somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে কোন বনের হরিণ ছিলো আমার মনে-৫

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘলা দিনের আকুলতা বাঁজিয়ে যেত পায়ে,
তমাল ছায়ে ছায়ে ......
আমাদের বাড়িতে এক বুনো গাব গাছ ছিলো। খোকাভায়ের জানালা দিয়ে দেখা যেত সেই ঘন পত্রপল্লবিত গাছের উপরের অংশটুকু। ঐ গাছটি ছিলো বাড়ির পেছনের ফলবাগানের অকারণ এক সৌন্দর্য্য বা বাড়তি অনাদরে অবহেলায় বেড়ে ওঠা এক বৃক্ষ। যদিও ঐ বৃক্ষের পাতা কান্ড ডাল নিতে আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝেই আসতো বীরেন কবিরাজ। ঐ গাছের ডাল পালা পাতা কান্ড নাকি বড়ই উপকারী এবং ঐ গাছটিও নাকি বড়ই দূর্লভ যা ঐ কবিরাজ দাদুর কাজে লাগে। এই বৃদ্ধ মানুষটিও কিন্তু আমার কাছে এক ম্যাজিশিয়ানের চমক ছিলো। কারণ ছোটবেলায় দাঁতের ব্যথায় মরে যাচ্ছিলাম আমি একবার। কোনো ওষুধেই কাজ হচ্ছিলো না। দাদীমা তখন ডাকলেন এই বীরেন কবিরাজকে। আর সে এসেই আশ্চর্য্য এক যাদুমন্ত্রে তার বাক্স হতে এক ছোট্ট শিশি বের করে তুলা দিয়ে কালচে লাল লাল কি যেন লাগিয়ে দিলো আমার দাঁতের গোড়ায়। তারপর চোখ বুজে বসে রইলেন। এই চোখ বুজে বসে থাকার কারণ ছিলো আমাকে নাকি দাঁতে দাঁতে চেপে বসে থাকতে হবে এই ১০ মিনিট মানে উনি যতক্ষন চোখ না খোলেন। নইলে নাকি আমার দাঁতের পোকাগুলো আমার মাথায় উঠে মগজ খেয়ে ফেলবে। কি সর্বনাশ! সেই ভয়ে উনি যতক্ষন চোখ বুজে ছিলেন আমিও ততক্ষন স্পিকটি নট হয়ে বসে রইলাম। তারপর উনি চোখ মেলতেই আমি মুখ হা করে দেখি ব্যথা নেই। উনিও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে হে হে করে বললেন, দেখলে তো খুকি এটা আমার যাদুর বাক্সো। এর মধ্যে যাদু আছে।

সেই বুনো গাব বা তমাল গাছ বীরেন কবিরাজ দাদুর কাছে মহামূল্যবান ছিলো কিন্তু আমাদের বাড়িতে ছিলো অবহেলিত। কিছুটা অস্পৃশ্য বটে। কারণ ওর ফল নাকি বিষাক্ত তাই কারো সেই ফল খাওয়া তো দূরে কথা ছোট কারোই বাগানের নানা রকম ফল ফুল কুড়িয়ে রান্নাবাটি বা চুড়ুইভাতি এসব খেলাতেও সেই গাছের ফল বা পাতা ধরা ছিলো আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। সেই অবহেলিত ও নিষিদ্ধ তমাল গাছের আলোছায়া এসে পড়তো এই বাড়িতে আরেক অবহেলিত ও অন্যান্য সকল ছেলেমেয়েদের কাছে আসা অকথিত নিষিদ্ধ ও অবহেলিত আমার খোকাভায়ের ঘরের মাঝে। আজ এতগুলো দিন পরে যখন সেই ঘরটার কথা ভাবি তখন আমার মনে পড়ে আমার নিসঙ্গ অবহেলিত খোকাভায়ের সাথে সাথে ঐ অবহেলিত বৃক্ষটির কথাও। দুই এর মাঝে আমি আজ এক যোগসূত্র খুঁজে পাই যেন।


এছাড়াও আরও একটি ঘটনায় এই তমালগাছটি আমার মনে গেঁথে আছে। সেদিন ছিলো বরিষন মুখরিত শ্রাবনের দিন। ঐ বাড়ির মেয়েদের জন্য সকল কিছুতেই না না করা একটি স্বভাব ছিলো। আমাদের অভিভাবকদের জ্বালায় আমাদের কিশোরী মনের অনেক অনেক সাধ আহলাদই অংকুরেই যেমন বিনষ্ট হত ঠিক তেমনই অতি আঁটুনিতে যা হয় তাই হত। শিশু কিশোর মনের চঞ্চলতা বা ছোট ছোট স্বাভাবিক আবেগ আনন্দগুলিতে বাঁধা না দিয়ে বড় হতে দেওয়াটা কতটা জরুরী সে আমাদের অভিভাবকেরা জানতেন না। তারা শুধুই জানতেন শাসন আর বারণ। তার মাঝে আমি আবার মেয়ে হিসাবে মহা শয়তানের লাঠি এ কথাটা আমার মা উঠতে বসতে মনে করিয়ে দিতেন। সে যাই হোক। বৃষ্টি নামলে সেই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আজকাল নৃত্য করে কত ছেলেমেয়েরাই টিকটক করে আর সেসব দিনে বৃষ্টি নামলে আমার মনের ময়ুরও সেই বৃষ্টিতে নৃত্য করতে ছুটে যেত ঐ বাদলধারার সাথে। কিন্তু হায় কপাল। একটু কি শান্তিতে নৃত্যের স্বাধীনতা আছে??? নেই নেই নেই। তবুও ঐ যে বলেছি মা থাকতেন ডালে ডালে আর আমি পাতায় পাতায়। তাই ছাঁদ বা সবার সামনে না হলেও চুপি চুপি লুকিয়ে বাড়ির পেছনের ঐ ফলবাগানে আমি ঠিকই চলে যেতাম বৃষ্টি নামলেই চঞ্চলা হরিনী বা ব্যকুল ময়ুরীর মত।

লিখতে গিয়ে আমার কত মানুষকেই না মনে পড়ে। প্রথমে মনে পড়লো মনিরা আপু এই লেখার কোথায় এসে হাসছেন আর এখন মনে পড়ছে সাড়ে চুয়াত্তরভাইয়াকে। নিশ্চয় ভাইয়া এখন আমাকে মনে মনে বাংলা সিনেমার নায়িকা ময়ুরীর সাথে মিলাবেন।

যাইহোক সেই বরিষন মুখরিত এক মেঘলা দুপুরে আমি সবার অলখে চলে গেলাম বাড়ির পিছনের ঐ ফল বাগানটিতে। এমনটা অবশ্য আমার ছেলেবেলা থেকে অনেকবারই করেছি আমি। মানে সোজা কথা ঐ বাড়ির শাসন বারণ আর সকলে যে যার মত মানলেও এবং আমাকে মেনে নিতে হলেও সামনে সামনে আসলে আমি মনে মনে কিছুতেই মানতাম না বরং যেটা বারণ করা হত সেটাই আমাকে করতেই হবে এই চেষ্টায় নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতাম। বর্ষায় ঐ বাগানে প্রায়ই সাপ দেখা যেত তবুও আমি ছিলাম আমার ছেলেবেলায় এক অসম সাহসী কন্যা। যদিও টিকটিকির ভয়ে মূর্ছা যাই আমি কিন্তু বেঁদেনীদের ঐ আশ্চর্য্য মন্ত্র শিখতে আমার বড় সাধ ছিলো যে মন্ত্রে সে খেলে তার সাপের খেলা। যে মন্ত্রে সে ঐ ফনা উদ্যত সাপকেও অনায়াসে বশীভূত করেছে। সেই কারণেই বুঝি কোনো সাপকেই আমার ঠিক ভয়ংকর মনে হত না। মনে হত আমিও পারি বা আমিও পারবো। প্রায়ই মনে মনে আমি ভাবতাম আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বেঁদেনি জোনাকী রোজ সন্ধ্যায় সাপের ঝাঁপি মাথায় করে নিয়ে যায় তার কাছে শুনে নেবো ঐ মন্ত্রের কথা। এই বেঁদেনী আমাদের ওখানের সকল মেলাতেই মেলে বসতো তার সাপের ঝাঁপি। মাথায় নক্সা আঁকা চন্দ্রবোড়া সাপ, লিকলিকে সবুজ বাঁশ পাতালি সাপ বা লকলকে জিভের কালকেউটে এ সকল সাপের সৌন্দর্য্যেই বিমোহিত হতাম আমি।

তো সাপখোপের ভয় আমার ছিলো না যত তার থেকেও বেশি ভয় বা বিরক্তি ছিলো আমাদের বাড়ির ঐ শাসন বারণে। সেদিনও ঐ ঝুম বৃষ্টিতে যখন আমি চুপি চুপি ঐ বাগানে ঐ বিষাক্ত বুনো গাবগাছের তলাতেই বুনো ফল কুড়াচ্ছিলাম তখন দেখি জানালায় দাঁড়িয়ে খোকাভাই। আমি হাত ইশারায় ডাকলাম তাকে। বললাম, নেমে আসো লুকিয়ে। কিন্তু খোকাভাই কিছুতেই আসলোই না। এমন রাগ লাগলো আমার আমি একটা ইয়া বড় ইটের টুকরো ছুড়ে মারলাম ওর জানালায়। ঐ ঝুম বৃষ্টির নিস্তব্ধ দুপুরে ঐ বিকট আওয়াজে সকলের বুঝি সুখনিদ্রা ছুটে গেলো। সবাই হই চই করে বেরিয়ে এলো কিন্তু আমি তো তার আগেই পগার পার। সকলে মিলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো অপরাধী না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলো। এত বড় সাহস কার যে দিন দুপুরে এ বাড়ির পাঁচিল যা মনে আসলে আমার চীনের প্রাচীরই মনে হয় সেই পাঁচিল গলে কোন দুঃসাহসী জানালায় ঢিল মারে! হা হা এসব কথা ভাবলে আমার এখন বড় হাসি পায়। আজও মাঝে মাঝেই বৃষ্টিস্নাত দুপুরে বা কোনো অবসরে মনে পড়ে যায় আমার সেই মেঘলা দিনের আকুলতা বা এক বুক শূন্যতার হাহাকার।

আমি যখন আজ আমার সেই কৈশোর ও তারপরের দিনগুলোতে তাকাই তখন মনে হয় সেসব যেন এক চলচ্চিত্র। কবে কখনও দেখা হয়েছিলো সেই সব দৃশ্য এবং মনে গেঁথে গেলো সেই বালিকাবেলা ও সেই চঞ্চল কৈশোরের চলমান দৃশ্যগুলি। খোকাভাই আমার অনেক অনেক কৌতুহলের মধ্যে হয়ে উঠেছিলো কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দু। খোকাভাইকে আবিষ্কার করে চলতাম আমি। একের পর এক বিস্ময় ছিলো সে আমার। খোকাভাই ও বাড়ির আর সবার থেকেই আলাদা ছিলো আর তাই বুঝি সে আমার মনের বিশ্ব জয় করে ফেলেছিলো কোনো এক অবাক করা ক্ষমতায়।

এর মাঝে হাজির হলো আরেক বিস্ময়! হঠাৎ একদিন প্রায় মধ্যরাত ১০টা পার হয়েছে তখন বোধ হয় এমন সময় হঠাৎ আমাদের বাড়িতে এলেন আমার ছোটচাচীর ছোটভাই। সাথে তার চাইতেও লম্বা ও কালো কুচকুচে এক কোকড়া চুলের মহিলা। সবাই বলছিলো এ ছি ছি এমন কালো নিগ্রো বউ! সবাই তাকে আপ্যায়ন ভুলে হা করে তাকিয়েই রইলো আর হা বন্ধ করেই তার সামনেই বলছিলো ছি ছি এমন ভূতে কালো মানুষ হয়! আর তাকে কিনা রাসেলের বউ দেখতে হবে! সবার এমন সব আচরণে ঐ কালো কুচকুচে এক মাথা কোকড়া চুলের মহিলাটা তার সাদা ঝকঝকে দাত বের করে হাসছিলো। তাই দেখে সবার মধ্যে হাসির রোল উঠলো কারণ তারা ধরেই নিলো যে বউটা কিছুই বাংলা বুঝে না।

সেদিন রাতে সবারই ঘুমাতে অনেক রাত হলো কারণ ঐ কালো বউ এর অদ্ভুত চেহারা নিয়ে সকলের বিস্ময় হাসাহাসি ঠাট্টা তামাশার অন্ত রইলো না। ছোটচাচীর এই ভাই নাকি আফ্রিকা গিয়ে এই কালো ভূত বিয়ে করে এনেছেন। যাইহোক যে যাই বলুক আমার সেই রমনীর ঐ সাদা দাঁতের ঝকঝকে হাসি বড়ই ভালো লেগে গেলো। আমি তখনও শুধু বাংলাদেশের সুন্দর মেয়ে খুঁজে খুঁজে বিয়ে করিয়ে দেওয়া বউ ছাড়া ওমন হতচ্ছাড়া চেহারার কালো কুচকুচে কোকড়া চুলের ভুতুড়ে বউ দেখিনি। তবে জীবনের পরিক্রমায় আজ বুঝেছি বউটা দেখতে কতই না মায়াবী ছিলো কিন্তু তখন ওর গায়ের রং আর ঐ অদ্ভুত দর্শন কোকড়া চুল আমার কাছে বড়ই বিদঘুটে আর সকলের কথা শুনে সেটাই সিদ্ধ হয়ে গেলো।

খুব ভোরে উঠে আমি দেখি বাড়ির সকলেই প্রায় ঐ ছোটচাচীর ভাই আর তার বউ এর সকলের নাস্তা দুপুরের খাবার এসব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ও কাজের লোকজন তাকে ঘিরে ধরেছে। আর বউটা একটা ছোট মোড়ার উপর ও বিশাল দর্শন শরীর নিয়ে বসে আছেন। বউটা একটা হাঁটুর উপরে ঝুল পর্যন্ত কামিজ টাইপ জামা পরে ছিলো। সেটাও আমদেরর কাছে আরেক অবাক বিস্ময় ছিলো কারণ অতো বড় তাও আবার দশাসই কোনো মহিলাকে আমরা কখনই ওমনটা পরতে দেখিনি। আমি দূরে দাঁড়িয়ে অবাক নয়নেই তাকে দেখছিলাম। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো তাদের জানা আধো আধো ভাঙ্গাচোরা ইংলিশে জিগাসা করছিলো হ্যোয়াট ইজ ইওর নেম? হাও ওল্ড আর ইউ এইসব হা হা হা। সেই কথা মনে পড়লে আমার এত্ত হাসি পায়। আজকালকার বাচ্চাগুলো পেট থেকে পড়েই ফ্লুয়েন্ট ইংলিশ বলে। কার্টুন আর ইউটিউবের বদৌলতে আজকাল বাচ্চাগুলো বাংলার চাইতে ইংলিশই ভালো জানে। তবে সেসব দিনে বাচ্চাদের ইংলিশের দৌড় ছিলো ঐ হ্যোয়াট ইজ ইওর নেম? হাও ওল্ড আর ইউ ? আর হ্যোয়াট ক্লাস ডু ইউ স্টাডি ইন। এই ধরে বেঁধে শিখানো দু,তিন চার লাইনের ইংলিশ দিয়ে বাচ্চাদের পোষাচ্ছিলো না তারা তার হাত ছুয়ে দেখছিলো, পা ছুঁয়ে দিচ্ছিলো। এমনকি তার ওমন কালো কালো পায়ে সাদা ধবধবে নেইল পলিশ খুঁচে তুলে দিচ্ছিলো। তবুও মহিলাটা এতটুকুও বিরক্ত না হয়ে সবাইকেই হাসিমুখে সামলে নিচ্ছিলো।

আমাদের বিশাল চৌদ্দগুষ্ঠির আয়তনের ডাইনিং টেবিলটার এক পাশে ছিলো বিশাল লম্বা এক বেঞ্চ। আরেকদিকে সারি চেয়ার পাতা। মোট ২০ জন বসা যেত ঐ বিশাল ডাইনিং এ। ঈদ পার্বনে সব ছেলে মেয়ে ও মেয়েদের জামাই নাতি পুতি আত্মীয় স্বজন মেহমান মিলে প্রায় সকলেই বসতেন ঐ টেবিলে। সামনের চেয়ারে দাদু। আর দাদুর চেয়ারটা ছিলো সিংহাসন স্টাইলেই হাতল লাগানো আর বাকীগুকি হাতলবিহীন। ঐ ২০ চেয়ারের ১০ চেয়ার খালি থাকলেও কখনও বাড়ির বউরা বসতেন না একসাথে খেতে। তারা সকলেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন পিছে। যখন যা দরকার হবে তা তো দেবেন বটেই তবে ছেলেরা নিজেরা কেউ কোনো ভাত তরকারী উঠাতেন না, সেসব উঠিয়ে দেওয়া ছিলো বাড়ির বউদের কাজ। ঐ কালো বিদেশী বউটাকে বসানো হলো দাদুর কাছের চেয়ারটিতে আর আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম দাদু তার সাথে অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলছেন।

যাইহোক বিকালে আমরা তাকে নিয়ে সারা শহর পরিভ্রমনে বের হলাম। তখন আমাদের শহরের রিক্সাগুলো যে কি সুন্দর ছিলো! একেকটা রিক্সা ছিলো একেক শিল্পকর্ম। আর তাতে লাগানো থাকতো ঝুনঝুনি। রিক্সা চললে ঝুনঝুন টুনটুন আওয়াজ উঠতো। আর লাল নীল ঝালর আর বিভিন্ন লতাপাতার নক্সায় সে সব চটকদার রিক্সা দেখে বিমোহিত তখন সেই কালো মেম। আমরা তাকে সারা শহর ঘুরালাম। আর সেই বৈদেশী কন্যার বদৌলতে আমাদের মনিহার সিনেমায় সিনেমা দেখার সুযোগ হলো।

সে ছিলো আমাদের এক অন্যরকম উৎসবের দিন। রাতে ফিরে ঐ বৈদেশী মেম আমার ন'চাচার কন্যা রুনির লম্বা সিল্কি চুল দেখে খুব মুগ্ধ হলো! সে তাকে বললো তার চুলে সে সুন্দর এক হেয়ার স্টাইল করে দিতে চায়। সবাই আমরা উৎসুক নেত্রে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম কি অপরিসীম ধৈর্য্যে ও মমতায় সেই কাল মেম রুনির চুলে বেঁধে দিচ্ছিলো ছোট ছোট চিকন চিকন বিনুনী আর সেই সব বিনুনীগুলির কিছু কিছু বিনুনী নিয়ে মাথার উপর গোলাকার ফুলের মত বেঁধে দিলো সে তারপর। সেই ফুলটার মাঝখানটায় সে আটকে দিলো একটা অদ্ভুত সবুজ জ্বলজ্বলে পাথরের ফুল। সেই ফুল আমার মনের দর্পনে আজও জ্বাজল্যমান। আর সেই অদ্ভুৎ দর্শন হেয়ার স্টাইল আমার মোটেও ভালো লাগেনি বটে তবে আমার স্মৃতিপটে আঁকা রয়েছে এক অনন্য মহিমায়।

এই বিদেশীনীকে নিয়ে আমি এমনই মেতে ছিলাম যে কয়েকদিন আমি খোকাভাই থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছিলাম। আর এরই মাঝে হঠাৎ একদিন শুনলাম খোকাভাই নাকি দুদিন বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যার কিছু পরে আমরা সবাই দাদীমার ঘরে বসেছিলাম। হঠাৎ বড়চাচী এসে দাদীমাকে জানালেন তার উদ্বিঘ্নতার কথা। তখনকার দিনে মোবাইল ফোনের প্রচলন এত ছিলো না এবং চাচীমার তো সেটা থাকার কথাই ছিলো না। চাচীমা নিশব্দে কাঁদছিলেন। আমার বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো, চোখের পাতায় তখন ব্যথার কাঁপন। সবাই মুখ গম্ভীর করে বসেছিলো। এই দুঃখের দিনেও চাচীমাকে কেউ সান্তনা দিচ্ছিলো না। আমার নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছিলো কারণ আমি জানতাম খোকাভাই আমার উপরে রাগ করেই এমনটা করেছে। এই বাড়িতে তার আর কেউ ছিলো না আর তাই আমার ব্যস্ততা বা তাকে ভুলে অন্য কিছু নিয়ে মেতে থাকাটাই তাকে অবহেলিত করে তুলেছিলো।

চলবে ...
আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫৬
৪২টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×