পত্রিকা ওয়ালারা বলছে, দেশের চাহিদা "১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসেবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।"
প্রথম কথা হল, এই জরিপ কিভাবে হল, কে করল, কবে করল? আমি বা আমার ১৩ সদস্যের যৌথ পরিবার কেন বাদ পড়ল? বা আমার এলাকার ১২০০ মানুষের কেউই এই জরিপের কথা জানল না কেন। মনে হয়, জরিপটা দৈব্য ঘটনা প্রাপ্ত।
আমাদের পাশাপাশি দুটি বাসায় ২০১৮ পর্যন্ত ৪টি গরু ও ৪টি ছাগল কোরবানী দেয়া হত যেটা কিনা এখন ১টি গরু ও ২টি ছাগলে নেমে এসেছে। কারন দেখা গেছে পছন্দ মত পশু, হাটে পাওয়া যায়নি বা হঠাৎ পশুর হাট ফাকা, গরু/ছাগল নেই।
আর একটি প্রধান কারন হল, বিশ্ববাজারের অযুহাতে দেশের পশু পালকরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারন নাকি খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি। খাদ্যের মূল্য বিশ্ববাজারে যত না বেড়েছে, মধ্যস্বত্ব্য ভোগীরা তার চেয়ে বেশি বাড়িয়েছে। এমন নয় যে, গরুকে শুধু দানাদার খাদ্যই খাওয়াতে হয়। সাইলেস আছে, উন্নত প্রজাতির ঘাস আছে, ইউরিয়া পদ্ধতি আছে, আরও বহু খাদ্য পদ্ধতি আছে।
আসলে ব্যাপার হল, হুজুগে বাঙ্গালি। কেউ একজন দাম বাড়ায়ে দিল, টাকা ওয়ালার সেই দামে কিনল, ব্যাস হয়ে গেল। শহরের এই দেখা দেখি গ্রামে গঞ্জেও বাড়ল। আর একবার বাড়লে তা আর পরে সামন্জস্য করে না।
ভারতে এখনও গরুর মাংস বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৮০টাকা কেজি, খাসির মাংস প্রায় ৪০০টাকা। ওরা পারে বাংলাদেশের খামারিরা পারে না। কারন এরা করবে না। একটা কৃষকের ঘরে ঘাস, খড়, সবজির উচ্ছিষ্ট সবই থাকে। তাকে ওষুধ ছাড়া তেমন কিছু কিনতে হয় না। সেও খামারিদের সাথে তাল মিলিয়ে উচ্চ দামেই ব্রিক্রি করে।
আর কোরবানির হাটে এসবের সাথে যোগ হয়, দালাল + ব্যাপারী। ৮০ হাজারের গরু হয়ে যায় ১ লাখ, ৫০ হাজারের গরু ৭০। গতবছর টিভিতে খবরে ঢাকার এক কষাই বলল, আমরা ৪০০টাকায় গোসত দিমু, যদি চাদাবাজি আর সিন্ডিকে্ট বন্ধ করেন। ৬৫০টাকা লাগব না। ঢাকার আমরা দাম কমালে, সারা দেশেই দাম কমব।
ঘটনা সত্য। কিন্তু কেন চাদাবাজি হচ্ছে, সিন্ডিকেট হচ্ছে? সরকার, কৃষি সম্পদ মনত্রানলয়, বড় খামারিরা কেউই নাক গলাবে না। কারন শর্ষের ভেতরেই ভুত। আমজনতা অবশ্য ৭৫০ থেকে ৭৮০টাকা কেজিতেই খাচ্ছে। কিন্তু খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। বিক্রেতাদের লস নেই। তারা কম পরিমানে বিক্রি করছে বেশি দামে। পরিশ্রম কম, মুনাফা বেশি।
আমি পশুর হাটে এমনও শুনেছি, ভাই এতো দামাদামি করেন কেন, একটা আইফোন কিনতেও তো ৮০ হাজার লাগে, আর দুবছর কষ্ট করছি গরুর পেছেনে, তাও ২০ হাজার টাকা বেশি লাগতেছে? অন্য সময়ে যে খাসি ১০ থেকে ১২ হাজার, সেটা কোরবানীর হাটে চাইল ২৬ হাজার, ২৫ হলে দেবে। বললাম ডবল কেন? স্যার একটা স্মার্ট ফোন কিনতেও ২০ হাজার লাগে, এই ১০ কেজির খাসির দাম কেমনে ডবল লাগে কন?
কিচ্ছু বলার নাই্। হাসিনা ববু সবার হাতে মোবাইল তুলে দিছে, ঘরে ঘরে টিভি দেয়েছে। বিক্রেতারা বোধায় লিস্টের বাইরে ছিল।
আসল কথায় ফিরে আসি। আসলেই দেশে পশু সংকট রয়েছে। সরকার স্বীকার করতে নারাজ। কেননা এত ব্যর্থতা প্রমানিত হয়। ভোটের এজেন্ডায় কৃষিতে স্বয়ং স্বম্পূর্ন সেই চাপাবাজিটা করতে পারবে না। আর রাঘব বোয়াল খামারীরাও বলবে যথেষ্ট গরু আছে দেশে। কারন হল, মুনাফা লোভী আচরন। তাছাড়া কুয়োর ব্যাঙের কাছে ওটাই সমূদ্র। জন সমূদ্র বলে একটা জিনিস আছে, সেটা ভুলেই যায়। ১৮ কোটির দেশে ৯২ ভাগ মুসলমান যার সিংহভাগ দবিদ্র সেটা মনে থাকে না। এসি রুমে বসে, গরীবের মাথা ঘোরে কেন বুঝবে কিভাবে?
ইউটিউবে সমসাময়িক ভিডিও আর নিজে কিছু হাটে গিয়ে আমার যেটা ধারনা, দেশে কোরবানির পশুর অনেক ঘাটতি রয়েছে। বর্ডার গুলোর পশু আমদানির সুয়োগ দেয়া দরকার। গুটি কয়েক ব্যাবসায়ীর কথা না ভেবে ঈদুল আযহা উৎসব কে উৎসবের মতই হতে দেয়া দরকার।
আমরা সামর্থবানরা যদি নায্য দামে বেশি পশু কিনতে পারি, তাহলে বেশি পশু কুরবানি হবে। বেশি কোরবানী হওয়া মানে, অভাবী, নিম্নবিত্ত, এতিম ও দুস্থরা মাংস খাবার সুযোগ পাবে। আমরা তো মন্ত্রী বা জন প্রতিনিধিদের মত বা বিত্ববানদের মত লোক দেখানো কোরবানী দেই না। টিকটক বানাই না। ফেসবুকে লাইভে এসে দুগাল হেসে গর্ব করি না বড় কোরবানী নিয়ে।
কাজেই বডার খুলে দেয়া হোক। পশু আমদানি হোক, গরীবরা মাংস খেতে পাক। দেশের টাকা কিছুটা ভাল কাজে লাগুক। অর্থ তারল্য কিছুটা সংকুচিত হোক।