*~*|| * ধুম্রউৎসবের দিন গুলো *||*~*
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বাসায় গেস্ট এসেছে , এর মধ্যে একজন আবার কঠিন চেইনস্মোকার ... উদার প্রকৃতির এই মানুষটি একটা প্যাকেট খুলে ধুম্রউৎসব শুরু করলে প্যাকেট টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পান না , তাই আশে পাশের যারাই থাকে সবাইকে সাথে নিয়েই তিনি উৎসব পালন করে থাকেন ... ড্রইং রুমে বসে তার উৎসব শুরু হওয়ার সাথে সাথেই তিনি অফার করলেন -- অন্তু আপনিও নেন একটা ... মাথা ঝাকিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে না বললাম ... সেই সাথে ধোয়ার কুন্ডলীর মাঝে বসে মনে পড়ে গেল ... বহু বছর আগের কাহিনী ...শীতের রাতে যেমন ঠান্ডা পানিতে সাতার কাটার গল্প বলা বেমানান তেমনি হুট করে রোজার মাসের গল্প শুরু করাও অনেকটা মুষ্কিল মনে হচ্ছে , তা যাই হোক ... শুরু যখন করেছি , তখন বলেই ফেলি ...
তখন আমাদের গ্রুপের সবাই চেইন স্মোকার , ধোয়া উৎসব না করলে যেন দিনের শুরুই হতে চায়না , শেষ হওয়া তো দুরের কথা , এর মাঝে সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যার সময় একসাথে দুটো করে ধরিয়ে মনের সুখে কিছুক্ষন বসে না থাকলে কি চলে ? ... যদিও মাঝে মাঝে কঠিন অবস্হার অবতারনা হয়েই যেত ... সেদিন গিয়েছিলাম বন্ধুর বাড়ীতে পুরা সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে , উদ্দেশ্য ইফতার করবো , আর রাতের ডিনার করে ওখানেই রাত কাটিয়ে দিবো ... খালুজান আবার বড়ই কড়া মানুষ , ঘরের টুকটাক সব কাজ তিনি বেশ নিয়মের মধ্যেই করিয়ে থাকেন , এলাকার যে কোনো সমস্যা থেকে শুরু করে সন্ধ্যার পরে কারেন্ট চলে গেলে ঘরের মোমবাতি জ্বালানোতেও কেউ তাকে পিছে ফেলতে পারে না , তার কাজের স্টাইল ও ছিলো একেবারে অন্যরকম , তার ব্যাবহার করার জিনিস গুলোও হতো একেবারে আনকমন ... তার ছেলে হয়েই কিনা সাইফুল এমন চেইন স্মোকার ? ভাবতেই কেমন যেন লাগে ... যাই হোক , সেদিন ইফতারের আগে আগেই ওদের বাড়ী পৌছে ইফতারির টেবিলে বসেছি অমনি দেখি আমাদের সাথে খালু ও বসবেন ... মনটাই গেল চুপসে , কি আর করা কোনো রকমে প্লেটের ইফতারিগুলো শেষ করেই আমাদের গ্রুপের সবাই একে একে সরে পড়লো .... ঘরের বাইরে ...
সাইফুল কে আগেই বলা ছিলো , ঐ ব্যাটা একটা নিরাপদ যায়গা খুজে রাখিস , এমন যেন না হয় যে আমরা ধোয়া উৎসব করছি আর খালু এসে হাজির হয়ে গেল ... সেও বড় চিন্তা ভাবনার পর আমাদের নিয়ে চললো - এলাকার খেলার মাঠের একটা কোনায় যেখানে সন্ধ্যার পরে কেউ যায়না , এদিক সেদিক ভাল মতো লক্ষ্য করে গুটি গুটি পায়ে একে একে সবাই গিয়ে হাজির হয়ে গেলাম সবাই একসাথে হওয়ার পরে দেখা গেল সবার পকেটেই কিছু না কিছু সিগারেট আছে কিন্তু লাইটার নেই ... এখন এই চিপা থেকে বের হলে আবার ফেরত আসতে গেলে মুষ্কিল আছে ... এলাকার মুরুব্বীরা সবাই মসজিদে যাওয়া শুরু করেছেন ... কি করি কি করি করতে করতে করতে হঠাৎ বেশ কাছেই যেন আশার আলো দেখা গেল ... একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতে পেলাম আরে ঐটা শুধু আশার আলো ই না , ঐ চিপায় তো কেউ একজন ধোয়া উৎসব পালন করছে, যাক আগুন পাওয়া যাবে তাইলে .... অনেক চিন্তার পরে দেখা গেল- এই এলাকার জন্য মিন্টু ছিলো একেবারেই নতুন ( সেই সাথে সবচেয়ে হাবাগোবা টাইপ), তাই ওকেই পাঠানো হলো লাইটার আনার জন্য ... বেচারা সুন্দরমতো গিয়ে চাইতেই কি মনে করে আগন্তুক তার লাইটার দিয়ে দিলেন ... স্টিলের তৈরী লাইটার টা নিজের হাতে ধরে সবার সিগারেট জ্বালানোর পরে খ্যাক খ্যাক হাসিতে মিন্টু বলে , এদ্দিনে একখান মনের মত লাইটার পাইসি ... যাহ ! দিলাম মাইরা .... ওদিকে আগন্তুক ও কখন যে ঐখান থেকে চলে গিয়েছে আমরা খেয়াল ই করিনি ... আর কোনো ঝামেলা ছাড়াই মিন্টু লাইটারখানার গর্বিত মালিক হয়ে গেল ... অতঃপর ঘরে ফেরার পালা ... খালুজানেরা রাস্তা ফাঁকা করে দিলে আমরা একে একে সবাই ঘরে ঢুকলাম , আর ভরপেট ডিনার খেয়ে গল্পে গল্পে ঘুমানোর ব্যাবস্হা করতেই খালু হাজির হয়ে গেলেন ... এসেই বললেন --
-- ঘরে কিন্তু অনেক মশা আছে , আর এক মশারীতেও তো সবাই শুতে পারবে না , এখ কাজ করো আমি কয়েল নিয়ে আসছি তোমরা জ্বালিয়ে নিও ...
বলেই তিনি এক নিমিষে নাই হয়ে গেলেন ... একটু পরেও ঘরে ঢুকে বললেন -- বাজারে নতুন লাল কয়েল এসেছে , তোমাদের জন্য নিয়ে আসলাম, জ্বালিয়ে নিতে পারবে তো ? ...
বলেই এগিয়ে দিলেন মরটিনের লাল কয়েল ...
অতি উৎসাহী মিন্টু হুট করে উঠে গিয়ে উনার কাছ থেকে কয়েল গুলো নিয়ে পকেট থেকে স্টিলের লাইটার টি বের করতেই শোনা গেল সাইফুলের আর্তচিৎকার --- মিন্টু
অন্যদিকে দেখা গেল বিস্ফোরিত চোখে লাইটারের দিকে তাকিয়ে আছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় খালুজান ...
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন