somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতৃপ্ত একটি আত্না

০৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি সবসময় ঢাকা থেকে রাত্রে বাড়িতে যায়। কারন ছুটি পাই কম আবার চিন্তা করি রাত্রে চলে গেলে পরদিন সকালটা বাসা থেকেই শুরু করা যাবে। ছাত্র অবস্থায় ক্লাস শেষ করেই রওনা হয়ে যেতাম। এখনও অফিস শেষ করেই সোজা মহাখালী – তারপর ময়মনসিংহ – হালুয়াঘাট। মোটামুটি ছয়ঘন্টা।

একদিন ক্লাস শেষ করে বাড়ী রওনা হলাম। আমাদের বাজারে যেতে যেতে রাত ১২ টা বেজে গেল। বাজারে গিয়ে দেখি সুবাস।আমার বাল্য বন্ধু। আমাকে দেখেই বলল আমরা তো প্রতিদিন রাত্রে কদমতলী আড্ডা মারি, তুই খেয়ে চলে আসিস

বাজারেই আমার বাসা। বাসায় গিয়ে আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ করলাম।১টার দিকে বাজারে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ভাবলাম সবাই হয়তো চলে গেছে। আমি দুইটা সিগারেট কিনে কদমতলী রওনা হলাম। বাজার থেকে কদমতলী সিকি কি.মি.।

তখন আষাঢ় মাস। আকাশে চাদও আছে। কিন্তু আষাঢ়ের মেঘ এবং চাদের আলো দু্ইটা মিলে একটা অদ্ভুদ আলো-আধারের খেলা চলছে- এই কালো অন্ধকার, আবার যেন ভরা পূর্ণিমা। একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তা হাটছি। কিছুটা ভয়ও লাগছে। এমন রাতে একা একা হাটলে ভূত-প্রেতের কথা একটু বেশীই মনে পড়ে।

বামের ঘন জঙ্গল থেকে ঝি ঝি পোকার শব্দে একটা অদ্ভুদ সুর যেন সৃষ্টি হচ্ছে। যে সুরের তালে তালে নিজেকে নিয়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গল থেকে দু-একটি কাক বড্ড বেসুরো কন্ঠে কা কা করছে। মনে হচ্ছে কোন মাংসখেকো রাক্ষস যেন কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আমি কদমতলীর কাছাকাছি যে জায়গায় শশানঘাটটা ঠিক সে জায়গায় চলে আসলাম। এইখান থেকে আমাদের যে জায়গায় বসে আড্ডা দেওয়ার কথা সেই জায়গা টা স্পষ্ট দেখা যায়। আমি কাউকেই দেখতে পেলাম না। মনের ভিতর একটা ভয়ও জেগে উঠল। এই কারনে গভীর জঙ্গলের পাশ দেয়ে পিছনেও যেতে ইচ্ছে করছেনা। কারন এই জায়গার বামদিকে কংশ নদী, আর ডানদিকে খোলা মাঠ – যার ধরুন গা শিরশির করা অন্ধকার ভাবটা এইখানে নেই।

আমি সোজা কদমতলী গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নদীর ঢেউ দেখছি। ভয়টা কাটানোর জন্য একটু জোড় করেই যেন অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। মাঝে মাঝে কয়েকটা কলাগাছ নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে কোন লাশ ভেসে যাচ্ছে। মৃত প্রাণীর গন্ধে বমি হওয়ার অবস্থা।

হঠাৎ……হঠাৎ………..একটি কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। আমার কাছ থেকে হাত বিশেক দূরে ঠিক আমার বাম দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ঘোমটা দেওয়া মহিলা বসে আছে। আর ঐ খান থেকেই কান্নার আওয়াজ আসছে। ভয়ে আমার আত্না চলে যাওয়ার যোগাড়। শরীর দিয়ে ঘাম পানির মত বের হচ্ছে। যেন আমি কোন ঝড়নার নিচে দাড়িয়ে আছি। ডাকব ডাকব ভেবেও না ডেকে সোজা বাসার দিকে রওনা হলাম।

বাসায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে আম্মাকে সব ঘটনা খুলে বললে আম্মা বলল সুবাস তো ময়মনসিংহ গিয়েছিল তিনদিন আগে, সেতো আসবে আরও পরে। আমিতো অবাক তাহলে সুবাসের চেহারা নিয়ে আমাকে কে বলেছিল কদমতলী যাওয়ার জন্য।

শেষে আম্মা যা বলেছিল তা ছিল এইরকম-”৮৮ সালের বন্যার সময় নৌকায় করে বরযাত্রী বউ নিয়ে যাওয়ার সময় কদমতলী নৌকা ডুবে যায়। সবাই তীরে উঠলেও কনে আর উঠতে পারিনি। সেই থেকে এখনও মাঝে মাঝে কনেকে কদমতলী তে কাদতে দেখা যায়। আরও অনেকেই দেখেছে ।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×