাইকগুলো ধরা পড়েছে সেগুলো পুলিশকে দিয়ে দিলে উক্ত বাইক-চালকরা আগামিতে আবার বাইক কিনবেন। এবং তা বৈধ বা অবৈধ যেভাবে আসুকনা কেন- বাইক প্রস্তুতকারীদের পুন উৎপাদন ও বিপণণকে বাড়িয়ে দিবে। সুতরাং তাদের লাভ সের-এর ওপর সোয়া সের হচ্ছে ঠিকই।

কারণ, আটক বাইকগুলো কেন পুলিশকে দিতে হবে? প্রচলিত আইন অনুযায়ী যদিও পুলিশকে দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু জানা গেছে মোটরসাইকেল যাতে পুলিশ ব্যবহার করতে পারে সেজন্য আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কিন্তু, এগুলোতে অবৈধ এবং প্রত্যেকটি অবৈধ মালের সাথে একজন করে কথিত মালিক ছিলো। তাহলে কেন তাদের বিচার করা হবে না। এবং যেহেতু এ রকম কয়েক অবৈধ মাল এবং মালিক রয়েছে তাদের জন্য সরকার কোন বিশেষ ব্যবস্থা নিবে না।

মানুষ নিজেদের অর্থ ব্যয় করে এসব বাইক ক্রয় করেছে কিন্তু যেহেতু এগুলো চোরাই পথে এসেছে এবং রাষ্ট্রের কর-খাজনা জমা দেয়নি এবং কোন রেকর্ড নাই তাই এগুলো অবৈধ।
আমরা যদি কালো টাকা সাদা করতে ক্রিমিনালদের সুযোগ দেই তাহলে এই মোটর সাইকেলের মালিকরাও তা প্রাপ্ত। প্রয়োজনে সরকার থানাগুলোতে কর-খাজনা আদায়ের খাতা নিয়ে বসুক। বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে যে পরিমাণ ট্যাক্স-ভ্যাট আসে তা আদায় করে, নিবন্ধন করিয়ে তারপর বাইকগুলো সাধারণ মানুষকে ফেরত দেওয়া হোক।

পুলিশ প্রশাসনকে এই বাইকগুলো দেওয়া মানে এক ধরণের প্রণোদনা দেওয়া। কিন্তু সেটাও তো রাষ্ট্রের বাজেট বরাদ্দের টাকা নয়- পাবলিকের টাকায়, এবং অবশ্যই এটি কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে পুলিশকে বাইকগুলো দিলেও তো বাইকগুলো অবৈধই থাকছে, তাই না। তাহলে পুলিশ যারা বৈধতার জন্য কাজ করে তাদেরকে কিভাবে আমরা এই ‘পলিটিক্যাল তৌফা’ অবৈধ জিনিস গছিয়ে দিবো?

পুলিশকে বাইকগুলো দেওয়ার জন্য যদি কোন বৈধতার রাস্তা বের করা হয় তাহলে সে রাস্তা অনুসরণ করে বাইকগুলো আমপাবলিকই ফিরে পাবার দাবি রাখে। আর অবৈধ বাইক সাধারণ মানুষ যেমন চালাতে পারেন না তেমনি পুলিশও পারেন না, অন্যায়ের প্রতিরোধক পুলিশকে অবৈধ চোরাই বাইক তুলে দিয়ে তাদের গায়েও কি আমরা ‘অবৈধতা’র কালিমা লেপে দিব?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×