The Curious case Of Benjamin Button
না কোন রিভিউ নিয়ে আসি নি ।রিভিউ লিখার মত এত তীক্ষ্ণ চিন্তাধারা আমার নেই । এরচেয়ে অল্প সময়ে স্বল্প ভাষায় একটা গল্প বলি । ডেভিড ফিঞ্চারের ডিরেকশনে আর এরিক রথের স্ক্রীন প্লেতে যে গল্প উঠে এসেছে তার এক-আধটু গল্প আপনাদেরকে শোনানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস দিচ্ছি মাত্র । আসুন শুরু করি ।
বৃদ্ধা ডেইসি প্রায় মৃত্যু শয্যায় । বাইরে হারিকেন এর তাণ্ডব । যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে আমেরিকার ওই নির্দিষ্ট জায়গায় । তার মেয়ে অনেকটা ফরমালি বিদায় জানানোর জন্য মায়ের পাশে । গল্পের শুরু এখানেই । বৃদ্ধা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলতে থাকেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ওই সময়টাতে মি. কেক নামে পরিচিত এক ব্যক্তির কথা । মি কেক জন্মান্ধ ছিলেন । তিনি একটি ঘড়ি তৈরির কাজ হাতে নিলেন । তার সন্তান সহ আর অনেকেই বিশ্বযুদ্ধের জন্য আর্মিতে যোগদান করল । একসময় তার সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ লিখা একটা চিঠি এলো মি কেক এবং তার স্ত্রীর কাছে । মি কেক ভেতরে ভেতরে মারাত্মক শক খেলেন । শেষ পর্যন্ত তিনি বিশাল এক ঘড়ি তৈরি করলেন যে ঘড়ি দেখার জন্য স্বয়ং রুজভেল্ট ও উপস্থিত ছিলেন । পরদা সরানোর পর দেখা গেল ঘড়ি উল্টো ঘুরছে । তিনি বললেন আমাদের যেসব সন্তানরা যুদ্ধে গেছে তারা ঠিক এই ঘড়ির কাটার উল্টো ঘূর্ণনেই মনে করিয়ে দেবে তারা আমাদের সাথে ছিল । যুদ্ধের আগেও। এরপর মি কেক কে আর কখনই দেখা যায় নি । কেউ বলে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন কেউ কেউ বলেন তিনি মারা গেছেন ।
মূল ঘটনা এখনও শুরুই হয়নি । সে ঘটনার সম্পূর্ণ ভিত্তিপ্রস্তর টা অনেকটাই মি কেকের কাহিনির মতই । বৃদ্ধার অনুরোধে তার ডাইরি থেকে লিখা ঘটনা পড়তে থাকেন বৃদ্ধার মেয়ে ক্যারোলিন । ঠিক যেইদিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল ওইদিন এক আনন্দঘন মুহূর্তে থমাস বাটনের স্ত্রী এক অদ্ভুত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেলেন । মারা যাবার আগে তিনি তার স্বামীকে বলে গেলেন অন্তত সেই অদ্ভুত দেখতে সন্তানটির যাতে একটা থাকার জায়গার ব্যবস্থা হয় । যাই হোক থমাস তার সন্তানকে নিয়ে ছুটতে লাগলেন । হয়ত কোথাও ফেলে দেবার জন্য । শেষমেশ তিনি এক বৃদ্ধাশ্রমের সিঁড়িতে রেখে এলেন তার সন্তান । কুইনি নামের ভদ্র মহিলা বিধাতার সৃষ্টিকে একটা থাকার জায়গা দিলেন দয়া করে । সন্তানটিকে ওইখানেরই এক ডাক্তার পরিক্ষা করে বললেন এর চেহারা যেমন বৃদ্ধদের মত তেমনি তার সমস্ত শরীরে বৃদ্ধদের মত আরথ্রাইটিস এবং ছেলেটি একজন আশি বছরের বৃদ্ধের মত মৃতপ্রায় । ছেলেটির নাম ছিল বেঞ্জামিন ।সবাই ভেবে নিল বেঞ্জামিন এই পৃথিবীতে আর বেশিদিন নেই । এরপর শুরু হল ঘটনা । দিনকে দিন যেইসব বৃদ্ধ - বৃদ্ধারা , বেঞ্জামিনের কাছের মানুষেরা , পছন্দের মানুষরা জগতের স্বাভাবিক নিয়মে বুড়ো হতে থাকল আর একে একে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল তখন বেঞ্জামিন দিন দিন আরও কমবয়স্ক হতে থাকল । এর মাঝে বেঞ্জামিনের সাত বছর বয়সে ডেইসি নামের মেয়ের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ তৈরি হল । বেঞ্জামিনের প্রতিও ডেইসির এক ধরনের মুগ্ধতা ছিল । ঠিক মধ্য বয়সে যখন বেঞ্জামিনও সুপুরুষ এবং ততদিনে বনে যাওয়া মোটামুটি খ্যাত ব্যালে ড্যান্সার ডেইসি (কার এক্সিডেন্টের পর আর ড্যান্স করা সম্ভব হয় নি ) ইতোমধ্যে রূপবতী তরুণীতে পরিণত হয়েছে, ঠিক সেই সময় তারা ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে । তাদের কন্যাসন্তান জন্মগ্রহনের পর বেঞ্জামিন ভাবতে থাকে সবাই যেমন স্বাভাবিক নিয়মে বাবা হতে পারবে বেঞ্জামিনের পক্ষে তা কখনই সম্ভব নয় । দিনকে দিন তার বয়স কমতে থাকবে, অথচ তার কন্যা বড় হতে থাকবে ।তার মেয়ের একজন সত্যিকারের বাবা দরকার , খেলার সাথি নয় । এই চিন্তা করে ঘটনাসূত্রে তার সত্যিকারের বাবার কাছ থেকে পাওয়া পৈতৃক বাটনের বিজনেস সমস্ত কিছু বিক্রি করে তার স্ত্রীর নামে লিখে দিয়ে বেঞ্জামিন বাটন নিরুদ্দেশ হয়ে যান । ডেইসি আবার বিয়ে করে তার মেয়ের সত্যিকারের বাবার জন্যে। একসময় বেঞ্জামিনের বয়স যখন ১২ বছর ছেলের মত পর্যায়ে চলে আসে সে অ্যাম্নেসিয়াতে ভুগতে থাকে । তারপর বেঞ্জামিনকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কুইনির সেই পুরনো জায়গায় । খবর পৌঁছে যায় ডেইসির কাছে । এরপর ডেইসির জন্য বেঞ্জামিনের লিখা একটি ডাইরি দেয়া হয় তাকে । ডেইসি বেঞ্জামিন বাটনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাকি সময় তাকে নিজের কাছে রেখে পরিচর্যা করেন ।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে বৃদ্ধা তার মেয়েকে দিয়ে বেঞ্জামিনের লিখা সেই ডাইরি পড়ানোর মাধ্যমে মেয়ের সামনে উন্মোচন করেন আরো একটা কঠিন সত্যের । সে গল্পটুকু জানতে হলে বেঞ্জামিন বাটনের মুভিটা দেখতেই হবে ।
শেষ কিছু কথা । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেভির অর্ডারে সমুদ্রে থাকা বেঞ্জামিন প্রিয় ক্যাপ্টেন ও আর অনেক কে মরতে দেখেছে , প্রিয় মহিলা যিনি কিনা তাকে পিয়ানো বাজাতে শিখিয়েছেন তিনি মারা গেছেন । মাঝখানে তিন-চারজন মহিলার সাথে তার হালকা প্রনয় হয়েছে । সেখানে বৃদ্ধা ও ছিলেন । সবাই জগতের সাধারণ নিয়ম চলে গেছে । ঠিক সেই মি কেকের ঘড়ির মত বেঞ্জামিন বাটন তার জীবনের বোঝা, ভালোবাসা উল্টো টানতে টানতে জীবন শেষ করেছেন ।
বাইরে হারিকেনের বেগ বেড়েছে । সেই পুরাতন বিশাল ঘড়িটা উল্টো চলছে আর পানি এসে তাকে গ্রাস করার অপেক্ষায় ।
"you can be mad as a mad dog at the way things went.You can swear and curse the fates,But when it comes to the end you have to let go."