somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গান ও তিতলীর দিন গুলি

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিতলী শব্দটির অর্থ প্রজাপতি। ছোট্ট মেয়েটিকে রোজ বিকেলে মা যখন রং বেরং এর জামা পরিয়ে দিতেন। ফুলবাগানে প্রজাপতির পিছে ছুটে বেড়ানো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে প্রজাপতিগুলির সাথে নিজের মেয়েটির কোনো প্রভেদ খুজে পেতেন না। ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো সদা চন্চল প্রজাপতিগুলির মতই আরেকটি প্রজাপতিতে রুপান্তরীত হত তার সে ছোট্ট মেয়েটিও। তাই শেষমেষ তার নামই হয়ে গেল তিতলী।
রুপকথার রাজকন্যার চাইতেও মায়াবী কোনো এক জগতে কেটে গেলো তিতলীর পাঁচ পাঁচটি বছর।তিতলী জেনেছিলো পৃথিবীতে তার অপ্রাপ্য কিছুই নেই।হঠাৎ একদিন তার চিরচেনা সেই রুপকথার জগৎ টা পালটে গেলো ভোজবাজীর মত। তিতলী বুঝে গেলো একটি মাত্র বাবার অভাবে তার পুরো পৃথিবীটাই আমূল বদলে গেছে। ছোট্ট তিতলী অনেক ভেবেও একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলোনা তার আদরের বাবামনি কি করে তাকে ছেড়ে অনেক দূরে থাকতে পারেন?এ প্রশ্নের উত্তর কারু কাছেই কখনও জানতে চায়নি সে। শুধু বুকের মধ্যে পুষে রাখা অভিমান।

তিতলী এখন হাই স্কুলে। চন্চলতা কমেনি। কমেনি কোনো কিছুতে থমকে যাওয়া। শুধু মাঝে মাঝে নিস্তব্ধ নিঝুম কোনো দুপুরে, তিতলী খুব খুব মিস করে বাবাকে।
কাটে না সময় যখন আর কিছুতে
বন্ধুর টেলিফোনে মন বসেনা
জানলার গ্রীল টাতে ঠেকাই মাথা
মনে হয় বাবার মত কেউ বলেনা
আয় খুকু আয়!!
ওর সবচেয়ে একান্ত প্রিয় একটি গান চুপচাপ হেডফোনে শুনে যায়।অবিরল জল গড়ায় চোখে। তিতলী চুপিচুপি অস্ফুটে জানতে চায়, বাবা আমাকে কি তোমার একটুও মনে পড়ে না? বাতাসে মিলিয়ে যায় প্রশ্নটি। কখনও বাবার কানে পৌছায় না???

চুপিচুপি উঠে গিয়ে বাবার বন্ধ রুমের তালা খোলে।আলমারীতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বাবার ব্যারিস্টারী আইনের বইগুলি। একটু ছুঁয়ে দেখে।মনে হয় বাবার আঙুলগুলো ছুঁয়ে গিয়েছিলো একদিন এসব বই।অজান্তে ও যেন বাবার আঙুলগুলোই ছুয়ে যায়।
ঘরের এককোনে পড়ে থাকা বাবার ঢাউস পিয়ানোটি। বাবা যেন পিয়ানোটির সামনেই বসে আছেন।বাবা তাকেই ডাকছেন , সাথে গান গাইবার জন্য।
আয়রে আমার সাথে গান গেয়ে যা
নতুন নতুন সূর নে শিখে নে
কিছুই যখন ভালো লাগবেনা তোর
পিয়ানোয় বসে তুই বাজাবিরে।
আয় খুকু আয়!!

কাপড়ের ঢাকনানা সরিয়ে, একসাথে চারটা আঙুল চেপে ধরে। ঢং করে বিকট শব্দ কেপে উঠে চারিদিকে। নিঝুম দুপরে ঘুমিয়ে থাকা বাড়ীটির প্রতিটি আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে শব্দটি যেন।
দুপুরের কাঁচাঘুম ভেঙে উঠে এসেছেন মা।দরজায় দাড়িয়ে চিত্রার্পিতা মূর্তি।

সদ্য কলেজে ওঠা। প্রথম দাজিলিং ভ্রমন।সন্ধ্যায় হোটেলে প্রচন্ড হাড্ডী জমানো ঠান্ডায় গরম কফির মাগে ঠোট ছোয়াতেই, মনে পড়ে যায়, আজীবন তাড়িয়ে বেড়ানো গানের কলিগুলি,
সিনেমা যখন চোখে জ্বালা ধরায়
গরম কফির মজা জুড়িয়ে যায়
কবিতার বই গুলো ছুড়ে ফেলি
মনে হয় বাবা যদি বলতো আমায়
আয় খুকু আয়!!
তিতলীর হাতে ঢাকা থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়া কবিতার বই।চোখের কোনে অশ্রুবিন্দু।তিতলী বুঝতে পারেনা কি এমন ক্ষতি হত আর অন্য সবার মত স্বাভাবিক একটা জীবন হলে ওরও।

আয়রে আমার সাথে আয় এখনি
কোথাও ঘুরে আসি শহর ছেড়ে
ছেলেবেলার মত বায়না করে
কাজ থেকে নেনা তুই আমায় কেড়ে।
আয় খুকু আয়!!

বারবার মাথায় ঘুরতে থাকে লাইনকটি। তিতলী তো জানেই,হাজার বায়না ধরলেও কখনও তার এ বায়না মেটাতে কেউই ছুটে আসবেনা কোনোদিন।কত দিন মন খারাপ করা বিকেল গেছে ,গুমোট ধরা সন্ধ্যা, সবাই যার যার মত ব্যাস্ত থেকেছে। কারো সময় হয়নি তিতলী নামের একটা ডানা ভাঙা প্রজাপতির খবর রাখতে।প্রচন্ড অভিমান হয়।অভিমান গুলো চেপে রেখে রেখে ওর বুকে এক বুক কষ্ট জমতে জমতে পাহাড় হয়ে যায়।নিমর্ম প্রস্তর কাঠিন্যের এক পাহাড়।

দোকানে যখন আসি সাজবো বলে
খোঁপা টা বেধে নিয়ে ঠান্ডা হাওয়ায়
আরশীতে যখন এ চোখ পড়ে যায়
মনে হয় বাবা যেন বলছে আমায়
আয় খুকু আয়!!

কতশত দিন গেছে, কত কত ক্ষণ।কত উপলক্ষে সাজতে গিয়ে আয়নায় চোখ পড়ে এমনটা মনে হয়েছে ওর।কিন্তু বাবা কখনও বলেনি। কখনও বলেনি বাবা,কখনও জানতেও চায়নি এমন করে।

আয়রে আমার কাছে আয় মামোনি
সবার আগে আমি দেখি তোকে
দেখি কেমন খোঁপা বেঁধেছিস তুই
কেমন কাজল দিলি কালো চোখে।
!!


তিতলী এখন অনেক বড়।ঠিক গানটির মত। সবার মত করে ছেলেবেলার দিন গুলো ফেলে এসে অনেক বড় আজ সে।গানটির মতই ওর মনে প্রশ্ন জাগে মাঝে মাঝে। আচ্ছা, ছেলেবার পিছুডাকটি সকলেই কি ঠিক ওর মত করেই শুনতে পায়?ওর মত করেই কি কাঁদায় সকলকেই ফেলে আসা অতীত?এ প্রশ্নটির উত্তর ও চাঁপা পড়ে রয় বুকের গহীনে।

ছেলেবেলার দিন ফেলে এসে
সবাই আমার মত বড় হয়ে যায়
জানিনা কজনে আমার মত
মিষ্টি সে পিছুডাক শুনতে যে পায়
আয় খুকু আয়!!

বাবা কখনও ডাকেননা।কখনও বলেনও না এমন করে।
আয়রে আমার কাছে আয় মামোনি
এ হাত টা ভালো করে ধর এখনি
হারানো সেদিনে যায় চলে যায় ছোট্ট
বেলা তোর ফিরিয়ে আনি।


ছোট্ট বেলাটি কখনই আর ফিরে আসেনা।

গানটির লিন্ক
Click This Link

(মাঝে মাঝে যখন খুব মন খারাপ হয়। অকারণেই কান্না পায়, তখন কেন যেন শুধু বাবাকেই মনে পড়ে।)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫
৫০টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×