আমার দেড়ফুটি কোকড়া চুলওয়ালী যত বড়ই হোক না কেন আমার কাছে সে সারা জীবন দেড়ফুটি ই থাকবে ... তাই হাতে পায়ে যতই বড় হোক না কেন ওকে আমি দেড় ফুটি ই ডাকবো ... ওহ ভালো কথা , দেড়ফুটি কিন্তু এখন স্কুলে পড়ে ...
যাই হোক ... ঘটনার শুরু ক'দিন আগে ... এ্যাক্সিডেন্ট করে পা ভেঙ্গে ঘরে বসে আছি ... ইফতারীর আর কয়েক ঘন্টা বাকী আছে , কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না দেখে বসে বসেই একটু চোখ বন্ধ করে ছিলাম ... এর মাঝেই হঠাৎ করে দেখি ডোর বেল বেজে উঠলো --- ডিং ডং ...
মনে মনে বলি আরে এখন নড়া চড়া করাই মুষ্কিল তার উপর আরামের ঘুম ঘুম ভাবের মাঝে উঠে গিয়ে লক খুলতে হবে ? ... তাও যাই হোক .... দেখি তো কে এসেছে ... উঠতে গিয়েছি অমনি দেখি ফোন বেজে উঠলো ... স্ক্রীনে দেখি সেই পুরোনো নম্বর ... ফোন ধরতেই কানের কাছে বোম ফাটলো ---
>> দরজা খোলোওওওওওওও .....
-- আরে খুলছি খুলছি ... একটু অপেক্ষা কর ...
>> জলদিঈঈঈঈঈঈই ....
-- এই তো খুলে দিয়েছি ( কথা বলতে বলতে লক খুলে দিলাম)
অমা ! কথা নেই বার্তা নেই ফোন কেটে গেল ...
একটু পরে সিড়িতে শব্দ শুনতে পেলাম ... কেউ একজন রাগে গজগজ করতে করতে উপরে উঠে আসছে ... আর বলছে -- দেকসো দেকসো কত্ত দিন পরে আসলাম আর ও নীচে গিয়ে খুলে দিলো না ... আর এত্ত দেরি করে খুলসে ....
বলতে না বলতেই মা মেয়ে দুজনেই ঘরে ঢুকে একসাথে চিৎকার শুরু করে দিলো ... আরে তোমার পায়ে প্লাষ্টার ক্যান ? কি হইসে ? আমাদের বলোনি ক্যান ? ... ইত্যাদি ইত্যাদি ...
নিজের শরীরের দোহাই দিয়ে কোনো মতে ওদের একটু ঠান্ডা করতেই জিজ্ঞেস করলাম কি মনে করে হঠাৎ ? শুনলাম পরদিন কোকড়াচুলওয়ালীর বাংলা পরীক্ষা যেটা পড়তে পড়তে নাকি ওর মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে, তাই একটু ফ্রেস হওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছে .... এবার ওকে জিজ্ঞেস করলাম ...
-- বাংলা সাবজেক্ট টা কেমন লাগে ?
>> এত্ত কঠ্ঠিন ... আচ্ছা বলো তো এই সব পড়ে আমার কি লাভ ?
-- কোন গুলো ?
>> ঐ যে , সুন্দরপুরে কবে কবে হাট বসে .... আচ্ছা আম্মু বলে হাট আর বাজার নাকি একরকম
-- হ্য অনেকটা এক রকম , গ্রামে হাট বসে .... কেন ?
>> তাইলে হাটকে বাজার বললেই তো হয় ... এক জিনিসের দুই নাম ... উফফ !!!
-- কিন্তু ওটা তো বই তে লেখা , ওতে সমস্যা কোথায় ?
>> সমস্যা আছে তো .... আমি কি বাজার করতে যাবো নাকি কোনো দিন গ্রামের হাটের মধ্যে ? তাইলে হাট কবে কবে বসে ঐটা আমার জেনে কি হবে ?
-- তাই তো ... আচ্ছা আর কি সমস্যা ?
>> ঐ যে মাছের বাজার আছে না ? ঐটাও কেমন জানি ...
-- মাছের বাজারের আবার কি হইসে ?
>> বইতে লেখা আছে মাছের বাজারে ইলিশ , রুই , কাতলা .... প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায় ...
-- তো মাছের বাজারে তো অনেক ধরনের মাছই পাওয়া যাবে , তাই না ?
>> কিন্তু আমি তো কোনো মাছ খাই না , তাই আমি কোনো মাছের নাম ও লিখবো না ....
-- তাহলে যদি পরীক্ষায় লিখতে হয় তবে কি লিখবা ?
>> আমি শুধু লিখবো মাছের বাজারে প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায় ....
-- আচ্ছা ঠিকাছে তাই লিখে এসো কোনো সমস্যা নেই ...
>> আচ্ছা বলোতো , ধন্য হওয়া মানে কি ?
-- ওটা আবার কোথা থেকে এলো ?
>> ঐ যে বলে না , এই দেশে জন্ম নিয়ে আমি ধন্য হয়েছি ...
সহজ ভাষায় ক্যামনে ওকে শিখাই ভাবতে ভাবতে বেশি কিছু না ভেবেই বলে বসলাম
-- ওটার মানে হলো কোনো কারনে অনেক খুশী হওয়া ....
>> ও আচ্ছা ঠিকাছে
এভাবেই চলতে থাকলো তার পড়ালেখা সংক্রান্ত অভিযোগ নামা ... অতঃপর আমাকে ঠিকঠাক মতো ঔষুধ খেয়ে রেষ্ট করার নির্দেশ দিয়ে কিছুক্ষন পর পুসকী ওর বাসার চলে গেল ... পরদিন স্কুল ছুটির পর ওদের বাসায় ফোন দিতেই দেখি পুসকী ধরেছে ... ধরেই বলে
>> জানো জানো , আমার পরীক্ষা না ..... অনেক ভাল হইসে ... ইউ শুড বি প্রাউড অফ মি ....
-- তাই ? গুড জব ... আই এ্যাম অলওয়েজ প্রাউড অফ ইউ ... কিন্তু বাংলা পরীক্ষা দিয়ে এসে বাংলায় বললে বেশী ভালো লাগতো , তাই না ?
অতঃপর কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ করেই পুসকী বলে উঠলো
>> আমি আমার পরীক্ষা দিয়ে ধন্য হয়েছি
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ ভোর ৬:০৬