somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য গান-সিরিজ (পর্ব ১)

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“বাবু, বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও?”
“বিখ্যাত হতে চাই; বড় হয়ে আমি বিখ্যাত হতে চাই।“

বিখ্যাত হতে চাওয়া দোষের কিছু না। কিন্তু কেন জানি ফেমাস বা বিখ্যাত হতে চাওয়াকে এদেশে খুব পাপের নজরে দেখা হয়। এই পাপ-জ্ঞান করার প্রধান কারণ দু'টি হতে পারে। এক, আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বিখ্যাত হওয়া অনেক কঠিন কাজেই যা সম্ভব না তা হতে চাওয়া হাস্যকর বা পাগলামি (যদিও আমার ধারণা সব সমাজ ব্যবস্থাতেই কঠিন,আসলে বিষয়টি নির্ভর করছে আপনি কোন লেভেলের খ্যাতি চান)। দুই, ‘বিখ্যাত’ কোনো পেশা নয়, ইহা যেকোনো পেশার শেষ সীমানা, কাজেই ‘সীমানা’ কে যে লক্ষ্য বলে হয় সে আতেল না হয় পাগল।

পৃথিবীতে যারা বিখ্যাত হয়েছেন তারা খ্যাতি পেয়েছেন দুই ভাবে। এক, পেশা বা কোনো কাজ করে বিখ্যাত হয়েছেন, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লিখে। দুই, বিখ্যাত হয়ে তারপরে কাজ করেছেন, যেমন ভারতের ইন্দিরা গান্ধী (পৈতৃক সূত্রে)।

বিখ্যাত মানুষদের জন্ম-মৃত্যু, জীবন-যাপন, খাওয়া-খাদ্য, পছন্দ-অপছন্দ সব যুগেই খুব যত্ন সহকারে মানুষ লিখে রাখত বা মুখে মুখে জীয়ে রাখত। তাদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে তৈরি হতো কাব্যমালা।

যাইহোক, আমার আজকের লিখার বিষয় আমার ছেলেবেলার পছন্দের দশটি গান নিয়ে। গানগুলো নিয়ে কিছু লিখার আগে আমার মনে হচ্ছে একটু প্রিলিউড বা প্রস্তাবনা টাইপ কিছু লিখা উচিত।

আমার জন্ম ৯০ দশকের শেষভাগে। ৯০’র দশক। কী সময়টা-ই না ছিল। টেকনিকালি আমি পুরাদস্তুর ৯০’র দশকের না হলেও মানসিকভাবে কেন জানি মনে হয় আমি ৯০’র দশকেরই মানুষ। আমার ছেলেবেলার বেশিভাগ সময় কেটেছে আমার নানু বাসায়। তখনকার সময়ে বাবা-মা’রা বাচ্চাদের পড়াশুনার ব্যাপারে এখনকার মত এতোটা সিরিয়াস ছিলেন না। আমার মনে আছে আমি ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত খুব কম দিনই স্কুলে গিয়েছি। এমনকি থ্রি তে নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরেও স্কুলে না গেলে যে বাসায় তুলকালাম কাণ্ড বাধত এমন না।

সেই যুগে মফস্বল শহর গুলোতে ক্যাবল চ্যানেল আসি আসি করছে। ডিশের লাইন ভাড়া প্রতিমাসে ৩০০ টাকা। খুব বেশি চ্যানেলও যে ছিলো এমনও না। নানা বাড়িতে আমার প্রধান কাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল টিভি দেখা। পছন্দের চ্যানেল কার্টুন নেটওয়ার্ক, এম টিভি আর চ্যানেল ভি। তখনকার যুগে এমটিভিতে সারাদিনই প্রায় ওয়ার্ল্ড মিউজিক শোনাত। যাইহোক, কাউন্ট ডাউন শুরু করা যাক। আজকে লিখছি আমার পছন্দের লিস্টের ১০ নাম্বারের গানটি নিয়ে।

#10_Tarzan_Boy_by_Baltimora

সম্ভবত গানটি আমি প্রথম শুনেছি যখন আমার বয়স ৭ কি ৮। গানটির অভাবনীয় বেস আর বিট মন্ত্রমুগ্ধ করে দিতো যতবার শুনতাম ততবারই। ইংরেজি খুব একটা বুঝতাম না তবে টারজান ও ও ও বলে যখন টান টা দিতো নিজেকে আর আটকায় রাখতে পারতাম না। আমিও গলা ছেড়ে শুরু করে দিতাম ও ও ও।

গানটি একটি সিঙ্গেল হিট। গানটির ক্রিয়েটর বালতিমোরা নামের একটি ইতালিয়ান বেসড মিউজিক প্রজেক্ট গ্রুপ। গানটি রিলিজ পায় ১৯৮৫ সালে লিভিং ইন দ্য ব্যাকগ্রাউন্ড এ্যালবামের ডেব্যু সং হিসাবে এবং খুব অল্প সময়েই প্রথমে ইউরোপে এবং পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের টপ চার্টে স্থান করে নেয়।

গানটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় মুক্ত-স্বাধীন জীবন-যাপন এবং যা ইচ্ছা তা করা। শহুরে ভিড়-ভাটটা, ব্যস্ততা ছেড়ে কোনো এক রোদ ঝলমল বিকেলে বনে জঙ্গলে পাড়ি দেয়া।

গানটি ১৯৯৩ সালে লিস্টারিন মাউথ ওয়াশ !!? এর ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনেও ব্যবহার করা হয়েছে ( !!? লিস্টারিন আসলে মাউথ ওয়াশ হিসেবে আবিষ্কৃত হয়নি, লিস্টারিন মূলত আবিষ্কৃত হয়েছিল শক্তিশালী সার্জিকাল এন্টিসেপ্টিক হিসেবে, যা ফ্লোর ক্লিনার থেকে শুরু করে গনোরিয়া অপারেশন পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে) এছাড়াও নিনজা টার্টেলস এর মুভি সিরিজেও এই জনপ্রিয় গানটি ব্যবহার করা হয়েছে।

বালতিমোরা মিউজিক গ্রুপের প্রডিউসার ছিলেন মওরেযিও বাসসি কিন্তু গানটির মিউজিক ভিডিওতে যাকে দেখা যায় তাঁর নাম জিমি ম্যাকশেন। জিমি ম্যাকশেন অফিসিয়াল মিউজিক ভিডিওটিতে শুধু লিপসিং করেছেন। মওরেযিও বাসসি এমনটি কেনো করিয়েছিলেন তা জানা যায়নি।

জিমি ম্যাকশেন সমকামী ছিলেন। তিনি অল্প বয়সেই তার জন্মস্থান আয়ারল্যান্ড থেকে লন্ডনে পাড়ি জমান কারণ তার পরিবার তার ‘সমকামী যৌন আচরণ’ গ্রহণ করতে পারেনি। লন্ডনে গিয়ে তিনি অভিনয়, নৃত্য, গান-বাজনা ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেন এবং সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয় বালতিমোরা মিউজিক গ্রুপের। কথিত আছে, টারজান বয় গানটি মূলত জিমি ম্যাকশেনের এই সমকামী বিরুদ্ধ সমাজের প্রতীকী হিসাবে লিখা। জিমি ম্যাকশেন ১৯৯৫ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন।


পুনশ্চঃ ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডে যে ক’টি ভয়াবহ সমস্যা আছে সমকামিতা তার একটি। এইডস নামক ভয়াবহ ব্যাধি যার ফসল। খেয়াল করে দেখেছি এইডস নামক এই ভয়াবহ ব্যাধির প্রধান শিকার- শিল্পী, গায়ক, কবি-সাহিত্যিকরা। সমকামিতার বিষয়টি নাকি তাদের মধ্যেই বেশি। ক্রিয়েটিভিটির সঙ্গে যৌন বিকারের কোনো যোগ কি সত্যি আছে?

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×