somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পে-স্কেলের বোঝা শিক্ষার্থীর ঘাড়ে!

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে অভিভাবকদের বিক্ষোভ _যাযাদিঅষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ হওয়ায় নন-এমপিওরাও তাদের বেতন সমপরিমাণ বাড়ানোর চাপ দিচ্ছেন। এ ইস্যুকে পুঁজি করে দেশের অধিকাংশ স্কুল নতুন বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের বেতন এক লাফে দ্বিগুণ করার পাঁয়তারা করছে। ভিকারুনি্নসা নূন ও উইলস লিটল ফ্লাওয়ারসহ রাজধানীর বেশকিছু নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ অপতৎরতায় ঘৃতাহুতি দিয়েছে। এরই মধ্যে তারা তিনগুণ বা তারও বেশি বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি আকাশচুম্বী ভর্তি ফি আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা রাস্তায় নামলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দাবি, অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে তারা সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা বা সতর্কীকরণ নোটিস দিলেও কোনো প্রতিষ্ঠানই তা আমলে নিচ্ছে না।
মাউশির উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) একেএম মোস্তফা কামাল জানান, অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে ৫ জানুয়ারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও বন্ধ করাও হতে পারে।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষা বিশারদরা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ দেশের ২১ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন এক লাফে দ্বিগুণ হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাগলা ঘোড়া বাজারে আগুন ছড়াচ্ছে। ঘটছে মূল্যস্ফীতি। যা মধ্যবিত্তজনগণসহ সর্বস্তরের সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর ওপর অষ্টম পে-স্কেলের বোঝা সরাসরি শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ঘটবে। ভর্তি ও টিউশন ফির অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের অক্ষমতায় প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে। যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা নিজেরাও এভাবে অস্বাভাবিক হারে বেতন বাড়ানোর বিপক্ষে। কিন্তু তাদের হাতে বিকল্প কোনো পথ নেই। ভিকারুনি্নসা নূন স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য পুলিশের এআইজি মো. মনিরুজ্জামান বুধবার সকালে যায়যায়দিনকে বলেন, এমপিওভুক্ত যে শিক্ষকের বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা, অষ্টম পে-স্কেলে তিনি পাবেন ২১ হাজার টাকা। আর নিয়োগ চুক্তি অনুযায়ী নন-এমপিও শিক্ষকদেরও সমপরিমাণ বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। যা শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়িয়ে সমন্বয় করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কেননা স্কুলের মূল আয়ের উৎস ভর্তি ও টিউশন ফি। তাই বাধ্য হয়েই কর্তৃপক্ষকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, স্কুলের ৬শ শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র অর্ধশত শিক্ষক এমপিওভুক্ত। তাই বাকিদের সমপরিমাণ বেতন দিতে হলে বিশাল অঙ্কের অর্থ জোগাড় করতে হবে।
যদিও আন্দোলনরত অভিভাবকরা মৌখিকভাবে হিসাব কষে দেখান টিউশন ফি দ্বিগুণ হারে বাড়ানো হলে নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন এমপিওভুক্তদের সমপরিমাণ করার পরও বড় ধরনের উদ্বৃত্ত থাকবে। এ সময় মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন।
এদিকে একই অজুহাতে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তি ও টিউশন ফি কয়েকগুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে ২ জানুয়ারি থেকে সড়ক অবরোধসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন অভিভাবকরা। ১৭ জানুয়ারি থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট পালনেরও হুমকি দিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিঝিল আইডিয়াল, উদয়ন, খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল, জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, দনিয়া একে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানীর সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই টিউশন ফি বেড়েছে। এ ছাড়া ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেয়ার বিধান থাকলেও বেশ কয়েকটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে।
খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা। ভিকারুনি্নসায় বাংলা মাধ্যমে প্রথম শ্রেণিতে আগের বছর বেতন ছিল আটশ টাকা, সেটা এ বছর ১৬শ টাকা করা হয়েছে। আর ইংরেজি মাধ্যমের নয়শ টাকার বেতন বাড়িয়ে ১ হাজার ৭শ টাকা করা হয়েছে। গত বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ৮ হাজার টাকা থাকলেও এ বছর ১৫ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাসিক বেতন আটশ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার দু্ইশ টাকা করা হয়েছে। বেশকিছু কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলের বেতন দেড় হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে।
মাসিক বেতনের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), পরীক্ষাগার (ল্যাব), গ্রন্থাগারসহ অন্যান্য খাতের ফিও বাড়ানো হয়েছে।
আর এ নৈরাজ্য শুধু রাজধানীতেই নয় চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহীসহ সারাদেশেই চলছে। এ নিয়ে অধিকাংশ বিভাগীয় শহরে অভিভাবকরা আন্দোলনে নেমেছেন।
অভিভাবক সুজাউর রহমান জানান, তার দুই কন্যা ভিকারুনি্নসা নূন স্কুলের দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে এবং এক সন্তান আইডিয়াল স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। এদের তিনজনের টিউশন ফি প্রায় আড়াই হাজার টাকা বেড়েছে। যা তার মতো সীমিত আয়ের বেসরকারি চাকরিজীবীর পক্ষে উপার্জন করা অসম্ভব। কিছু শিক্ষককে খুশি রাখতে গিয়ে তার বোঝা শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া শুধু অযৌক্তিকই নয়, অমানবিক বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সুজাউর।
একই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক রিপন তরফদার নিয়াম বলেন, ভিকারুনি্নসা নামিদামি স্কুল হলেও এখানে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পড়ছে। তাদের অনেক অভিভাবকের পক্ষেই হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া বেতনের অর্থ চোগাড় করা সত্যিকার অর্থেই কঠিন হবে। এ পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবককেই সন্তানের কোচিং কিংবা হাউস টিউটর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। অথচ এসব ছাড়া শুধু স্কুলের শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের ওপর ভরসা করে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভালো রেজাল্ট করা একেবারেই অসম্ভব।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, দ্বিগুণ বৃদ্ধির নামে নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়ন করে হঠাৎ করেই দীর্ঘদিন সুপ্রতিষ্ঠিত একটা ঐতিহ্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। যার ফলে একটি গোষ্ঠী খুশি হলেও বাকি সবাইকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যার দায়ভার এমপি ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম বিষয় হলো_ বেতন বৃদ্ধি করলে সবার করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের দেবে, নন-এমপিভুক্তদের দেবে না_ তা হয় না। দ্বিতীয়ত_ সরকারি সুবিধাপ্রাপ্তির কেউ বঞ্চিত হলে নিজেদের পূর্ণ স্বার্থ পেতে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত ফি নেয়াটা তাদের কাছে অস্বাভাবিক নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে দুষ্টচক্রের সুবিধা আদায়ের ফলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় গোলযোগ দেখা দিতে পারে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেতন ও ভর্তি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে অভিভাবকদের আন্দোলন ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হচ্ছে। ভিকারুনি্নসা ও উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের সঙ্গে আরো একডজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই রাজপথে নামছেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×