অনেকে অনেক কারন মনে করেন ডলার সংকটের পেছনে। দেখুন আমি কোনটা মিস করলাম।
১. সরকারী দুর্নিতি গ্রস্থ অফিসার/আমলারা টাকা পাচার করেছেন, বেশি দামে যন্ত্রপাতি ক্রয় আদেশ দিয়েছেন, ইত্যাদি। এগুলো সংশোধন হবার না। একটি বিশেষ প্রানীর লেজ কখনও সোজা হয় না। সকলেই জানে... এখানে কোন কিছুই কাজে আসবে না।
২. বৈধ পথে রেমিটেন্স কম আসা। কয়েক লক্ষ রেমিটেন্স যোদ্ধা আছে সারা দুনিয়ায়, যারা বৈধ পথে পাঠাতে চাইলেও পাঠাতে পারেন না। কারন তারা গেছেই অবৈধ পথে, থাকে অবৈধ ভাবে, বৈধ কাগজ পত্রই নেই। ব্যংকে যাবার সাহস নেই, পায় না ব্যাংক/এম্বাসির কোন সহযোগিতা। অন্যদিকে অবৈধ পথে পাঠালে বিনিময় রেট ভাল পায়। কাগজ পত্র ঘাটাঘাটির দরকার হয় না। কাজেই ২% বোনাস আসলে কোন কাজের ঘোষনা না।
৩. খোলা বাজারে কিন্তু ডলারের সংকট নেই। কিন্তু বৈধ ভাবে তা সরকারী খাতায় দেখানো সম্ভব না। আগে কাঁচা সোনা যেমন আসত, এখন ক্যাস ডলার হু হু করে মানুষ পকেটে করে নিয়ে আসছে। কয়টা ধরা পরে? সরকারের উচিত লোভনীয় ডলার বহনের সুযোগ দেয়া ফেরত যান্ত্রীদের জন্যে। যেমন, ফেরত যাত্রীরা ১০হাজার ডলার নয়, বরং ৩০হাজার ডলার নিয়ে দেশে ঢুকতে পারবে প্রতিমাসে। ভ্রমন ভিসায় ৫০০ ডলারের উপর নিতে পারবে না। ভ্রমন ভিসা তারাই পাবে যাদের বাৎসরিক ইনকাম ২০লক্ষ টাকার উপরে। সূর্যাস্ত দেখতে কুয়ালালামপুরে যাবার দরকার নাই, গরীবের কুয়াকাটায় গেলেই চলবে।
৪. স্ট্যুডেন্ট ভিসা / ভ্রমন / চিকিৎসা ভিসা কমিয়ে দেয়া দরকার। শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।
৫. বিদেশী শ্রমিক যারা বাংলাদেশে কর্মরত আছেন, তাদের বেতন সেই দেশের প্রচলিত মুদ্রায় হবে। সরাসরি সেই দেশের মুদ্রায় বেতন পাবে এমন রুল জারি করতে হবে। ডলারে কনভার্ট করা হবে না, এমন নিয়ম চালু করতে হবে। যেমন, ১০ লাখ ভারতীয় যারা গার্মেন্টস সহ অন্য জাগয়ায় কাজ করছেন, তাদের বেতন হবে রুপিতে, রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্রে যে সহস্রাধিক কর্মী রাসিয়ান কর্মী আছেন, তারা রুবেলে বেতন পাবে, চাইনিজ রা ইয়ানে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে ডলারের উপর চাপ কমবে।
৬. ভিসা আবেদন ফি থেকে প্রাপ্য অর্থ, ডলারে কোন দেশ নিতে পারবে না নিয়ম করতে হবে। নিতে হবে নিজ দেশের মুদ্রায় বা বাংলাদেশ সরকার বেধে দেয়া মুদ্রায়। ধরুন, ইউএস ভিসা ফি প্রায় ২০হাজার টাকা এবং সেখান থেকে প্রাপ্য অর্থ তারা নিজ দেশে নিয়ে যায় ডলারে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২,০০০ আবেদন করে। তারমধ্যে প্রায় ১০% কনফার্মেশান পায়। এই প্রক্রিয়ায় ২০০০*২০০০০=২,০০,০০,০০০ (প্রায় ২ কোটি) টাকা পায় আমেরিকান এ্যাম্বাসি, মাসে ২*২৫=৫০ কোটি টাকা, যার বেশির ভাগ অংশ যায় আমেরিকায় ডলার হিসাবে। এটা গেল একটা এ্যাম্বাসির কথা। এভাবে ৫১টা এ্যাম্বাসি একই কাজ করছে প্রতিদিন, প্রতিমাস... সব নিয়ে যাচ্ছে ডলারে। কেউ দেখার নাই।
৭. অভ্যন্তরীন উৎপাদন বাড়াতে হবে। খাদ্য বা কৃষি পন্য আমদানি কমিয়ে আনতে হবে অভ্যন্তরীন উৎপাদন নিশ্চিত করার পর। সার উৎপাদন বাড়াতে হবে।
৮. সিন্ডিকেট ভাংতে হবে। মন্ত্রীরা যেসব ভোগ্যপন্য কে পুজি করে অযথা দাম বাড়াচ্ছে ছায়া মাস্টার মাইন্ড হিসেবে, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে উদ্দ্যোগী হতে হবে । সেসব ছায়া মন্ত্রীদের পালক ছেটে দিতে হবে, যাতে সাময়িক উড়তে না পারে। মানে দেশ স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯. রেমিটেন্স সীমা মাস প্রতি ৫০০০ডলার নয়, ২০০০০ ডলার পযর্ন্ত করতে হবে, যা হবে যাচাই বাচাই ছাড়া। তাহলে অবৈধ্য শ্রমিকরা বৈধ্য শ্রমিকদের মাধ্যমে বৈধ্য সরকারী চ্যানেলে টাকা পাঠাবে। এ সুযোগ হবে ৬ মাসের জন্যে বা পরবর্তী আদেশ না দেয়া পযর্ন্ত।
১০. মানুষের পকেটে প্রচুর টাকা। কিন্তু কেউ কাজে লাগানোর সাহস করছেনা। সিন্ডিকেটের কারনে, বিক্রয় দামে অঘটন ঘটে যখন তখন। ক্ষতি গ্রস্থ হয় সাধারন চাষী / উদ্দ্যোক্তরা। মধ্যস্বত্ব ভোগীদের যদি ব্যবস্থা করা যেত, চাষী/উদ্দ্যোক্তরা তাহলে পকেটের টাকা খাটানোর সাহস করতো। অভ্যন্তরীন উৎপাদন বাড়ত, ডলারের উপর চাপ কমত।
১১. বড় বড় প্রকল্পের একটা চুক্তি থাকে যে, যে দেশ ঋণ দিচ্ছে / টেক্নিক্যাল সাপোর্ট দিবে, তাদের দেশের শ্রমিক নিয়োগ দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে এ নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের মেধাবী শিক্ষিত জনগনকেই কাজে লাগাতে হবে। সুযোগ দিতে হবে। দেশের টাকা দেশেই থাকবে।
১২. সরকারী / ব্যক্তিগত কার/জিপ আমদানী বন্ধ করতে হবে। বিদেশি সৌখিন তৈজসপত্র ও সুগন্ধী আমদানী শুল্ক বাড়াতে হবে।
১৩. বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আমলাতান্ত্রীক জটিলতা বন্ধ করে সহযোগিতা করতে হবে। যে বাংলাদেশী বিলিয়নিয়ার যে যা শিল্প সংস্থা স্থাপন করতে চায়, সুযোগ দিতে হবে। আমজনতা তো জানেই, বেগম পাড়া কারা করেছে, মালেশিয়ায় সেকেন্ড হোমল্যান্ড কারা বানিয়েছে, সুইস ব্যাংকের কোন শ্রেনীর ১১০০+ বাঙ্গালীর একাউন্ট আছে। কাজেই এই বাঙ্গালী বিলিয়নীয়ারদের সুযোগ দেয়া হোক। তাদের টাকার উৎস খোজার দরকার নাই। সবাই জানে সব মাছে গু খায়, শুধু ঘাউরা মাছের নাম হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫০