somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু এলোমেলো স্মৃতি ও হারানো শৈশব-১

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারপর-একদিন
আবার হলদে তৃণ
ভরে আছে মাঠে-
পাতায়, শুকনো ডাঁটে
ভাসিছে কুয়াশা
দিকে দিকে, চড়ুইয়ের ভাঙ্গা বাসা
শিশিরে গিয়েছে ভিজে-পথের উপর
পাখির ডিমের খোলা, ঠান্ডা কড়কড়
মাকড়ের ছেড়া জাল লতায় পাতায়
ফুটফুটে জোছনা রাতে পথ চেনা যায়;
হিম আকাশের গায় - ইঁদুর পেঁচারা
ঘুরে যায় মাঠে মাঠে,
ক্ষুদ খেয়ে ওদের পিপাসা আজও মেটে,
পঁচিশ বছর তবু গেছে কবে কেটে ।
-জীবনানন্দ দাস




সবার কাছেই শৈশব-কৈশোরের দিনগুলি সবচেয়ে মধুর হয় । শৈশবের সেই সোনালী দিনগুলিতে সবাই থাকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো । এখন জীবন মানেই কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, বর্তমানের ভাবনা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, সর্বোপরি জীবন মানে প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ । পিছন দিকে তাকিয়ে মনে হয় শৈশবের একটি মাস যেন ছিল একটি দিনের মতো, কখন কেটে গেছে টেরই পেলাম না । কিন্তু এখন যেমন প্রতিটি দিনের আলাদা আলাদা করে হিসেব রাখতে হয়, এই বুঝি কোনো জরুরি কাজ হাতছাড়া হয়ে গেল, সর্বত্র শুধু টেনশন আর পেরেশান । সেই শৈশবের দিনগুলি ভাবতেই ভালো লাগে । আর সেইসব দিনের প্রায় বিস্মৃত অথবা কিঞ্চিত বিস্মৃত কিছু স্মৃতি নিয়ে আমার এই স্মৃতিচারণা ।




স্মৃতিচারণার আগে একটা কথা বলে নেওয়া মনে হয় ভালো হবে । আমার আসলে লেখালেখির তেমন কোনো যোগ্যতা নাই । ব্লগে অক্ষরজ্ঞান আছে কিন্তু কিন্তু লিখতে জানে না আমি সেই শ্রেনীর সদস্য । আমার লেখালেখির দৌড় সর্বোচ্চ দু-একটা মন্তব্য করার মাঝে সীমাবদ্ধ । তবুও আমার শৈশবের কিছু ঘটনা ব্লগের এই ডিজিটাল পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস কিংবা অপচেষ্টা । আপনাদের ভালো লাগলেও আমার ভালো লাগবে, ভালো না লাগলেও আমার স্মৃতি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারলেই আমি কৃতার্থ ।

বাবার সরকারী চাকরির সুবাদে তাঁকে ২-৩ বছর পরপর নতুন জায়গায় বদলি হতে হতো । প্রথম প্রথম অনেক খারাপ লাগতো; পরিচিত জায়গা, পরিচিত লোকজন আর বন্ধুদের ফেলে নতুন জায়গায় যেতে মোটেও মন চাইতো না :(( এর কারণে আমার কতো প্রায়-সম্পূর্ণ কিংবা অসম্পূর্ণ প্রেম অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে ;)

আমার শিশুকাল কেটেছে মাদারীপুরে । তখনকার স্মৃতি অনেক ঝাপসা । তাও কিছু কিছু মনে আছে আর বেশিরভাগই মায়ের মুখে শোনা । ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম দুরন্ত আর ছটফটে স্বভাবের । ছোটবেলা থেকে শুধু পড়ালেখা আর দুষ্টুমির জন্য কতো যে মাইর খাইছি তার ইয়ত্তা নেই । ছোটবেলা থেকে নদী আমাকে প্রচন্ড রকম কাছে টানে । মাদারীপুরে নদী ছিল না । কিন্তু আমার দাদাবাড়িতে নদী ছিল । একবার দাদাবাড়ি গিয়ে মায়ের কাছে আবদার করলাম, "এবারে মাদারীপুর যাওয়ার সময় ব্যাগে করে একটু নদী নিয়ে যাব..:D"। সেই কথা শুনে সবার তখন সে কি হাসি । আমি তো তখন বুঝিনি এই কথায় হাসির কি থাকতে পারে ! শুধু ভেবেছিলাম বড়রা আমাদের ইচ্ছেগুলোকে ছেলেমানুষী(:P) ভাবে !

প্রথম যখন মাদারীপুর উঠলাম তখন আমাদের বাসার আশেপাশে আমার সমবয়সী কেউ ছিলনা । বড়রা কেউ খেলতে নিতো না, তাই সেই সময় আমার একমাত্র খেলার সঙ্গী ছিলেন আমার মা । মা বাসার টুকিটাকি জিনিস আমার সামনে দিয়ে দিত, সেটাই ছিল আমার দোকান । একটু পরপর রান্নার ফাঁকে ফাঁকে মা ৫ পয়সা - ১০ পয়সা দিয়ে আমার দোকান থেকে এটা-সেটা কিনে নিতো । এটাই ছিল আমার দোকান-দোকান খেলা ।

আমার যন্ত্রনায় বাসার টেলিভিশনের টেবিল দিন-দিন উঁচু করতে হতো । প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাবা অফিস থেকে এসে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন । আমাদের বাসা থেকে কিছুটা দুরে, আনুমানিক ৪-৫ মিনিটের পথ হবে সেখানে একটা ছোট একটা পানের দোকান ছিল । সেখান থেকে প্রায়ই বাবা আমাকে চকলেট কিনে দিতেন । সেই সুত্রে আমি ওই দোকানদারকে চিনতাম । একদিন দুপুরবেলা আমার দোকান(:)) থেকে আয় করা ১০ পয়সার একটা কয়েন নিয়ে ওই পানের দোকানে গেলাম চকলেট কিনতে । দোকানদারকে পয়সা দিয়ে বললাম চকলেট দেয়ার জন্য । উনি তো আমাকে একা দেখেই বুঝে ফেলেছে যে আমি নিশ্চয়ই বাসায় বলে আসিনি । উনি আমাকে বসিয়ে রেখে বললেন, "চকলেট তো শেষ হয়ে গেছে, একজনকে চকলেট আনতে পাঠিয়েছি । তুমি একটু বসো ।" এদিকে একটু বসতে বসতে তো প্রায় এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে । উনি চকলেটও দেয় না, আমাকে যেতেও দেয় না । বাসার লোকজন তো এদিক-সেদিক খোজাখুজি করতে করতে অবশেষে আমাকে ওই দোকানে আবিস্কার করলো ।

এরপর যখন আর একটু বড় হলাম তখন একটা নতুন বাসায় উঠলাম । সেখানে আমার সমবয়সী কয়েকজন বন্ধু ছিল । তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিল সুমন নামের একটি ছেলে । সুমন কথা বলতে পারত না, শুধু আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিত । ঘটনাক্রমে খেলতে গিয়ে আমি ২ বার সুমনের মাথা ফাটিয়েছিলাম । ঐসময় মায়ের কাছে প্রথম পড়াশুনার পাঠ নিলাম । প্রথম প্রথম "অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে, আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে" পড়তে ভালো লাগলেও, কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম পড়াশুনা জিনিষটা আর যাই হোক খুব ভালো কিছু অন্তত হতে পারেনা ।

আমাদের পাশের বাসায় তখন দুবোন থাকত লিজা আপু আর লাইজু আপু । তাদের সাথে খেলতে গিয়ে আমার একবার মাথা ফেটেছিল । তাদের একটা ভাই ছিল তার নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না । ওই ছেলে ছিল কিছুটা বখাটে টাইপের, নেশা-টেশা করতো, আর তার মাকে প্রায়ই "শালার-পো-শালা" বলে গালি দিতো । আমিও কিছুদিনের মধ্যেই গালিটা শিখে ফেললাম । তখন আমার মা আমাকে নিরস্ত করলেন এই বলে, "এইটা বাসস্টান্ডে এক বড় মানুষের নাম । বড়দের নাম ধরে ডাকতে হয় না ।" তখন আমি বললাম, "ওই ভাইয়া তো ডাকতেছে ।" মা বললেন, "ও তো এখন বড় হয়ে গেছে তাই ডাকে ।" আমার ও তাই আর ওই নাম ধরে ডাকা হলো না ।



*পোস্ট বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে । তাই আর বেশি কিছু লিখলাম না ।
**ভালো লাগলে চলবে ।
***অনিচ্ছাকৃত বানান ভুল ও লেখনীর ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×