somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলুন ঘুরে আসি একটা মুভির কিছু অংশ থেকে

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

The Curious case Of Benjamin Button
না কোন রিভিউ নিয়ে আসি নি ।রিভিউ লিখার মত এত তীক্ষ্ণ চিন্তাধারা আমার নেই । এরচেয়ে অল্প সময়ে স্বল্প ভাষায় একটা গল্প বলি । ডেভিড ফিঞ্চারের ডিরেকশনে আর এরিক রথের স্ক্রীন প্লেতে যে গল্প উঠে এসেছে তার এক-আধটু গল্প আপনাদেরকে শোনানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস দিচ্ছি মাত্র । আসুন শুরু করি ।
বৃদ্ধা ডেইসি প্রায় মৃত্যু শয্যায় । বাইরে হারিকেন এর তাণ্ডব । যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে আমেরিকার ওই নির্দিষ্ট জায়গায় । তার মেয়ে অনেকটা ফরমালি বিদায় জানানোর জন্য মায়ের পাশে । গল্পের শুরু এখানেই । বৃদ্ধা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলতে থাকেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ওই সময়টাতে মি. কেক নামে পরিচিত এক ব্যক্তির কথা । মি কেক জন্মান্ধ ছিলেন । তিনি একটি ঘড়ি তৈরির কাজ হাতে নিলেন । তার সন্তান সহ আর অনেকেই বিশ্বযুদ্ধের জন্য আর্মিতে যোগদান করল । একসময় তার সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ লিখা একটা চিঠি এলো মি কেক এবং তার স্ত্রীর কাছে । মি কেক ভেতরে ভেতরে মারাত্মক শক খেলেন । শেষ পর্যন্ত তিনি বিশাল এক ঘড়ি তৈরি করলেন যে ঘড়ি দেখার জন্য স্বয়ং রুজভেল্ট ও উপস্থিত ছিলেন । পরদা সরানোর পর দেখা গেল ঘড়ি উল্টো ঘুরছে । তিনি বললেন আমাদের যেসব সন্তানরা যুদ্ধে গেছে তারা ঠিক এই ঘড়ির কাটার উল্টো ঘূর্ণনেই মনে করিয়ে দেবে তারা আমাদের সাথে ছিল । যুদ্ধের আগেও। এরপর মি কেক কে আর কখনই দেখা যায় নি । কেউ বলে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন কেউ কেউ বলেন তিনি মারা গেছেন ।
মূল ঘটনা এখনও শুরুই হয়নি । সে ঘটনার সম্পূর্ণ ভিত্তিপ্রস্তর টা অনেকটাই মি কেকের কাহিনির মতই । বৃদ্ধার অনুরোধে তার ডাইরি থেকে লিখা ঘটনা পড়তে থাকেন বৃদ্ধার মেয়ে ক্যারোলিন । ঠিক যেইদিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল ওইদিন এক আনন্দঘন মুহূর্তে থমাস বাটনের স্ত্রী এক অদ্ভুত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেলেন । মারা যাবার আগে তিনি তার স্বামীকে বলে গেলেন অন্তত সেই অদ্ভুত দেখতে সন্তানটির যাতে একটা থাকার জায়গার ব্যবস্থা হয় । যাই হোক থমাস তার সন্তানকে নিয়ে ছুটতে লাগলেন । হয়ত কোথাও ফেলে দেবার জন্য । শেষমেশ তিনি এক বৃদ্ধাশ্রমের সিঁড়িতে রেখে এলেন তার সন্তান । কুইনি নামের ভদ্র মহিলা বিধাতার সৃষ্টিকে একটা থাকার জায়গা দিলেন দয়া করে । সন্তানটিকে ওইখানেরই এক ডাক্তার পরিক্ষা করে বললেন এর চেহারা যেমন বৃদ্ধদের মত তেমনি তার সমস্ত শরীরে বৃদ্ধদের মত আরথ্রাইটিস এবং ছেলেটি একজন আশি বছরের বৃদ্ধের মত মৃতপ্রায় । ছেলেটির নাম ছিল বেঞ্জামিন ।সবাই ভেবে নিল বেঞ্জামিন এই পৃথিবীতে আর বেশিদিন নেই । এরপর শুরু হল ঘটনা । দিনকে দিন যেইসব বৃদ্ধ - বৃদ্ধারা , বেঞ্জামিনের কাছের মানুষেরা , পছন্দের মানুষরা জগতের স্বাভাবিক নিয়মে বুড়ো হতে থাকল আর একে একে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল তখন বেঞ্জামিন দিন দিন আরও কমবয়স্ক হতে থাকল । এর মাঝে বেঞ্জামিনের সাত বছর বয়সে ডেইসি নামের মেয়ের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ তৈরি হল । বেঞ্জামিনের প্রতিও ডেইসির এক ধরনের মুগ্ধতা ছিল । ঠিক মধ্য বয়সে যখন বেঞ্জামিনও সুপুরুষ এবং ততদিনে বনে যাওয়া মোটামুটি খ্যাত ব্যালে ড্যান্সার ডেইসি (কার এক্সিডেন্টের পর আর ড্যান্স করা সম্ভব হয় নি ) ইতোমধ্যে রূপবতী তরুণীতে পরিণত হয়েছে, ঠিক সেই সময় তারা ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে । তাদের কন্যাসন্তান জন্মগ্রহনের পর বেঞ্জামিন ভাবতে থাকে সবাই যেমন স্বাভাবিক নিয়মে বাবা হতে পারবে বেঞ্জামিনের পক্ষে তা কখনই সম্ভব নয় । দিনকে দিন তার বয়স কমতে থাকবে, অথচ তার কন্যা বড় হতে থাকবে ।তার মেয়ের একজন সত্যিকারের বাবা দরকার , খেলার সাথি নয় । এই চিন্তা করে ঘটনাসূত্রে তার সত্যিকারের বাবার কাছ থেকে পাওয়া পৈতৃক বাটনের বিজনেস সমস্ত কিছু বিক্রি করে তার স্ত্রীর নামে লিখে দিয়ে বেঞ্জামিন বাটন নিরুদ্দেশ হয়ে যান । ডেইসি আবার বিয়ে করে তার মেয়ের সত্যিকারের বাবার জন্যে। একসময় বেঞ্জামিনের বয়স যখন ১২ বছর ছেলের মত পর্যায়ে চলে আসে সে অ্যাম্নেসিয়াতে ভুগতে থাকে । তারপর বেঞ্জামিনকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কুইনির সেই পুরনো জায়গায় । খবর পৌঁছে যায় ডেইসির কাছে । এরপর ডেইসির জন্য বেঞ্জামিনের লিখা একটি ডাইরি দেয়া হয় তাকে । ডেইসি বেঞ্জামিন বাটনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাকি সময় তাকে নিজের কাছে রেখে পরিচর্যা করেন ।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে বৃদ্ধা তার মেয়েকে দিয়ে বেঞ্জামিনের লিখা সেই ডাইরি পড়ানোর মাধ্যমে মেয়ের সামনে উন্মোচন করেন আরো একটা কঠিন সত্যের । সে গল্পটুকু জানতে হলে বেঞ্জামিন বাটনের মুভিটা দেখতেই হবে ।
শেষ কিছু কথা । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেভির অর্ডারে সমুদ্রে থাকা বেঞ্জামিন প্রিয় ক্যাপ্টেন ও আর অনেক কে মরতে দেখেছে , প্রিয় মহিলা যিনি কিনা তাকে পিয়ানো বাজাতে শিখিয়েছেন তিনি মারা গেছেন । মাঝখানে তিন-চারজন মহিলার সাথে তার হালকা প্রনয় হয়েছে । সেখানে বৃদ্ধা ও ছিলেন । সবাই জগতের সাধারণ নিয়ম চলে গেছে । ঠিক সেই মি কেকের ঘড়ির মত বেঞ্জামিন বাটন তার জীবনের বোঝা, ভালোবাসা উল্টো টানতে টানতে জীবন শেষ করেছেন ।
বাইরে হারিকেনের বেগ বেড়েছে । সেই পুরাতন বিশাল ঘড়িটা উল্টো চলছে আর পানি এসে তাকে গ্রাস করার অপেক্ষায় ।
"you can be mad as a mad dog at the way things went.You can swear and curse the fates,But when it comes to the end you have to let go."
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×