টিউশনি করে বাসায় ফিরছি । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল । বাজারের একটি রেস্টুরেন্টের ছাদের নিচে থামলাম । শুরু হল মোষলধারে বৃষ্টি । পাশে চায়না BMW মডেলের মোবাইল নিয়ে গবেষণারত কয়েকজনের আলাপ আলোচনা শুনছি ।
হঠাত্ দেখি এক রিকশা এসে থামল আমার সামনে । আমার বয়েসি এক হুজুর নামলেন ।ভাড়া পরিশোধ করার জন্য ৫০ টাকা দিল । রিকশাওয়ালা ২৫ টাকা দিল । আরেকজন এরই মধ্যে এই টাকা হাতে নিয়ে হুজুরকে একটা ১০ টাকার নোট দিচ্ছে আর টাকা গুনছে । ভাবলাম বিষয় কি ? পরে দেখি ৫ টাকার নোটকেও ১০ টাকা বলে ৩০ টাকার হিসেব দিল । তখন পাশে দাঁড়ানো আরেকজন তামিল অভিনেতাদের মত মোছওয়ালা বলল না ঠিক আছে ২৫ টাকাই দিছে । তখন ঐ ছেলেটা নানা কায়দায় হুজুরের সাথে ফাজলামো করল ।
হুজুরের হাতে মোবাইল রেখেও দেখি সময় জিজ্ঞাসা করছেন । আমার বুঝতে বাকি রইল না যে হুজুর চোখে দেখতে পান না । আমার খুব মায়া হল তার জন্য । চিন্তা করলাম পৃথিবীতে এত বৈষম্য কেন ?
একসময় হুজুর ভিজে ভিজে অন্যপাশের দোকানে গেলেন । ঐ দোকানের খুঁটির সাথে ধাক্কা খেলেন । আমার মায়া আরো বেড়ে গেল । আমি হুজুরের দিকে তাকিয়ে আছি । আর আশেপাশের সবাই নিজেদের কাজে আর হুজুরকে নিয়ে মশকরা করছে ।
একসময় হুজুর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রওয়ানা দিতেই সামনে রাখা সাইকেলে ধাক্কা খেলেন । অন্যরা হেসে উঠল । একজন বলল যে মটর সাইকেল ফেলে দিয়েছেন । সাইকেলটা তুলে রেখে হাটতে লাগলেন ।
আমি আর থাকতে পারলাম না । ভাবলাম আমার এত মায়া কেন ? সবাই আনন্দ পায় আমি কষ্ট পাই কেন ?
মায়া কিছু কমাতে হবে । তাই নামলাম বৃষ্টির জল গায়ে নিতে । যেন বৃষ্টি আমার কিছু মায়া ধুয়ে নিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয় । বৃষ্টিতে হাটছি আর আল্লাহর কাছে বলছি যে -
হে আল্লাহ, তুমি আমার চোখগুলো ভাল রাখার জন্য শুকরিয়া । তা নাহলে কি হত ? কারণ এখানে মানুষের প্রতি মানুষের মায়া নাই ।